গোপনে নিজের সব সম্পদ দান করে দিলেন চাক ফিনি
আন্তর্জাতিক ডেক্স । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
যুক্তরাষ্ট্রের চাক ফিনি একজন ধনী ব্যবসায়ী। তিনি ১৯৮২ সালে গোপনে দাতব্য কাজ চালাতে একটি সংস্থা চালু করেন। লক্ষ্য স্থির করেন গোপনে জীবনের সব সম্পদ দান করে যাবেন। এরপর জীবনের ৩৮ বছর গোপনে দাতব্য কাজ চালিয়ে গেছেন। ৮৯ বছর বয়সে এসে তাঁর লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছেন তিনি। গুড নিউজ নেটওয়ার্কের এক প্রতিবেদনে ফিনির এ মহৎ কাজের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
চাক ফিনি তাঁর ডিউটি-ফ্রি শপিং ব্যবসা থেকে বিপুল সম্পদ অর্জন করেন। কর্মজীবনে তাঁর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৬৮ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা বা ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার। নিজের সংযম ও নম্রতার জন্য বিশ্বে পরিচিত ছিলেন আইরিশ-আমেরিকান এ ব্যবসায়ী। নিজের সম্পদ থাকা সত্ত্বেও অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপন করেছেন। নিজের কোনো গাড়ি ছিল না। ছোট্ট একটি বাড়িতে থাকতেন। ভ্রমণ করতেন ইকোনমি ক্লাসে। তাঁর জুতা ছিল মাত্র এক জোড়া।
ডিউটি-ফ্রি শপার্স গ্রুপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফিনি তাঁর দাতব্য কাজগুলো প্রকাশ্যে আনতে চাননি। ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে তা অগোচরেই ছিল। তবে ১৯৯৭ সালে কোম্পানিতে যখন নিজের শেয়ার বিক্রি করেন, তখনই তাঁর পরিচয় জানাজানি হয়ে যায়। তবে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিনি অনেকটাই গোপন রাখেন তাঁর কার্যক্রম।
সম্পদের সঙ্গে আসে দায়িত্বশীলতা। মানুষকে অবশ্যই নিজেকে ঠিক করতে হবে এবং দায়িত্বের বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে যে তাদের সম্পদ অন্য মানুষের জীবনকে উন্নত করতে পারে।
ওই বছরেই নিজের পরিচয় প্রকাশ করে কিছু ভালো কাজ করার সুযোগ সামনে এলে ফিনি সে সুযোগ কাজে লাগান। নিউ জার্সিতে জন্ম নেওয়া এই ব্যবসায়ীর বায়োগ্রাফি লেখেন কনর ও’ক্লেরি।
তাঁর লক্ষ্য ছিল ধনী ব্যক্তিদের কাছে তাঁর বায়োগ্রাফির মাধ্যমে জীবদ্দশায় দাতব্য কাজ চালানোর জন্য ‘গিভিং হোয়াইল লিভিং’ কর্মসূচির প্রচার চালাবেন। ২০০৭ সালে সাবেক আইরিশ প্রধানমন্ত্রী বার্টি আহরেন ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিনে তাঁর বইটির উদ্বোধন করেন।
এ সপ্তাহে ফিনি ফাউন্ডেশন ও দ্য আটলান্টিক ফিলানথ্রপিস অর্থশূন্য হয়ে পড়ে।
ফিনি যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, নিজের চোখে লক্ষ্য পূরণ হতে দেখে তিনি খুশি। তিনি অন্য ধনী ব্যক্তিদের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত নয়। নিজের সম্পদ জীবদ্দশায় বিলিয়ে দেওয়ার অভিজ্ঞতা নেওয়া উচিত।
মহৎ কাজের অনুপ্রেরণার প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে ফিনি বলেন, সম্পদের সঙ্গে আসে দায়িত্বশীলতা। মানুষকে অবশ্যই নিজেকে ঠিক করতে হবে এবং দায়িত্বের বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে যে তাদের সম্পদ অন্য মানুষের জীবনকে উন্নত করতে পারে। অন্যথায় ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য জটিল সমস্যা তৈরি হবে।
ফিনি তাঁর সম্পদের মধ্যে ৩৭০ কোটি ডলার উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দান করেছেন। এর মধ্যে কর্নেল ইউনিভার্সিটি পেয়েছে ১০০ কোটি ডলার। কোরিয়ান যুদ্ধের পর তিনি সেখানে বিনা মূল্যে পড়াশোনা করেছিলেন। তাঁর সম্পদের মধ্যে ৮৭ কোটি ডলার বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা পেয়েছে।
আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন প্রকল্পে তিনি ১৯০ কোটি ডলার দান করেছেন। লিমেরিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে তিনি সাহায্য করেছেন। ফিনি পরিবার উত্তর আয়ারল্যান্ড থেকে আমেরিকায় এসেছিল।
সরাসরি আর্থিক প্রভাব ছাড়াও ফিনির দাতব্য কাজ বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় থাকা বিল গেটস ও ওয়ারেন বাফেটকে ‘গিভিং প্লেজ’ উদ্যোগ নিতে অনুপ্রাণিত করেছে। এ উদ্যোগে বিশ্বের শীর্ষ ধনীরা তাঁদের অর্ধেক সম্পদ দাতব্য কাজে লাগানোর প্রতিশ্রুতি দেন।
ফিনির জীবনের লক্ষ্য পূরণের বিষয়টি প্রশংসা করেন ওয়ারেন বাফেট বলেছেন, ‘আমার ও বিল গেটসের নায়ক ফিনি। তাঁর সবার নায়ক হওয়া উচিত।’