করুণাময় গোস্বামী স্মরণে
করুণাময় গোস্বামী স্মরণে
রণেশ মৈত্র
আজ থেকে অন্তত: চার মাস আগে শিপ্রাদেবী নামক একজন বন্ধু (ফেসবুক ফ্রেন্ড) হঠাৎ ভিডিও কল করলেন। মাত্র অল্প দিন কয়েক আগে তাঁর সাথে তাঁরই উৎসাহে ঐ বন্ধুত্ব হয়েছে কিন্তু গুড মর্নিং, গুড ইভিনিং বা গুড নাইট বিনিময় ছাড়া কোন কথা হয় নি। এটি তাঁর সাথে আমার দৈনন্দিন ব্যাপারে পরিণত হয়েছিল।
ভিডিও কলটির কথা বলি। কল ধরতেই শিপ্রা দেবী অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে বললেন, “আমি নারায়নগঞ্জের করুণাময় গোস্বামীর স্ত্রী। করুণাবাবু তো বছর দুয়েক হলো নেই। তাঁর, স্মৃতি রক্ষার্থে একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঐ গ্রন্থে আপনার একটি লেখা চাই। তিনি আপনাকে খুব সম্মানের চোখে দেখতেন।”
জবাবে বললাম,“বৌদি, করুণা দা অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ছিলেন। সাক্ষাত পরিচয় না ঘটলেও দৈনিক সংবাদ এ তাঁর বিশাল বিশাল লেখা প্রায়শ:ই চোখে পড়তো। তাঁকে একজন নজরুল গবেষক, নজরুল গীতির প্রিয় ব্যক্তিত্ব বলে আমার মনে হতো। অত বড় বড় লেখা সব সময় সবটা পড়ে ওঠা সম্ভব হতো না। কিন্তু হৃদয়ে করুণাদা শ্রদ্ধার একটি বিশাল আসন দখল করে বসে আছেন। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশের সাহিত্য জগত, সঙ্গীত জগত এবং গবেষণার ক্ষেত্রে এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, শূণ্যতার সৃষ্টি হয়েছে, এ প্রশ্নে কারও মনেই দ্বিমত নেই।
লেখা দেওয়ার প্রসঙ্গে বললাম, “বৌদি, আমি প্রচুর লিখি সত্যি তবে সেগুলি প্রায়শ:ই মানোত্তীর্ণ নয়। আর কারও অনুরোধে কিছু লিখতে নিলে কেমনযেন এক ধরনের অলসতা আমাকে পেয়ে বসে। এ কারণে বাংলাদেশের বাম গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বেশ কয়েকজন শ্রদ্ধেয় বিপ্লবী নেতার মৃত্যু পরবর্তীতে অনুরুদ্ধ হয়েও লেখা হয়ে ওঠে নি। ঐ নেতারা হলেন পীর হাবিবুর রহমান, রবি নিয়োগী, অজয় রায় প্রমুখ। দ্বিতীয়ত: করুণাদাকে নিয়ে লেখা আমার জন্য আরও কঠিন কারণ তাঁর সম্পর্কে আমি বিশেষ কিছুই জানি না। তাই আমাকে তাঁর সম্পর্কে তথ্যাদি দিয়ে কেউ সহায়তা করলে লিখতে চেষ্টা অবশ্যই করবো।
বৌদি নিজে বেশ কিছু তথ্য মেসেঞ্জার মারফতেই পাঠালেন। আর জানালেন,“নিশাত জাহান রানা ও আরও দু’একজন জানাবেন এবং তাঁরাই আপনার সাথে যোগাযোগ করবেন।”
বললাম,“বৌদি তথ্যাদি তাঁদেরকে তাড়াতাড়ি জানতে বলবেন। আমি তার ভিত্তিতে অবশ্যই লিখবো কথা দিলাম”।
অনেকদিন অপেক্ষা করেও রানা আপা কোন যোগাযোগ না করায় আমিই তাঁর সাথে যোগাযোগ করলাম তাঁর ফোন নং ও ইমেইল ঠিকানা আমার কাছে অনেক আগে থেকেই থাকার সুবাদে। পরিচয়ও তাঁর সাথে দীর্ঘ দিনের।
করুণাময় গোস্বামী সম্পর্কে তথ্য চাইতেই রানা আপা বললেন, আমার একটা বইতে করুণাদা সম্পর্কে লেখা আছে। বইটা আপনাকে পাঠাব। ঐ বইতেই করুণা দা সম্পর্কে মোটামুটি জানতে পারবেন।
বইটা এলো-কিন্তু বেশ দেরিতে। মনে হলো আরও তথ্য জানতে পারলে ভাল হতো। বৌদিকে তা জানালাম। তিনি উত্তরে বললেন, মফিদুল হক অনেক কিছু জানেন। বললাম তাঁর ফোন নং তো হারিয়ে ফেলেছি। বৌদি জানালেন, রানা জানাতে পারবে। রানা আপাকে বলতেই তিনি ফোন নং দিলেন। সদা ব্যস্ত মফিদুল ভাইকে বললাম করুণাময় গোস্বামী ভারত বিভাগ ও হিন্দুদের দেশত্যাগ নিয়ে যে উপন্যাস লিখেছেন থাকলে একটি কপি আমাকে পাঠিয়ে দেন। তিনি বেশ দ্রুততার সাথেই পাঠালেন বইটি। বিশাল বই অস্বাভাবিক দরদ দিয়ে লেখা। ভারত বিভাগ,কলকাতার দাঙ্গায় (Great Culcutta Killing) হাজার হাজার হিন্দু-মুসলমান নিধন, লাহোরে অনুরূপ ভয়াবহ ঘটনা, আহমেদাবাদ সহ সারাটি ভারত জুড়ে যে লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ হিন্দু মুসলমানের জীবন বিপন্ন হয়েছিল-ভারতের স্বাধীনতা ও পাকিস্তান প্রস্তাবের যুগকাষ্ঠে কত জনের রক্তে যে ভারত ও পাকিস্তানের মাটি রক্তাক্ত হয়েছিল, উপন্যাস আকারে চার শতাধিক পৃষ্ঠায় “ভারত ভাগের অশ্রুকণা” শীর্ষক বইটি পড়তেও অনেক সময় চলে গেল। সময় লাগার মূল কারণ শুধুমাত্র বইটির বিশালাতই না, লেখালেখি ও অন্যান্য কাজের ব্যস্ততাও এই বিলম্বের জন্য দায়ী।
ইতোমধ্যে করুণাদা ও শিপ্রা বৌদির মেয়ে আমেরিকাবাসী তিথী ই-মেইলে আরও কিছু জানালো।
করুণাদা পেশাগত দিক থেকে মূলত: ছিলেন শিক্ষক। নারায়নগঞ্জের তুলারাম কলেজ নামক খ্যতিমান কলেজের। স্বামী স্ত্রী দু’জনাই শিক্ষকতা করতেন। বৌদির দাবী নারায়নগঞ্জেই তাদের দুজনের সাথে আমার আলাপ পরিচয় হয়েছিল কিন্তু আজও তা স্মরণে আনতে পারছি না। তবে হ্যাঁ ১৯৭২-৭৩ নারায়নগঞ্জে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির জাতীয় সম্মেলনে যদি তাঁরা এসে থাকেন আমন্ত্রিত ও সম্মানিত অতিথি হিসেবে, তবে সেখানে সাক্ষাত হয়ে থাকতে পারে। তবে এটাও যেহেতু স্মরণে নেই ( বৌদিরও ঠিকমত মনে নেই) তাই বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারছি না।
