চবিতে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অবরোধের ডাক
অনলাইন ডেক্স । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো সংঘর্ষে জড়িয়েছে ছাত্রলীগের দুপক্ষ। একপর্যায়ে প্রক্টর ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে মদদ দেওয়ার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা সিরাজ উদ দৌলার পদত্যাগ অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দিয়েছে ছাত্রলীগের একাংশ।
জানা গেছে, রবিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী এগারমাইল এলাকায় শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক সিএফসি গ্রুপের দুই নেতাকে বেধড়ক মারধর করে শাখা ছাত্রলীগের ভিএক্স গ্রুপের নেতাকর্মীরা। এতে আহত হন শাখা ছাত্রলীগের সিএফসি গ্রুপের নেতা ও সাবেক সহসভাপতি সুমন নাসির এবং নাহিয়ান আল রাফী। তাদের গুরুতর অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জানান, বৃহস্পতিবার থেকে চলমান শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ও সিএফসি গ্রুপের অনুসারী এবং সাবেক উপদপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমান বিপুল ও ভিএক্স গ্রুপের অনুসারীদের মধ্যে অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চলা সংঘর্ষের জেরে রবিবার সন্ধ্যায় এ মারধরের ঘটনা ঘটে।
তারা জানান, পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে নিজেদের নেতাদের মারধরের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে শাহ আমানত হলে থাকা সিএফসি এবং সোহরাওয়ার্দী হলে থাকা ভিএক্স গ্রুপের কর্মীরা রামদা, লোহার রড, পাইপ ও দেশীয় অস্ত্রসহ মহড়া দেয়। এতে উভয়পক্ষে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে থাকা চবি প্রক্টর এবং চট্টগ্রাম জেলা (উত্তর) পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের গাড়িসহ পাঁচটি গাড়ি ভাংচুর করে তারা। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ চার রাউন্ড টিয়ারশেল ও জলকামান নিক্ষেপ করে।
তারা আরো জানান, সিএফসি গ্রুপের নেতাকর্মীরা শাহজালাল হলের সামনে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। তারা সংঘর্ষে মদদদাতা হিসেবে চবির ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌলার নামে অভিযোগ জানিয়ে তার পদত্যাগ, মারধরকারীদের বিচার এবং ভিএক্স গ্রুপের নেতা বিপুল ও প্রদীপ চক্রবর্তী দূর্জয়ের শাস্তির দাবিতে মিছিল করেন।
ক্যাম্পাসজুড়ে চলমান উত্তেজনায় নিরাপত্তাজনিত কারণে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গামী রাত সাড়ে ৮টার শাটল ট্রেন বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম ষোলশহর স্টেশন মাস্টার তম্মন চৌধুরী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা তাপস হত্যার মদদদাতা সিরাজ উদ দৌলার প্রত্যক্ষ মদদে ও তাপস হত্যার আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমাদের দুই নেতার ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় অবরোধের ডাক দিচ্ছি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ভিএক্স গ্রুপের নেতা বিপুল বলেন, এই ঘটনা কে বা কারা করেছে আমরা জানি না। তবে গত দুদিনের ঘটনায় সভাপতি রুবেলের বহিষ্কারের জন্য ১২ ঘন্টার অল্টিমেটাম দিচ্ছি।
চট্টগ্রাম জেলা (উত্তর) পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মসিউদ্দোলা রেজা বলেন, ছাত্রলীগের সংঘর্ষ থামাতে চার রাউন্ড টিয়ারশেল ও জলকামান নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় প্রক্টরের গাড়ি ও পুলিশের পাঁচটি গাড়ি ভাংচুর হয়। যারা এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার করা হবে।
এর আগে বৃহস্পতি ও শুক্রবার দুই দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগের ১১ জন আহত হন। আবার সংঘর্ষের সম্ভাবনা থাকায় শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি আবাসিক হলে তল্লাশি চালায় পুলিশ। এ সময় বেশকিছু রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র ও চার বস্তা পাথর উদ্ধার করলেও কাউকে আটক করেনি পুলিশ।