নিজাম হাজারীর নির্দেশেই খালেদার গাড়িবহরে আ.লীগ-ছাত্রলীগের হামলা: জয়নাল হাজারী
অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি পরস্পরকে দোষারোপের মধ্যেই চাঞ্চল্যকর প্রমাণ উপস্থাপন করে এ হামলায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়িত দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ জয়নাল হাজারী।
তিনি সুস্পষ্টভাবেই বলেছেন, এ হামলার পেছনে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়িত। ফেনীর সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর নির্দেশে দলের নেতাকর্মীরা এ হামলা চালিয়েছে।
জয়নাল হাজারীর স্থানীয় দৈনিক হাজারিকা প্রতিদিনের অনলাইন সংস্করণে ‘কাদের সাহেব, প্রমাণ চান? তাহলে নিজামের ভিডিওটি দেখুন’ শিরোনামে একটি কলামে জয়নাল হাজারী এসব কথা লিখেছেন।
জয়নাল হাজারীর সেই কলামটি নিম্নে কাগজ২৪ এর পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
গত শনিবারে রোহিঙ্গাদের সরেজমিনে দেখার জন্য খালেদা জিয়া উখিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। যাওয়ার পথে তার গাড়িবহরে হামলা হয়েছে । এতে অনেক গাড়ি ভাংচুরের কবলে পড়েছে। বেশ কিছু বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে সাংবাদিক ছিল অনেক। হামলার খবরটি ছড়িয়ে পড়লে প্রাথমিকভাবে ওবায়দুল কাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন এটি বিএনপির আভ্যন্তরিন কোন্দল। এ কথা বলে তিনি তাৎক্ষনিকভাবে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন। এ ব্যাপারে সারাদেশেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
এই প্রতিক্রিয়ার মূল কারণ ছিল খালেদা জিয়ার নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে। এদিকে ভারতীয় মন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে খালেদা জিয়া কথা দিয়েছিলেন পরিবেশ থাকলে নিশ্চয়ই নির্বাচনে যাব। অপরদিকে খালেদা জিয়া দেশে ফিরলেই তাকে গ্রেফতার করা হবে এমন আশঙ্কা নিয়ে খালেদা দেশে এসেছেন এবং বিমান বন্দর থেকে খালেদার বাসভবন পর্যন্ত কোন টু-শব্দ হয়নি। বিএনপি নেতাকর্মীরাও ব্যাপকভাবে জড়ো হয়েছিল পুলিশ কিংবা আ.লীগ নেতাকর্মীরা কোন প্রকার অপতৎপরতা করেনি। এটাকে দেশবাসী পজেটিভভাবে নিয়েছিল এবং নির্বাচনের ব্যাপারেও খানিকটা আশাবাদী হয়ে উঠেছিল কিন্তু ফেনীর ঘটনাটি হঠাৎ করে পুরো ব্যাপারটাকে ওলোটপালট করে দিয়েছে।
এ ব্যাপারে ওবায়দুল কাদের ছাড়া আর কেউ কোন মন্তব্য করেননি। নেতাকর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোভাব জানা গেছে। তিনি বিষয়টাকে ভালভাবে নেননি। তাই সঙ্গে সঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলে দিলেন খালেদার বহরে হামলাকারীরা দেশের শত্রু, দলের শত্রু। তদন্ত করে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একইভাবে আ.লীগ নেতা হানিফও এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী কোন প্রতিক্রিয়া দেননি। বিএনপির পক্ষ থেকে দেশ বিদেশের সকল মিত্রকে জানানো হয়েছে। সুষমা স্বরাজও এতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এটা একেবারেই সত্য যে আ.লীগের এমপি-মন্ত্রীরা যারা বিএনপি নির্বাচনে এলে ভোটে জয়লাভ করতে পারবে না তারা সবাই কঠোরভাবে বিএনপিকে ভোটের বাহিরে রাখতে চায়।
বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে যত রকম তৎপরতা দরকার ওরা তার সবটাই করবে এটাই বোঝা যায়। এদিকে বিএনপি নির্বাচনে এলে ওবায়দুল কাদেরকে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের সঙ্গে ভোট করতে হবে আর তখন ওবায়দুল কাদেরের পক্ষে জয়লাভ করা ঝুকিপূর্ণ হয়ে যাবে । এভাবে অনেক মন্ত্রী এবং এমপিরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবেন। ফেনীর বর্তমান বিনা ভোটের এমপি নিজাম ভোট করেনি। দলীয় পদটি দখল করার সময়ও ভোট করেনি। ভোট করে নেতা হওয়া তার পছন্দ নয়।
বিএনপি ভোট করলে ফেনীতে আ.লীগ প্রার্থীকে ভোট করতে হবে ভিপি জয়নালের সঙ্গে, ফলে পরিস্থিতি কি দাঁড়ায় তা বলা মুশকিল। তাই খালেদাকে ভোট থেকে দূরে রাখার আঘাতটি ফেনী থেকেই শুরু হয়েছে। কিছুটা মনে হয় বর্তমান সময়ে নেত্রী এসব অপতৎপরতার পক্ষে নয়। প্রকাশ আছে নির্বাচনে সরকারের পক্ষ থেকে কোন কারচুপির আশ্রয় নেয়া হবে না।
দু-পক্ষের পক্ষ থেকে আশ্বাস পেয়ে সুষমা স্বরাজ খুশি মনেই দেশে ফিরে গেছেন। খালেদা যদি কোন রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে কোথাও যেতেন সেক্ষেত্রে কিছুটা ঝুট-ঝামেলাকে মেনে নেয়া যায় কিন্তু সকল বিবেকবান মানুষ যখন মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং খালেদা জিয়াও তাতে সাড়া দিয়েছেন তখনি তার উপর এই হামলা কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই বিবেকবান মানুষেরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন।
এদিকে নিজাম একটি ভিডিও বার্তায় পরিষ্কার বলেছে- কেন্দ্রের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এই ঘটনার জন্য আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে এবং কেন্দ্রের নির্দেশেই আমি এটা করেছি। নিজামের যেসব কর্মীরা এই ঘটনায় জড়িত ছিল তাদের প্রত্যেকে বারবার ধন্যবাদ জানিয়েছে। বিভিন্ন শাখার পদবিওয়ালা যেসব কর্মীরা ঘটনাটি করেছে তাদের নাম পদবিসহ দেশের পত্র-পত্রিকায় ছবি প্রকাশিত হয়েছে। এতে যারা এটা করেছে যার নির্দেশে এটা করেছে তা একেবারেই আয়নার মত পরিষ্কার । নিজামের ভিডিও বার্তাটির পরে এসবি-ডিএসবি-ডিজিএফাই কাউকে কষ্ট করে কিছুই তদন্ত করতে হবে না। যারা এটা করেছে তারা নিজেরাই স্পষ্ট স্বীকার করেছে।
এই মূহূর্তে কাদের সাহেব বলেছেন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাই তাকে অনুরোধ করছি নিজামের দেয়া ভিডিও বার্তাটি দেখুন। তারপর আর কারও কোন কিছুই তদন্তের দরকার হবে না। ইতিমধ্যে ভিডিওটি ফেসবুকের মাধ্যমে সারাদেশে ভাইরাল হয়ে গেছে। এখন জনগণ দেখতে চায় নির্বাচন বিরোধী এই অপতৎপরতার ব্যাপারে সরকার কি ব্যবস্থা নেয়। সরকার যদি ব্যবস্থা নেয় তাহলে জনগণ আশাবাদী হবে নতুবা আবার চরম হতাশায় নিমজ্জিত হবে।
ফেনীতে খালেদার বহরে হামলার ব্যাপারে নিজাম যে ভিডিও বার্তাটি দিয়েছে তা আমরা সরাসরি যুক্ত করে দিলাম।
ভিডিওটি দেখতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন