মাহবুবুল হক বাবলু’র ৩১তম শাহাদাত বার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি
আজ ৯মার্চ’২০১৮ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সংগঠক, প্রথম নিবাচিত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক বাবলু ভায়ের ৩১তম শাহাদাত বার্ষিকী।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তথা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দুই সহদর বাবলু-নীরুর যে অবদান তা ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে । স্বাধীনতার মহান ঘোষক, মহান নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এর আহ্বানে শিক্ষা-ঐক্য-প্রগতি স্লোগানে বাবলু-নীরু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠা লগ্ন ১৯৭৯ সালের ১লা জানুয়ারী শুরু থেকে জড়িত ছিলেন।
জিয়াউর রহমান যখন বিএনপির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তখন তিনি ভবিষ্যতের নেতৃত্ব তৈরি করার জন্য এর একটি ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তাই তিনি ১লা জানুয়ারী ১৯৭৯ সালে কেন্দ্রীয় ভাবে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। তখনকার সময়ে জিয়ার জনপ্রিয়তার জন্য অনেক মেধাবী তরুন অনুপ্রানিত হয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে যোগদান করেন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ধীরে ধীরে হয়ে উঠে মেধাবীদের সমাবেশ ও প্রিয় সংগঠন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির পর বাবলু-নীরু জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সেন্ট্রাল কমিটিতে পালা ক্রমে অনেক গুরুত্বপূর্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন ।বাবলু-নীরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল কে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দুর্গে পরিণত করে শহীদ জিয়ার জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পতাকা উত্তোলন করেন। মাহবুবুল হক বাবলু ও সানাউল হক নীরু দুই সহদ্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রকালীন সময় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নামক সংগঠনটিকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে বিশাল ভুমিকা রাখেন। জীবন বাজী রেখে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের জন্য কাজ করেছেন বাবলু -নীরু।
ছাত্রলীগের অনেক পরে জন্ম নিয়েও বাবলু-নীরুর সাংগঠনিক দক্ষতা, ক্ষমতার কারণে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নামক সংগঠনটি অল্প সময়ের মধ্যে হয়ে উঠে ছাত্র রাজনীতির এক অপ্রতিরোধ্য ও অপ্রত্যাশিত মহাশক্তি। সম্ভাবনাময়ী মেধাবী ছাত্রদের নিয়ে ১৯৭৯ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সে সময় ছাত্ররাজনীতি করতে গিয়ে প্রচন্ড বাধার সম্মুখীন হয়। বিরোধী ছাত্রসংগঠন মূজিববাদী ছাত্রলীগ, জাসদ ছাত্রলীগ, বাসদ ছাত্রলীগ সহ সংগঠনগুলোর লাঠিয়াল বাহিনীর প্রতিনিয়ত আক্রমন নির্যাতনের মুখে পড়ে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। খুব বেগ পেতে হয় ছাত্রদল নেতা কর্মীদের। কিন্তু প্রেসিডেন্ট জিয়ার সততা, কর্মনিষ্ঠা, জনপ্রিয়তা এসে পালে হাওয়া লাগায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সমাজে জিয়ার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়তে থাকে।
প্রেসিডেন্ট জিয়া শহীদ হলে এবং এরশাদের সামরিক শাসনের সময় সেই ছাত্রদল ও বিএনপি ভাঙ্গার খেলায় এরশাদ মেতে ওঠেন। অনেক নেতাই হালুয়া-রুটি খেতে বিএনপি ও ছাত্রদল ছেড়ে যান। এরশাদের আমলে এক সময় বিএনপি ও ছাত্রদল নেতৃত্ব শুন্যতার দিকে পথ বাড়ায়। ইতিমধ্যে বাবলু-নীরুর দুঃসাহসিক ভূমিকায় বেগম খালেদা জিয়া এসে দলের হাল ধরেন। আর এই শূন্যতার প্লাটফর্ম থেকেই উত্থান ঘটে পলিটিক্স এর ক্যারিশ্মেটিক রাজপূত্র বাবলু-নীরুর!
