জলবন্টন চুক্তিতে জট
নিজেস্ব প্রতিনিধি (কলকাতা) । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সঙ্গে জলবন্টন চুক্তি নিয়ে ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে দিল্লি। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার গত ২০১০ সাল থেকেই আন্তরিক ভাবে চাইছেন বাংলাদেশ তিস্তার জল পাক। সে লক্ষ্যে সাবেক মনমোহন সিং সরকার ও বর্তমান নরেন্দ্র মোদী সরকার একাধিকবার উদ্দ্যোগ নিলেও প্রতিবারই পশ্চিম বাংলার শাসকদল তৃনমুল কংগ্রেসের বাধায় তা ভেস্তে যায়। কিন্তু নাছোড়বান্দা দিল্লি থেমে নেই। তারা বাংলাদেশকে জল দেওয়ার জন্য মরিয়া। কিন্ত অভিন্ন নদীর জলবন্টন ইস্যুতে ভারত বাংলাদেশকে জল দিতে চাইলেই পাকিস্তানের ক্ষেত্রে মনোভাব ভিন্ন। ভারত কোন অবস্থাতেই চাইছে না পাকিস্তান সহজেই সিন্ধুর জল পাক। সেক্ষেত্রে তারা কৌশলে উল্টো পথেই হাটছে।
তবে বাংলাদেশের সাথে প্রস্তাবিত তিস্তা-চুক্তি নিয়ে এবার লোকসভায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে পশ্চিম বাংলার ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের বক্তব্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে কথা না বলে দিল্লির কেন এই উদ্যোগ? প্রসঙ্গত, সম্প্রতি এবিপি আনন্দর স্টুডিওয়ে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘শুনছি ২৫ মে বাংলাদেশে গিয়ে তিস্তা চুক্তি হবে। অথচ, আমি এখনও কিচ্ছু জানি না’। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই চাঞ্চল্যকর মন্তব্যের পর এবার বিষয়টি নিয়ে সংসদে সরব হল তৃণমূল কংগ্রেস। কেন্দ্র একতরফাভাবে তিস্তা চুক্তির পথে হাঁটতে চাইছে বলে, গত সোমবার লোকসভায় অভিযোগ করেন সৌগত রায়। টেনে আনেন মুখ্যমন্ত্রীর উদ্ধৃতি। সৌগত রায় বলেন, মমতা জানিয়েছেন, কোনও চুক্তি সম্পর্কে না জেনে সম্মতি জানাব না। রাজ্যের স্বার্থ রক্ষায় সম্মতি জানাব না। কেন রাজ্যের সঙ্গে কথা না বলেই তিস্তা চুক্তির উদ্যোগ? এমন উদ্যোগ হলে তীব্র প্রতিবাদ হবে।
২৩ মার্চই এবিপি আনন্দের অনুষ্ঠানে এসে, তিস্তা নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরই নড়েচড়ে বসে মোদী সরকার। গত শুক্রবার বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গোপাল বাগলে জানান, তিস্তা জলবন্টন চুক্তি নিয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার-সহ সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্র। যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো মেনেই ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তা জলবন্টন চুক্তি বাস্তবায়নের পথে হাঁটবে সরকার। যদিও তৃণমূলের অভিযোগ, মোদী সরকার মুখে যা বলছে, বাস্তবে তা করছে না। তিস্তা চুক্তি নিয়ে কেন্দ্রকে আক্রমণ করতে গিয়ে, গতকাল লোকসভায় পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জল চুক্তির প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন সাংসদ সৌগত রায়।
যদিও তিস্তা চুক্তি নিয়ে তৃণমূলের এই অবস্থানের নেপথ্যে আবার বিজেপির সঙ্গে রাজনৈতিক দর কষাকষি দেখছে সিপিএম। সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমের দাবি, আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী কেউ এভাবে জল আটকাতে পারে না। তাদের ধারনা নারদা-সারদা কেলেঙ্কারি থেকে বাঁচার জন্য মমতা বিজেপির সঙ্গে দর কষাকষি করছে। পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদী পাঠায়। বাংলাদেশ বন্ধু। কী করে তুলনা হতে পারে। চুক্তি হলে দু’দেশের কৃষকরা উপকৃত হবেন।
উত্তরবঙ্গের চাষ-আবাদ তিস্তার জলের ওপরে নির্ভরশীল। উল্টোদিকে বাংলাদেশেরও কাছেও তিস্তা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। যার জন্য দিল্লির কাছে বারবার দরবার করে চলেছে হাসিনা সরকার। যে জন্য ২০১১ সালে তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নিয়েছিলেন মনমোহন সিংহ। কিন্তু, শেষমুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেঁকে বসায় আর তা সম্ভব হয়নি। এরপর মোদী সরকারের আমলে বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে…মোদী-মমতা একসঙ্গে বাংলাদেশে গিয়েছেন…কিন্তু তিস্তার জল এখনও ঘোলা।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, বাংলাদেশে নির্বাচন আসন্ন। তাই রাজনীতির অঙ্কে খালেদা জিয়াকে হারাতে হলে, ভারতের কাছ থেকে তিস্তার জল একান্তই প্রয়োজন হাসিনার। শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে সরে গেলে বাংলাদেশে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই কিংবা জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর জাঁকিয়ে বসার সম্ভাবনা জোরালো। যা ভারত কোনওভাবেই চাইবে না। উল্টোদিকে তিস্তার জলের উপর উত্তরবঙ্গ নির্ভরশীল হওয়ায়, সেটা দিয়ে দেওয়াও সহজ সিদ্ধান্ত নয়। আর এই টানাপোড়েনের মধ্যেই সাতই এপ্রিল ভারতে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সূত্রের খবর, মে মাসে বাংলাদেশ সফরে যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কি হবে তিস্তার ভাগ্য? এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।
ওই অঞ্চল ঘিরে চিন ও পাকিস্তান যে অর্থনৈতিক করিডর তৈরি করেছে, তাকেও অবৈধ ঘোষণা করেছে ব্রিটেন। সম্প্রতি গিলগিট-বাল্টিস্তানকে নিজেদের পঞ্চম প্রদেশ হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইসলামাবাদ। উল্লেখ্য, এই করিডোরের মাধ্যমে ৫১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি বাণিজ্যিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে দুই দেশ। যার লক্ষ্য, চিনের দক্ষিণ প্রান্তের রাজ্য জিনজিয়াং-এর কাশগড় থেকে পাকিস্তানের অন্তর্গত (বিতর্কিত) বালুচিস্তানের গদার বন্দরের সংযোগ সাধনের মাধ্যমে বাণিজ্যিক লেনদেন চলবে।