পারভেজ আক্তার এর ছোট গল্প- তুমি নিয়েছ অনেক

 

 

তুমি নিয়েছ অনেক (ছোট গল্প)
————————————  পারভেজ আক্তার

হ্যালো মা, হ্যালো…।

হ্যাঁ বল, শুনছি তো।

তুমি কেমন আছ?

ভালো। তোরা?

বাবা কেমন আছে?

তোর বাবাও ভালো আছে। তোরা কেমন আছিস। ইন্ডিয়ায় গিয়ে কেনাকাটা কেমন করলি? ওখানে সোনার ভরি কম না বেশি?

কেনাকাটা করতে পারি নি মা। ওখানে গিয়েই আমার শরীর খারাপ করে। আমার শরীর খারাপ দেখে তোমাদের জামাই জলির শ্বশুরবাড়ি ফোন করেছিল। জলির বিয়েটা পিছিয়ে গেছে মা। রোজার ঈদে বিয়ে হবার কোনো সম্ভাবনা নেই, তবে কোরবানির সময় হতে পারে। আলোচনা চলছে।

কি হয়েছে তোর?

তেমন কিছু না, প্রেসার কম, ডায়াবেটিস বেশি এই আর কি।

কি বলছিস এসব! তোর অসুখের জন্য আমার নাতনিটার বিয়ে পিছিয়ে গেল! এটা কেমন কথা মা?

তুমি ভেব না তো। ওদের বিয়ে তো আগেই হয়ে গেছে। এখন অনুষ্ঠান করে উঠিয়ে দেব এই যা।

তা না হয় বুঝলাম। তাই বলে জামাই দু’দিন পরপর শ্বশুর বাড়ি আসবে, মেয়ে বাপের বাড়ি থেকেই মা হবে, এটা কি ঠিক?

ওরা যা ভালো বুঝবে তাই করবে। তাতে অসুবিধার কিছু নেই।

কি জানি বাবা আমি অত বুঝি সুজি না।

শোন মা, তোমাকে যে কারণে ফোন দিয়েছি তা বলতে ভুলে গেছি। এবারের ঈদ আমরা তোমাদের ওখানে করব।

কাল বাদে পরশু ঈদ আর তুই এখন জানাচ্ছিস!

কোনো অসুবিধা নেই। ওরা কেউ আসবে না। আমি আর তোমার জামাই আসব।

তা কেন! আসবি যখন সবাই আয়।

শোন মা, তুমি বললে তো হবে না। যে যা ভালো বোঝে তাই করবে। আমি আমার কথা আর তোমার জামাইয়ের কথা বললাম।

ঠিক আছে মা, তোরা যা ভালো মনে করিস তাই হবে।

মেয়ের সাথে কথা বলে ফোনের লাইন কেটে টগবগে তরুণীর মতো কাজে লেগে যায় ষাট বছরের ফাতেমা। ছয় ছেলেমেয়ের মধ্যে পাঁচ ছেলেমেয়েই দূরে। শুধু ছোট ছেলেটা বৌ-বাচ্চা নিয়ে বাড়িতে থাকে। তাও আলাদা ঘর। প্রতিবন্ধী না হলে এই ছেলেও নিশ্চয়ই দূরেই থাকতো। আলাদা ঘর থাকুক আর আলাদাই খাওয়া-দাওয়া করুক, দিনের মধ্যে একবার হলেও চেহারাটা তো দেখা যায়! মা হয়ে সন্তানের চেহারা দেখাটাই অনেক সুখের, অনেক শান্তির।

অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে উঠান ঝাট দেবার জন্য ঝাড়ু টা হাতে নিয়ে উঠানে নামে। আজকাল কাজের মানুষ পাওয়া দুষ্কর। গার্মেন্টস চালু হবার পর সব গরিব বড় হবার আগেই বাড়ি ছেড়ে চাকরিতে চলে যায়। লেখাপড়া ছাড়াই যদি ভালো বেতনে চাকরি পেয়ে যায় তাহলে কে’ই বা গ্রামে থেকে কষ্ট করে।

স্ত্রীকে দ্রুত গতিতে উঠান ঝাড়ু দিতে দেখে বারান্দা থেকে হাঁক ছাড়ে আশির কাছাকাছি সবুর খান। ফাতেমা আর সবুর খান স্বামী-স্ত্রী হলেও দু’জনের বয়সের ব্যবধান অনেক। অনেক বছরের ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও কেমনে কেমনে যেন একসাথে কাটিয়ে দিল প্রায় পঁয়তাল্লিশ বছর। পঁয়তাল্লিশ বছরের জীবনে ভালোবাসার পাশাপাশি ঢের ঝগড়া মারামারিও হয়েছে। যাবার জায়গা নেই বলে স্বামীর সংসার ছেড়ে কোথাও যায় নি ফাতেমা। অসহায় মানুষ যেমন খড়কুটো পেলেও আঁকড়ে ধরে তেমনি সংসারটাকে আঁকড়ে ধরে ভবিষ্যত তৈরি করেছে সে। ছয় মেয়েছেলের মা হয়েছে, গোটা কয়েক নাতি-নাতনির নানী-দাদীও হয়েছে।

ফোনে কার সাথে কথা কইছো?

