জিততে ভালবাসে সৈয়দপুরের সাদিয়া
এস কে রায়, নীলফামারী প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
বিকেল হলেই খেলার মাঠে দৌড়। উদ্দেশ্য ব্যাটে-বলে নিজেকে একটু ঝালিয়ে নেওয়া। তাইতো অনুশীলনে নিজের শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা। নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর নিজপাড়ার বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি আনোয়ারুল হকের মেয়ে সাদিয়া আক্তার। তিন ভাইবোনের মধ্যে সেই সবচেয়ে ছোট।
সাদিয়া সৈয়দপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে সবেমাত্র নবম শ্রেনীতে। এরই মধ্যে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলার মাঠেও সমান তালে দেখিয়ে চলছে দাপট। ক্রিকেট, ফুটবল, হ্যান্ডবল ও ভলিবলে যেমন দেখিয়েছে সমান পারদর্শিতা। তেমনি ১০০ মিটার দৌড়, ২০০ মিটার দৌড়, লং ঝাপ ও সাতারে গড়েছে একক রাজত্ব।
সাদিয়া এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিযোগিতা মূলক খেলায় অংশ নিয়ে অসংখ্য পুরস্কার লাভ করার পাশাপাশি অর্জন করেছে সম্মাননা স্বরূপ ৩৪ টি সনদপত্র। চলতি বছর বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থা কতৃক আয়োজিত ১০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে ‘গোল্ড মেডেল’ অর্জন করার কৃতিত্বও গড়েছে।
বছর চারেক আগে সাদিয়ার মা রেহেনা বেগম না ফেরার দেশে পাড়ি জমালে বাবা ও বড় ভাই-বোনের স্নেহে বড় হতে শুরু করে সাদিয়া। মূলত তাদের উৎসাহে সাদিয়া ছোটবেলা হতে খেলাধুলার প্রতি বেশ অনুরাগ। প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় থেকেই সাদিয়া খেলাধুলায় নিজেকে পাকাপোক্ত করতে শুরু করে। মনের মধ্যে তখন থেকেই শুধু জিতার কথা ভাবতে থাকে। এর ফলস্বরূপ সাদিয়া এখন পর্যন্ত কোন একক ইভেন্টে অংশ নিয়ে প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হয়নি।
সামনেই অলিম্পিকের বাছাইপর্ব। এতে অংশ নেওয়ার জন্য সাদিয়া দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আপাতত এই লক্ষেই সাদিয়া নিজেকে প্রস্তুত করছে। বিভিন্ন খেলায় আলো ছড়ানো সাদিয়া স্বপ্ন দেখে একজন ক্রিকেটার হওয়ার। ব্যাটে-বলে বিশ্বসেরা হওয়া সাকিব আল হাসানকে আইডল মেনে সাদিয়া নিজেকে নিয়ে যেতে চায় অনেক দূরে।
কিন্তু ইচ্ছে থাকা সত্বেও কখনো কখনো পূরণ হয়না চাওয়া। এটিও অজানা নয় সাদিয়ার। দিনমজুর বাবার স্বল্প আয়, টানাপোড়নে চলে সংসার। কোন বেলা খেয়ে কোন বেলা না খেয়েই কাটাতে হয় দিন। এর উপরে বড় ভাই-বোনের পড়াশোনার খরচ। সবমিলিয়ে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে সংসার চালাতে হয় তার বাবাকে। এতো অভাব অনটনের মাঝে সাদিয়া এগুতে পারবে কতদূর! এ নিয়ে বেশ সন্দিহান সে। তারপরও এখনি সে হাল ছারতে রাজি নয়।
সাদিয়া একান্ত সাক্ষাতকারে জানায়, সবসময় জিতার জন্য খেলি। প্রত্যেকটা খেলায় নিজেকে একটু একটু করে ছড়িয়ে যাওয়ার জন্য খেলি। সবসময় ভয়ডরহীন নিজের মতো খেলার চেষ্টা করি। সাদিয়া আরো জানায়, বেশিরভাগ মেয়ে বড় হওয়ার সাথে সাথে খেলাধুলাকে এড়িয়ে চলতে থাকে কিন্তু আমি ঠিক এর উল্টো। আমি এই ধারাবাহিতা বজায় রাখতে চাই, খেলাধুলার মধ্য দিয়ে নিজের একটা অবস্থান তৈরি করতে চাই।
সাদিয়ার বাবা আনোয়ারুল হক অশ্রুসিক্ত চোখে জানান, “মোর মাও মরা বেটি ভাল খেলে সোনার মেডেল আইনছে তাও হামরা ওর একখান নয়া জামা কিনি দিবার পাই নাই। বেটিটা মোর খেলির ভালবাসে কিন্তুক হামরা খেলেবার বাদে একখান জিনিস-পত্তরও কিনি দিবার পাই না।”
সৈয়দপুরের ক্রিকেট ক্লাব রাইজিং স্টারের কোচ বাবলু হোসেন জানান, খেলার প্রতি মেয়েটির খুব আগ্রহ। ব্যাটিংয়ে যেমন পারদর্শী তেমনি ফাস্ট বোলিংয়ের গতিতে তার জুড়ি নেই। দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হয়েও খেলার প্রতি তার আগ্রহের শেষ নেই।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ বজলুর রশিদ জানান, মেয়েটা অনেক প্রতিভাবান। দরিদ্রতা সত্বেও পিছুপা হয়নি সে। আমরা তাকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর।
সাদিয়া জিততে ভালোবাসে। পরিবারের মানুষগুলোর মুখে হাসি ফুটাতে ভালোবাসে। এজন্যে সে পাড়ি দিতে চায় অনেকদূর, সৈয়দপুরবাসীর সুনাম ছড়িয়ে দিতে চায় বহুদূর। আর তাই সে সৈয়দপুরসহ গোটা দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছে।
- কাগজ টুয়েন্টিফোর বিডি ডটকম এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।