আগেই বলেছি করুণাময় গোস্বামীর মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্যের সব চাইতে বেশী ক্ষতি হয়েছে সাহিত্যের নানা বিষয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে। রবীন্দ্রনাথ-নজরুল সম্পর্কে গবেষণা, দেশ-বিভাগ নিয়ে গবেষণা, ইতিহাস নিয়ে গবেষনা ছিলতাঁর দৈনন্দিত কার্য্য তালিকার অন্তর্গত। অবসর নিতে তিনি জানতেন না-জানতেন না সময়েরঅপচয় ঘটাতেও। তাই এক অক্লান্ত, পরিশ্রমী, নিষ্ঠাশীল ও আদর্শবান শিক্ষক-গবেষকের অভাব বাংলাদেশকে আরও বহুদিন ভোগ করতে হবে।
রবীন্দ্র সাহিত্য, রবীন্দ্র সঙ্গীত নিয়ে তিনি বিস্তর লেখালেখি করেছেন এবং কোনটাই হালাকাভাবে নয়। জ্ঞানের গভীরতা,মনের একাগ্রতা, বিষয়বস্তু রবীন্দ্রনাথের প্রতি পরম শ্রদ্ধাবোধ যেমন তাঁকে সর্বদা তাড়িত করতো-তেমনই আবার তা তাঁকে অনুক্ষণ লেখার টেবিলে নিমগ্ন করে রাখতো ।
তাই বাঙালি পাঠক-পাঠিকারা তাঁর অমূল্য রবীন্দ্র সংক্রান্ত গ্রন্থপঞ্জি পাঠে আরও বহুকাল সমৃদ্ধ হতে পারবেন। রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গে রচিত তাঁর বইগুলি হলো- বরীন্দ্র সঙ্গীতকলা, রবীন্দ্রনাথ: গান রচনার ইতিহাস, রবীন্দ্রনাথের গায়কখ্যাতি, রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রসঙ্গ, রবীন্দ্রনাট্য সঙ্গীত, রবীন্দ্র-সঙ্গীত পরিক্রমা, রবীন্দ্রনাথ হান্টিটন ও ভারতভাগ, রবীন্দ্র নাথের প্যালেষ্টাইন ভাবনা প্রভৃতি।
অত:পর নজরুল প্রসঙ্গেও তিনি বেশ কয়েক খানি বই লেখেন। যেমন, নজরুল সঙ্গীতের জনপ্রিয়তার স্বরূপ সন্ধান, নজরুল সঙ্গীত প্রসঙ্গ, Aspects of Nazrul Songs, Kazi Nazrul Islam: A Profile ইত্যাদি।
করুণাময় গোস্বামী জন্মেছিলেন ১৯৪৩ সালের ১১ মার্চ ময়মনসিংহ জেলার গোঁসাই চান্দুরা গ্রামে। ১৯৬৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে এম.এ এবং পরবর্তীকালে “বাংলা কাব্যরীতির ধারায় কাজী নজরুল ইসলামের স্থান” শীর্ষক অভিসন্দর্ভের জন্য তিনি পি.এইচ.ডি ডিগ্রী লাভ করেন।
সঙ্গীত প্রেমী করুণাদা যথাযথভাবে সঙ্গীতকে হৃদয়ঙ্গম করার মানসে শিক্ষকের কাছে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের ধ্রুপদীসঙ্গীত শিখেছেন পরম নিষ্ঠার সাথে। তাঁর রবীন্দ্র সঙ্গীত শিক্ষক সেবাষ্টিয়ান পেরেরার কাছেপাশ্চাত্য সঙ্গীত এবং ওস্তাদজীর কাছে খেয়াল শেখেন তিনি।