নাদিরার সাথে। নাদিরা না কী জামাই লইয়া এহানে ঈদ করব।

ভালোই হবে। সাজ্জাদও বউ বাচ্চা লইয়া বাড়ি আইতাছে আর নাদিরাও জামাই লইয়া আইব। বিয়ার কথা কি যেন কইতাছিলা?

জলির বিয়া পিছাইয়া গেছে। কোরবানির ঈদে হইব।

তুমি অত তাড়াতাড়ি উঠান ঝাড়ু দিতাছ ক্যান? ওরা আইব কাইল। আগে ঘরদোর ঠিক করবা তারপরে না উঠানে হাত দিবা। তাছাড়া উঠানটা না হয় জয়নালের বউ ঝাড়ু দিব। ঝাড়ু দিয়া সারারাত কোমর ব্যথায় ছিল্লাইবা আর আমার ঘুমের সর্বনাশ করবা।

আমি তো সারাজীবন তোমার সর্বনাশই করলাম।

জীবনে ত্যাড়া কথা ছাড়া সোজা কথা কোনোদিন কইতে পারলা না।

আমার ঝি-পুতেরা বাড়ি আইতাছে দেইখ্যা তোমাার শরীরে জ্বালাপোড়া শুরু হইছে? অত বকবক করতাছো ক্যান?

থেমে যায় সবুর খান। ইদানিং স্ত্রীর সাথে তর্কে কুলিয়ে উঠতে পারে না। আমার ছেলে আমার মেয়ে আমার নাতি-নাতনী বলতে বড় গর্ববোধ করে ফাতেমা। ইদানিং গর্ববোধ বাড়ছে। ছেলেমেয়েরা টাকা-পয়সা পাঠালে বা বাড়িতে এলে ফাতেমার অবস্থা দুর্গার মতো হয়ে যায়। দুই হাতে দশ হাতের কাজ করতে পারে। ফাতেমা বড় দুঃখী, বড় লক্ষ্মী। ভাবতে ভাবতে ভর দেয়ার লাঠিটা হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে বারান্দা থেকে নেমে বাড়ির বাইরে যাবার জন্য হাঁটতেই ফাতেমার গলা বাড়ে।

কই যাইতাছ। এদিক ওদিক না যাইয়া বাজারে গিয়া ভালোমন্দ দেখে বাজার কিনে পাঠাও।

আমার বাজার করতে হবে না। তোমার ছেলেমেয়েরা ঠিকই বাজার করে নিয়া আইবো।

ছেলেমেয়েরা শত আনুক। তাই বলে তুমি তোমার কর্তব্যটা পালন করবা না!

তুমি মাঝে মাঝে এত বেশি কথা কও যা আমার ভালো লাগে না। মনে হয় ছেলেমেয়ে সব তুমি একা একাই জন্ম দিছ।

এই কথা শুনতে শুনতে তো আমার কানই নষ্ট হইয়া গেল। অত কথা না কইয়া বাজারে গিয়া ছোট মাছ পাও কী না দেখ। নাদিরা বইচা মাছের পোড়া পোড়া তরকারি খাইতে পছন্দ করে।

সকাল নয়টায় এসে বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নামে নাদিরা। সাথে এসেছে স্বামী আর এক মামা। গাড়ির হর্ণ শুনেই ফাতেমা বুঝতে পারে তার মেয়ে এসেছে। গতকাল বিকেলে ফোন করেছিল আর রাত পোহাতে না পোহাতেই মেয়ে এসে যাবে ভাবতেও পারে নি ফাতেমা। অন্য দিন রাস্তায় থাকাকালীন সময়ে কতদূর এসেছে জানিয়ে দুই-তিনবার ফোনও করে কিন্তু আজই ব্যতিক্রম হলো।

সারা রাস্তায় একটাও কথা বলে নি বিমল রায়। নাদিরা দু’য়েকবার এটা সেটা জিজ্ঞেস করে কথা বলতে চেয়েছে কিন্তু বিমল রায় ডান হাতের তর্জনিটা নিজের ঠোঁটের মাঝখানে চেপে ধরে ইশারায় চুপ থাকতে বলেছে। লুকিং গ্লাসে সেটা ফলো করেছে নাদিরার স্বামী মমতাজ আহমেদ। তাই সেও বিমল রায়কে কিছু জিজ্ঞেস করে নি। পুরো পাঁচ ঘণ্টা রাস্তায় ছিল। এর মধ্যে টা-টু শব্দ করে নি বিমল রায়। শুধু দু’চোখ ভরে রাস্তার দু’পাশ দেখেছে।

বিমল রায়কে দেখে ঘোমটাটা লম্বা করে টেনে দিল ফাতেমা। হাসিমুখে মেয়ের সামনে গিয়ে বলল, রওয়ানা দিয়েছিস এই খবরটাও দিলি না। কেন রে মা?