বাবলু-নীরুর অপরাধ ১৯৮২ সালের পর বিএনপ ‘র ও ছাত্রদলের সিনিয়র নেতারা এরশাদের সঙ্গে চলে গেলেও মাহবুবুল হক বাবলু ও সানাউল হক নীরুর নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তারুণ্যের ঢল নেমে ছন্দায়িত কম্পনের ঝড় তুলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ব্যানারে হ্যমিলনের বাঁশিওয়ালার মত। ১৯৮২সালের পর বেগম খালেদা জিয়া ভঙ্গুর-বিধ্বস্ত দুর্বল বিএনপিকে নিয়ে রাজপথে নামলে, শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রদের মধ্যে তার নেতৃত্বের প্রতি মুগ্ধ হয়ে তারুণ্যের স্লোগানে শক্তিশালী এক ছাত্র সংগঠনের নাম হয়ে ওঠে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মাহবুবুল হক বাবলু ও সানাউল হক নীরুর নেতৃত্বে।
১৯৮৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে সামরিক স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন দানা বেধে উঠে, সেই আন্দোলনের অগ্নিঝরা দিনের সূচনা কারি বাবলু -নীরু। ১৯৮৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী রাত সাড়ে ১১টা দিকে বসুনিয়ার লাশ গুম করে দেবার উদ্দেশ্যে পুলিশ ভ্যানে তোলা হয়েছিলো । জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নেতা সানাউল হক নীরু নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, জীবন কে মরণের কাছে জমা দিয়ে পুলিশকে তাড়িয়ে দিয়ে একাই সেই ভ্যান থেকে বসুনিয়ার লাশ কাঁধে করে নিয়ে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আজও রাউফুন বসুনিয়ার তোরণ দাড়িয়ে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের নিরব সাক্ষী হিসাবে নীরুর বীরত্ব গাথা ইতিহাসে নিয়ে। ১৯৮৫ সালে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যমনি ছিলেন বাবলু-নীরু। স্থানীয় জন প্রশাসনকে অকার্যকর করার লক্ষ্যে স্বৈরাচারের নীল নঁকশা বাস্তবায়নের তীব্র বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ছাত্র জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন, সেই আন্দোলনের অগ্রভাগে থেকে বাবলু -নীরু রাজপথে স্বৈরশাসকের মসনদ কাঁপিয়ে দিয়ে ছিলেন।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা বাবলু-নীরুর প্রতিরোধের কারণে পুলিশ বসুনিয়ার লাশ যেমন গুম করতে পারেনি তেমনি ভাবে বাবলু-নীরুর প্রতিরোধের কারণে এরশাদের নতুন বাংলা ছাত্রসমাজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দখলের চেষ্টা ব্যর্থ হয় তখন বাধ্য হয়ে এরশাদ নতুন বাংলা ছাত্র সমাজের বিলুপ্ত ঘোষণা করে। তখন থেকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা বাবলু – নীরু স্বৈরাচার এরশাদের টার্গেটে পরিণত হন। ১৯৮৫ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাবলু -নীরুকে গ্রেফতার করা হয় । সানাউল হক নীরু কে গ্রেফতার করে রাজশাহী কারাগার এবং মাহবুবুল হক বাবলু কে কুমিল্লা কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয় স্বৈরাচার এরশাদ আন্দোলন দমন করার জন্য। বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক নীরুর ১২০দিনের ডিটেনন্সন মেয়াদ শেষ হলে, সানাউল হক নীরু ছাড়া পেলে ফুলের মালা নিয়ে নেতা কর্মীরা গেলে আবার জেল গেট থেকে গ্রেফতার করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে নীরুর আবারো ১২০দিনের ডিটেনন্সন দিয়ে জেল গেট থেকে গ্রেফতার করা হয়।
বাবলু -নীরুর অপরাধ এরশাদের নতুন বাংলার সমাজ থেকে ফিরে আসা ছাত্র নামধারীদের জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পদ দিয়েছিলেন। এরশাদের নতুন বাংলার সমাজ থেকে ফিরে আসা ছাত্র নামধারীদের জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে না নিলে তারা হয়তো মুজিবাদী ছাত্রলীগ/জাসদ ছাত্রলীগ যোগ দিত সে চিন্তা মাথায় রেখে তাদের জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে নেওয়া হয়। এরশাদের নতুন বাংলার সমাজ থেকে ফিরে আসা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নবাগতরা সিনিয়র হওয়ার পরো সহ-সাধারন সম্পাদক, সহ-আন্তজাতিক সম্পাদক, সদস্য সহ কিছু পদ দেওয়া হয়। নীরু – বাবলু ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িতদের ক্যাম্পাসে পুনবাসন করেছেন, যাদের পদ দিয়েছে এরাই পরে সিন্ডিকেটে পরিণত হয়ে কাল হয়ে দাড়ায় বাবলু -নীরুর জীবনে। ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলাকা থেকে জানা যায় স্বৈরাচার এরশাদের বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা ও এরশাদের নূতন বাংলা ছাত্র সমাজ থেকে ফিরে আসা ছাত্র নামধারী কিছু নেতা মাহবুবুল হক বাবলু হত্যা কাণ্ডের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন, জিয়া হলের এক নেতার দ্বারা বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা এ হত্যা কাণ্ড ঘটন, সে সময় এরশাদের বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট ছিল ছাত্র নাম ধারী কিছু নেতা, ছাত্র নাম ধারী কিছু নেতারা জেনারেল এরশাদের বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে প্রতি মাসে টাকা নিতেন। ছাত্র নাম ধারী নেতারা টাকার বিনিময়ে জেনারেল এরশাদের বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা কে ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলাকা সব হলের ছাত্র নেতাদের হলের রুম দেখে দেওয়া ছিল কাজ, সেই মোতাবেক জেনারেল এরশাদের বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা ছাত্র নেতাদের গ্রেপ্তার করতেন। সে সময় আর্মির লোকও পুলিশের পোশাক পড়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলাকায় আসতেন ছাত্র নেতাদের গ্রেপ্তার করতে। সেই ছাত্র নাম ধারী নেতারা জেনারেল এরশাদের ৯ বছর শাসন আমলে এক বারও গ্রেপ্তার হননি। তারাই এখন বিএনপির বড় বড় নেতা । কিন্তু সত্য হল পরবর্তীকালে বাবলু-নীরুর স্থাপন করে যাওয়া ভীতের উপরে দাঁড়িয়ে বহুতল রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়েছেন তাদের অধম সাগরেদরা, একসময়ে যারা বাবলু-নীরুর রাজনৈতিক গ্লামার আর অসম সাহসী বীরত্ব কাব্যের কাছে ছিলেন পিছনের সারির কর্মী, যুগের আবর্তনে তারাই হয়েছেন মন্ত্রী, এমপি।
ঢাকা ইউনিভার্সিটির দর্শন বিভাগের মেধাবী ছাত্র মাহবুবুল হক বাবলু ১৯৮২ সালের ১৫ই অক্টোবর ভালবেসে বিয়ের করেন ঢাকা ইউনিভার্সিটির ইতিহাস বিভাগের মেধাবী ছাত্রী লুৎফুন নাহার নাজু কে। মাহবুবুল হক বাবলুর সহধর্মিণী শামসুন নাহার হলের ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী ছিলেন। গনতন্ত্র মনা ছাত্রদল নেতা ছাত্রনেতা মাহবুবুল হক বাবলু কখনো সহ-ধর্মিণীর ব্যক্তি স্বাধীনতাই হস্তক্ষেপ করেননি। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম সফল করার লক্ষে প্রতিটি ছাত্র সংগঠনের সাথে লিয়াজো রাখতেন, প্রতিটি ছাত্র সংগঠনের সম্মেলনে অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখতেন, আন্দোলন-সংগ্রামের মিছিলের প্রিয় মানুষটি ছাত্রদল নেতা মাহবুবুল হক বাবলু। ১০ই মার্চের ধর্মঘট কে বানচাল করার জন্য স্বৈরাচার এরশাদের বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা ও এরশাদের নূতন বাংলা ছাত্র সমাজ থেকে ফিরে আসা ছাত্র নামধারী বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট মহসিন হলে ১৯৮৭ সালের ৯ই মার্চ কাছ থেকে গুলি করে ও পরে পরিকল্পিত ভাবে আসল ঘটনা আড়াল করার জন্য বোমা ফাটিয়ে আহত হিসাবে চালিয়ে দেবার চেস্টা করে। আহত এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের বীর সেনানি, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রথম নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল হক বাবলু কে পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পিজি হাসপাতালে তিনি মারা যান। মাহবুবুল হক বাবলু কে দেখতে পিজি হাসপাতালে ছুটে আসেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সে দিন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মাহবুবুল হক বাবলু কে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সংগঠক হিসাবে ঘোষণা করেন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সংগঠক মাহবুবুল হক বাবলু’র মৃত্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের বীর সেনানি মাহবুবুল হক বাবলু কে সমাধিত করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মসজিদের পাশে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে কবর খনন করা হয় কিন্তু এরশাদের পেটুয়া বাহিনীর ব্যাপক প্রতিরোধের কারনে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে সমাধিত করা সম্ভব হয় নাই। পরে মাহবুবুল হক বাবলুর লাশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা নিয়ে যান তার জন্ম স্থান মনোহরদীতে। সেখানেই শুয়ে আছেন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সংগঠক আপসহীন নেতা ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসের ও স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কিংবদন্তী, অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র মাহাবুবুল হক বাবলু।
এক সময়ে যারা বাবলু-নীরুর রাজনৈতিক গ্লামার আর অসম সাহসী বীরত্ব কাব্যের কাছে ছিলেন পিছনের সারির কর্মী, যুগের আবর্তনে তারাই হয়েছেন ডাকসু নেতা, মন্ত্রী, এমপি।
তারা কি জানে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সংগঠক, বাংলাদেশের তেজোদীপ্ত ও আপষহীন ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসের অন্যতম নেতা, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তীতুল্য ছাত্র নেতা মাহবুবুল হক বাবলুর সহ-ধর্মিণী লুৎফুন নাহার নাজু কোথায়?