রবীন্দ্র প্রেমী সাহিত্যিক,রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লেখার লেখকের সংখ্যা বাংলাদেশে বিপুল কিন্তু তাঁদের মধ্যে অসাধারণ যাঁরা তাঁদের মধ্যে বিশিষ্ট বা বিশিষ্টতম হলেন করুণাময় গোস্বামী। ক্লান্তিহীনভাবে তিনি লিখেছেন রবীন্দ্রনাথের জীবনের, তাঁর সাহিত্যের, তাঁর কাব্যের, তাঁর সঙ্গীতের, তাঁর শিল্প সম্পর্কে সর্বাধিক সংখ্যক বহুমাত্রিক গ্রন্থ। রাজনীতিতে সার্বক্ষণিক কাজ এবং দীর্ঘকাল দফায় দফায় কারাবাসের কারণে (যদিও এগুলিই একমাত্র কারণ নয়) বইগুলো দেখা বা পড়া হয়ে ওঠে নি।
নিশাত জাহান রানার কল্যাণে এও জানলাম যে রবীন্দ্রনাথের অর্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষেও করুণাময় গোস্বামী একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন The art of Tagore Songs নামে। তাঁর আর একটি উল্লেখযোগ্য অনুবাদ গ্রন্থ হলো “ভারতীয় সংস্কৃতিতেইসলামের প্রভাব”। তিনি বাংলা ভাষায় আফ্রিকার কবিতা ও গল্পের পথিকৃৎ অনুবাদক বলেও সুধিমহলে পরিচিত।
২০১৫ সালে তিনি রচনা বা প্রকাশ করেন অসাধারণ দরদ দিয়ে লেখা “ভারত ভাগের অশ্রকণা”। গ্রন্থটি সম্প্রতি আমার হাতে আসায় চারশতেরও অধিক পৃষ্ঠা সম্বলিত বিশাল বইটি পড়ার আমার সুযোগ হয়েছে। পড়তে পড়তে আমার মনে হয়েছে আমি সুকান্ত ভট্টাচার্য্যরে কবিতা পড়ছি অথবা মুলকরাজ আনন্দ ও তৎকালীন বাম প্রগতিশীল ঊর্দু ঔপন্যাসিকদের উপন্যাস পড়ছি।
করুণাময় গোস্বামী তাঁর বিজ্ঞ জনোচিত মানবিক চেতনা থেকে জীবনের প্রথম থেকেই অসাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মনিরপেক্ষতাকে আত্মস্থ করতে পেরেছিলেন-হিন্দুর বা মুসলমানের, বৌদ্ধ বা খৃষ্টানের, নারীর বা পুরুষের না হয়ে বইগুলির ছত্রে ছত্রে প্রকাশ করেছেন যে তিনি আধুনিক জগতের একজন মানুষ এবং ভালবাসেন মানুষকে তার ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ ও জাতীয়তা নির্বিশেষে।
এই চিন্তা থেকেই তিনি যেমন নিন্দা করেছেন ১৯৪৬ সালের ১৬ আগষ্ট তারিখে সংঘটিত কলকাতার ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার যাতে হাজার হাজার নিরীহ হিন্দুকে হত্যা করা হয়, বাড়ীঘর পুড়িয়ে ছাই করা হয়। তার যেমন কঠোরভাবে নিন্দা জানিয়েছেন তেমনই আবার সমদৃঢ়তায় বিহার, আহমেদাবাদ, লাহোর, গুজরাটের হিন্দু সৃষ্ট দাঙ্গাগুলিরও তীব্র বিরোধিতা করতে এতটুকুও পিছপা হন নি।
