খালেদা কেঁদে উঠতেই শ্লোগান, আমার নেত্রী আমার মা জেলে যেতে দেবোনা।

 

 

অনলাইন ডেস্ক  কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

ছেলেদের কথা স্বরণ করে আবেগী হয়ে পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এসময় কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে তিনি দুই ছেলের স্বৃতিচারণ করেন।

আজ দুপুরে রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় স্বাগত বক্তব্যে দেয়ার সময় দুই ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও প্রয়াত আরাফাত রহমানের কথা স্বরণ করতেই কেঁদে দেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

এসময় তাকে সাত্বনা দিয়ে নেতাকর্মীরা শ্লোগান দেন ‘আমার নেত্রী আমার মা, জেলে যেতে দেবো না’। ‘মা তুমি এগিয়ে চলো আমরা আছি তোমার সাথে।’

এ সময় খালেদা জিয়া তারেক রহমান ও কোকোর ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘আমার এক ছেলে (আরাফাত রহমান কোকো) মারা গেছে। আরেক ছেলে (তারেক রহমান) অসুস্থ। শত ইচ্ছা করলেও তাদের আমি কাছে রাখতে পারছি না। মা হয়ে এর চেয়ে কষ্টের আর কি আছে?’

নিজেকে সামলে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্তানদের মতই আমার দলের নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন এই সরকারের জুলুম-নির্যাতনের শিকার। সারাদেশের মানুষেরই ওপর দুঃশাসন, অত্যাচার, খুন, গুম, জেল-জুলুম জেঁকে বসেছে।’

তিনি বলেন, ‘মানুষ এসব থেকে মুক্তি চায়। সেজন্য তারা পরিবর্তন চাইছে। এটা অন্য কোনো পথে নয়, জনগণের ভোটের মাধ্যমেই হতে হবে।’

খালেদা জিয়া বলেন, দেশে এখনো ১/১১’র ভূত রয়েছে। বলা চলে তারা আরো বেশি করে চেপে বসে আছে। বিএনপির অনেকের ওপরও এই ভূত ভর করেছে।

তবে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান, তার দল বিএনপি শত জুলুম-নির্যাতনের মধ্যেও এক এবং ঐক্যবদ্ধ আছে।

খালেদা জিয়ার এ বক্তব্যের সময় উপস্থিত নেতারা ‘আমাদের নেত্রী আমাদের মা। জেলে যেতে দেব না; বলে স্লোগান দিতে থাকেন।

উল্লেখ্য, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জরুরি অবস্থার সময় মামলায় গ্রেফতার হয়ে এক বছর কারাগারে ছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো।

 ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যান তিনি। সেখান থেকে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ইন্তেকাল করেন আরাফাত রহমান কোকো। অবশ্য মুদ্রা পাচার মামলায় বাংলাদেশের আদালতে ২০১১ সালে তার ছয় বছর কারাদণ্ডও হয়।

কোকো এমন সময়ে মারা যান যখন মা খালেদা জিয়া ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের প্রতিবাদে আন্দোলন করতে গিয়ে গুলশানের কার্যালয়ে ২০১৫ সালের ৩ জানুয়ারি থেকে অবরুদ্ধ ছিলেন। সরকার তার বাসার সামনে বালুর ট্রাক দিয়ে এবং বাসার গেটে তালা লাগিয়ে রাখে।

সে সময়ে ছেলের মৃত্যুর সংবাদে অচেতন হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া। পরে ছেলের মরদেহ আসার পর কফিন ধরে অঝোরে কেঁদেছিলেন তিনি।

এরআগে বেলা ১১টা ১০ মিনিটে খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে নির্বাহী কমিটির সভা শুরু হয়। শুরুতেই ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বরেণ্য ব্যক্তিদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব আনা হয়।

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন শোক প্রস্তাব পাঠ করেন। এরপর তার স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

এর মধ্যে রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সংবাদকর্মী, দলের নেতাকর্মী এবং শুভানুধ্যায়ীদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন বিএনপির নেতারা।

বেলা ১১টা পাঁচ মিনিটের দিকে খালেদা জিয়া হোটেল লা মেরিডিয়ানে উপস্থিত হন। এ সময় আগে থেকে হোটেলের বল রুমে উপস্থিত বিএনপির সিনিয়র নেতা ছাড়াও নির্বাহী কমিটির আমন্ত্রিত সদস্যরা খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানান। তিনিও হাত নেড়ে তাদের শুভেচ্ছার জবাব দেন। এরপর নিজের আসন গ্রহণ করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!