ঘাটাইলে বড় দু’দলেরই আন্তঃকোন্দল: প্রার্থী একাধিক
এম.এস.এস.সৌরভ, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
টাঙ্গাইল-৩ আসনে বড় দু’দলেই অন্ত:কোন্দল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আমেজে মেতে ওঠেছে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও অন্যান্য দলের প্রার্থীরা বিভিন্ন কৌশলে আগাম নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা স্ব-স্ব অবস্থান থেকে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, সেবামূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডসহ দোয়া মাহফিল ও ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টারের মাধ্যমে প্রার্থীতা জানান দিচ্ছেন।
টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনটি মূলত বিএনপি’র আসন হিসেবে পরিচিত। ১৯৮৮ সালের সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইদুর রহমান খান মোহন এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা তিনবার বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদ নির্বাচিত হন। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে দীর্ঘদিন দখলে থাকা আসনটি বিএনপির হাতছাড়া হয়। দীর্ঘ ২১ বছর পর এ আসনটি দখলে আসে আওয়ামী লীগের। বিশিষ্ট চিকিৎসক ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মতিউর রহমান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়েই এমপি নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদকে পরাজিত করেন তিনি। ডা. মতিউর রহমান ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মারা যাওয়ায় টাঙ্গাইল-৩ আসনটি শূন্য হয়। ওই বছরের ১৮ নবেম্বর শূন্য আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা শহিদুল ইসলাম লেবু। কিন্তু তার মনোনয়নকে প্রত্যাখ্যান করে নাগরিক কমিটির ব্যানারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আমানুর রহমান খান রানা। বিএনপি বিহীন নির্বাচনে আমানুর রহমান খান রানা নৌকার প্রার্থী শহিদুল ইসলাম লেবুকে সহজে পরাজিত করেন। ঘাটাইল আসনে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা ২০১৪ সালে ভোট বিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বর্তমান এমপি আমানুর রহমান খান রানা টাঙ্গাইল শহরের এক সময়ের প্রতাপশালী ‘খান পরিবার’- এর কর্ণধার। জেলা আওয়ামীলীগের জনপ্রিয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় জেল-হাজতে রয়েছেন, তাঁর অন্য তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাঁকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পাও ওই মামলায় অভিযুক্ত হয়ে আত্মগোপণে। টাঙ্গাইলের ‘খান সা¤্রাজ্য’র পতন হয়েছে। সম্প্রতি মামলাটির চার্জ গঠনও করেছেন আদালত। ফলে আগামী নির্বাচনে কে পাবেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন, বর্তমান এমপি আমানুর রহমান খান রানা? গত উপনির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাওয়া শহিদুল ইসলাম লেবু? প্রয়াত ডা. মতিয়ার রহমানের ছেলে ঢাকা ভিক্টোরিয়া হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান তানভীর রহমান? সদ্য আওয়ামীলীগে যোগ দেয়া জাকারিয়া মানবকল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিল্পপতি আবু ইউসুফ আব্দুল্লাহ তুহিন? না অন্য কেউ তা নিয়ে সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে ধূ¤্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। এসব কারণে দলের মধ্যে বিভেদ আরও বেড়েছে। ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে সাধারণ এবং মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে। দলের ভেতর গড়ে ওঠেছে আরেক দল। এমপি আমানুর রহমান খান রানা খুনের অভিযোগে জেল-হাজতে থাকলেও তাঁকে কেন্দ্র করেই ঘাটাইলে আওয়ামীলীগের একটি গ্রুপ সক্রিয়। সাধারণ মানুষের মাঝেও এমপি রানা এখনও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি রানা দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে নিশ্চিত করেছেন তাঁর পিএস রিপন। এদিকে, টাঙ্গাইলের আলোচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় জেল-হাজতে থাকায় ইতোপূর্বে টাঙ্গাইল জেলা আ’লীগ এমপি আমানুর রহমান খান রানাকে বহিস্কারের জন্য কেন্দ্রীয় হাই কমান্ডের কাছে সুপারিশ করেছে।
নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার কারণে এ আসনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির গ্রুপিং সক্রিয়। আ’লীগের এক অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম লেবু। তিনি উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার কমিটি গঠনে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছেন। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনেও শহিদুল ইসলাম লেবুর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। অপরদিকে, জেল-হাজতে থাকলেও এমপি আমানুর রহমান খান রানার অনুসারীরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। তারা জনসাধারণের মাঝে এমপি রানার জনপ্রিয়তা ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। শাসক দলের এ অন্ত:কোন্দল নিরসনে প্রয়াত ডা. মতিয়ার রহমানের ছেলে তানভীর রহমানের আগমনকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে বিএনপিতে অন্ত:কোন্দলের কারণে দলীয় কর্মকান্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং এর প্রভাব পড়ছে দলীয় কর্মীসমর্থকদের মাঝে। এক গ্রুপ সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। অপর গ্রুপটি বিএনপি নেতা ও মনোনয়ন প্রত্যাশী শিল্পপতি মাইনুল ইসলামের নেতৃত্বে। তবে বিএনপি অনেকটাই মরিয়া আসনটি পুনরুদ্ধারে।
এ আসনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্যদের মধ্যে রয়েছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, জেলা আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক পিপি এস আকবর খান, তেজগাও কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক অধীর চন্দ্র সরকার, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যার্টনী জেনারেল মো. শহীদুল ইসলাম।
এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন তিন জন। তারা হচ্ছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদ, জেলা কৃষক দলের সহ-সভাপতি ও বিএনপি নেতা শিল্পপতি মাইনুল ইসলাম ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কামিটির সহ-সভাপতি খলিলুর রহমান। তারা ইতোমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছেন। নানা উছিলায় ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন। জাতীয় পার্টির (জাপা) কোন প্রার্থীর নাম এখনও শোনা না গেলেও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রণ্টের(বিএনএফ) জেলা শাখার আহ্বায়ক আতাউর রহমান খান(বড় ভাই) প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে ঘাটাইলে আওয়ামীলীগ-বিএনপি উভয় দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও কোন্দল থাকায় সাধারণ জনগন থেকে শুরু করে নেতাকর্মীদের মাঝে অনেকটা হতাশা লক্ষ্য করা গেছে।
এ আসনে দুই লাখ ৭২ হাজার ৫২৯ জন ভোটার রয়েছেন। এরমধ্যে পুরুষ এক লাখ ৩২ হাজার ৫৭৫ জন এবং নারী এক লাখ ৩৯ হাজার ৯৫৪ জন।
- কাগজ টুয়েন্টিফোর বিডি ডটকম এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।