১৯৪৭ সালের আগষ্টে মুসলিম লীগ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্র ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিত্তত্বের বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভারতের পূর্বে ও পশ্চিমে যে দুটি পাকিস্তান ও মাঝখানে ভারত নামে স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হলো তাতে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ ভারত ছাড়লো বটে কিন্তু উভয় রাষ্ট্রে সাম্প্রদযিকতার যেভয়াবহ প্রসার ঘটলো তার পরিণতিতে লক্ষ লক্ষ হিন্দু মুসলমানের দেশ ত্যাগের যে করুণ কাহিনী তাঁর “ভারত বিভাগ ও অশ্রুকণা” বইটিতে মূর্ত হয়ে উঠেছে কোন বাঙালি সাহিত্যিক, অন্তত: আমার জানামতে, তেমনকরে ঐ করুণ ইতিহাস আজও তুলে ধরতে পারেন নি।
এবারে উল্লেখ করি তাঁর প্রকাশিত বইগুলির সাম্প্রদায়ের তালিকা:
১। রবীন্দ্রনাথ হান্টিংটন ও ভারত ভাগ (২০১৫)
২। History of Bengali Songs-২০১৫,
৩। বাংলা গানের বর্তমান ও আরও, ২০১৫,
৪। সঙ্গীত কোষ, ১৯৮৫, ২০০৪ ও ২০১৩,
৫। বাংলা গানের বিবর্তন-১৯৯৩, ২০১১,
৬। রবীন্দ্র সঙ্গীতকলা ১ম ও ২য় খ-, ২০১৩,
৭। রবীন্দ্রনাথ; গান রচনার ইতিহাস ২০১১,
৮। রবীন্দ্রনাথের গায়কখ্যাতি,
৯। The Art of Tagore Songs,
১০। রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রসঙ্গ,
১১। রবীন্দ্রনাথ নাট্য সঙ্গীত,
১২। রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিক্রমা,
১৩। রবীন্দ্রনাথের প্যালেন্টাইন ভাবনা ও অন্যান্য
১৪। বাঙালির গান: নাগরিক ও লৌকিক,
১৫। Evoluation of Bengal Music,
১৬। বাংলা কাব্যগীতির ধারায় কাজী নজরুল ইসলামের স্থান,
১৭। নজরুল সঙ্গীতের জনপ্রিয়তার স্বরূপ সন্ধান,
১৮। নজরুল সঙ্গীত প্রসঙ্গ,
১৯। Introducing Kazi Nazrul Islam,
২০। Kazi Nazrul Islam: A Biography,
২১। Aspects of Nazrul Songs,
২২। Kazi Nazrul Islam: A Profile,
২৩। প্রসঙ্গ বাংলা গান এবং
২৪। রোদলেয়ার পাউন্ড ও এলিয়ট,
২৫। বাংলাগান এবং
২৬। বুদ্ধদেব বসুর কাব্যনাট্য।
এগুলি সবই গবেষণামূলক বই।
এবারে উপন্যাস: এক ভারতভাগ ও অশ্রুকণা এবং দুই, লাহোরের রহিম খের।
সম্পাদনা ও সংকলন প্রশ্ন: ১। বাংলাগানের স্বরলিপি ইতিহাস, ২। নির্বাচিত রবীন্দ্র সঙ্গীত স্বরলিপি, ৩। আবদুল আহাদ স্মারক গ্রন্থ, ৪। নজরুল সংগীতের তালিকা, ৫। নির্বাচিতনজরুল শিশুসাহিত্য, ৬। নজরুলের শিশুতোষ কবিতা, ৭। বাংলা সংস্কৃতির শতবর্ষ এবং ৮। নারায়নগঞ্জের ইতিহাস।
অত:পর সংকলন এবং অডিও ১। বাংলা গান: ধ্বনি ইতিহাস, ২। বাংলা গান: পুরোনো বৈভব, ৩। History of Bengali Music in Sound এবং ৪। Splendour of Old Bengali Songs.