ছাত্র নেতা মাহবুবুল হক বাবলু মারা যাওয়ার সময় তার সহধর্মিণী লুৎফুন নাহার নাজু অন্তঃস্বত্যা ছিলেন। ছাত্র নেতা মাহবুবুল হক বাবলু মারা যাওয়ার পর ১৯৮৭ সালের ১৫ই অক্টোবর জন্ম নেওয়া শিশু সন্তানটি কোথায়? তারা কি জানে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সর্বাধিক সময় কারাভোগ কারী, ছাত্রদলের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সংগঠক বাবলুর সহদ্বর ছাত্রনেতা সানাউল হক নীরু কোথায়? আমরা কি বিএনপি ও ছাত্রদলের জন্য সর্বউচ্চ ত্যাগ স্বীকার কারী বাবলু-নীরুর পরিবারটিকে মনে রেখেছি?
মাহবুবুল হক বাবলু মারা যাওয়ার ২মাস পর সানাউল হক নীরুকে গ্রেফতার করা হয়। জেলে যাবার ৭ দিনের মধ্যে দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারেন সানাউল হক নীরু সহ ছাত্রদলের ৯জন শীর্ষ নেতাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। দুঃখজনক হলো সেদিনের এই ষড়যন্ত্রের সাথে তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এবং ছাত্রদলের অনেক নেতাই সে সময়ে এরশাদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের যোগ সাজসে সানাউল হক নীরু সহ (৯ জন) বহিষ্কারের চক্রান্তে যুক্ত ছিলো। নীরু পাহাড়সম জনপ্রিয়তা থাকা সত্বেও পরবর্তীতে ডাকসু নির্বাচনে যাতে তারা অংশ নিতে না পারে এটি ছিলো তাদের সেদিনের ষড়যন্ত্রের মূখ্য উদ্দেশ্য। মূলতঃ তখন থেকেই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ধ্বংসের খেলার শুরু, যা এখনো পর্যন্ত অব্যহত আছে। জেলে থাকা অবস্থায় সানাউল হক নীরু জানতে পারেন বাবলু ভাইয়ের সহধর্মিণী নাজু ভাবীর একটি ছেলে সন্তান হয়েছে যার নাম রাখা হয়েছে নাহিন হক এবং পরবর্তীতে জেলে থাকা অবস্থায়ই সানাউল হক নীরু খবর পান নাহিন হক মারা গেছে। শুধু তাই নয় সানাউল হক নীরুর ১ম সন্তান জন্ম লাভ করে নীরু ভাই যখন জেলে। বেদনা জানানো ভাষা নেই বাবলু-নীরুর পরিবারকে আমাদের।
আর কত ত্যাগ স্বীকার করলে বিএনপি কর্মী হওয়া যাবে তা আমার জানা নাই!
