কাল পাবনায় ১৫ জেলার ৬ শতাধিক চরমপন্থী আত্মসর্মপন
সৈয়দ আকতারুজ্জামান রুমী, পাবনা প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
দেশের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের পাবনা সহ ১৫ জেলার ৬ শতাধিক চরমপন্থী আত্মসমর্পন করতে যাচ্ছে। সুধরে নিতে যাচ্ছে তারা শ্রেণী শত্রু খতমের নামে জীবনের ভুল রাজনীতি। পাবনার শহীদ এ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামে কাল (৯ এপ্রিল) বিকাল ৩ টায় তারা আত্মসমার্পন করতে যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে। এ আত্মসমর্পন অনুষ্ঠান স্থল কে ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা।
অনুসন্ধানে জানাযায়, একটা সময় ছিলো বাতাসে বারুদের গন্ধ; রক্তাক্ত জনপদ; চরমপন্থী অধ্যুষিত জেলা বলতেই ছিলো পাবনা। ১৯৯০ সাল থেকেই এ জেলায় চরমপন্থীদের তৎপরতা শুরু হলেও (২০০০ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত এই) ১৮ বছরে পাবনায় চরমপন্থীদের হাতে ৪ পুলিশ সহ ১৯৭ জন নিহত হন। পাশাপাশি র্যাব ও পুলিশের সাথে ক্রসফায়ার বা বন্দুক যুদ্ধে জড়িয়ে নিহত হয় পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এম এল) লাল পতাকা দলের শীর্ষনেতা কামরুল মাষ্টার সহ অন্তত শতাধিক চরমপন্থী। এ ছাড়া সর্বশেষ গত ২৪ জুন রাতে ক্রসফায়ারে নিহত হয় ঢালারচর এলাকার চরমপন্থী নিজাম মন্ডল।
পাবনায় সর্ব সংখ্যক অস্ত্র উদ্ধার হয় লাল পতাকার চরমপন্থী ফারুক আহম্মেদ পবনের কাছ থেকে। ৮টি স্বয়ংক্রিয় সাব মেশিনগান(এস এমজি),১৪৯৮ রাউন্ড তাজা এসএমজির নতুন গুলি সহ ২৫টি এস এমজির ম্যগজিন উদ্ধার করা হয়। এ জেলার ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় চালানের অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা। সে তুলনায় অত্মসর্মপনকারী ৬ শতাধিক ছাড়িয়ে গেলেও তাদের ব্যবহত অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়তে যাচ্ছে তার সংখ্যা একবারেই অপ্রতুল।
পুলিশের গোয়েন্দা সুত্র বলছে, যারা আত্মসমার্পন করতে যাচ্ছে, তারা সবাই নিষিদ্ধ সংগঠন, পূর্ববাংলা কমিউনিষ্ট পার্টি (লাল পতাকা), পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি, কাদামাটি ও নিউ বিপ্লবী কমিউনিষ্ট পার্টি সর্ম্পৃক্ত। এদের নামে বিভিন্ন থানায় হত্যা, ডাকাতি,অপহরণ,সহ অসংখ্য মামলা রয়েছে। বলতে গেলে এদের মধ্যে অনেকের সবোর্চ্চ ১৬ টি মামলায় রয়েছে।
জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৯ এপ্রিল ১৫ জেলার মধ্যে; পাবনায় বাবলু প্রামানিকের নেতৃত্বে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা) এবং ইউসুফ ফকিরের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলার সর্বহারা দলের ১৬০ জন চরমপন্থী সদস্যের ২৩ টি অস্ত্রসহ আত্মসমর্পন করতে যাচ্ছে। এ ছাড়া নাটোরের ৩৯ জন,সিরাজগঞ্জের ৮০ জন, রাজশাহীর ৭৪ জন,নওগার ৭৭ জন, জয়পুরহাটের ৯২ জন, খুলনার ৩৫ জন, ফরিদপুরের ২৬ জন, রাজবাড়ীর ১৬ জন,বগুড়ার ১৫ জন,টাঙ্গাইলের ৪ জন, নড়াইলের ১ জন,যশোরের ৩ জন, সাতক্ষীরার ৫ জন ও রংপুরের ১ জন চরমপন্থীরা আত্মসমর্পন করছে।
