মশাবাহিত ভাইরাসজনিত অসুখ চিকুনগুনিয়া
অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
ইদানীং প্রায় সবার জ্বরের লক্ষণ একই রকম । গা কাপিয়ে জ্বর, জয়েন্টে ব্যাথা, র্যাস এবং শরীর চুলকানো। প্রথমে অনেকে এটাকে বাতাসবাহিত ভাইরাস জ্বর ভাবলেও আসলে তা মশাবাহিত ভাইরাসজনিত অসুখ চিকুনগুনিয়া । এডিস মশার মাধ্যমে এই জ্বর ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপক আকারে।
নামের উৎপত্তিঃ
চিকুনগুনিয়া’ আফ্রিকান শব্দ, এর অর্থ ধনুর মতো বাঁকা হয়ে যাওয়া। জ্বরে হাড়ের জয়েন্টগুলি ফুলে যাওয়ার জন্য এই নামকরণ। ২০০৮ সালে প্রথম বাংলাদেশে প্রথম চিকুনগুনিয়ার অস্তিত্ব ধরা পড়ে এবং ২০১১ সালে দ্বিতীয়বার সংক্রমন ঘটে ।
লক্ষণঃ
১. সাধারণত চিকুনগুনিয়া ভাইরাস আক্রান্ত মশা কামড় দেয়ার তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে লক্ষণ দেখা দেয়।
২. জ্বর ১০১ থেকে ১০৪ পর্যন্ত ওঠে।
৩. জয়েন্টে প্রচণ্ড ব্যাথা থাকে।
৪. এছাড়াও বমি, মাথা ব্যাথা, মাংসপেশি ব্যাথা, জয়েন্ট ফুলে যাওয়া, দুর্বলতার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
৫. ত্বকে র্যাস হতে পারে। র্যাস হলে ত্বক চুলকায় ।
চিকিৎসাঃ
চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ ডেঙ্গু এবং জিকার মতই। তাই চিকিৎসায় অবহেলা করা উচিত নয়।
প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেয়ে জ্বর নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে । কোনোভাবেই আসপিরিন বা আন্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ দেয়া যাবেনা ।
পর্যাপ্ত বিশ্রামের পাশাপাশি প্রচুর পানি, ফলের রস, সরবত খেতে হবে। নাহলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা যাবে ।
সাধারণত চিকুনগুনিয়া জ্বরে রোগীর মৃত্যু হয় না। তবে নবজাতক এবং বৃদ্ধদের জন্য এই জ্বর খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
জ্বর তিনদিনের বেশি স্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে।
একবার চিকুনগুনিয়া জ্বর হয়ে গেলে সারা জীবনে আর চিকুনগুনিয়া জ্বর হয় না।
প্রতিরোধঃ
১. এখন পযর্ন্ত চিকুনগুনিয়া কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি । জ্বর হলে এক সপ্তাহ সাবধানে থাকতে হবে যেন মশা না কামড়ায়। কারণ, মশা কামড় দিলে মশার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া অন্যদের দেহে ছড়াবে।
২. মশা নিয়ন্ত্রণ ও ঘুমানোর সময় মশারি টাঙিয়ে ঘুমানো, লম্বা হাতল-যুক্ত জামা ও ট্রাউজার পরে থাকা, বাড়ির আশেপাশে পানি জমতে না দেয়া ইত্যাদি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। শুধু স্ত্রী মশা দিনের বেলা কামড়ায়। এরা একবারে একের অধিক ব্যক্তিকে কামড়াতে পছন্দ করে। একবার রক্ত খাওয়া শেষে ডিম পাড়ার পূর্বে তিন দিনের বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। এদের ডিমগুলো পানিতে এক বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
৩. অল্প পরিমাণ জমে থাকা পানিও ডিম পরিস্ফুটনের জন্য যথেষ্ট। এডিস মশা স্থির পানিতে ডিম পাড়ে তাই বালতি, ফুলের টব, গাড়ির টায়ার প্রভৃতি স্থানে যেন পানি জমতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আশা করা যায়, এই নিয়ম মেনে চললে চিকুনগুনিয়া জ্বর থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
Contributor: Redwana Antu
BRAC University