পঞ্চগড়ের আকর্ষণ জাহিদুলের ৩ টাকায় চা
নাজমুস সাকিব মুন, পঞ্চগড় প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
পঞ্চগড় মানচিত্রে সর্ব উত্তরের জেলা। নানান বৈচিত্রতায় ভরা এই জেলা। যেখানে রয়েছে জীবন ও জীবিকায় বৈচিত্র্য। সম্ভাবনার এই শহরে প্রতিনিয়ত ঘটছে অবাক হওয়ার মতো ঘটনা।
দেশের অন্য সব জেলার তুলনায় পঞ্চগড়ে জীবন যাত্রার ব্যয় বেশ কম। এটা পঞ্চগড়ের বাইরে থেকে চাকরি, ব্যবসা বা ভ্রমণের জন্য আসা ব্যক্তিমাত্রেরই মুখের কথা। শিরোনাম দেখে কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছেন নিশ্চয়ই।
তাই বলে ৩ টাকায় চা, যা অবিশ্বাস্য। আর এমনই অবিশ্বাস্য কম মূল্যে ১ কাপ গরম রঙ চায়ের দেখা মিলবে জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলা সদরে।
উপজেলার বিজয় চত্ত্বরে প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই দেখা মিলবে জাহিদুল ইসলামের। বয়স ৪২ এর কোঠায়। টেবিলে চায়ের কাপ আর স্টভ জ্বালিয়ে সন্ধ্যা হলেই চত্বরের পাশে দাঁড়িয়ে চা বিক্রি করেন তিনি। দাম কম হলেও স্বাদে ঠিকঠাক হওয়ায় ক্রেতাদের ভিড় তাই চোখে পড়ার মতো। ক্রেতাদের ভিড় দেখে বুঝার উপায় নেই যে তারা চা পানের জন্য ভিড় জমিয়েছেন।
ভিড় ঠেলে সামনে এগুতেই ব্যস্ত দেখা গেল জাহিদুলকে। কথা বলতে চাইলে সম্মতি মিললো। ৩ টাকার চা নিয়ে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করায় ব্যস্ততার মাঝেই বলতে শুরু করলেন।
আজ থেকে প্রায় ১৭ বছর আগে চা বিক্রি শুরু করেন তিনি। তবে বর্তমান স্থানে চা বিক্রি করছেন প্রায় ৮ বছর থেকে। প্রথম দিকে প্রতি কাপ চা বিক্রি করতেন ১ টাকা দরে। এর পর দাম বেড়ে ২ টাকা আর এখন ৩ টাকা। গরমের দিনগুলোতে প্রতিদিন ৩৫০-৪০০ কাপ চা বিক্রি হয়। তবে শীতের দিনগুলোতে বেচাকেনা হয় বেশি। তখন প্রতিদিন ৭০০-৮০০ কাপ চা বিক্রি হয়। আর শীতের দিনে খেজুর গুড়ের চা চা প্রেমীদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ।
জাহিদুল জানান এবছর জাতীয় নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের কদিন চা বিক্রি হয়েছিল ১৩০০-১৫০০ কাপ পর্যন্ত।
স্ত্রী, দুই ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে জাহিদুলের সংসার। সদরের সবুজপাড়া এলাকার বাসিন্দা তিনি। দুই ছেলের একজন রাজমিস্ত্রি আর অপরজন অন্যের দোকানে থেকে পরিবারে অর্থের যোগান দিচ্ছেন। আর মেয়ে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ছেন। আর্থিক অবস্থা ভাল না হওয়ায় দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করার মতো পুঁজি নেই জাহিদুলের। তাই সড়কের এই চায়ের দোকানই তার শেষ ভরসা।
তবে ব্যবসা ছোট হলেও চায়ের দোকান নিয়ে বেশ খুশি জাহিদুল। ছোট ব্যবসা নিয়ে নিজের সন্তুষ্টির কথা তাই অকপটে স্বীকার করলেন তিনি।
চায়ের দোকানে আসা সাগর, সাকিব, প্রান্ত,পল্লব, অজয়ের সাথে কথা হয়। তারা নিয়মিত এখানে আসেন। দাম কম আর স্বাদে ভাল হওয়ায় তাই মাঝে মধ্যেই বন্ধুরা এসে আড্ডা জমান এখানে। চায়ের কাপে চুমুক দিয়েই চলে আড্ডা।
সত্তরোর্ধ তছিম উদ্দিনকে এখানে দেখা গেল চা পান করতে। তিনি জানালেন বাজার করতে আসলেই ফেরার সময় জাহিদুলের দোকানের চা তার চাই।
বেঞ্চে দলীয় কর্মী নিয়ে চা পান করছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আ.স.ম নুরুজ্জামান। তিনি জানান, প্রায়ই দলীয় নেতা কর্মীদের সাথে জাহিদুলের দোকানে বসে চা পান করেন তিনি। চত্বরের চারপাশটা খোলা হওয়ায় সন্ধ্যার পর শরীর জুড়ানো বাতাসে এখানে চা পান অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি করে যোগ করেন তিনি।