চিরিরবন্দরে বিদ্যুৎ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল
ভূপেন্দ্র নাথ রায়, দিনাজপুর প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে ঠিকাদারকে ঘুষ দেওয়ার পরেও গত তিন বছরে মিলেনি বিদ্যুতের আলো। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ৫নং আব্দুলপুর ইউনিয়নের নান্দেড়াই গ্রামে। এতে ঐ গ্রামের ১৭৫ টি পরিবারের নারী ও পুরুষ মঙ্গলবার দুপুরের দিকে (০৭ মে) ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ঝাড়– মিছিল বের করে। এসব পরিবারের অভিযোগ, গত তিন বছর ধরে প্রতিটি পরিবার মোট ১ হাজার ৫০০ টাকা করে ঠিকাদারকে দিয়েও বিদ্যুতের মিটার আসেনি। প্রচন্ড তাপদাহে দুর্ভোগে পড়েছে নান্দেড়াই গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। পড়া লেখায় বিঘ্ন ঘটছে স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের।
আব্দুলপুর ইউনিয়নের নান্দেড়াই গ্রামের বিদ্যুৎ এর সংযোগ নেওয়ার জন্য ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছেন মোহাম্মদ আলী (৬০) । তিনি বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার জন্য গ্রামের ১৫৬ জন আবেদন করি। কিন্তু গত তিন বছর ধরে বিদ্যুৎ আসবে আসবে করে এখনো বিদ্যুৎ এর খুঁটিও আসেনি। অথচ ঠিকাদার বিদ্যুৎ দেওয়ার নাম করে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।’
একই গ্রামের আসাদুল ইসলাম (২৮) অভিযোগ করে বলেন, ‘হামরা সবায় মিলি ১ লাখ টাকা দিছি কিন্তু তিন বছর ধরি খালি শুনিছি কারেন্ট আসিবে। এতদিন পরও হামরা কারেন্টের দেখা পাইনো না। এই গরমত হামার কি যে অবস্থা এইটা কাহো বুঝিবে না।’
বিদ্যুতের আবেদনকারীরা জানায়, ২০১৬ সালে ১৫৬ টি মিটারের জন্য ১৭৫ বাড়ি আবেদন করে। প্রথমে ঠিকাদারকে ২০০ করে টাকা দেয় প্রতিটি পরিবার। এক বছর পর ঠিকাদার বিদ্যুতের খুঁটি না নিলে পরের বছরে ২০১৮ সালে আবারো ৭০০ করে টাকা দেয়। তবুও বিদ্যুতের খুঁটি না আসলে তৎকালীন দিনাজপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও (চিরিরবন্দর-খানসামা) পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী’র কাছে বিষয়টি উত্থাপন করা হলে তিনি তাৎক্ষণিক ঠিকাদারকে বলে ১০টি বিদ্যুতের খুঁটি ঐ এলাকায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন।
এর পর ঠিকাদার পুনরায় প্রতিজনের কাছে ৬০০ করে টাকা দাবি করে। ঠিকাদার সে সময় বলেন, টাকা না দিলে বিদ্যুৎ আসবে না এবং এখানে এমপি মন্ত্রীও কিছু করতে পারবে না বলে বিদ্যুতের আবেদনকারীদের জানায়। পরে বিদ্যুতের আশায় আবেদনকারীরা দফায় দফায় ১ লাখ টাকা দেয় ঠিকাদার আজিজকে। এরই প্রেক্ষিতে গত সোমবার (৬ মে) ঐ এলাকায় ঠিকাদারের লোকজন কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটি নিয়ে আসলে ভুক্তভোগীরা খুঁটির গাড়ি আটক করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করে ঠিকাদার আজিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
নান্দেড়াই গ্রামের আজিনা বেগম বলেন, ‘ঠিকাদারের লোকজন খুঁটি নিয়ে আসলে দেশি মুরগি, দেশি মুরগির ডিম ও রুই মাছ দিয়ে ভাত খায়। আমরা তাদেরকে জামাই আদর করে খাওয়াই। তারা যা খেতে চায় তাই খাওয়াতে বাধ্য থাকি।’
শ্রবণ প্রতিবন্ধী সমো বেগম (৫০) বলেন, ‘ আমার স্বামী প্রতিবন্ধী, আমিও একজন শ্রবণ প্রতিবন্ধী। আমি আমার স্বামীর চিকিৎসা না করিয়ে, নিজে না খেয়ে থেকে বিদ্যুতের জন্য টাকা দিয়েছি। কিন্তু গত তিন বছরেও আমরা বিদ্যুৎ পাইনি।’
মোছা. উম্মে কুলছুম (৪০) অভিযোগ করে বলেন, ‘ গত ঈদে আমি আমার সন্তানদের নতুন জামা কিনে না দিয়ে বিদ্যুতের জন্য টাকা দিয়েছি। আমরা বছরের পর বছর কেটে গেলেও বিদ্যুতের দেখা পেলাম না!’
সুখিপীর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মো. জুয়েল রানা বলেন, ‘আমরা বিদ্যুতের জন্য ঠিক মত পড়ালেখা করতে পারি না। চারিদিকে বিদ্যুতের এত আলো কিন্তু আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। আমরা খুবই দুর্ভোগের মধ্যে আছি।’
সুফফা রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র তাসমুল মুসা বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৯ সালের মধ্যে সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু আমরা গত তিন বছরেও আপ্রাণ চেষ্টা করে বিদ্যুৎ পাইনি। এতে আমাদের পড়ালেখার দারুণ ক্ষতি হচ্ছে।’
এ বিষয়ে ঠিকাদার আজিজ ও তার ম্যানেজার মামুনের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগযোগ করা হলেও কোনো সারা পাওয়া যায়নি।
তবে চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী দেশ রুপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছে নান্দেড়াই গ্রামের অনেক লোক অভিযোগ করেছেন। আমি সাথে সাথেই বিষয়টি বিদ্যুৎ অফিসের জেলা এক্সেঞ্জকে বলেছি এবং চিরিরবন্দরের কোথায় কোথায় বিদ্যুতের কাজ চলছে সব তথ্য চেয়েছি। টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি যারা টাকা দেয় ঠিকাদার তাদের কাজ আগে করে। আমি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে লড অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে প্রতিটি কাজই সুষ্ঠুভাবে করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো বলে তিনি জানান।’