তোমাকে উপহার দিব বলে বলি নি।

উপহার! আমার জন্য আবার কি উপহাররে মা! আমার উপহার তো তোরা আর তোদের সুখ।

তোমার জীবনের সেরা উপহার।

সুবহানআল্লাহ, না জানি তুই আমার জন্য কি কিনেছিস! আগে ঘরে চল। তোরা সবাই কি রোজা আছিস?

আমরা দু’জন রোজা রেখেছি তবে উনি রোজা রাখেন নি।

উনি কে তা তো কইলি না।

কইলেই কি তুমি চিনবা!

কি সব পোলাপানের মতো কথা বলছিস! আগে ঘরে চল তো।

ফাতেমাকে দেখেই বিমল রায়ের চোখ ছলছল করে। ছোটবেলার রমা রায়ের সাথে কোনো মিল নেই ফাতেমার। রমা রায় ছিল চঞ্চলা কিশোরী। সারাদিন দৌড়াদৌড়ি, লাফালাফি করে দিন কাটাত। পড়ার সময় গলা ফাটিয়ে পড়ত। অনেক রাত জেগে পড়ালেখা করত আর সূর্য মাথার উপর এলেও ওর ঘুম ভাঙতো না। ওর জন্য রাতে বাড়িতে চোরও আসত না। ওর পড়ার শব্দ পাহারাদার হিসেবে কাজ করত। স্কুলে যাবার সময় মা ডেকে ডেকে ওর ঘুম ভাঙাতো। দুইপাশে দুইটা বেনুণী ঝুলিয়ে বইখাতা নিয়ে নাচের তালে তালে স্কুলে যেত।

ঘরে ঢোকে সবকিছু রেখে নাদিরাকে নিয়ে চলে গেল রান্না ঘরে। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল, কে এই লোকটা? তোর শ্বশুরবাড়ির কেউ, না কী জলির শ্বশুরবাড়ির কেউ?

এটা আবার কেমন কথা! জলির শ্বশুরবাড়ির লোক তোমাদের বাড়ি আসবে কেন! লোকটাকে আমিও চিনি না। পথে দেখা হলো আর তোমার কথা বলল। তোমার কথা বলাতে উনাকে সাথে নিয়ে এলাম।

কি বলছিস তুই! পাগল-টাগল হইলি না কী!

পাগল আমি না মা। পাগল হলে তুমি। তুমি খুব পাষাণ। যাকগে, তুমি রান্নানাবান্নার আয়োজন কর আর আমি উনাকে বাড়িটা দেখাই।

বিমল রায় ঘরে নেই। নাদিরা রান্নাঘরে যাবার সাথে সাথে সেও বাইরে বেরিয়ে গেছে। সোজা নিজেদের বাড়িতে। নিজেদের বাড়ি বলতে কোনো অস্তিত্ব নেই তবুও কেন যেন নিজেদের বাড়ি বলেই মনে হচ্ছে। যেখানে ছিল বসতভিটা সেখানে এখন বেগুন ক্ষেত। যেখানে ছিল উঠান সেটা এখন কচুক্ষেত। যেখানে ছিল বাড়ির নিজস্ব মন্দির সেখানে এখন খড়ের পালা। বাড়ির পিছনে বড় পুকুরটা ঠিকই আছে। কিন্তু অসম্ভব ছোট হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। শান বাঁধানো ঘাট লতাপাতায় ঢেকে আছে। এই পুকুর, এই ঘাট কেউ ব্যবহার করে না তা স্পষ্ট। পুকুরের কোণায় বড় রেনইট্রি ছিল। গাছটা নেই তবে গাছের গোড়াটা আছে। এই রেনইট্রি তলায় কত খেলাধূলা হয়েছে!

বিমল রায়কে দেখে বাড়ির গৃহকর্তা এগিয়ে আসে। আগে কেউ কখনো কাউকে দেখে নি। সে কাছে গিয়ে হাতে ইশারা করে ব্যা ব্যা করে জানতে চাইল-কে আপনি! এখানে কেন এসেছেন?

