কাশ্মীর হামলার প্রতিশোধের নির্দেশ মোদির
অনলাইন ডেক্স । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামা শহরে আত্মঘাতী হামলায় পাকিস্তানকে ‘চড়া মূল্য’ দিতে হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
শুক্রবার উত্তর প্রদেশের ঝাসিতে এক সভায় তিনি বলেন, ‘হামলাকারীদের শাস্তি পেতেই হবে। ঘৃণ্য এ কাজের প্রায়শ্চিত্ত তাদের করতেই হবে। কেউ পার পাবে না। কোনো রাখঢাক না রেখে পাল্টা প্রতিশোধ নিতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন মোদি।
প্রধানমন্ত্রীর সুরে সুর মিলিয়ে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেছেন, দোষীদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।
পাকিস্তানকে দেয়া ‘মোস্ট ফেভারড নেশন’র (এমএফএন) মর্যাদাও প্রত্যাহার করে নিয়েছে ভারত। সকালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ কথা জানান অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তিনি বলেন, তার দেশ পাকিস্তানকে একঘরে করতে কূটনীতিকভাবে যা যা করা দরকার তার সবই করবে।
বৃহস্পতিবার পুলওয়ামায় সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) গাড়িবহরে বিস্ফোরক বোঝাই একটি গাড়ি হামলায় ৪৬ জন আধা সামরিক সেনা নিহত হন। কয়েক দশকের মধ্যে এটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা। জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহম্মদ হামলার দায় স্বীকার করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর হুমকির কিছু সময় পরেই ভারতে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সোহেল মাহমুদকে তলব করা হয়। পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলে তাকে বলেন, পাকিস্তানে আশ্রিত জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে পাকিস্তানকে তার ফলভোগ করতে হবে।
বোমা হামলার ঘটনায় পাকিস্তান জানিয়েছে, ওই ঘটনা নিন্দাজনক ও অসমর্থনীয়। এর সঙ্গে পাকিস্তান কোনোভাবেই জড়িত নয়। পাকিস্তানের এ ব্যাখ্যা যে ভারতের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, পাক রাষ্ট্রদূতকে তা জানানো হয়।
পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার অজয় বিসারিয়াকেও ভারতে ডেকে পাঠানো হয়েছে। কাশ্মীরে এ নৃশংসতম ঘটনার পর রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে বিরোধীরা সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার নিহত জওয়ানদের স্মরণে নীরবতা পালনের পর উত্তর প্রদেশ সফররত কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াংকা গান্ধী লক্ষ্ণৌয় তার নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন বাতিল করেন।
শুক্রবার কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেন, এই কঠিন সময়ে রাজনীতি ভুলে তার দল সরকারের পাশে রয়েছে। কংগ্রেসসহ সব বিরোধীই সরকারের পাশে আছে। সেনাবাহিনীর পাশে আছে।
শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অরুণ জেটলি জানান, ভারত কাশ্মীরে ভয়াবহ এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে জবাবদিহি করাতে বদ্ধপরিকর। ১৯৯৬ সালে দেশটিকে দেয়া এমএফএন তকমাও তুলে নেয়ার কথা জানান তিনি।
বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া : যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া জার্মানি, মালদ্বীপ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন- বিশ্বের সব মহল থেকেই পুলওয়ামার জঙ্গি হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে। অবিলম্বে জঙ্গিদের মদদ এবং নিরাপদ আশ্রয় দেয়া বন্ধ করতে পাকিস্তানকে হুশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
দেশটির প্রেস সেক্রেটারি সারা স্যান্ডার্স বলেছেন, পাকিস্তানের মাটিতে কার্যত সব জঙ্গিগোষ্ঠীর কাজকর্ম বন্ধ করতে হবে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, বর্বর এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাচ্ছি। ঘাতক ও এর পৃষ্ঠপোষকদের অবশ্যই সাজা হওয়া উচিত।
তবে পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেং সুয়াং বলেন, পুলওয়ামায় সন্ত্রাসবাদী হামলার সব খবর চীনের কাছে রয়েছে। আমরা সন্ত্রাস দমনে প্রতিবেশী সব দেশের পাশে থাকব।
জইশ নেতা মাসুদ আজহারের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তিনি বলেন, এই বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১২৬৭ কমিটির স্পষ্ট কিছু শর্ত রয়েছে। সেটাই মেনে চলবে চীন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাঁধে সেনাদের কফিন : নিহত সেনাদের কফিন বহন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ হামলার বদলা নিতে যা করার সবই করবে সরকার। শুক্রবার জাতীয় পতাকার মোড়া কফিন কাঁধে নিয়ে এমন আশ্বাস দেন তিনি। তিনি যে কফিনটি কাঁধে নেন তার অন্যদিকে ছিলেন পুলিশের মহাপরিচালকসহ অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
মূলহোতা আফগানিস্তানের : কাশ্মীর হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হলেন জইশের শীর্ষস্থানীয় কমান্ডার এবং আফগানিস্তান যুদ্ধের অভিজ্ঞ বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ আবদুল রশিদ গাজী। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। ধারণা করা হচ্ছে, গত বছরের ডিসেম্বরে এ হামলার পরিকল্পনা শুরু হয়।
হামলার আগে ৩ মাসের ট্রেনিং : প্রায় তিন মাস ধরে গাড়ি নিয়ে আত্মঘাতী হামলার অনুশীলন করেছিল আত্মঘাতী জঙ্গি আদিল আহমেদ (২০)। ঘটনাস্থল থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে তার গ্রাম গান্ধীবাগ। বাবা গোলাম হাসানের ছোটখাটো ব্যবসা। একাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে কলেজ ছেড়ে গ্রামেরই একটি কাঠচেরাই কলে কাজ করত আদিল।
জঙ্গিদের প্রতি অনেক আগ থেকেই ছিল আকর্ষণ। হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যায় গত বছরের মার্চে। ১৯ মার্চ স্থানীয় থানায় নিখোঁজের অভিযোগ জানান তার বাবা। কয়েকদিন পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় হাতে একে-৪৭ নিয়ে মৃত এক জঙ্গির নামে (ওয়াকাস কমান্ডার) আত্মপ্রকাশ করে আদিল।