নির্বাসিত রোহিঙ্গা ও বিপজ্জনক রাজনীতি
নির্বাসিত রোহিঙ্গা ও বিপজ্জনক রাজনীতি
রণেশ মৈত্র
এই দফায় ঠিক ঠিক কত লক্ষ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছেন বা আসতে বাধ্য হয়েছেন, আজতক তার সঠিক সংখ্যা কেউই বলতে পারছেন না। তবে গণমাধ্যমগুলি বলছে, সংখ্যাটি চার লক্ষের কিছু বেশি। একই সঙ্গে জানা গেছে রোহিঙ্গাদের আসার ¯্রােত যেন থামছেই না-তারা বিরামহীনভাবে আসছেন।এই আসার প্রক্রিয়া যে কি নাগাদ শেষ হবে তা অনুমান করাও দুরুহ এবং যেহেতু আসার প্রক্রিয়া কবে শেষ হবে তা বলা যাচ্ছে না-সেই একই কারণে তাঁদের ফিরবার প্রক্রিয়া কবে শুরু হবে আর কবেই বা শেষ হবে তাও বলা অত্যন্ত কঠিন।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্মম ও বর্বর অত্যাচারের কাহিনী আজ বিশ্বের গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত। তারা গ্রামকে গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে তাদেরই আরাকান নামক প্রদেশে। অজ¯্র মানুষকে গুলি করে মেরেছে এবং মারছে যেন মুড়ি মুড়কীর মত। নারী ধর্ষণের সংখ্যা কল্পনাতীতভবে বেশি। রোহিঙ্গা নারী যত সংখ্যক বাংলাদেশে এসেছেন – প্রায় তার ৬০ থেকে ৮০ ভাগই ঐ দেশের বর্বর সেনাবাহিনী কর্তৃক ধর্ষিত। এবং এই ধর্ষণ তারা চালাচ্ছে দীর্ঘকাল ধরেই যেন ঐ মহিলারা গণিমতের মাল।
যো বিপুল সংখ্যক মহিলা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছেন তাঁদের প্রায় সবারই কোলে একাধিক শিশু। আবার সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায় আগত রোহিঙ্গা মহিলাদের মধ্যে গত দিনগুলিতে প্রায় ছয় শত জন সন্তান প্রসব করেছেন। এখন কতজন অন্ত:স্বত্তা মহিলা অবশিষ্ট রয়েছেন সে সংখ্যা হলো প্রায় বিশ হাজার। এভাবে জনসংখ্যা , শিশুর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়তেই থাকবে।
অর্থাৎ একদিকে বিপুল সংখ্যক প্রসূতি মহিলা অপরদিকে তার কয়েকগুণ শিশুর জীবন-তাদের স্বাস্থ্য, শিশুদের পিতৃত্ব ও ভাবিষ্যৎ সবই অজানা। তবে যেহেতু তারা বাংলাদেশের মাটিতে আশ্রয় নিয়েছে এবং বাংলাদেশ সরকার মানবিক কারণে তাঁদেরকে আশ্রয় দিয়েছেন-তাই এঁদের চিকিৎসা-পথ্যাদির দায়িত্বও সরকারের ওপর বর্তেছে। কিন্তু কোথায় হবে চিকিৎসা? হাসাপাতাল কোথায়? যেসব হাসপাতাল পার্বত্য অঞ্চলে রয়েছে তার আসন সংখ্যা এবং রোগী, প্রসূতি শিশুর সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য ভয়াবহ রকমে বেশী।
তদুপরি ঐ এলাকার আদি বাসিন্দারা যাঁরা লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাকে কয়েকটি বছর ধরে ওখানে আশ্রয় নিয়ে চলেছেন সর্বমোট যাঁদের আজ দাঁড়িয়েছে আট থেকে দশ লক্ষে তাঁদের এই বিপুল সংখ্যার কাছে ঐ স্থানীয় আদি বাসিন্দারা আজ মারাত্মক এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে পরিণত হয়েছেন। তাঁরা তাঁদের রোগীদের নিয়েই বা যাবেন কোথায়? সব কিছু মিলিয়ে ভাবলে এটা বুঝতে কারও বিন্দুমাত্র সমস্যা হওয়ার কথা