কিমের আমন্ত্রণে সাড়া! চমকে দিলেন ট্রাম্প
আন্তর্জাতিক ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
একে অপরকে হুমকি দিতেই তাঁরা অভ্যস্ত। সেই ‘বুড়ো খ্যাপা লোকটা’ আর ‘লিটল রকেট ম্যান’ মুখোমুখি আলোচনার টেবিলে! তা-ও আবার হয়? বৃহস্পতিবার রাতে হোয়াইট হাউস তেমন খবরই দিয়েছে।
সব ঠিক থাকলে আর দু’মাস পরে বৈঠকে বসবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (যাঁকে এক সময় ‘বুড়ো খ্যাপা লোক’ বলেছিলেন কিম) এবং উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন (যাঁকে ‘লিটল রকেট ম্যান’ আখ্যা দেন ট্রাম্প)। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে এসেছিল দক্ষিণ কোরিয়ার এক প্রতিনিধিদল। ওই দলে থাকা দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা চুং ইউ ইয়ং ট্রাম্পকে ওই বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানান। কিমের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার যে প্রতিনিধিদল উত্তর কোরিয়ায় দেখা করেছিল, তাতে ছিলেন চুং। তাঁর দাবি, আলোচনার টেবিলে পরমাণু অস্ত্র এবং ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা নিয়ে কথা বলার আগ্রহ দেখিয়েছেন পিয়ংইয়ংয়ে র শাসক।
হোয়াইট হাউসের তরফে প্রেস সচিব সারা স্যান্ডার্স জানান, মে মাসের শেষে কিম জং উনের সঙ্গে দেখা করার আমন্ত্রণ পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট। স্থান ও সময় পরে ঠিক হবে। এই খবরই যথেষ্ট ছিল। এই সাক্ষাৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে নানাবিধ জল্পনা। বলা হচ্ছে, কোরীয় যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে উত্তর কোরিয়া ও আমেরিকার ৭০ বছরের টানাপড়েনের কূটনীতির ইতিহাসে এমন চাঞ্চল্যকর মুহূর্ত দেখার জন্য মুখিয়ে আছে গোটা বিশ্ব।
সিআইএ-র প্রাক্তন প্রধান এবং প্রতিরক্ষাসচিব লিওন পানেত্তার মতে, ‘‘এটা ইতিবাচক পদক্ষেপ। মনে হয় সারা বিশ্ব স্বস্তির শ্বাস ফেলছে!’’ কূটনীতিকদের ধারণা, ট্রাম্পের সামনে এ বার কঠিন পরীক্ষা। উত্তর কোরিয়ার বহু দিনের দাবি ছিল, আন্তর্জাতিক মঞ্চে স্বীকৃতিলাভ। এই সাক্ষাৎ তাদের সে সুযোগ করে দেবে। আর ট্রাম্পের হাতে রয়েছে ঐতিহাসিক কূটনীতির সমীকরণ বুঝে ‘জয়’ ছিনিয়ে নেওয়ার সুযোগ। সেটা তিনি কতটা পেরে উঠবেন, তা নিয়ে আবার সংশয় রয়েছে। ট্রাম্প নিজের খেয়ালখুশিতে যা ইচ্ছে বললে নিজেই ফাঁদে পড়বেন না তো? হোয়াইট হাউসের অন্দরে এখন জোর জল্পনা এটাই। কূটনীতিকরা বলছেন, বড় চিন্তা উত্তর কোরিয়ার শাসক কিমকে নিয়েও। কারণ তিনি কোনও রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে কখনও বৈঠকেই বসেননি।
দুই দেশের মধ্যে যে ভয়ঙ্কর সন্দেহের বাতাবরণ রয়েছে, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। বিদেশনীতি বিশেষজ্ঞ বা পেন্টাগনের অফিসার— তাঁদের একাংশ বলছেন, ‘‘দু’দেশের মধ্যে অবিশ্বাসের গহ্বর এতটাই গভীর, যে কোনও একটি বিষয়ে সহমত হতে গেলে দু’পক্ষকেই অসম্ভব ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে।’’
এই ‘ঐতিহাসিক’ বৈঠক নিয়ে উত্তেজিত দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন। তিনি বলেছেন, ‘‘একটা আশ্চর্য ঘটনা ঘটতে চলেছে।’’ উত্তর কোরিয়ার মিত্র দেশ চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গেং শুয়াং বলেছেন, ‘‘বৈঠকের ভাবনা অবশ্যই ইতিবাচক। রাজনৈতিক সাহস দেখানোর সময় এসেছে।’’ জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ফোনে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেন। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে কিমের উপরে চাপ বাড়ানোর পথ থেকে ট্রাম্প যেন সরে না আসেন— অনুরোধ জানান তিনি। বৈঠকের সিদ্ধান্তে স্বাগত জানিয়েছে ভারতও। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের বক্তব্য, ‘‘কোরীয় উপদ্বীপ অঞ্চলে কূটনৈতিক পদক্ষেপ এবং আলোচনার মাধ্যমে শান্তি এবং স্থিতি আনার সব প্রয়াসকে ভারত সমর্থন করে। আমরা আগেও বলেছি, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র সম্প্রসারণের বিষয়ে নজর দেওয়া হোক। আশা করছি এতে গোটা এলাকায় উত্তেজনা কমবে।’’