চোখে কখন যে জল এসে গিয়েছিল টের পায় নি বিমল। সে চোখ মুছে বোবা লোকটার দিকে তাকিয়ে সামান্য হেসে অন্য দিকে পা বাড়াল। সব বদলে গেছে। বদলাবারই কথা। চুয়াল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ বছরে কি সব আগের মতো থাকবে! কেন থাকবে! কিভাবে থাকবে! কচুগাছ থেকে বের হওয়া লতাগুলো বেজায় বেড়েছে কিন্তু কাটে না কেন? বিক্রি করে না কেন? আগের সেই বাংলাদেশ অনেক পাল্টে গেছে। বর্ষা মৌসুমে বাড়ির আঙিনায় লাউ ঝুলছে। গাছে বেগুনও ধরেছে অনেক। এখন বোধহয় রবিশস্য বা মৌসুমি ফল বলতে কিছুই নেই। সব বারোমাসি হয়ে গেছে।

পাকা কাঁঠালের ঘ্রাণ আসছে। নিশ্চয়ই কোনো গাছে কাঁঠাল পেকে আছে। অথবা এমনও হতে পারে, কেউ কাঁঠাল খেয়ে বাইরে ময়লা ফেলেছে আর তার থেকেই ঘ্রাণ বেরোচ্ছে। না না, কেউ কোনো ময়লা ফেলে নি। হাতের পাশেই বিশাল সাইজের কাঁঠাল গাছ আর তার উপরের ডালে দুটো কাঁঠাল ঝুলছে। এর কোনো একটা নিশ্চয়ই পেকেছে। গাছপাকা কাঁঠাল খাওয়ার মজাই আলাদা। কিন্তু কিভাবে সম্ভব! এত উঁচুতে উঠা কি সম্ভব! কিন্তু কাঁঠাল গাছ তো এখানে ছিল না!

হ্যাঁ মনে পড়েছে। এই গাছটা বাবার হাতের লাগানো। বাজার থেকে ঠিক সন্ধ্যায় গাছটা নিয়ে এসেছিল বাবা। সূর্য ডুবার পর গাছ লাগানো ঠিক না। তাতে না কী গাছ বাঁচে না। মা চেঁচাচ্ছিল। মায়ের চেঁচানো উপেক্ষা করে বাবা সন্ধ্যার সময়ই গাছটা লাগাল। রমাদিকে ডাকল গাছের গোড়ায় পানি দেয়ার জন্য। মাটির একটা পাত্রে রমা দি পানি নিয়ে এল। গাছের পাতাগুলো তখন নেতিয়ে গেছে। বাবা ছাড়া সবাই ভাবছিল গাছটা মরে যাবে। কিন্তু না, ক’দিনের মধ্যেই গাছের চেহারা পাল্টে গেল। দু’দিনের বাড় একদিনে বাড়তে লাগল। গাছে কোনো ফল ধরে নি। ফল ধরার আগেই সবাইকে বাড়ি ছাড়তে হলো।

আচ্ছা, কাঁঠাল গাছের গড় আয়ু কত? এই গাছটার বয়স তো সাতচল্লিশ-আটচল্লিশ হয়ে গেছে। কাঁঠাল গাছ কি পঞ্চাশ বছর বাঁচে? হয়তো বাঁচে। পঞ্চাশের বেশিও বাঁচে। কারণ এই গাছটা এখনো এত সতেজ যে, দেখে মনে হচ্ছে আরো অনেক বছর বাঁচবে।

চুপচাপ পিছনে এসে দাঁড়াল নাদিরা। নাদিরার পিছনে ফাতেমা। বয়সে ফাতেমার চেয়ে বিমাল ছোট। তবুও কেন যেন পুরুষ মানুষ দেখলেই ঘোমটা লম্বা করে টানার অভ্যাস হয়ে গেছে। ফাতেমার দিকে উদাস করা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে বিমল। দৃষ্টিতে উঁকি দিচ্ছে হাজারো প্রশ্ন। বিমলের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে নাদিরার দিকে তাকিয়ে বলল, তোরা থাক, আমি গিয়ে রান্নাবান্নার আয়োজন করি।

না মা, তুমি যাবে না। তুমিও আমাদের সাথে থাকবে।

আমি এখানে থেকে কি করব!

নাদিরা, গাছে বোধহয় কাঁঠাল পেকেছে।

হতে পারে। আমিও ঘ্রাণ পাচ্ছি। তুমি একটু দাঁড়াও আমি পাড়ানোর ব্যবস্থা করছি।

তুই থাক। আমি গিয়ে ব্যবস্থা করি।

কেন পালানোর চেষ্টা করছ মা! সারাজীবনই তো পালিয়ে পালিয়ে থেকেছ। আর কত পালাবে।

এসব তুই কি বলছিস!

হ্যাঁ মা, আমি ঠিকই বলছি। তুমি এই লোকটাকে এখনও চিনতে পারলে না! এই লোকটা শুধু তোমার জন্য ছুটে এসেছে। তুমি উনার দৃষ্টি দেখে কিছুই বুঝতে পারছ না! তুমি এত বোকা কেন মা?

পরিচয়টা না দিলে কেমনে বুঝব! কে উনি…?

