বিপিএল এর আয়োজন যত টাকার ঝনঝনানি !
স্পোর্টস ডেস্কঃ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) তৃতীয় আসর নভেম্বরে মাঠে গড়াবে। দেশি ও বিদেশি খেলোয়াড়দের লটারি পর্ব শেষ হয়েছে। যদিও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল লটারি আর ড্রাফটের আগেই ঠিক করে দেয় গ্রেড অনুযায়ী খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক। এতে তৃতীয় আসরের আগে নেই ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর টাকার ঝনঝনানি। ড্রাফট অনুষ্ঠানে ৬ দল মিলে ব্যয় করেছে ৩১ কোটি ১০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ব্যাট-বলের ধুম- ধাড়াক্কা ধুন্দুমার লড়াইয়ের সঙ্গে দর্শকদের আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানটিকে জাঁকজমকপূর্ণভাবে আয়োজন করতে পারলেই যেন টুর্নামেন্ট অর্ধেক সফল। সেকারণে এবারের আসরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে যতটা সম্ভব আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা করছে আয়োজক বিসিবি। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছে, এবারের আসরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মাতাতে ভারত থেকে আনা হচ্ছে বলিউড হার্টথ্রব হৃত্বিক রোশন এবং বলিউডের লঙ্কান গ্ল্যামার গার্ল জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজকে। দর্শকদের সুরের মুর্চনায় মোহিত করে তুলতে আনা হচ্ছে সঙ্গীতশিল্পী কৃষ্ণকুমার কুন্নাথকে (কেকে)।
তো এতবড় অনুষ্ঠান, এর ব্যায়ের বহরও নিশ্চয় অনেক বিশাল! বিসিবির একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, এবারের বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্যায় হবে প্রায় তিন কোটি টাকা। বিডিক্রিকটিম ডটকম নামে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট একটি ওয়েবসাইটে তুলে ধরা হয়েছে এ তথ্য। বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে অনেক নির্ভরযোগ্য সংবাদ পরিবেশন করে উক্ত ওয়েবসাইটটি। বিপিএল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ব্যায় নিয়ে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে সমালোচনা। সমালোচকদের একটাই যুক্তি, যেখানে বাংলাদেশের সাকিব- মাশরাফিমসহ ছয় আইকনকে ৩৫ লাখ টাকার বেশি দেয়া হচ্ছে না, সেখানে একটি অনুষ্ঠান করতেই ব্যায় করা হচ্ছে ৩ কোটি টাকা! প্রশ্ন ওঠাই তো স্বাভাবিক।
সমালোচকদের দাবি, বিসিবিই বাংলাদেশের বিশ্বসেরা ক্রিকেটারদের মূল্য কমিয়ে দিয়েছে। বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে ২০ নভেম্বর মিরপুর শেরে- বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। হোম অব ক্রিকেটে বিকেল চারটা থেকে শুরু হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। চলবে রাত দশটা পর্যন্ত। সে অনুষ্ঠানে যে বিদেশিদেরই প্রাধান্য থাকছে, সেটা তো আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। দর্শকরা সরাসরি বিপিএল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, ঢাকা ডায়নামাইটস, রংপুর রাইডার্স, চিটাগাং ভাইকিংস, বরিশাল বুলস ও সিলেট সুপার স্টারস মিলে কিনে নেয় ৬৩ দেশি ক্রিকেটার ও ৪৩ জন বিদেশি ক্রিকেটার।
তবে এছাড়াও ইতোমধ্যে বিদেশি তারকা ক্রিকেটারদের একটি তালিকাও ইতোমধ্যে প্রত্যেকটি দল থেকে পৌঁছে দেয়া হয়েছে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের হাতে। তবে সেসব তারকাদের সঙ্গে চুক্তির কাগজপত্র এখনও বোর্ডে জমা পড়েনি, তাই জানা যায়নি গেইল-সাঙ্গা-আফ্রিদিদের পারিশ্রমিকের অংক।
বিপিএলে স্থানীয় ৬৩ ক্রিকেটারের পেছনে ছয় ফ্রাঞ্চাইজিদের ব্যয় ১২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। অন্যদিকে মাত্র ৪৩ বিদেশি ক্রিকেটার দলে ভেড়াতেই এর চেয়ে বেশি খরচ করতে হয়েছে দলগুলোকে। এ খাতে খরচ হয়েছে ১৮ কোটি ৬৬ লাখ। সব মিলে ১০৬ ক্রিকেটার নিয়ে বিপিএলে দল সাজাতে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর টাকার অংকটা দাঁড়িয়েছে ৩১ কোটি ১০ লাখ টাকা।
বলা বাহুল্য, এই টাকার অংকটা আরো বাড়বে। কারণ কোন দলই তাদের ১৩ দেশি ও ১২ ক্রিকেটার ক্রয়ের কোটা পূরণ করতে না পারায় আরো কিছু ক্রিকেটার দলে টানার আবেদন করেছে বোর্ডের কাছে। আর এর সঙ্গে ক্রিকেটার ক্রয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সবচেয়ে ব্যয়বহুল খাত বিদেশি তারকা ক্রিকেটার ক্রয়ের অংকতো থাকছেই। কারণ বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের বেঁধে দেয়া সর্বোচ্চ দর ৭০ হাজার ডলারে খেলতে রাজি নন গেইল, সাঙ্গাকারা, আফ্রিদিরা। তাই তাদের কিনতে বড় অংকের টাকায় খরচ করতে হয়েছে দলগুলোকে।
মোট ১৩ রাউন্ডের ড্রাফট অনুষ্ঠানে ক্রিকেটারদের দলে টেনেছিলেন ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক ও সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ১০ জন দেশি ক্রিকেটারের পাশাপাশি বিদেশি ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ ৪ জন বিদেশি ক্রিকেটার নিয়ে স্কোয়াড সাজায়। এতে দেশি ক্রিকেটার ক্রয়ে ২ কোটি ১৮ লাখ এবং বিদেশি ৩ কোটি ২০ লাখ খরচে তাদের মোট ব্যয় ৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
অর্থ ব্যয়ে এর পরের দলটির নাম ঢাকা ডায়নামাইটস। ঢাকা ডায়নামাইটসও ৯ জন দেশি (১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা) ক্রিকেটারের সঙ্গে তালিকাভুক্ত করে ৩ জন বিদেশী (বিদেশি ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা) ক্রিকেটারকে। সব মিলে ব্যয় ৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
রংপুর রাইডার্স তাদের ৯ জন দেশি ও ৩ জন বিদেশির পেছনে ব্যয় করেছে যথাক্রমে ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ও বিদেশি ৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। মোট ৫ কোটি ২১ লাখ টাকা। টাকা ব্যয়ে চার নাম্বারে চিটাগাং ভাইকিংস। ১০ দেশি (২ কোটি ১৭ লাখ টাকা) ও ৩ বিদেশির (২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা) পেছনে ব্যয় ৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আর সিলেট সুপারস্টার্স ৯ জন দেশি ক্রিকেটারের পাশাপাশি ৩ জন বিদেশি ক্রিকেটার তালিকভুক্ত করেছে। ব্যয় দেশি ২ কোটি ১২ লাখ, বিদেশি ২ কোটি ৯৬ লাখ। সবমিলেয়ে ৫ কোটি ৮ লাখ টাকা।
তবে টাকা ব্যয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে বরিশাল বুলস। দেশি ক্রিকেটারদের পেছনে ২ কোটি ২৪ লাখ আর বিদেশিদের পেছনে ২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এবার তাদের ব্যয় ৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।