ধলেশ্বরী নদী খননে সংঘর্ষে আহত ১০ আটক ৩
মাসুদুর রহমান মিলন, টাঙ্গাইল, বিশেষ প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
টাঙ্গাইলের নিউ ধলেশ্বরী নদী খনন কাজে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগ-বিএনপি সংঘর্ষে ১০ জন আহত বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসময় বিভিন্ন ধরনের শতাধিক দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ স্থানীয় আওয়ামীলীগ সভাপতি সহ তিনজনকে আটক করেছে। ৪ জানুয়ারি দুপুরে নিউ ধলেশ্বরী নদীর সংলগ্ন কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আশরাফ আলী জানান, বুড়িগঙ্গা নদী খনন প্রকল্পের আওতায় টাঙ্গাইলের নিউ ধলেশ্বরী নদীমুখ থেকে খনন কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এশিয়ান ড্রেজার লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠান। এলাকার বালু ব্যবসায়ীরা এশিয়ান ড্রেজার লিমিটেডের কাছ থেকে নিউ ধলেশ্বরী নদী মুখ থেকে কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা বাজার ব্রীজ সংলগ্ন বাঁশী পর্যন্ত সাব ঠিকাদার হিসেবে খনন কাজ নিয়েছে।
নিউ ধলেশ্বরী মীর হামজানী এলাকায় খনন কাজ কে কেন্দ্র করে কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়া বাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ এবং ইউনিয়ন বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ মন্ডলের সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ দ্বন্দ চলছিল। ঐ দ্বন্দের জের ধরে ৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় স্থানীয় ওয়াজেদের বাড়ীতে সুলতানা মাহমুদের সমর্থকরা একঘরোয়া বৈঠকে বসে। এসময় ইউনিয়ন বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ মন্ডল ও আব্দুল আলীমের নেতৃতে বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম, আমিনুল, সোহেল, নোমান সহ ১৫ থেকে ১৬ জন ব্যক্তি দা, ফালা, লাঠি, বল্লম নিয়ে ঐ বৈঠকে হামলা চালায়। হামলাকারীরা ওয়াজেদের বাড়ী ঘর ভাঙচুর করে। এতে সুলতান মাহমুদের সমর্থক তুলা মিয়া (৫০) ও মোজাফর (৫৫) সহ বেশ প্রায় ২০ জন আহত হন।
ওপর দিকে ঐরাতেই বিজিবি সদস্য আব্দুল আলীমের বাড়িতে কে বা কারা ভাঙচুর চালায়। ঐ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে থানা পুলিশ গোহালিয়া বাড়ী ইউনিয়নের ০২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক আহমেদ আওয়ামী লীগ নেতা হাকিম উদ্দিন ও মোতালেব হোসেন কে শনিবার সকালে আটক করে। এঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজনা সমাধানের লক্ষে শনিবার সকাল ১১ টায় কালিহাতী সার্কেল এলেঙ্গা অফিসের সহকারী পুলিশ সুপার রাসেল মনিরের নেতৃতে পুলিশের টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং উভয় পক্ষ কে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের টিম চলে যাওয়ার পরপরই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান কে (৬০) বিএনপি নেতাকর্মীরা বেদম মারপিট করেন। এ ঘটনা কে কেন্দ্র করে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে গোহালিয়া বাড়ী বাসস্ট্যান্ড বাজার এলাকায় দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে দুই পক্ষের অত্যন্ত ১২ জন আহত হন। আহতের টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশের টিম ঘটনাস্থলে পৌছলে দুই পক্ষই পালিয়ে যায়। এসময় পুলিশের টিম গোহালিয়া বাড়ী গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বিএনপি নেতা আব্দুল মজিদ, চান মিয়া, নুরুল ইসলাম, আমিনুল, সোহেল, নোমানের ঘর থেকে রামদা, ফালা, টেটা, সুরকি, বাঁশের লাঠি, চাপাতি সহ বিভিন্ন ধরনের শতাধিক দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে। সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোহালিয়া বাড়ী বাসস্ট্যান্ড বাজারে অধিকাংশ দোকান পাট, বন্ধ রয়েছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে গোহালিয়া বাড়ী ইউনিয়ন বিষয়ক সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য সুলতান মাহমুদ বলেন আমি এশিয়ান ড্রেজারের কাছ থেকে নতুন খনন প্রকল্পের ৫০০ মিটার খননের কাজ পেয়েছি ইউনিয়ন বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদের সমর্থকরা খনন কাজে ব্যবহৃত ভেকু সরিয়ে দেয় এবং খনন কাজে বাঁধা সৃষ্টি করে। প্রতিবাদ করায় তার দলবল নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়। এ বিষয়ে আমরা থানায় মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন বিএনপি সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান হজরত আলী তালুকদার ও সুলতানা মাহমুদের সমর্থকরাই আমাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করে। এ বিষয়ে কালিহাতী থানা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
টাঙ্গাইলের কালিহাতী সার্কেলের এলেঙ্গা অফিসের সহকারী পুলিশ সুপার রাসেল মনির বলেন, নদী নিউ ধলেশ্বরী নদী খনন কে কেন্দ্র করে দুই পক্ষ মুখমুখি অবস্থান নেয়। পরে সেটি সংঘর্ষে রূপ নেয়। পুলিশের টিম ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। গোহালিয়া বাড়ী বাসস্ট্যান্ড বাজারের আশে পাশের বিভিন্ন বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে রামদা, ফালা, চাপাতি, টেটা, সুড়কি সহ লাঠি উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে ৩জন কে আটক করা হয়। মামলা তদন্তের স্বার্থে তাদের পরিচয় গোপন রাখা হচ্ছে।