এটা তুমিই জিজ্ঞেস কর।

দিদি, তুই কি আমাকে সত্যিই চিনতে পারছিস না! আমি তো তোকে ঠিকই চিনেছি। তোর চেহারা, গলার স্বর আগের মতোই আছে। শুধু বয়স আর স্বভাবটা পাল্টে গেছে। তুই এখন কত শান্ত, কত চুপচাপ। অথচ তোর দুষ্টুমির জন্য মা’তো তোকে মেরেছেই, মেরেছে বাবাও। তোর সিঁথির পাশে কাটা দাগটা এখনো আছে।

হু হু করে এলোমেলো বাতাস আসে। বাতাসটার মধ্যে কেমন যেন আমেজ। গভীর রাতে স্বপ্নে দেখা কোনো অঘটনের মতো মনে হয়। মনে হয় পাহাড়ের উপর থেকে ছিটকে মাটিতে পড়ে গেল। মনে হয় ঘরে আগুন লেগেছে। কিন্তু পালানোর রাস্তা নেই। অক্সিজেনের অভাব পড়ে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। নিজেকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা। বাঁচাও বাঁচাও…।

কতকাল পর দেখা। কতকাল নয়, কত যুগ। পাক্কা চুয়াল্লিশ বছর পার হয়ে পঁয়তাল্লিশ চলছে। এতকাল পরে দেখা হলে কেউ কাউকে চেনা কি সম্ভব! কেমন করে সম্ভব! সময়ের স্রোতের সাথে সাথে সবই যে পাল্টে যায়।

দিদি, আমি বিমল। বিমল রায়। তুমি কি আমাকে একটুও চিনতে পারছ না?

কেন পারব না। এতক্ষণ চিনতে না পারলেও এখন ঠিকই চিনেছি। কেমন আছিস, মা-বাবা, দাদা-দিদিরা কেমন আছে?

জবাব আসে না। তিনটি মানুষই মূর্তি হয়ে যায়। অঝোরে চোখের পানি ঝরে। বিমলের ফর্সা মুখম-ল ফুলে গাঢ় গোলাপি রং ধারণ করে। ফাতেমা মুখে আঁচল চাপা দেয়। নাদিরা খানিটা শব্দটা করেই কাঁদে।

চল, ঘরে যাই। আকাশে মেঘ করছে বৃষ্টি আসবে।

মা, তুমি এতো পাষাণ কেন!

বারবার আমাকে পাষাণ বলছিস কেন। পাষাণ কি মানুষ এমনি এমনি হয়! এমন তো না যে তোরা আমার সম্পর্কে কিছুই জানিস না।

জানি মা, অনেক জানি। যুদ্ধ শুরু হলো। স্বাধীনতার যুদ্ধ। তোমরা ছিলে হিন্দু। যার ফলে তোমাদের উপরে অত্যাচার বেশি হতো। যুদ্ধের সময় তুমি পনের-ষোল বছরের যুবতী। ক্লাস নাইনে পড়তে। অত্র এলাকায় তখন কোনো মুসলমান মেয়ে ক্লাস নাইনে পড়ত না। ক্লাসে মাত্র দু’জন মেয়ে ছিলে আর দু’জনই ছিলে হিন্দু। তোমরা স্কুলে যেতে বলে রাস্তায় নানা রকমের লোকজন কটূক্তি করত। কেউ কেউ গালাগালিও করত। তবুও তোমরা হেসেখেলে স্কুলে যেতে। তোমার ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে ডাক্তার হবে, নামকরা ডাক্তার। তোমার সেবা পেয়ে, চিকিৎসা পেয়ে লোকজন শুধু তোমার নাম জপবে। কিন্তু তা আর হলো না। যুদ্ধ শুরু হলো। তোমার লেখাপড়ায় ভাটা পড়ল। নানাজান যখন শুনলেন সব হিন্দুকে পুড়িয়ে মারবে পাকিস্তানিরা, তখন ভারত চলে যাবার জন্য স্বপরিবারে তৈরি হলেন। তুমি বেঁকে বসলে। এই দেশ ছেড়ে, বাপদাদার ভিটেমাটি ছেড়ে, এখানকার মানুষের ভালোবাসা ছেড়ে, স্কুল-কলেজ ছেড়ে কোথাও যাবে না। দরকার হয় তুমি যুদ্ধ করবে, যুদ্ধ করে এই দেশ স্বাধীন করবে, স্বাধীন দেশে সবাইকে নিয়ে স্বাধীনভাবে বসবাস করবে।

তোমাকে সবই বুঝাতে লাগল কিন্তু তুমি তোমার সিদ্ধান্তে অনড়। বাংলাদেশ ছেড়ে কোথাও যাবে না। দরকার হয় হিন্দু খেতাব চেঞ্জ করে মুসলমান হবে। তবুও তুমি এই দেশে থাকবে। তোমার সিদ্ধান্তের কথা শুনে পরিবারের সবাই চিন্তিত। এদিকে শুরু হয়ে গেছে হিন্দুদের উপর অত্যাচার। নিজের সিদ্ধান্ত ঠিক রাখার জন্য তুমি দৌড়ে চললে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সবুর খানের কাছে। বয়সে যে তোমার চেয়ে দ্বিগুণের চেয়েও বেশি বড়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় সবুর খান তোমার শিক্ষক ছিলেন। ইয়ং শিক্ষক। সবুর খান ছিলেন বিবাহিত। যদিও তার স্ত্রী বিয়ের মাত্র কয়েক মাসের মাথায় অন্য লোকের সাথে পালিয়ে চলে গেছে। সুযোগটা তুমি কাজে লাগালে।