নয় যে ঐ এলাকায় নতুন করে আসা বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু আগে থেকে আসা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু এবং আদি বাসিন্দা নারী-পুরুষ-শিশু-সবাই এক মারাত্মক স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের শিকারে পরিণত হয়েছেন। দ্রুতই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঐ অঞ্চলে বেশ কিছু সংখ্যক স্থায়ী-আস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ এবং জরুরী ভিত্তিতে আরও বেশ কিছু মেডিক্যাল টিম পাঠাতে পারেন। তদুপরি নতুন কিছু অধিক সংখ্যক আসন সম্পন্ন হাসপাতাল জরুরী ভিত্তিতে নির্মান প্রকল্পও হাতে নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।
অসুস্থ সকলের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ পত্রের স্বল্পতা, দুষ্প্রাপ্যতা ও দুর্মূল্যতাও সকলকে ভাবিয়ে তুলছে। এ বিষয়টিও জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালকেই দেখতে হবে এবং বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানীগুলোকেও এই পরিস্থিতিতে বিস্তর ঐষধ সামগ্রী নিয়ে মানবিকতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সাহায্যের হাত নিয়ে এগিয়ে এলে সমস্যাটির সুরাহা কিছুটা সহজ হতে পারে।
দুর্যোগ শুধুমাত্র স্বাস্থ্যখাতেই নেমে আসে নি। সর্বাধিক সংকট সম্ভবত: রোহিঙ্গা রিফিউজিদের আবাসন ও খাদ্য সামগ্রী নিয়ে। তদুপরি পথ-ঘাট, খাবার ও নৈমিত্তিক কাজে ব্যবহারের পানি, বিদ্যুৎ, পয়:প্রণালী, টয়লেট সব কিছু ব্যাপারেই যেন এক হ-য-ব-র-ল অবস্থা। রাতারাতি যেমন এ সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় তেমনি আবার একই সাথে একাধিক সমস্যা মিটিয়ে ফেলতে শুরু না করলে যতই বিলম্ব হবে ততই সমস্যাগুলি জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠবে।
প্রথমে যদি আবাসন সমস্যার কথা বলি, বিশেষ করে এবারের এই দীর্ঘায়িত বর্ষাকালে, তা হলে দেখবো ঐ লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গার এখনও অনেকেরই আবাস খোলা আকাশের নীচে। সেখানে নদী-পুকুরও নেই-টিউবওয়েল নেই, রান্নার গ্যাস বা ষ্টোভও নেই। গাছের মরা ডাল পালা বা ছোট ছোট আস্ত গাছই যেন জ্বালানী। মাটির ওপরে ওগুলি জ্বালিয়েই রান্না বান্না করা হচ্ছে। সুপেয় বা বিশুদ্ধ পানি দূরের কথা-মোটামুটি পানযোগ্য পানিও দুস্প্রাপ্য। অনবরত বৃষ্টি নেমে তাদেরকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। বাড়তি কাপড়-চোপড়ও তাদের নেই। এহেন পরিস্থিতিতে কারও পক্ষেই কি সুস্থ থাকা বাস্তবে সম্ভব? না কি ভালভাবে রান্না-বান্না করে খাওয়া-দাওয়ার কাজ সমাধা করা যেতে পারে? সাংবাদিকদের ক্যামেরাই তো এগুলি ফুটি উঠছে।
ছবিতে দেখা যায় রাস্তার ধার দিয়ে কিছু কিছু অস্থায়ী ঘর নির্মিত হচ্ছে। এ যাবত এমন যতগুলি ঘর নির্মিত হয়েছে বা যে সংখ্যক গুচ্ছগ্রাম ঐ এলাকায় রয়েছে তাতেই বা কতজনের আবাসন সমস্যা মেটানো সম্ভব?
