নির্মাণ সামগ্রী শিল্পে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকার প্রত্যাশা
অনলাইন ডেক্স । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
২০১৯ সালে বাংলাদেশে ১৫শ’ কোটি টাকার নির্মাণ সামগ্রীর বাজার ছিল ধারণা করা হয়। কেবল, গত কয়েক বছরে নির্মাণ সরঞ্জামের চাহিদা বেড়েছে প্রায় ২০০ শতাংশ। ২০১৯ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে এই শিল্পের কম্পাউন্ড অ্যানুয়াল গ্রোথ রেট (সিএজিআর) ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশের অবকাঠামোগত বিকাশ নির্মাণ এ শিল্পের চাহিদা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। সরকারের পাশাপাশি একাধিক প্রতিষ্ঠান এ শিল্পে বিনিয়োগ করেছে। এছাড়া, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে আবাসিক, বাণিজ্যিক নির্মাণ ও যোগাযোগ সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড ক্রমশ বেড়ে চলেছে, যার ফলে নির্মাণ সামগ্রীর বাজারেরও প্রবৃদ্ধি ঘটছে।
নির্মাণ সরঞ্জামাদির মধ্যে রয়েছে এক্সক্যাভেটর, সয়েল কম্প্যাক্টর, হুইল লোডার, ব্যাকহো লোডার, টেলিহ্যান্ডলার এবং স্কিড-স্টিয়ার লোডার, ব্যাচিং প্ল্যান্ট, কংক্রিট মিক্সার, কংক্রিট পাম্প ট্রাক, ডাম্প ট্রাক, রিগস ক্রেন ইত্যাদি। নিঃসরণ সংক্রান্ত নিয়ম ও বিধি অনুসরণ করা এবং দূষণ কমানোর লক্ষ্যে অনেক নির্মাতা এখন পরিবেশবান্ধব যন্ত্রপাতি তৈরি করছে। পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে তারা এখন টেলিম্যাটিকস এবং সুরক্ষা প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটাচ্ছে।
বর্তমান যন্ত্রপাতিগুলোর গড় আয়ু ১৫ বছর। পুরানো যন্ত্রপাতি সাধারণত নতুন আপগ্রেডকৃত সরঞ্জাম দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের মোটর ভেহিকল বিভাগের মহাব্যবস্থাপক জসীম উদ্দিন স্বপন বলেন, ‘প্রারম্ভিক বিনিয়োগ সাধারণত বেশি থাকে, তবে সুরক্ষিত ইএমআই সুবিধা সামগ্রিক ব্যয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে। তাছাড়া, পুরানো মেশিনের পরিবর্তে উদ্ভাবনী সরঞ্জামের ব্যবহার বিদ্যমান বাজারে আরও বেশি সুযোগ তৈরি করবে।’
এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড বাংলাদেশে জেসিবির একমাত্র পরিবেশক। জেসিবি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম নির্মাণ যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক এবং ইউরোপের এক নম্বর ব্র্যান্ড।
জসীম উদ্দিন স্বপনের মতে, সরঞ্জামের অধিক ব্যয় মোকাবিলায় সুরক্ষিত ইএমআই এবং প্যাকেজ সুবিধা প্রদান করা হলে, এই শিল্প আরও বেশি প্রতিষ্ঠানকে আকৃষ্ট করবে। আর অধিক প্রতিষ্ঠান মানে রিটেইলে অধিক সহায়তা, যা পরবর্তীতে বাজারে এই শিল্পের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে।
বর্তমানে, নির্মাণ সামগ্রী শিল্পের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড (জেসিবি), এসিআই মোটরস, পাওয়ারভিশন লিমিটেড, বাংলা ট্র্যাক, আর্থমুভিং সল্যুশন লিমিটেড এবং আরও অনেকে। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, উন্নত মানের সেবা, খুচরা যন্ত্রাংশের সহজলভ্যতা এবং অত্যাধিক পরিমাণের সাথে সীমিত মার্জিন বাজারে প্রতিযোগী হয়ে ওঠার গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপক।
প্রধানত ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে এ ধরণের যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়। বাংলাদেশের প্রায় ৬০ ভাগ যন্ত্রপাতি রিকন্ডিশন্ড। এ ব্যাপারে জসীম উদ্দিন স্বপন বলেন, ‘পরিবেশের সুরক্ষায় এবং শব্দ নির্গমন হ্রাসের লক্ষ্যে সরকারের রিকন্ডিশন্ড যন্ত্রপাতির ওপর অধিক কর এবং দেশের পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে সরঞ্জামাদি ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিৎ।’
বিশ্বজুড়ে নির্মাণ সামগ্রী শিল্পও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার দেশের, বিশেষত শহরাঞ্চলের অবকাঠামোগত উন্নয়নের চেষ্টা করছে। ক্রমশ জনগণের ব্যক্তিগত আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, ঘরের সামগ্রিক আয় বাড়ছে এবং গ্রাম থেকে শহরে জনসংখ্যার স্থানান্তর ঘটছে, ফলে মহানগরে উন্নত অবকাঠামো সুবিধার প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই, বাণিজ্যিক খাতে পাবলিক বিনিয়োগ ক্রমবর্ধমান নির্মাণ যন্ত্রপাতি শিল্পের বাজারের প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।