১। ভারতীয় সংষ্কৃতিতে ইসলামের প্রভাব,
২। আফ্রিকার গল্প এবং আফ্রিকার কবিতা।
কলাম সংকলন
এক. রঙ্গবঙ্গ; দুই. রঙ্গদর্শীর ব্যঙ্গ কড়চা; তিন. কতো অজানারে (প্রথম খ-) ও চার. কতো অজানারে (দ্বিতীয় খ-)
শিশু কোষ
এক. কিশোর সঙ্গীত; দুই. বাংলা গানের কথা; তিন. কাজী নজরুল ইসলাম; চার. মিয়া তানসেন; পাঁচ. ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ও ছয়. আব্বাস উদ্দিন আহমেদ।
এক পর্য্যায়ে এসে ই-মেইলে করুণাদার আমেরিকা প্রবাসী মেয়ের কাছ থেকে জানতে পারলাম করুণাদা যে সকল সম্মান নানা মহল থেকে পেয়েেিলন এবং যে সম্মাননাগুলি সরকার তাঁকে দিয়েছিলেন তার তথ্য। এবং সেই সাথে কিছু পরিবার পঞ্জী।
১৯৯৯ সালে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত Groves of Dictionary of Musie & Musicians গ্রন্থে ১০,০০০ শব্দ সম্বলিত এট্রি প্রদান করেন।
বিবিসির Twenty Great Beagalis গ্রন্থে কাজী নজরুল ইসলাম বিষয়ক এন্ট্রি করুণাময় গোস্বামী প্রণীত।
১৯৯৩ সালে তিনি কলকাতায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ উৎসবের প্রথম অধিবেশনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রেরিত একটি ডেলিগেশনের প্রধান হিসেবে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুল সম্পর্কে ভাষণ প্রদান করেন।
২০০২ সালে ICCR এর আমন্ত্রণে Distinguished Visitor হিসেবে করুণাময় গোস্বামী ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও বাংলা গান বিষয়ে বক্তৃতা দেন।
২০১২ সালে তিনি বাংলাদেশের সরকারী ডেলিগেশনের সদস্য হিসেবে সার্ক কালচারাল সেন্টার, কলম্বো আয়োজিত ডায়াম্পোরা বিষয়ক বক্তৃতা প্রদান করেন।
তিনি বাংলাদেশ নজরুল ইনষ্টিটিউটের ট্রাষ্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন। ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য।
১৯৮৭ সালে নজরুল সঙ্গীত গবেষণার জন্য বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে নজরুল স্মৃতি স্বর্ণপদক ও পুরস্কার লাভ করেন।
২০১২ সালে করুণাময় গোস্বামী-কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নজরুল সম্মাননা অর্জন করেন।
একই বছরে (২০১২ সালে) বাংলাদেশ সরকার শিল্পকলা বিষয়ে করুণাময় গোস্বামীকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা হিসেবে একুশে পদকে ভূষিত করেন।
অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী, শিক্ষা ও গবেষণা ব্রতী, সংগীত প্রেমী করুণাময় গোস্বামী ২০১৭ সালের ২৩ জুন রাতে নিজ বাসায় বাথরুমে পড়ে গিয়ে আহত হন। তৎক্ষণাৎ তাঁকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। একটি জ্ঞানতারকা বাংলার আকাশ থেকে ছিটকে পড়লো যেন।
করুণাময় গোস্বামী রেখে গেলেন তাঁর সহধর্মিনী, নারায়নগঞ্জ কলেজের দর্শন শাস্ত্রের অধ্যাপক শিপ্রা রাণী দেবীকে এবং নানা দেশে প্রতিষ্ঠিত পাঁচটি ভাইকে; পুত্র সায়ন্তন, পুত্রবধূ স্বর্ণালী, তাদের দুই সন্তান সায়নী ও সোহমকে, একমাত্র কন্যা তিথী গোস্বামী ও তার স্বামীড. কৌশিক রায় এবং দুই দৌহিত্রী আরাত্রিকা এবং অর্ণাভাকে।
পুত্র, পুত্রবধূরা থাকেন কানাডায়, কনে জামাইরা আমেরিকায়।
এঁদেরকে ছাড়াও করুণাময় গোস্বামী রেখে গেছেন তাঁর হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী, সহকর্মী শিক্ষক-শিক্ষিকা-কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী-সমাজকর্মীসহ অসংখ্য গুনগ্রাহীকে।
আমি তাঁর বিদেহী আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করি।