অপরদিকে শুনছি সমুদ্রের মধ্যে একটি দ্বীপে তাদেরকে স্থানান্তরিত করে একত্রে রাখার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশে। আইডিয়াটা নিশ্চিতভাবেই ভাল কিন্তু বাস্তাবে কতটা কার্য্যকর করা সম্ভব হবে তা একমাত্র ভবিষ্যতই বলতে পারে।
ত্রাণ বিতরনের ব্যাপারে এই নিবন্ধটি লেখা পর্য্যন্ত (দুপুর ২৩/০৯/১৭) জানা গেল, কোন শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করা তখন পর্যন্ত সম্ভব হয় নি। নানা এজেন্সী, সরকারী-বেসরকারী, কেউ কম-কেউ বেশী পরিমাণে ত্রাণ নিয়ে ছুটছেন ঐ এলাকায়। কিন্তু কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থা যেমন জেলা প্রশাসক-উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে থেকে কয়েকজন বিশ্বাসী নারী-পুরুষ মিলে একটি সমন্বিত সংস্থা গড়ে তুলতে পারলে হয়ত শৃংখলায় আনা যেতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে সকল ত্রাণ-সামগ্রী তাঁদের হাতে পৌঁছাতে হবে এবং ভলান্টিয়ার ও পুলিশ মিলে বিতরনকালীন শৃংখলা বিধান করতে হবে। ইতিমধ্যে ঐ এলাকায় সামরিক বাহিনী পাঠানো হচ্ছে আশা করি তাদের সহায়তায় কাজগুলির সমন্বয়সাধন এবং শৃংখলা প্রতিষ্ঠা সহজতর হবে।
একথা ঠিক নিজ হাতে ত্রাণ দেওয়ার আগ্রহ থাকে সবারই। তাতে কারা দিলেন তা প্রচারও হয় যার প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। কিন্তু ঐ ক্ষুদ্র এলাকায় অগোছালো অবস্থায় অত বিপুল সংখ্যক অভূক্ত অর্ধভূক্ত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের মধ্যে নিজেরা অপরিচিত এলাকায় গিয়ে ত্রাণ বিতরণ সুশৃংখলভাবে করা অত্যন্ত দুরূহ। সে কারণেই কেন্দ্রীভূত সংগঠিত বিতরণ ব্যবস্থা অপরিহার্য।
উদ্বেগজনক খবর হলো অতীতে আসা রোহিঙ্গারাও নাকি ব্যাপকভাবে এবারের ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে নিচ্ছেন সদ্য আসা রিফিউজী হিসেবে পরিচয় দিয়ে। এক্ষেত্রে পরিচিতির প্রশ্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নতুন যাঁরা এসেছেন তাঁদেরকে নতুন করে রেজিষ্ট্রেশন করে বিশেষ এক ধরণের পরিচিতিপত্র দেওয়া হচ্ছে কিন্তু অত্যন্ত ধীর গতিতে। জনবল ও যন্ত্রপাতির স্বল্পতার কারণে কাজে গতি সঞ্চার হচ্ছে না। কিন্তু ত্রাণ দ্রব্যের যেখানে স্বাল্পতা এবং গ্রহীতা যেখানে বিপুল সংখ্যক সেখানে রেজিষ্ট্রেশনে দ্রুতগতির সঞ্চারে কালবিলম্ব করা হলে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। ত্রাণ বিতরণ ছাড়াও ঐ কার্ড আরও বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহৃত হবে। এমন কি, যখন তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠানো শুরু হবে তখনও ঐ কার্ড দেখতে চাইবেন মিয়ানমারের কর্মকর্তারা।
রোহিঙ্গারা নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছেন-এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক খবর। যাঁরা তা করছেন – তাাঁরা সম্ভবত: আর ফিরে যেতে চান না-চান তাঁদের পূর্ব সূবীদের মত এদেশেই থেকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে। অথবা চান নানা গোপন এবং অপরাধমূলক কাজ কর্মে জড়িয়ে পড়তে। সরকার অবশ্য এ ব্যাপারে পুলিশ বাহিনীকে তৎপর থাকার নির্দেশ দিয়েছেন যাতে তাঁরা নিজ নিজ ক্যাম্প ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে না পারেন। চেক পোষ্টও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অনেকগুলি একই লক্ষ্যে। কিন্তু দালাল নিয়োগ করে মাঠ-ঘাট দিয়ে চলে গেলে তো সহজে ধরা যাবে না। তাই ক্যাম্পে বিশেষ পাহাড়া নানা কারণেই প্রয়োজন। তবে যাঁরা পাহাড়া দেবেন তাঁদের ব্যবহার যেন বন্ধুসুলভ হয় প্রভু বা শত্রু সুলভ না হয়ে।
