ঢাকা-দিল্লী ৩৯ দফা যৌথ ঘোষণা
অনলাইন ডেক্স । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলন শেষে ৩৯ দফা যৌথ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ ও ভারতের পক্ষ থেকে এই যৌথ ঘোষণা প্রকাশ করা হয়।
ঘোষণায় বলা হয়, উভয় প্রধানমন্ত্রীই জোর দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সম্পর্ক ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে গড়া এবং সার্বভৌমত্ব, সাম্য, আস্থা ও সমঝোতার একটি সর্বাত্মক অংশীদারিত্বের প্রতিফলন, যা কৌশলগত অংশীদারিত্বকে ছাড়িয়ে যায়। তারা একাত্তরের মহান আত্মত্যাগের জন্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সৈন্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের জনগণের মূল্যবোধকে সমুন্নত ও সুরক্ষিত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আশ্বাস দেন যে, ভ্যাকসিন ভারতে তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের কাছে সরবরাহ করা হবে। এ সময় ভারত ভ্যাকসিন উৎপাদনে চিকিৎসা ও অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রেও সহযোগিতার প্রস্তাব করেছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলমান ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনে ভারতের আন্তরিকতার গভীর প্রশংসা করেন। উভয়পক্ষই উল্লেখ করেন, ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক শ্যাম বেনেগালের পরিচালনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিকের শূটিং ২০২১ সালের জানুয়ারিতে শুরু হবে। ২০২১ সাল ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য ঐতিহাসিক হয়ে উঠবে কারণ, দুই দেশ মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চাশতম বার্ষিকী এবং ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ককে স্মরণ করবে, এ ভাবনায় তারা এই দুই যুগান্তকারী অনুষ্ঠান স্মরণে যৌথভাবে ভারত, বাংলাদেশ ও তৃতীয় দেশগুলোতে কয়েকটি কার্যক্রমের আয়োজন করার বিষয়ে সম্মত হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের মুজিবনগর থেকে নদিয়া পর্যন্ত সড়কটির মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ঐতিহাসিক তাৎপর্য স্মরণ করে সড়কটিকে ‘স্বাধীনতা সড়ক’ হিসেবে নামকরণে বাংলাদেশের প্রস্তাব বিবেচনা করার জন্য ভারতীয় পক্ষকে অনুরোধ করেন।
স্থল সীমানা চূড়ান্তকরণে উভয়পক্ষই যৌথ সীমান্ত সম্মেলনের প্রথম বৈঠক করতে সম্মত হয়েছে। কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী আন্তর্জাতিক সীমানাটিকে একটি নির্দিষ্ট সীমানায় রূপান্তর করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে।
উভয় নেতা ত্রিপুরা (ভারত)-বাংলাদেশ সেক্টরের শুরু থেকে দুই দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া স্থাপন সমাপ্তকরণে সম্মত হন। উভয় নেতা এ ব্যাপারেও একমত হয়েছেন যে, সীমান্তে নাগরিকের প্রাণহানির বিষয়টি উদ্বেগের এবং এ ধরনের ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করার জন্য সমন্বিত ব্যবস্থা বাড়াতে সংশ্লিষ্ট সীমান্ত বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছেন। বাংলাদেশ ও ভারত ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির সম্মুখহীন হয় উল্লেখ করে দুই নেতা উভয়পক্ষের কর্মকর্তাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা চুক্তিটি সম্পাদনের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে সন্ত্রাসবাদকে বৈশ্বিক শান্তি ও সুরক্ষার জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে উভয়পক্ষ সন্ত্রাসবাদের সব কার্যক্রম নির্মূল করার জন্য দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সাল থেকে সাফটার আওতায় ভারতে বাংলাদেশী পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত এবং কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের প্রশংসা করেছেন। উভয় প্রধানমন্ত্রী বন্দরের বিধিনিষেধ, প্রক্রিয়াগত বাধা ও কোয়ারেন্টাইন বিধিনিষেধসহ অশুল্ক বাধা সমাধান এবং বাণিজ্য সুবিধার ওপর জোর দিয়েছেন, যাতে উভয় দেশ সাফটা নমনীয়তার পুরোপুরি সুবিধা নিতে পারে। সেই সঙ্গে দুই নেতা শীঘ্রই চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য পরিবহন চালু করতে সম্মত হন।
দুদেশের মধ্যে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন এবং যোগাযোগ সহজ করার জন্য নেতারা বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের জন্য সমঝোতা স্মারক সক্রিয়করণের মাধ্যমে বিবিআইএন মোটর যান চুক্তিটি দ্রুত কার্যকর করার বিষয়ে একমত হন। এতে ভুটান পরবর্তীতে যোগদানের বিধান থাকবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী চলমান ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপক্ষীয় মহাসড়ক প্রকল্পের প্রতি গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অঞ্চলগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে এই প্রকল্পের সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করতে ভারতের সমর্থন কামনা করেন। এ সময় বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিরাপদে মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী তার সহযোগিতা পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৃহস্পতিবার ভার্চুয়ালি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় দুই প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বসেন। এক ঘণ্টা ১৫ মিনিটের বৈঠকে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।