এক সন্ধ্যায় কাউকে কিছু না বলে তুমি চলে গেলে সবুর খানের বাড়ি। শরৎচন্দ্রের দেবদাস উপন্যাসের নায়িকা পার্বতির মতো সবুর খানের পায়ের উপর উপুড় হয়ে পড়ে বললে-আমাকে বাঁচান। আমি এই দেশ ছেড়ে কোথাও যাব না।

কে তুমি! আরে রমা, তুমি এখানে কেন?

যুদ্ধ শুরু হয়েছে বলে বাবা সবাইকে নিয়ে ভারত চলে যাচ্ছে। কিন্তু আমি বাবার সাথে যাব না। আমি এই দেশে থাকব। এই দেশ আমার জন্মভূমি। আপনি যদি একটা উপায় বের না করেন তাহলে আমি আত্মহত্যা করব।

তুমি একজন যুবতী মেয়ে। তোমার বাবা তোমাদের ভালোর জন্য দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। বাবার সঙ্গে চলে যাওয়াই তোমার জন্য মঙ্গল।

আমি অতকিছু বুঝি না। এই দেশ ছেড়ে আমি কোথাও যাব না। আমি এই দেশে জন্ম নিয়েছি, এই দেশে বড় হচ্ছি, আগামীতেও এই দেশেই থাকতে চাই। আমি লেখাপড়া করব, অনেক বড় হব, এই দেশের মানুষের জন্য লড়াই করব, আর এই দেশের মানুষের সাথেই মারা যাব। আপনি আমাকে তাড়িয়ে না দিয়ে একটা কিছু করুন।

আমি…আমি কি করব বল!

আপনি চাইলে অনেক কিছুই পারেন। দয়া করে আমাকে চলে যেতে বলবেন না।

এরই মধ্যে ঘরের সব লোক জড়ো হয়ে তোমাদের তামাশা দেখতে লাগল। তার পাশাপাশি বাইরের কিছু লোকও জড়ো হলো। তামাশা দেখে সবুর খানের মা-বাবাসহ আরো দু’চারজন মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে তোমাদের বিয়ে পড়িয়ে দিল।

ব্যাস, তোমাকে ছাড়াই চলে গেল তোমার প্রিয়জনরা। ওরা ভাবতেও পারে নি তুমি এমন একটা কর্ম করে ফেলবে। বিমল মামা তোমার চেয়ে তিন বছরের ছোট। ছোট সময় তোমরা দুই-ভাইবোন একসাথে এক্কাদোক্কা খেলেছ, লুকোচুরি খেলেছ। তোমার প্রতি ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে বাবার বিরুদ্ধে কথা বলে বিমল মামার একটা কান নষ্ট হয়ে গেল।

রমা রায় হয়ে গেলে ফাতেমা খাতুন। বিয়ের প্রথম রাতেই ফাতেমার গর্ভে ঠাঁই নিলাম আমি নাদিরা আক্তার। যুদ্ধ শেষ হবার ঠিক দু’দিন পরেই জন্ম নিলাম। তোমার লেখাপড়া তো দূরের কথা, আর বাড়ির বাইরে যাওয়া হলো না। বাড়ির বাইরে যাবার জন্য তুমি অনেক চেষ্টা করেছ কিন্তু সব বিফলে গেল। কারণ তুমি যে এখন মুসলমান হয়ে গেছ এবং মুসলমান বাড়ির বউ। যে লোকটির আশ্রয়ে থেকে নিজেকে সুন্দরভাবে তৈরি করবে বলে সব প্রিয়জন এমন কী ধর্ম ছেড়ে পালিয়ে এসেছিলে সেই লোকটিই তোমার প্রতি সবচেয়ে কঠোর হয়ে গেল। সে তোমাকে নামাজ রোজায় আসক্ত করল আর প্রতি দু-চার বছর অন্তর অন্তর মা বানাতে লাগল। তুমি অসহায়, তুমি নিরূপায়, সংসার-সন্তানের মায়ায় সব ভুলে গিয়ে নিজেকে পাষাণী বানিয়ে তুললে। বিনিময়ে সবুর খানের কাছে বাপদাদার ভিটেটা আমানত চাইলে। বাপদাদার ভিটেটা যেন অন্যের দখলে নিয়ে না যায় তাই পাহারা দিয়েছ এত বছর ধরে। অবশ্য এক্ষেত্রে তুমি সফল। আর কিছু থাকুক বা না থাকুক, বাপদাদার বসতজমিটা নিজের দখলেই রেখেছ।