যে সকল ত্রাণ দ্রব্য দেওয়া হয়ে থাকে তার বাইরেও নিশ্চয়ই তাঁদেরকে অনেক কিছু কিনে খেতে হয়। সেগুলির ক্রয় ক্ষমতা তার সরবরাহ ও ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণ অত্যন্ত প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে যাঁরা আছেন এদিকে এবং আরও প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি ভেবে সময় থাকতেই তাঁরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন আশা করি।
ইতিমধ্যে গত ১৯ সেপ্টেম্বর সকালে মিয়ানমার সরকারের উপদেষ্টা (তাঁকে ঐ দেশের সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী হতে দেয় নি। তাঁর দল বিজয়ী হওয়া সত্বেও) অং সান সুচি বেতার ভাষণ দিলেন যা শুনে গোটা পৃথিবীই ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তবে খুশী হয়েছে ঐ দেশের সেনাবাহিনী এবং তাদের সমর্থক মগ ও অন্যান্যরা? হতে পারে ভাষণের খসড়াটিতে সেনা প্রধানের অনুমোদন নিতে হয়েছিল। অর্থাৎ অং সান সুচি কার্য্যত মিয়ানমার সরকারের ক্ষমতাহীন বেসামরিক নেত্রী।
একদিকে যেমন সারা বিশ্বে মিয়ানমার সরকার, তার সেনাবাহিনী ও অং সাং সুচি মারাত্মকভাবে নিন্দিত হচ্চেন-তেমনই আবার চীন কর্তৃক প্রশংসিতও। রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব সহ মধ্য-প্রচ্যের অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্রও তাদের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি উচ্চারণ করেন নি । শুধুমাত্র ইরান, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়ায় ও মালয়েশিয়া ব্যতিক্রম। মালয়েশিয়ায় তো সু চির বিচার হয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লংঘন ও রোহিঙ্গা নির্য্যাতনের কারণে।
আন্তর্জাতিক এই প্রেক্ষাপটটি সামনে রাখলে রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগের পরিসমাপ্তি বা তাদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তন যে সহজ নয় তা উপলব্ধি করা যায়।
অপরপক্ষে বাংলাদেশে নানা-রাজনৈতিক শক্তির রোহিঙ্গা রাজনীতিও লক্ষ্যনীয়।
যে তথাকথিত ইসলাম দরদী দলগুলি ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলিতে পাকিস্তান রক্ষার ‘পবিত্র’ ব্রত নিয়ে বর্বর পাক-বাহিনীর সহায়তা করতে উঠে পড়ে লেগেছিল এদেশের দেশ প্রেমিক কোটি কোটি ‘স্বাধীনতাকামী মানুষের বাড়ীঘর জ্বালিয়ে দিতে সক্রিয় সহায়তা করেছিল,’ ৩০ লক্ষ বাঙালিকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছিলো-৪/৫ লক্ষ বাঙালি বিবাহিতা-অবিবাহিতা নারীকে ধর্ষণের লক্ষ্যে তুলে নিয়ে পাক-বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে তাদের হাতে তুলে দিযেছিল সেই জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলাম আজ রাস্তায় নেমেছে রোহিঙ্গাদের সমর্থন করার নামে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যকে একটি স্বাধীন স্বতন্ত্র ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ হিসেবে কায়েমের শ্লোগান নিয়ে। তারা ঐ দাবীতে বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন নেওয়ার চেষ্টায় এদেশের রাজপথে ব্যানার ফেষ্টুন ও নানা শ্লোগান নিয়ে পথে নেমেছে।
আসলে এতে শক্তিশালী হচ্ছে মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠীর হাত – ‘আরমা’ (আরকান স্যালভেশন আর্মি) সংক্রান্ত দাবী প্রতিষ্ঠা করার সুযোগেই করে দিচ্ছে ঐ তথাকথিত রোহিঙ্গা দরদীরা। তারা আরও বলছে “ইসলামী উম্মাহ এক হও”। হয়েছে কি কোনদিন তহারা কোন ন্যায্য দাবীতে? মুসলিম বিশ্ব কি এক হযে দাঁড়িয়েছিল প্যালেস্তাইনী মুক্তি সংগ্রমে? দাঁড়িয়েছিল কি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালীর সপক্ষে? এবার রোহিঙ্গাদের উপর পরিচালিত নির্মম ও বর্বর জুলুম অত্যাচারের বিপক্ষে কি দাঁড়িয়েছে সৌদি আরব, তার নেতৃত্বাধীন মুসলিম বিশ্ব, পাকিস্তান প্রভৃতি?
