টিআইবির গবেষণা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত : মন্ত্রী
অনলাইন ডেক্স । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, ‘রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) দুর্নীতি নিয়ে টিআইবি যে গবেষণা প্রতিবেদন দিয়েছে সেটি সত্য নয়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’ ভুল তথ্যের ভিত্তিতে টিআইবি রাজউককে হেয় করে বাহবা নেয়ার চেষ্টা করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন গণপূর্তমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘সংবাদপত্রে টিআইবির প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে যে সংবাদ এসেছে সেখান থেকে আমি অবহিত হয়েছি যে রাজউকে সেবা নিতে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ লাগে। এই বক্তব্যটি কোনোভাবেই সত্য নয়, এর কোনো ভিত্তি নেই। এটি সম্পূর্ণরূপে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। জনবান্ধব একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে হয়ত কারও দেয়া ভুল তথ্যের ভিত্তিতে হেয় প্রতিপন্ন করে বাহবা নেয়ার চেষ্টা করেছে টিআইবি। এই অভিযোগের কী ভিত্তি, সে বিষয়েও তারা সুস্পষ্টভাবে কিছু বলেননি।’
মন্ত্রী বলেন, একটি অভিযোগে তারা বলেছেন যে বিশেষ প্রকল্পের ক্ষেত্রে রিয়েল স্টেট ডেভেলপারকে ১৫ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। ‘আমি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর এ জাতীয় কোনো প্রকল্পের অনুমোদনই হয়নি। আমি এক বছরের বেশি সময় আগে মন্ত্রী হয়েছি। বিশেষ প্রকল্পে ঘুষ দিতে হয় এই তথ্য তারা কোথায় পেলেন, যখন এই জাতীয় কোনো প্রকল্পই পাস করা হয়নি,’ যোগ করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, তারা (টিআইবি) নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে অভিযোগ করেছেন। ‘আমি মন্ত্রী হওয়ার পর আজ পর্যন্ত কোনো নিয়োগই হয়নি। নিয়োগ না হলে রাজনৈতিক প্রভাবের অবকাশ নেই। নিয়োগের জন্য আবেদন করা হয়েছে, আমরা এখন পর্যন্ত এডমিট কার্ডও ইস্যু করিনি। এর মধ্যেই তারা এখানে দুর্নীতির একটি অভিযোগ হিসেবে উত্থাপন করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর রাজউকে আইন করে দেয়া হয়েছে যে ভাই-বোন সেবা নিতে গেলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন করতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা অটোমেশন পদ্ধতি চালু করেছি। এখন ঘরে বসেও একটি প্ল্যান স্ক্যান করে ল্যাপটপের মাধ্যমে নির্ধারিত অনলাইন পদ্ধতিতে আবেদন করা যায়। সরকারি যে ফি দিতে হয় তা জমা দিয়ে রিসিট ও নম্বর দিলে সেই সেবা তারা গ্রহণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে আলাদা ঘুষ দেয়ার অভিযোগ আসার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’
‘তারা দালালের কথা বলেছেন- একটা সময় রাজউক দালাল পরিবেষ্টিত ছিল বলে অভিযোগ ছিল। বেশ কিছু দালালকে গ্রেপ্তার ও তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে। এরমধ্যে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও রয়েছেন। যারা রাজউকের পরিত্যক্ত কক্ষের মধ্যে আলাদা অফিস করে সেখানে কমিশনারের প্যাড-সিল ব্যবহার করে বিভিন্ন রকমের কর্মকাণ্ড করতেন। দৃশ্যমানভাবে বলা যেতে পারে রাজউকে এখন দালালের উপস্থিতি নেই।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করব টিআইবি এ জাতীয় কোএনা অভিযোগ আনার আগে আমাদেরকেও জানাবেন, কী অভিযোগ পেয়েছেন বা কাদের কাছ থেকে পেয়েছেন। টিআইবি কখনও রাজউক ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কোনো অভিযোগের বিষয়ে জানায়নি। জানালে আমরা তাদেরকে সাহায্য করতে পারতাম।’
‘এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি যে রাজউকে নতুন চেয়ারম্যান এসেছেন এবং উনি স্বচ্ছতার সাথে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছেন,’ বলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলেছেন। ‘আমরা সেটাকে শক্ত ও কঠোরভাবে ধারণ করেছি। সব অনিয়ম দূর হয়ে গেছে, এ কথা বলা যাবে না। তবে যে সব দুর্নীতির অভিযোগ ছিল এর অধিকাংশই আমরা বিনাশ করেছি। আগামীতেও করতে চাই।’
দুর্নীতি বন্ধে এর আগে দুদকের সুপারিশ কতটা বাস্তবায়ন করা হয়েছে জানতে চাইলে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, দুদক আমাদের কিছু নির্দেশনা দিয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ১৪ দফা নির্দেশনা দিয়েছি। সেই নির্দেশনার আলোকে আমাদের চলমান কর্মকাণ্ডে অনেক বেশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এসেছে।
আনুষ্ঠানিকভাবে টিআইবির কাছে কোনো প্রতিবাদ জানানো হবে কিনা জানতে চাইলে রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যম থেকে জেনেছি। সেজন্য গণমাধ্যমের মাধ্যমেই জানালাম তাদের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। এটি অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিষয়গুলো আরও গভীরভাবে পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
প্রসঙ্গত, ‘রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক): সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে বুধবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এখন এমন একটা ধারণা করা হয় যে, রাজউক আর দুর্নীতি সমার্থক। রাজউক এতদিনেও জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারেনি। এমনকি রাজউক নারী ও প্রতিবন্ধীবান্ধব প্রতিষ্ঠানও নয়। রাজউকের ওপর নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার যে দায়িত্ব অর্পিত, তারা তা পালনে ব্যর্থ হয়েছে। তারা ড্যাপ ও ডিএমডিপি রক্ষায়ও ব্যর্থ হয়েছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে রাজউক এখন তার মূল ভূমিকা থেকেই সরে গেছে। তাই রাজউকের দুর্নীতির বিষয়গুলো দুদকের গুরুত্ব সহকারে নেয়া উচিত।’ সূত্র : ইউএনবি