সত্যি দিদি! জমিটা এখনো আমাদের আছে! তবে যে দেখলাম নতুনভাবে ঘর উঠেছে আর নতুন লোকজনও ঘরে বাস করছে।

নতুন ঘর নতুন লোক বাইরের কেউ না মামা। আমাদের সবচেয়ে ছোট ভাই আলম খান ওর বউ বাচ্চা নিয়ে তোমাদের ওখানে থাকে। আলম বোবা। বোবা বলে মা ওকে চোখের আড়াল করতে চায় নি। তাই তোমাদের এখানে থাকার ঠাঁই করে দিয়েছে। তুমি নিজ চোখে সবই তো দেখলে। এখন কলকাতায় ফোন করে সবাইকে আসতে বল।

তা কি আর হয় রে মা! আমি এসেছি শুধু দিদির টানে। তোর সাথে পরিচয় হবার পর যখন জানলাম তুই আমার ভাগ্নি তখনই দিদিকে দেখার জন্য মনটা মরিয়া হয়ে গেল। সাথে সাথে এদেশে আসার ব্যবস্থা করলাম।

বেশ করেছ। শোন মামা, আমি তোমার বোনের মতো নই। আমি কোনো ধর্ম-বর্ণ মানি না, আমার কাছে সব ধর্ম এক। মানুষকে ভালোবাসতে হয় শুধু এইটুকু জানি। ভালোবাসার মানুষের বেলায় কোনো বিধিনিষেধ নেই।

বিধিনিষেধ নেই বললেই কি হয়! ধর্মই তো মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে দূরত্ব তৈরি করেছে। ধর্মের জন্যই এখনো মানুষে মানুষে হানাহানি। পৃথিবীর সবাই যদি এক ধর্মের হতো অথবা কোনো ধর্ম না থাকতো তাহলে হয়তো এত ঝামেলা হতো না।

একদম ঠিক কথা বলেছ মামা। চল, আজ আমি মাকে নিয়ে সারাদিন তোমার সাথে ঘুরে ঘুরে সব দেখব আর তোমাদের অতীত নিয়ে গল্প শুনব।

তোর মা কই?

ঘরে গেছে বোধ হয়। চল ঘরে যাই।

না রে, আমি চলে যাব। আমি আসাতে দিদির কোনো সমস্যা হোক তা আমি চাই না। বাংলাদেশটা দেখতে ইচ্ছে করছিল, দিদিকে দেখতে ইচ্ছে করছিল আর বাপদাদার ভিটেটাও দেখতে ইচ্ছে করছিল। সবই তো দেখা হলো, এখন যাবার পালা।

মোটেই আউল-ফাউল কথা বলবে না। চল, ঘরে চল।

ঘরে এসে বসল। ফ্লোরসহ চারপাশে ইটের দেয়াল আর উপরে টিন। ঘরটা বেশ ছিমছাম। ফ্রিজ, টিভি থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সকল জিনিসই আছে। ঘরে বৈদ্যুতিক বাতিও আছে। মাথার উপর পাখা ঘুরছে তবুও গরম লাগছে বিমলের।

সবুর খানের সাথে এখনো পরিচয় হয়নি। নিজে থেকে যেচে গিয়ে পরিচিত হতে ইচ্ছে করছে না। এক্ষেত্রে নাদিরাও সাহায্য করছে না। একসময় সবুর খান নিজেই নাদিরাকে জিজ্ঞেস করল, উনি কে রে মা, উনাকে আগে দেখেছি বলে তো মনে হচ্ছে না।

চোখ থাকলে তো দেখবে। তুমি তো চোখ থাকতেও অন্ধ।

কথাটা পুরোপুরি ঠিক না। চোখে কম দেখি ঠিক আছে তাই বলে একেবারে অন্ধ তো না। চশমা চোখে থাকলে অনেককিছুই ভালো দেখি।

তাহলে চিনতে পারছ না কেন! উনাকে তোমার না চেনার কথা নয়।

না রে মা, আসলেই পারছি না।

পারার কথা নয় আব্বা। পৃথিবীতে স্বার্থপর টাইপের কিছু লোকই আছে যারা নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছু বোঝে না। তুমি হলে শ্রেষ্ঠ স্বার্থপরদের একজন। উনি হচ্ছেন রমা রায়ের ছোট ভাই বিমল রায়। রমা রায়কে চিনতে পারছ তো! না কী তাও পারছ না! পনের-ষোল বছরের রমা রায় নিজের জন্মভূমিকে রক্ষা করবে বলে সব বিসর্জন দিয়েছিল তোমার কাছে। যার শিক্ষার, চাওয়া-পাওয়ার, ভালোবাসার কোনো দামই তুমি দাও নি, সেই রমা রায়ের ভাই বিমল রায়।

