পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ ও মৃতুবরণ কি ছলনা
পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ ও মৃত্যুবরণ কি ছলনা
ডাঃ আওলাদ হোসেন
মানুষ যদি হাজারো বলে যে, এই পৃথিবীতেই তার জন্ম, এখানেই মৃত্যু এখানেই সব শেষ তাহলে তা বিশ্বাস করার কোন যুক্তিই খুঁজে পাওয়া যাবে না, কারণ মানুষের হাতে কোন অত্যাশ্চর্য ক্ষমতাই নেই। এটা প্রমাণিত সত্য যে, মানুষ নিজ হাতে যা অর্জন করে তাই তার সম্বল। পৃথিবী জোড়া মুসলমানদের প্রাধান্য ছিল এখন আর তা নেই। হারানো গৌরব ফিরে পাওয়ার জন্য যে শক্তি, সাহস, বল-বীর্য ঐশ্বরিক শক্তির উপর বিশ্বাস স্থাপন, জ্ঞান গরিমায় সর্বোচ্চ শিখরে আরোহন তা আর সম্ভব হবে না। এজন্যে বড় বড় মনিষীগন অনেক আগেই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। ইতিহাসের শিক্ষা ও অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। আল্লাহকে দেখা নিয়ে সর্বত মন বিগলিত থাকে। সূর্যকে যিনি সৃষ্টি করেছেন তাঁকে দেখার জন্য সূর্যের চাইতে শক্তিশালী একটা কিছু থাকা দরকার তার পরও যদি তা দৃশ্যমান হয়। মানুষের সূর্যের মত তাপ প্রচন্ডতা কোনটিই নেই। এমনকি সূর্যের দিকে তাকানোর কোন শক্তি মানুষের নেই। তাহলে মিথ্যা এই কসরৎ করে জীবন টাকে নষ্ট করে দেয়ার কোন মানে হয় না। দিবা শেষে এই উপলব্ধি এলে কোন কাজ হবে না। যে শক্তি মক্কা মদিনায় মিলিত হয় তারা পার্থিব চাহিদা ত্যাগ করেই মিলিত হয় এবং মন মস্তিষ্ক এই কথা সৃষ্ট হয়ে আছে যে পরাশক্তির সঙ্গে পারা যাবে না।
সেহেতু কোন সংগঠন যেন এ ধনের কোন প্রচারনা চালায়। আল-কুরআন অর্থসহ পড়া থকালে দেখা যাবে যে স্রষ্টা ও সৃষ্ট বস্তুর মধ্যে পার্থক্য কত! শিরকের মূলে কুঠারাঘাত করার জন্য এই জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। স্রষ্টাকে যখন অস্বীকার করা হয় তখন মানুষই স্রষ্টার স্থান দখল করে নেয়। জনৈক লেখক চীন যে রোহিঙ্গাদের ঘাড়ে চেপে বসেছে (২৪-৯-১৭ খ্রি:) তার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন কিন্তু ভারতের হাত কতটুকু তা লিখতে পারেন নি কারন তার লেখা কেউ পড়বে না এবং মূল্যও দেবে না। কারণ মানুষ দেখে শিখে এবং কার্যত নামও উল্লেখ করছে না। এটা একটি পজেটিভ দিক হচ্ছে আমরা কিছু দেখিও নাই কিছু বুঝিও না। এটাই হচ্ছে বৃহৎ শক্তির কেচ্ছা। মুসলমানরা আর বৃহৎ শক্তি হতে পারবে না কারণ আল-কুরআনে যা নিষেধ করা হয়েছে আমরা তাই করছি এবং ১০০ তলা দালানের মালিক আমরাই। এই ধন সম্পদ টুকু যদি না থাকত তাহলে যে অবস্থা কি হত তা কল্পনাই করা যায় না। আমাদের দেশে কিছু কোটিপতির নাম পাওয়া যায় যারা মাঝে মাঝেই অপকর্মের দোসর হয়ে থাকে। মুসলমানকে আল-কুরআনের দিকে ফিরানো আর সম্ভব হবে না, ৪ খলিফার পর থেকে সম্ভব হয়ও নাই। ইসলামের ইতিহাস তথা মুসলমানদের ইতিহাস মানেই তা আল্লাহ প্রদত্ত রাস্তার ইতিহাস নয়। পাশাপাশি ইতিহাস বহির্ভূত শক্তিকে আধুনিক যুগে শিরক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সমূহ এর জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে আছে। কোন মানুষকে আল্লাহ পাক যে ক্ষমতা দেন নাই, সেই ক্ষমতা কোথা থেকে পেল, কিভাবে পেল তার কোন হদিস পাওয়া যায় না। কিন্তু জোর করেই প্রচার করা হচ্ছে পৃথক নমুনা আর তা শুধু স্বজাতীয়দের ক্ষেত্রেই কেরামতি প্রকাশের একটি হাতিয়ার। যদি মুসলমানরা আর বৃহৎশক্তি হতে না পারে তাহলে তাদের জন্য পৃথিবীতে বেঁচে থাকার স্বার্থকতা আর কি থাকতে পারে? এই বার অদৃশ্য আল্লাহ সর্বশক্তিমান এই সত্যকে আকড়ে ধরার জন্য জ্ঞান অর্জন করতে হবে। সৃষ্ট বস্তু কোন ক্রমেই স্রষ্টার আকার ধারন করতে পারে না। বস্তু দেখা যায়। সেহেতু অদৃশ্যে বিশ্বাস বস্তুর সংগে সংগতিহীন। এই কথাটি মনে প্রানে মানতে পারলে। অন্যান্য বিষয় পরিস্কার হয়ে যাবে এবং ধর্মের প্রতি যে নির্দেশ তা পালন করা হয়ে যাবে। কিন্তু কাজটি ক্রমেই দুর্বোধ্য হয়ে উঠছে। এই জ্ঞান অর্জনের জন্যই কিছু উদাহরণ দেয়া আছে। (১) মূসা (আ:) নবী যখন আল্লাহর সংগে কথা বল্লেন তখন আল্লাহকে দেখতে চাইলেন। আল্লাহ বললেন তা হবে না, যদি পাহাড়কে স্থির দেখতে পাও তবেই আমাকে দেখতে পাবে। জ্যোতিতে পাহাড় পুড়ে গেল এবং মূসা (আ:) অজ্ঞান হয়ে গেলেন, জ্ঞান ফিরলে ঈমান এনে বল্লেন আমিই সর্বপ্রথম ইমান আনছি দেখা হোল না। এখানে কোন বুজুর্গ নেই। অপর এক ঘটনায় মূসা (আ:) এক জ্ঞানী ব্যক্তির অনুসরণ করেন এবং যে কোন ঘটনার পিছনে কারণ থাকে যার ব্যাখ্যা মানুষ জানে না। সূরা ইয়াসীন পাঠ করলে কয়েকটি বিষয় খুব সংক্ষেপে এবং সহজেই জানা যায়। (১) মুহাম্মদ (সা:) আল্লাহর একজন রাসূল এবং সত্যপথের উপর প্রতিষ্ঠিত (২) মৃত মানুষকে জীবিত করব। (৩) চন্দ্র সূর্য এক নিয়মের অধীন, জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি (৪) কাফেরদের কথায় দু:খিত হবেন না। মানুষকে এক ফোঁটা বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছি। (৬) আল্লাহর কাছেই ফিরে যাবে। সেই সংগে বেহেশতে অবস্থান কালে হুরদের কথা বলা হয়েছে। (১) আরও থাকবে ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট গৌরবর্ণের হুর (২) অথবা অন্য ভাবে আমিতো সেখানকার নারীদেরকে সৃষ্টি করেছি বিশেষ ধরনে তাদেরকে করেছি চির কুমারী, চিত্তাকর্ষক সমবয়স্কা (৩) সেথায় থাকবে আনতনয়না হুরগন, যাদেরকে পূর্বে কোন মানুষও স্পর্শ করেনি এবং কোন জ্বিনও না। দেখা যাচ্ছে পুত পবিত্র সঙ্গিনী থাকবে এবং অনন্ত মানুষের জীবন-স্রষ্টা যে বিভিন্ন সৃষ্টিতে সক্ষম তার প্রমান বিভিন্ন আয়াতে পাওয়া যায়। মানুষ যে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানে না ইউসুফ (আ:) এর জীবনে তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ইব্রাহীম (আ:) কে আগুন স্পর্শ করতে পারে নি। মূসা (আ:) দরিয়া পার হয়ে গেলেন কিন্তু ফিরাউন পার হতে পারল না, ডুবিয়ে দেয়া হোল। এ সমস্ত ঘটনা রাসূল (সা:) জানতেন না, ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। মূসা (আ:) নবীর কাহিনী প্রায় ৫০০০ বৎসর পূর্বের এবং কুরআনে তার কাহিনী এবং তাওরাত ও ইঞ্জিলের কথা বিভিন্ন ভাবে এসেছে। যা একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব না। এখন কথা হচ্ছে ১০০/- টাকা দিয়ে বাংলা কুরআন না পড়ে যদি মানুষের বানানো পথকে আকড়ে ধরি তা হলে হারানো পথ পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। সূর্য প্রতিদিন উদয় হচ্ছে আর অস্ত যাচ্ছে। এর মধ্যে কোন ব্যতিক্রম নেই। Global Village ভাগ হয়ে নিজেদের সৃষ্ট স্বাধীন রাষ্ট্র কায়েম, জাতি ভিত্তিক প্রভেদ, বৃহৎ শক্তির একচ্ছত্র আধিপত্য এবং একটি দিয়ে অপরটিকে ক্রমাগত শক্তির মহড়া, সাংসারিক জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রিয় অথবা রাষ্ট্রে যে ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দিতা কোন দিনই থেমে নেই। একটি অপরটির প্রতিদ্বন্দি। কেউ একক ক্ষমতার অধিকারী নয়। এর কারণ কি? বাঙালি স্বাধীন হওয়ার পর নতুন নতুন সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে। পুরাতন বিদায় নিচ্ছে নতুনের আগমন ঘটছে। আল্লাহর দুনিয়া থেমে থাকছে না। মানুষ যা চাচ্ছে তাই পাচ্ছে অথচ অশান্ত পৃথিবীতে শান্তির বাণী শুনানোর মত কেউ নেই। এখানেও সেই এক আল্লাহর কথা, তুমি যা চাইবে তাই পাইবে তবে পরকালে তা হবে চিরস্থায়ী, হারানোর কোন ভয় নেই। অশাান্তির মূলে যে কে আর কি তা চিহ্নিত করা যায় না। এখানে মূল কথাকে বলা হয় মৌলবাদ। এবং মৌলবাদী হয়েও জানে না মুল সত্যটি কি? পৃথিবী ঘুরছে এটা অনেকেই বুঝে না। সূর্য যে ঘুরছে তা বুঝতে পারে। চন্দ্রের অবস্থাও তাই। কিন্তু এই যে কোটি কোটি তারকারাজি পরিস্কার আকাশে খালি চোখে দেখা যায় তার হিসাব কে রাখে। যান্ত্রিক সভ্যতায় এ সবের কোন মূল্য নেই। একেই মৌলবাদ বলে এবং তারাই মৌলবাদী। এই দ্বৈততার কারণ কি? একা যখন কবরে রেখে আসে তখন বুঝা যায় কোন হিসাব কার ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে। এত বাড়ি গাড়ি ফেলে দিয়ে এ্যাপোলো বা মাউন্ট এলিজাবেথ অথবা ভেলর থেকে প্রাণহীন দেহ নিয়ে গর্বভরে শেষ গন্তব্যে পৌঁছে তখন তাকে মৌলবাদী বলা হয় না। এভাবেই পৃথিবীতে বাঘ এলো বাঘ এলো বলে এক রাষ্ট্র অপর রাষ্ট্রকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে কিন্তু কেউই বলছে না যে তোমার আয়ু শেষ তুমি আর বাঘ দেখতে পারবে না। দরিদ্র দেশে মৌলবাদ খুঁজে বেড়াবে আর মৌলবাদের মূল কথাই হচ্ছে আল্লাহ এক অদৃশ্য, জাগতিক বস্তুবাদের প্রকৃতি খোলস মাত্র। সরাসরি আল্লাহ পাককে দেখার মতো শক্তি মানুষের নেই বরং প্রতিটি স্তর পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
কাগজ টুয়েন্টিফোর বিডি ডটকম এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
- প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। কাগজ২৪-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য কাগজ২৪ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।