গণতন্ত্রের জীবন্ত পোস্টার নূর হোসেন
১০ নভেম্বর, শহীদ নূর হোসেন দিবস । বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন-সংগ্রামে এক অবিস্মরণীয় দিন । ১৯৮৭ সালের এই দিনে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদ হন নূর হোসেন । স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা দূর্বার আন্দোলনে জীবন দেয়ায় ইতিহাসে দিনটি তাই স্মরণীয় হয়ে আছে ।
১৯৮২ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেন স্বৈরশাসক এরশাদ । ব্যাপক আন্দোলনের মুখে স্বৈর সরকার ১৯৮৭ সালে সাধারণ নির্বাচন দিতে বাধ্য হলেও ব্যাপক জালিয়াতি ও অনিয়মের কারণে এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করে বিরোধী দলগুলো ।
তাদের একমাত্র দাবি ছিলো, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা । আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর একযোগে স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের লক্ষ্যে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় দেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ।
হাজারো প্রতিবাদী যুবকের সঙ্গে জীবন্ত পোস্টার হয়ে সেদিন রাজপথে নেমে এসেছিলেন নূর হোসেন । তার বুকে-পিঠে লেখা ছিল ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ এই জ্বলন্ত স্লোগান ।
আন্দোলনকারীদের একটি মিছিল ঢাকা জিপিও’র সামনে জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি আসলে স্বৈরশাসকের মদদপুষ্ট পুলিশ বাহিনীর গুলিতে নূর হোসেনসহ মোট তিনজন আন্দোলনকারী নিহত হন, আহত হন বহু ।
এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় বিরোধী দলগুলো ১১ ও ১২ই নভেম্বর সারা দেশে সকাল সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করে । বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ । আরও ত্বরান্বিত হয় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ।
এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন স্বৈরশাসক এরশাদ । এর মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটে, পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় গণতন্ত্র ।
নূর হোসেনের পৈত্রিক বাড়ি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাতবুনিয়া গ্রামে । ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তার পরিবার ঢাকার ৭৯/১ বনগ্রাম রোডে বসবাস শুরু করে । পিতা মুজিবুর রহমান ছিলেন পেশায় আটো-রিকশা চালক । তার মায়ের নাম মরিয়ম বিবি । অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর নূর হোসেন পড়াশোনা বন্ধ করে মোটর চালক হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন ।
দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে । কর্মসূচির মধ্যে থাকে শহীদের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদ নূর হোসেন স্কয়ারে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, আলোচনা সভা, সেমিনার প্রভৃতি।
মাহবুব এইচ শাহীন/প্রকাশক ও সম্পাদক/কাগজ২৪