১৯৮৭ সালের ৯ ই মার্চ তারিখে ছাত্রদলের শ্রেষ্ঠ সংঘঠক বাবলু ভাই শাহাদত বরণ করার পর পরই সানাউল হক নীরু কে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয় তৎকালীন স্বৈরশাসক এরশাদ। ১৯৯০ সালের মার্চ মাসে নীরুর সহধর্মিণী ফারজানা আফরোজের রিট পিটিশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে তা শুনানির প্রেক্ষিতে একটি বিশেষ আদেশের বলে এপ্রিল মাসের ৩ তারিখে নীরু মুক্তি লাভ করেন। উল্লেখ্য যে, তৎকালীন সরকার সানাউল হক নীরু কে চার বার হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে জেল গেইট থেকে পুনরায় গ্রেফতার করে এবং এর বিরুদ্ধে পরবর্তীতে হাইকোর্ট বেঞ্চ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র সচিবের বিরোদ্ধে কনটেম্পট অফ কোর্ট এর অভিযোগ এনে তাদেরকে কোর্টে হাজির হওয়ার প্রেক্ষিতে তারা কোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে ফারদার জেল গেইট থেকে আটক না করার শর্তে ছাত্রনেতা নীরুর মুক্তি নিশ্চিত হয়। হাইকোর্ট যে আদেশটি প্রদান করে পরবর্তীতে তা ডিএলআর (রেফারেন্স) হিসেবে প্রকাশিত হয়। ভবিষ্যতে রাজ বন্দিদের রিট পিটিশনের ক্ষেত্রে এটি একটি রেফারেন্স হিসেবে কাজ করবে। যারা বাংলাদেশে আইনের ছাত্র তারা এই ডিএল আর টি সম্পর্কে অনেকেই জানেন।
স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন, সংগ্রামের বীরত্ব গাথা ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসের নায়ক মাহাবুবুল হক বাবলু এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য স্বৈরশাসক এরশাদের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কবলে পড়েন, ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে পড়ে নিহত হন।বাবলু-নীরু সন্ত্রাসী ছিলেন না, ছিলেন স্বৈরশাসক এরশাদের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের জমদূত। ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সারা দেশে আন্দোলন-সংগ্রাম কামী মানুষের প্রিয় নেতা। ভাঙ্গা গড়ার সে সময়ের ছাত্র রাজনীতির ক্রান্তিকালে বাবলু-নীরু গভীর সাহসিকতার সাথে মোকাবিলা করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখেন।
বাবলু -নীরুর কারনে ছাত্রদল সেই কালে তুমুল জনপ্রিয় ছিল। একটা সময় ছিল নীরু ভাই’র নামে যত মিছিল হয়েছে ততটা মূল নেতার নামে হয় নাই। ৯০ পূর্ববর্তী সময়ে বাবলু-নীরুর সততা আর পরিশ্রমে সারা বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রদল ছড়িয়ে পরে ছিল। কখনো বা সহযোদ্ধাদের আমরণ অনশন, কখনো বা স্লোগান মুখর রাজপথ কাঁপানো মিছিল, কখনো বা বারুদের আগুনে জ্বলে ওঠা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।
বাবলু ভাইর জন্য কেঁপেছে পুরো ক্যাম্পাস। বাবলু-নীরুর জন্য কেঁপেছে স্বৈরাচারের গদি, বাবলু-নীরুর জন্য কেঁপেছে লাঠিয়াল প্রতিপক্ষের রিদস্পন্দন, সামরিক বাহিনীর গোলাবারুদ, প্রতিপক্ষের লাঠি আর সংগঠনের ভিতরের তীব্র বৈরিতা সত্ত্বেও নৈতিকতার দিক দিয়ে তারা ছিলেন আপোষহীন।
হয়তো যে প্রক্রিয়ায় তিনি উঠেছেন সেটা যুগে যুগে বিতর্কিতই থেকে গেছে, কিন্তু প্রতিপক্ষের শক্তি আর প্রতিরোধের লেভেলের তুলনায় সেই সময় হয়তো বাবলু-নীরুর সে প্রক্রিয়া বেছে নেওয়া উপায়টাই ছিল শ্রেয়।বাবলু-নীরুর দলের প্রতি প্রচন্ড রকমের আনুগত্য আর ভালবাসায় কখনো বা থেকেছেন জেলে, কখনো বা দাড়িয়েছেন সামরিক যান্তার বন্দুকের নলের সামনে, কখনো বা বাবলু-নীরু নেতা কর্মীদের নিয়ে কাঁপিয়েছেন প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনগুলোর বুক!!
আপোষের ভাষা জানা ছিল না বলেই কিনা একদিন তাকে দমাতে না পারার ভয় থেকেই শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রে এই মানুষটা প্রান হারান বাবলু ভাই। যুগে যুগে বিপ্লবী উপাধি নিয়েই বাবলু -নীরু সহদ্বর মানুষ দুটো টিকে থাকবেন তাদের বিপ্লবের পট-ভুমিতেই।
মূল লেখক: মোহাইমেন কমল
সম্পাদনায়: রবিন মাহমুদ
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। কাগজ২৪-এর সম্পাদকীয়নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য কাগজ২৪ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্যকোনও ধরনের কোনও দায় নেবেনা।
কাগজটুয়েন্টিফোর বিডি ডটকম এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।