এভাবে বলছিস কেন! স্বার্থপর হওয়া ছাড়া আমার কি’বা করার ছিল! হিন্দু মেয়ে বিয়ে করেছি বলে আমার চাকরিটা চলে গেল। কাউকে কিছু বললাম না কারণ বললে হয়ত আমাকেও ভিটে ছাড়া হতে হবে। আমি যদি রমা রায়ের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতে যেতাম তাহলে সবাই একত্রিত হয়ে আমাকে একঘরে করে ফেলত। মানুষের কত রকমের কথা, কত রকমের কটূক্তি যে সহ্য করেছি তা শুধু আমিই জানি। চাকরি চলে যাবার ব্যাপারটা কখনোই কাউকে বলি নি। বলেছিলাম চাকরি ছড়ে দিয়েছি। নিজের চাওয়া-পাওয়া পূরণ হয় নি বলে লুকিয়ে, প্রকাশ্যে অনেক কেঁদেছে ফাতেমা। জীবন দিয়েও ফাতেমার কান্নার দাম পূরণ করা সম্ভব নয় বলে স্বার্থপরের মতো চুপ করে থেকেছি।। আমি তো রমা রায়কে জোর করে বিয়ে করি নি! বরং রমা রায় তার স্বার্থ উদ্ধারের জন্য আমার কাছে ছুটে এসেছিল। আমি তার জীবন-যৌবনের দাম দিতে গিয়েই বিয়ে করেছিলাম। আজ কত বছর কেটে গেল।

কই, কখনো তো রমা রায়ের বাবা ভাইয়েরা একটা বারও খোঁজ নিতে আসে নি! আমার পক্ষে যতদূর সম্ভব তাই দিয়েছি রমা রায়কে। এমন তো নয় হিন্দু বলে আমি তাকে তাচ্ছিল্য করেছি কিংবা দূরে ঠেলে দিয়েছি। আমি এমন কোনো রাজপুত্র ছিলাম না যে, আমার কাছে যা খুশি তা আব্দার করলেই পূরণ করতে পারতাম। তা বিমল রায়ের বুঝি এতদিন পর বোনকে মনে পড়ল?

সবুর খানের কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেছে। কারও যেন জবাব দেয়ার ভাষা নেই। কি’বা জবাব দেবে! এক যুদ্ধ, স্বাধীনতার যুদ্ধ। মানুষের কাছ থেকে কম তো নেয় নি। নিয়েছে অনেক কিন্তু দেয় নি কিছুই। ভূখণ্ডটাকে আলাদা নামে ভাগ করে দিলেও এর মধ্যে এখনো পরাধীনতা হেসে খেলে বেড়ায়।

দেশটা শুধু নামেই স্বাধীন হয়েছে। আর হয়েছে ভাষাগত পরিবর্তন। উর্দুতে কথা না বলে সবাই বাংলায় কথা বলে এই যা।

সেই কটা বছর আগের কথা। এখন আর ওসব বলে কি লাভ! আসলে দোষ কারো নেই। আমরা সবাই যার যার ধর্মের কাছে পরাজিত। ধর্মই মানুষকে আলাদা জাতে পরিচয় দেয়। আমরা বাংলাদেশ থেকে কেনাকাটা করতে গিয়েছি শুনে উনি জিজ্ঞেস করেন আমার বাড়ি কোথায়। কথা বলতে গিয়ে জানলাম উনার আসল বাড়ি বাংলাদেশে এবং একপর্যায়ে বুঝতে পারলাম উনি আমার মামাশ্বশুর। নাদিরা তো বিমল মামাকে জড়িয়ে ধরে ওই দোকানেই কান্নাকাটি শুরু করল।

ওরা বুঝি ওখানে দোকানদারি করে!

হ্যাঁ। উনাদের বিশাল দোকান। বিয়ের শাড়ি, গয়না সবই পাওয়া যায়।

তুমি ঠিকই বলেছ। ধর্মই মানুষকে আলাদা জাতে তৈরি করেছে এবং জাতে জাতে রেখেছে বিশাল দূরত্ব। অথচ দেখ, আমরা সবাই একই মা-বাবার সন্তান। আল্লাহ বল আর ভগবান বল, সৃষ্টিকর্তা কিন্তু একজনই। কি অদ্ভুত দুনিয়ার নিয়ম, কি রহস্যময় জীবনের নাটক। পাপ-পূণ্যের ব্যবধান তৈরি করে আমাদেরকে নিয়ে খেলছেন। সবকিছুর মালিক উনি। যাও বাবা, তোমরা সবাই রান্নাঘরে যাও। গিয়ে দেখ, ফাতেমা বোধহয় রান্না করছে আর কাঁদছে। আসলে ও বড় অভাগি। কত বছর পর বাপের বাড়ির কাউকে দেখল!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!