তিন ফলের সমাহার হলো ত্রিফলা
চাপা বিন্তে কনা । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডি.কম
তিন ফলের সমাহার হলো ত্রিফলা। আমলকী-বিভীতকী-হরীতকী—তিন ফলের মধ্যে রয়েছে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক।
ত্রিফলা হল প্রাচীন আয়ুর্বেদের অন্যতম মূল্যবান ফর্মুলা বা concoction এবং আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় এটা এখনও প্রাচ্যের মেডিসিনের থেকে বেশি কার্যকরী। ‘ত্রিফলা’ নামের আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে ‘তিনটি ফল’ আর নামের সার্থকতা প্রমান করে এটা হরিতকী, বহেরা আর আমলকী এই তিনটি ফলের শুকনো গুঁড়া দিয়ে তৈরি। এই ফলগুলোর প্রত্যেকটিরই স্বাস্থ্য, ত্বক ও চুল রক্ষায় আছে অসামান্য ভূমিকা কিন্তু প্রাচীন।
প্রবাদ আছে, এই তিন ফল প্রতিটি সম পরিমান নিয়ে একটু থেতো করে পানিতে ভিজিয়ে রেখে প্রতিদিন সকালে এককাপ পরিমাণ পান করলে মানুষের সব রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে এবং সুস্থ দেহে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে সাহায্য করে।
১) বহেড়া বা বিভীতকী- শীতকালে বহেড়ার পাতা লালচে হয়ে ঝরে যায়, বসন্তে নতুন পাতার সৃষ্টি তার পরপরেই গাছে ফুল আসে। ফুল দেখতে অনেকটা নাকফুলের মতো, ফুলের গন্ধ মিষ্টি। ফল আস্তে আস্তে বড় হয়। গ্রীষ্ম ও বর্ষা শেষ করে শীতের আগে আগে ফল পেকে ঝরে পড়ে।
ফলের ভেতর বাদামের মতো মজ্জা থাকে , যা ঔষধি গুনে পুর্ন। উপরের যেমন ঔষধি গুণে ভরা তেমনি ভেতরের বাদামে আছে দেহশক্তি বৃদ্ধির ভেলকি।
বহেড়ার বৈজ্ঞানিক নাম Terminalia Belerica Roxb. বহেড়া বৃক্ষ পর্যায়ভুক্ত । ৬০-১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। পাতা দেখতে কিছুটা ছোট আকারের বট পাতার মত তবে পাতার বোঁটা একটু লম্বা, কাঠবাদাম পাতার সাথেও কিছুটা মিল আছে।
২) আমলকি – শীতের হাওয়ায় লাগলো নাচন আমলকির ওই ডালে ডালে- রবীন্দ্রনাথ আমলকির এই সৌন্দর্য বর্ণনা করেছেন পাতাগুলো হলদে হয়ে ঝরে গিয়ে ভেতর থেকে গোলাকার ফলগুলো ঝুলে থাকা দেখে।
প্রাচীনকালে যব, খই, আমলকি, ঘি আর সোম মিশিয়ে একধরণের খাবার তৈরি করা হতো। আমলকি সুশ্রী মাঝারি আকারের পর্ণমোচি গাছ। বয়স্ক গাছ ৭০-৮০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ছোট ছোট পাতাগুলো পল্লবের দুপাশে পরস্পর উল্টোভাবে সাজানো থাকে। রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রা কমায় আমলকি।
বসন্তে নতুন পাতার কোমল সৌন্দর্যে গাছের শুন্যতা মুছে যায়। ফুল খুব ছোট ছোট কিন্তু ফোটে অজস্র। আমলকী ফল খুব আকর্ষনীয়-গোলাকার, মাংসল, রসালো ও স্বচ্ছ।
ভেতরে একটি কঠিন আঁটির মধ্যে ছয়টি বীজ থাকে। আমলকিতে প্রচুর ভিটামিন সি আছে যা একটি কমলার চেয়ে বিশগুণ বেশি।
বৈজ্ঞানিক নাম -Phyllanthus Embelica Linn.
