তালমা রাবার ড্যাম অকেজো, বঞ্চিত সুবিধাভোগীরা
নাজমুস সাকিব মুন, পঞ্চগড় প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
পঞ্চগড়ের তালমা নদী তীরবর্তী প্রায় ২০ গ্রামের দেড় হাজার হেক্টর কৃষি জমিতে সেচ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে ৬ কোটি টাকা মূল্যে রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ শেষে প্রথম বছরে কৃষকরা খানিকটা সেচ সুবিধা পেলেও ৬ বছর ধরে অকেজো হয়ে আছে রাবার ড্যামটি। এছাড়া অভিযোগ ছিল রাবার ড্যামটি ১২ ফুট ফলানো গেলেও প্রথম থেকেই মাত্র চার থেকে ৫ ফুট ফলানো হতো। এর ফলে নদীতে পানি থাকতো কম।
পর্যাপ্ত পানির অভাবে প্রকল্পের আওতায় যেসব খাল খনন করা হয়েছিল সেগুলোও ভরাট হওয়ার পথে। পানি স্বল্পতায় কৃষকরা বোরো মৌসুমে চাষ করতে পারছেন না। রাবার ড্যামটি কে কেন্দ্র করে যে পর্যটন কেন্দ্র এখানে গড়ে উঠেছিল নদীতে পানি না থাকায় সেটিও আজ পর্যটক শূন্য।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর তথ্য মতে, ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে পঞ্চগড়ের তালমা নদীতে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়। একই সাথে ওই নদী সংলগ্ন হাফিজাবাদ ও কামাত কাজলা দিঘী ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় সেচ সুবিধা প্রদানকল্পে খাল খনন করা হয়। এতে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয় হয়। পরের বছর থেকে স্বল্প খরচে কয়েকশো কৃষক সেচ সুবিধা পায়। এর ফলে ওই এলাকায় রবিশস্য সহ বোরো চাষে নতুন সম্ভাবনা উম্মোচন হয়।
প্রথমে রাবার ড্যাম এর মাধ্যমে তালমা জালাসী, ডিয়াবারি, খোংগাপাড়া, বড়দহ, বামন পাড়া, চছপাড়া, টেংনা পাড়া, ঠুটা, পাকুরি, পাথর ডোবা এই ১০ গ্রামের কৃষকরা বোরো চাষ করতে ড্যামের পানি দিয়ে।
এবছর ড্যামের আবার ব্যাগ ফোলাতে গিয়ে আগে সংস্কার করা অংশে আরও এক মিটার ফেটে যায়। সময় মতো সংস্কার সম্ভব হয়নি। অভিযোগ উঠে পরবর্তীতে ড্যামে আরো প্রায় ৩ মিটার অংশ কেটে ফেলেছে অজ্ঞাত কেউ।
অভিযোগ রয়েছে, নদীর উজান থেকে পাথর, মাটি ও বালু উত্তোলনকারীরা প্রথম থেকেই নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণে বিরোধী ছিলেন। ড্যামের রাবার ব্যাগে বাতাস ঢোকানোর পর নদীর উজানে পানির উচ্চতা ১২ ফুট বেড়ে যেত। যার ফলে ৬ মাস বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখতে হতো। রাবার ব্যাগের ৩ মিটার কেটে দেওয়া কে কে রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা কমিটি নাশকতা হিসেবে দেখছেন। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের নিকট ৭ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আজাদ হোসেন।
তালমা রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির ব্যবহার সাধারণ সম্পাদক আজাদ হোসেন জানান, এর আগেও দুইবার রাবার ড্যামটিতে ফাটল ধরেছিল। সে সময় সমবায় সমিতির মাধ্যমে এবং এলজিইডির সহায়তায় ডামটি সংস্কার করা হয়েছিল। এবার ডামটি ৩ মিটার ফেটে যাওয়ায় সেটা আর কি শব্দের কোন কাজে আসছে না।
পঞ্চগড় এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী জাহেদুর রহমান মন্ডল জানান, নতুন করে ৩ মিটার অংশ ফেটে যাওয়ায় রাবার ড্যামটি স্থানীয়ভাবে সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। তবে আগামী মৌসুমের আগে যেন রাবার ড্যামটি সচল করা যায় সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। গত ১৯ মার্চ এলজিইডি সদর দপ্তরে রাবার ড্যামটি সংস্কার করার জন্য আবেদন প্রেরণ করা হয়েছে।
অপরদিকে রাবার ড্যামটি কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড পঞ্চগড় সদর উপজেলা প্রশাসন নদীর পূর্ব তীরে তালমা রাবার ড্যাম পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলে। নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়া তে এবং রাবার ড্যামটি অচল হয়ে যাওয়ায় তাই পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে পর্যটন কেন্দ্রটি।