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মুসলিম বিশ্বের অনৈক্যের ফলেই রোহিঙ্গারা আজও নির্য্যাতীত। এ কথা ফলাও করে প্রচার করা সত্বেও কি মুসলিম বিশ্ব একমত হয়েছে শুধুমাত্র ইরান ও তুরস্ক ছাড়া?
এই রাজনীতির অন্তর্নিহিত অর্থগুলি স্পষ্টভাবে উদঘাটন করা প্রয়োজন।
জামায়াত, হেফাজত প্রভৃতি আজ পাকিস্তানী আই.এস.আই এর মদদে ঐ দাবী তুলছে বহুদিন যাবতই তারা এ ব্যাপারে সচেষ্ট। বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকাগুলিতে বহুকাল যাবত পাকিস্তানের হাই কমিশনার আই.এস. এর এজন্টরা ঐ লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। পাকিস্তানী এই ষড়যন্ত্র কদাপি আমরা যেন না ভুলে যাই।
আরমা বা আরাকান স্যালভেশন আর্মি নামক সন্ত্রাসী সংগঠনের আদৌ অস্তিত্ব নেই বলে উড়িয়ে দিলে হবে না-বরং শক্তিশালী গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে এর সত্যতা/অসত্যতা নির্ধারণ করার দায়িত্ব আজ বাংলাদেশ সরকারের উপর পরতেছে। দফায় দফায় বছর বছর রোহিঙ্গা শরণার্থী লাখে লাখে ঢুকবার পেছনে অজুহাত তৈরীতেও নেপথ্যে কারা রসদ জোগাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে সে তথ্য উদঘাটন অতীব জরুরী ভিত্তিতে করা প্রয়োজন।
অপরদিকে বৃটিশ সরকার সমর্থন জানিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের প্রদর্শিত শরণার্থী রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক আচরণকে। তাঁরা অর্থনৈতিক সহায়তা দেবেন রোহিঙ্গাদের প্রতি ত্রাণ হিসেবে অপরপক্ষে সু চিকে ইউনিসনের ঘোষিত সম্মাননা প্রদান স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের প্রতি তাঁর ও তাঁর দেশের সেনাবাহিনীর বর্বর ও অকথ্য নির্য্যাতনের কারণে।
একই কারণে বৃটিশ সরকার মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ কর্মসূচীও বাতিল করেছেন।
সর্বশেষ জানা যায়, আমেরিকাও শরণার্থী রোহিঙ্গাদের জন্য যথেষ্ট ত্রাণ-মঞ্জুরী প্রদান করতে সম্মত হয়েছেন। ভারত সরকারও ত্রাণ কার্যে এগিয়ে এসেছেন। সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রোহিঙ্গা প্রশ্নে ভারত সরকারের মনোভাব জানিয়েছেন।
এসব থেকে প্রশ্ন তো করাই যেতে পারে জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতীদেরকে যে উপরের ঐ দেশগুলির সহায়তা নেওয়া কি জায়েজ হবে? তাঁরা তো ইসলামী উম্মাহ্র কেউ নন।
অপরদিকে দুঃখজনক খবর প্রায় পাঁচ শতাধিক মিয়ানমারের হিন্দুও রোহিঙ্গা মুসলিমদের সাথে বাংলাদেশে এসে ত্রাণ শিবিরে থাকাকালে বলেছে তারাও নির্য্যাতনের শিকার হয়ে মিয়ানমার ছেড়েছে তবে তারা আর মিয়ানমারে ফিরে যেতে সাহস পান না-নিরাপত্তা না থাকার আশংকায় তাঁরা শংকিত। আবার বাংলাদেশেও তাঁরা নিরাপদ বোধ করেন না বলে, তাঁরা ভারতে যেতে ইচ্ছুক স্থায়ীভাবে। বাংলাদেশে কেন তাঁরা নিরাপদ রোধ করছেন না-সরকারকেই তা খতিয়ে দেখতে হবে তাঁদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়ে ভারতমুকী নয় মিয়নমারে ফেরত যেতে উদ্বুদ্ধও করকে হবে অন্য সব রোহিঙ্গাদের সাথে? এভাবেই সমস্যাটি সেকুলার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগুলি সমস্যাটি সমাধানে বিশ্ববাসী সমর্থন হবেন।
কাগজ টুয়েন্টিফোর বিডি ডটকম এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
- প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। কাগজ২৪-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য কাগজ২৪ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।