সুতরাং প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একটি করে আমলকি রাখলে ক্ষতি কি?
৩) হরিতকী- ভেষজ চিকিৎসকরা হরিতকি গাছকে মায়ের সাথে তুলনা করে থাকেন। মা যেমন সন্তানকে সব কিছু থেকে আগলে রাখে তেমনই হরিতকি রোগ থেকে মুক্ত রাখে। প্রচলিত নাম হওকী, বৈজ্ঞানিক নাম Terminalia Chebula Retz. গাছটি উচ্চতায় ২০-৩০ মিটার হয়। এর বাকলে লম্বা ফাটল থাকে । পাতা লম্বাটে, ফুল শাদা বা হলুদ হয় এবং স্পইকে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। ফলও ঝুলন্ত ও লম্বা সবুজাভ।
মানুষের শরীরে সংক্রমিত প্রায় সব রোগ ব্যাধির ঔষধ হিসেবে হরিতকীর ব্যবহার রয়েছে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে ত্রিফলার একটি অন্যতম ফল হলো হরিতকি।
এক নজরে ত্রিফলার সংক্ষিপ্ত কার্যকারিতা –
* নিয়মিত ত্রিফলা গ্রহণ করলে দেহ বিষ মুক্ত, হালকা ও প্রাণবন্ত হয়।
* কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করে। আইবিএস এবং আলসারেটিভ কোলাইটিসে কার্যকর।
* ত্রিফলা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে
* রক্তে অতিরিক্ত চর্বির পরিমাণ কমায় উল্লেখযোগ্য হারে।
* উচ্চ রক্ত চাপ কমায় এবং দেহে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।
* লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে
* হার্টের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
* ত্রিফলা-এন্টি ইনফ্লামেটরি, এন্টি স্পাসমোডিক ও এন্টি অক্সিডেন্ট ভূমিকায় অনন্য।
* শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি প্রদান করে।
নির্দেশিত ডোজ : প্রতিদিন ৩-৫ গ্রাম ত্রিফলা চূর্ণ। তিন বছরের নিচের শিশুদের দেয়া যাবে না।
ত্রিফলা সেবন বিধি : ঐতিহ্যগতভাবে ত্রিফলা পাউডার বা চূর্ণ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। কুসুম গরম পানিতে ২ থেকে ৩ গ্রাম ত্রিফলা পাউডার আধা গ্লাস পানিতে চামচ দিয়ে মিশিয়ে প্রত্যহ রাতে অথবা দৈনিক তিনবার বিভক্ত মাত্রায় গ্রহণ করা যায়।
ব্রণ এর সমস্যা?
বাজারে শুষ্ক ফলের মত ত্রিফলা পাওয়া যায়। অনেক সময় এটি প্রক্রিয়াজাত পাউডার হিসাবেও বাজারে পাওয়া যায়। সবচেয়ে ভাল যদি তুমি শুষ্ক ফল এর মত অবস্থায় ত্রিফলা ব্যবহার করো। ত্রিফলা হল ৩ টি ফলের মিশ্রন। এতে থাকে আমলকি,হরিতকি,বহেরা।
যেভাবে এটি ব্যবহার করবেন সেটি হল আপনাকে ত্রিফলার মিশ্রণের একটি অংশ (যাতে অন্তত ১ টি হরিতকি,১ টি বিভিতকি/বহেরা ও ২ টি আমলকি থাকে) গুড়া করে রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং সকালে খালি পেটে রস ছেকে খেয়ে নিতে হবে। খাওয়ার পর অন্তত ১০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে নাস্তা করার জন্য।
এভাবে যদি আপনি টানা ৩ মাস প্রতিদিন খেতে পারেন তাহলে দেখবেন ব্রণ আর আপনার দিকে ফিরেও তাকাবে না।
ত্রিফলা ভিজানো পানি পান করলে হবে নাকি ত্রিফলাই পানি দিয়ে খেতে হবে??