টাঙ্গাইলে পৌলী নদী থেকে বালু উত্তোলন॥ হুমকির মুখে টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধ
মো. রাশেদ খান মেনন (রাসেল), টাঙ্গাইল, বিশেষ প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
অবাধে বালু উত্তোলন আর নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজিং এর ফলে হুমকির মুখে পড়ছে টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধ। বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে কয়েকটি বালুর ঘাট। দুই তিন গ্রামবাসীর যাতায়াতের একমাত্র সড়ক এই বাঁধ। আর এসকল বালুর ঘাট থেকে প্রতিদিন বালু ভর্তি শত শত ট্রাক যাতায়াত করায় চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে শহর রক্ষা বাঁধটি। কিছু স্বার্থলোভী আওয়ামীলীগ নেতাদের নাম ভাৃঙ্গিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল অবাধে পৌলী নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। ফলে প্রশাসনের কাছে বার বার অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার না পেয়ে হতাশার মধ্যে জীবন যাপন করছে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
অপরদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পৌলী সেতুর পাশেই পৌলী নদী থেকে ভ্যেকু দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করছে একটি প্রভাবশালী মহল। দিনের বেলায় অন্যের লিজ নেওয়া জমি থেকে বালু উত্তোলন করলেও রাতের বেলায় নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে এই বালু খেকোরা।
জানা যায়, ২০০০ সালে কম্পার্টমেন্টালাইজেশন পাইলট প্রজেক্ট(সিপিপি) আওতায় ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ টাঙ্গাইল শহররক্ষা বাঁধটি তৈরি করা হয়। যা ছিলিমপুর-করটিয়া বাঁধ নামে পরিচিত। টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধ তৈরী হওয়ার পর বিগত ১৮ বছরে বড় ধরনের কোন মেরামতের কাজ না হওয়ায় ৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বাঁধের বিভিন্ন অংশ ইতিমধ্যে দূর্বল হয়ে গেছে। বিশেষ করে বাঁধের পূর্বাংশ পৌলী সেতু থেকে মহেলা, আগবেথর, পাছবেথর, শালিনা, বার্থা হয়ে করটিয়া পর্যন্ত বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাব্যনা রয়েছে।
এছাড়া বাঁধের পুরো অংশটি ভেঙে গেলে টাঙ্গাইল শহর, গালা, ঘারিন্দা, করটিয়া ইউনিয়নসহ বাসাইল উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বাড়িঘর, ফসলি জমি, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদ-মাদরাসা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
এছাড়া প্রতিনিয়ত শহর রক্ষা এই বাঁধের বিভিন্ন অংশে ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে দেবে গেছে। গত বছর বন্যার সময় রামদেবপুর এলাকার বাসিন্দারা নিজ উদ্যোগে মাটি ফেলে কোনোরকমে বাঁধের রামদেবপুর অংশটিকে রক্ষা করেছিল।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, টাঙ্গাইলের কালিহতী উপজেলার পৌলী নদী উপর রেল সেতুর পাশেই টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধ। আর এ বাঁধের পাড় ঘেষে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি বালুর ঘাট। স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল স্থানীয় লোকজনদের সাথে মিলে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। আর এসকল বালুর ঘাট থেকে প্রতিদিন শত শত বালু ভর্তি ট্রাক যাতায়াত করায় চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে শহর রক্ষা বাঁধটি। সেই সাথে হুমকির মুখে পড়ছে। বন্যা শুরুর যে কোন সময় ভাঙ্গনের কবলে পড়তে পারে বাঁধটি।
বাঁধের পাশের স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, প্রতিদিন শত শত ট্রাক আসে আবার বালু ভর্তি করে এ সড়ক দিয়ে নিয়ে যায়। আমাদের চলাচলের একমাত্র সড়ক এটি। কিন্তু এলাকার কিছু প্রভাবশালী লোকজন ও কিছু সন্ত্রাসী বাহিনীর কারনে আমরা কিছু বলতে পারিনা। এর প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদের হুমকি দেয়। এই সড়কে বালুর ট্রাক চলাচলের কারনে আমাদের পায়ে হেটে যেতে হয়। কোন মালামাল আনা নেওয়া করা যায় না। তাছাড়া বাড়ি ঘর বালুতে নষ্ট হয়। জামা কাপড়, রান্না করা খাবার সব বালুতে নষ্ট হয়ে যায়। আমরা খুব কষ্টের মধ্যে জীবন যাপন করছি। প্রশাসনের লোকজন আসে আবার চলে যায়। তারা তো তাদের টা বুঝে, কিন্তু আমাদের কথা কখনো চিন্তা করে না।
আইয়ুব আলী, আলেয়া বেগম, কাশেম, রেনু বেগম বলেন, আমরা গরীব মানুষ আমাদের কথা কি কেউ শুনে। এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে পারি না। ধুলা বালুতে বাড়ি ঘরে থাকা যায় না। আমরা তো এর প্রতিবাদ করতে পারি না। প্রশাসনের লোকজন আসে দু একদিন বন্ধ থাকে তারপর আবার বালুর ঘাট চালু করে। যারা বালুর ব্যবসা করে তাদের আমরা ভয় পাই। তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস আমাদের নাই। আমাদের শত সমস্যা হলেও আমরা নিরবে সব কিছু মেনে নিয়েছি। আমাদের নিয়ে তো আর কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই।
না প্রকাশ না করা শর্তে বালু মহলের কয়েকজন বলেন, গত বছর মহেলা এলাকায় বাঁধের একটি অংশ ভেঙ্গে গেছিলো। এবছরও ভাঙ্গবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আমরা তো কাজ করি। মালিক যেভাবে কাজ করতে বলে আমরা তাই করি। নদীর পাড়ে যাদের জায়গা আছে তাদের জমি লিজ নিয়ে অনেকেই এই বালুর ব্যবসা করছে। আবার অনেকে নদী থেকে সরাসরি বালু উত্তোলন করছে। এখানে কেউ কিছু বলতে পারবে না। কারন প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই সব কিছু করা হয়।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো: শহীদুল ইসলাম বলেন, আমি বিষয়টি জানার পর কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি বিষয়টি দেখার জন্য। টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধের যেন কোন ক্ষতি না হয় তার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।