অত্মসর্মপনকারীর সংখ্যা ৬ শতাধিক ছাড়িয়ে গেলেও তাদের ব্যবহত অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়তে যাচ্ছে যে ৫১ টি অস্ত্র। তারমধ্যে, পাবনার ২৩ টি, ফরিদপুরের ১৩টি, খুলনার ৭টি, জয়পুরহাটের ৮টি এবং রাজবাড়ীর ২ টি অবৈধ অস্ত্র জমা পড়বে। অর্থাৎ ১৫ টি জেলার মধ্যে ১০ জেলার চরমপন্থীরা আত্মসর্মাপন করলেও তারা কোন ধরণের অবৈধ অস্ত্র জমা দিচ্ছেন না। এ কারণে তাদের নিরস্ত্র চরমপন্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এ ছাড়া জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, শ্রেণী শত্রু খতম কর সমাজতন্ত্র কায়েম কর’’ এ মতবাদ নিয়ে নিষিদ্ধ বিভিন্ন দলের তৎপরতা শুরু। ধনীর সম্পদ গরীবের মাঝে বিলিয়ে দেয়ার নামে চলতে থাকে বিল জলাশয় দখল, ভোটের বাজারে মাঠ দখল,হাট বাজার দখল,হত্যা, ডাকাতি ও অপহরণ বাণিজ্য সহ সন্ত্রাসী নানা কর্ম। একটা সময় ছিলো নিষিদ্ধ দলের তৎপরতার কারণে পাবনার স্বরগ্রাম সহ বহু গ্রামের সাধারণ মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারতো না। এমনকি তাদের ভয়ে মুখ খুলতে বা থানায় মামলা দায়ের করতেও সাহস পেত না। বর্তমানে এই চরমপন্থিরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে; অন্ধকার পথ ছেড়ে আলোকিত জীবন যাপনে ফিরে আসার জন্যে আত্মসমর্পন করতে যাচ্ছেন। এ উপলক্ষে গত ৭ এপ্রিল দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও এমপি এ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বলেন,আর্ত্মসমর্পন কারী দলগুলো ছাড়াও এই ধরণের কাজ করবার সাথে নিজস্ব কিছু বাহিনী তৈরি করে এই রাজনীতির নামে সমাজ বিরোধী কার্যক্রমের সাথে জড়িত। তারাও এই সুযোগ গ্রহণ করছে। তাদের মেধা অনুযায়ী, প্রয়োজন অনুযায়ী, সরকারের সক্ষমতা অনুযায়ী তাদেরকে স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য যা করার দরকার সরকার সেটিই করবার চেষ্টা করেছে। মূল বিষয়টি হলো সরকারের সদ ইচ্ছা। ভালো উদ্দ্যেগ। আমি মনে করি সর্বস্তরের মানুষ এটাকে গ্রহণ করবে। পাবনা পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকৃত পক্ষে চরমপন্থীরা পাবনা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে জিম্মি করে তারা তাদের স্বার্থ সিদ্ধির চেষ্টা করতো এবং তারা নিজেরাও খুব দুর্বিসহ জীবন যাপন করতো। সমাজ থেকে তারা বিচ্যুত ছিলো। দেশ যেহেতু সর্বদিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তারা এই প্রবাহমান উন্নয়নের সাথে সংযুক্ত হতে চাই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. নরেশ মধু বলেন, যারা আত্মসমর্পন করছে বা করতে যাচ্ছে। তাদের মুল সন্ত্রাসী হবার কারণ গুলো কি কি আছে। সে কারণ যদি উদঘাটন করা যায়, তার বিপরীতে যদি প্রতিকারের ব্যবস্থা করা হয় এবং সমাজে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকে তাহলে নতুন করে সন্ত্রাসের জন্ম হবে না। আজকে ঘটা করে আমি আত্মসর্মপন করলাম। এর পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে। সে বিষয়টি ভাবা দরকার। এগুলো যদি সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করে তবেই সরকারের স্বার্থকতা হবে।
অন্যদিকে চরমপন্থী অধুষ্যিত অঞ্চলের মানুষেরা সরকারের এই উদ্যেগকে সাধুবাদ জানিয়ে চরমপন্থীদের আত্মসমার্পনের এ ধারা যেন চলমান রাখা হয় সেই আহবান জানাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের কাছে পাবনার ৪ শতাধিক চরমপন্থী অস্ত্রসহ আত্মসর্মাপন করেছিলো।