দ্বিতীয় ইউলুপে কমবে যানজট বাড্ডায়
হাতিরঝিলের মোড় থেকে আফতাব নগরের সামনের রাস্তা ধরে মেরুল বাড্ডা। আর কিছুটা এগোলেই চোখে পড়বে উঁচু-নিচু পিলারগুলো। সেখানে রড আর কংক্রিটের স্তূপ। কাজ করছেন বেশ কয়েকজন শ্রমিক। রাস্তার মাঝখানের বিশাল অংশও দড়ি দিয়ে আলাদা করা হয়েছে। এতে দুই লেনের গাড়িগুলোকে একটু সরু পথেই চলাচল করতে হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এই দুর্ভোগ সাময়িক। এই উড়ালসেতুর নির্মাণকাজ শেষে রামপুরা-বনশ্রীর বাসিন্দাদের মতো বাড্ডা এলাকার মানুষের যানজটের দুর্ভোগ কমবে—এমন আশা করছেন ওই পথের নিয়মিত যাত্রীরা।
হাতিরঝিল থেকে বাড্ডার দিকে যেতে মেরুল বাড্ডায় চলছে দ্বিতীয় ইউলুপ (উত্তর) নির্মাণের কাজ। ইউলুপ হলো ইউ আকৃতির উড়ালসেতু। মূলত বিভিন্ন গাড়ির ইউটার্ন নিয়ে লেন পরিবর্তনের জন্য এ ধরনের উড়ালসেতু ব্যবহার করা হয়। রামপুরায় প্রথম সেতুটি নির্মাণের পর যানজট নিরসনে বেশ সাফল্য পাওয়া গেছে। কাজেই বাড্ডার নির্মাণাধীন এই সেতু ঘিরেও আশার সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই ইউলুপ বাড্ডার যানজট নিরসনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ প্রকৌশল নির্মাণ ব্যাটালিয়ন। নির্মাণকাজের দায়িত্বে আছে স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড।
হাতিরঝিল উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক জামাল আক্তার ভূঁইয়া বলেন, নকশা অনুযায়ী এ ইউলুপের দৈর্ঘ্য ৪৫০ মিটার ও প্রস্থ ১০ মিটার। প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এরই মধ্যে ইউলুপের শতকরা ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
বাড্ডায় এই ইউলুপ নির্মিত হলে রামপুরা, বনশ্রী বা আফতাব নগর যাওয়ার জন্য বিভিন্ন গাড়ি সহজে লেন পরিবর্তন করতে পারবে বলে জানান জামাল আক্তার ভূঁইয়া। এ ছাড়া এয়ারপোর্ট, মেরুল বাড্ডা, শাহজাদপুর, গুলশান ও কুড়িল যাওয়ার জন্য রাস্তার লেনটিও হবে ওয়ান ওয়ে ও ইউটার্নমুক্ত। যেসব গাড়ির প্রয়োজন হবে, সেগুলো সহজেই ইউলুপ ব্যবহার করে লেন পরিবর্তন করতে পারবে। ফলে, লেন পরিবর্তন করতে গিয়ে এখন যে যানজটের সৃষ্টি হয়, তখন তা আর থাকবে না।
বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল খাল এলাকার সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর কাজী শাকিল হোসেন বলেন, বাড্ডার ইউলুপটি তৈরি হলে রামপুরা থেকে গুলশান লিংক রোড পর্যন্ত যানজট অনেকাংশে কমে আসবে। রামপুরায় ইউলুপটি তৈরি হওয়ার পর এই এলাকার যানজট প্রায় ৪০ শতাংশ কমে এসেছে। আর বাড্ডার ইউলুপটি তৈরি হলে বাকি ৬০ শতাংশও কমে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাড্ডায় ইউলুপ তৈরির কাজ পুরোদমে চলছে জানিয়ে মেজর কাজী শাকিল হোসেন বলেন, জমি অধিগ্রহণেই প্রায় আড়াই বছর সময় লেগেছে। এ ছাড়া ডেসকো, বিটিসিএল, তিতাস ও ওয়াসার বিভিন্ন ইউটিলিটি শিফটিংয়ের কিছু কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। ইউলুপের একপাশের পাইলিংয়ের কাজ হয়েছে। এখন আরেক পাশের পাইলিংয়ের কাজ হবে।
চলতি বছরের ডিসেম্বরেই এর নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মেজর কাজী শাকিল হোসেন। প্রয়োজনে এর কাজ আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে জানান তিনি।
গাড়িচালকদের কাছে অবশ্য ইউলুপের ধারণা এখনো পরিষ্কার হয়নি। বাড্ডার ইউলুপ হলে কী সুবিধা হতে পারে, এ নিয়ে কথা হয় কয়েকজন চালকের সঙ্গে। ইউলুপ বোঝাতে তাঁদের কাছে রামপুরার উদাহরণ টানতে হয়। প্রাইভেট গাড়ির চালক জয়নাল উদ্দিন বলেন, এখন লেন পরিবর্তন করতে হলে বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ইউলুপ হলে রামপুরা বা বনশ্রী যেতে লেন পরিবর্তন করতে আর যানজটে পড়তে হবে না।
রামপুরার ইউলুপটি বেশ কাজে এসেছে বলে জানান সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মো. বশির। তিনি বলেন, উড়ালসেতু বানানোর পর বোঝা যাবে, এটি কতটা উপকারে আসবে। রামপুরার মতো হলে বাড্ডার ইউলুপটিও যানজট কমাতে সাহায্য করবে। বিশেষ করে এয়ারপোর্ট, মেরুল বাড্ডা ও গুলশান যাওয়ার রাস্তায় আর ইউটার্ন নেওয়ার সুযোগ না থাকলে যানজট কম থাকবে বলে মনে করেন তিনি।