ন্যাপ নেতা অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ প্রসঙ্গে
ন্যাপ নেতা অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ প্রসঙ্গে
সিডনীর কথকথা- ৩৫
রণেশ মৈত্র (সিডনী থেকে)
সভাপতি মন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যপ
অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, সভাপতি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি এপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আজ কয়েক দিন যাবত । তিনি আছেন লাইফ সাপোর্টে, সমগ্র বাংলাদেশব্যাপী অথাৎ প্রগতিশীল দলের নেতা ও কর্মীরা গভীর ভাবে চিন্তিত। আজীবন সমাজতন্ত্রের জন্যে আপোষহীন এই নেতা, আমিও যাঁর দীর্ঘ দিনের সহকর্মী, সুস্থ হোন, আরোগ্য লাভ করুন এবং ভালভাবে বাসায় ফিরে আসুন- দূর থেকে নিরন্তর এই কামনা করি ।
অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষাণীর নেতৃত্বে গঠিত পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপের যুগ্ম- সম্পাদক নির্বাচিত হন ১৯৫৭ সালে ঢাকার ‘রূপমহল সিনেমা’ হলে অনুষ্ঠিত নিখিল পাকিস্তান গণতান্ত্রিক কর্মী সম্মেলন। ঐ সম্মেলনের উপর আওয়ামী লীগের (তৎকালীন) হামলার আভাস পাওয়ায় ২৭ জুলাইয়ে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে আগত কোন ডেলিগেট-কাউন্সিলারাই রাত্রিতেও হল থেকে বের না হওয়ার নিদের্শ দেন মওলানা ভাষাণী। সে মোতাবেক সম্মেলনে পাকিস্তানের পাঁচটি প্রদেশ থেকেই আগত নেতা ও কর্মীরা হল থেকে এক মুহুর্তের জন্যও বের হইনি। সংখ্যায় আমরা ছিলাম প্রায় দেড় শতাধিক। সকলের খাবার বাইরের হোটেল থেকে একলোকে এনে দিয়ে যেত তিন বেলায়। সিনেমা হলেও টয়লেটেই সকলের প্রস্রাব পায়খানা সারতে হয়েছিল। কিন্তু প্রানচাঞ্জল্যে ভরপুর ছিল ঐ সম্মেলন। স্নান সম্ভবত: দু’দিন কেউ করার সুযোগ পাইনি।
মনে আছে, উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ থেকে সীমান্ত গান্ধী, খান আবদুল গাফফার খান, তাঁর সুযোগ্য পুত্র খান আবদুল ওয়ালী খান, বেলুচিস্তানের গাউস বখ্স্ বেজেঞ্জো, খায়ের বখ্স মারী, পাঞ্জাবের মিয়া ইফতে খারুদ্দিন সিন্ধুর আবদুল মজিদ শিল্পীসহ কয়েকজন নেতাকর্মী সেটা দিয়েছিলেন। তাঁরা কেউ কউ বিমানে, বেশির ভাগই ট্রেনযোগে ভারতের মধ্য দিয়ে এসে যোগ দিয়েছিলেন। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ট্রেনে এসে তৎকালীন ফুলবাড়িয়া স্টেশনে নামতেন। তাঁদের কন্ঠে ছিল গগন- বিদারী স্লোগান “মাগবেরী আউর মাশরেকি পাকিস্তান কি আওয়াম কি ইত্তেহাক”। এর অর্থ হলো ‘পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ঐক্য দীর্ঘস্থায়ী হউক”।
মনে পড়ে আমি তখনও ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সহ-সভাপতি ও পাবনা জেলার সভাপতি। পাবনা জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ও আরও কয়েকজনসহ পদত্যাগী আওয়ামী লীগের বেশ কিছু সদস্য নেতা-কর্মী ২৬ সেপ্টেম্বর ভোরে ঢাকা এসে পৌঁছেছিলাম। আমরা যারা তখনও ছাত্র- তাদের উপর দায়িত্ব সম্মেলন শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার। তাই সেচ্ছাসেবক হিসেবেই দফায় দফায় খেতাস ফুলবাড়ীয়া স্টেশনে পশ্চিম পাকিস্তানী বন্ধু দেরকে স্বাগত জানাতে- তাদের স্বাথে ঐ একই স্লোগান আমাদের কন্ঠেও উচ্চারিত হতো ।
পূর্ব পাকিস্থানের যে সকল নেতা ঐ সম্মেলনে যোগ দিয়ে ছিলেন তাঁরা হলেন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষাণী, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, ওলি আজাদ, মাহমুদ আলী, হার্জী মোহাম্মদ দানেশ, আবদুল মতি, (ভাষা মতিন), বেগম সেলিনা বানু, মীর্জা আবদুল আওয়াল, আতাউর রহমান আবদুল জব্বার, পীর হাবিবুর রহমান আবদুল সামাদ আজাদ, রবি নিয়োগ, পূনেন্দু দন্তিদার, সৈয়দ আলতাফ হোসেন, মাহমুদ আলম খান প্রমুখ সে-কালের সুপরিচিত বাংলার নেতৃত্ব ।
পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন তখন ছিলেন আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ কংগ্রেস ফোয়ালিখান সরকার। এই সরকার সে কালের বিবেচনায় বিস্তর প্রগতি মুখী কাজ কারবার, গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণমূলক নানা পদক্ষেপ গ্রহন করলেও সরকারের অভ্যন্তরীণ একটি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির আত্ম প্রকাশকে সহ্য করতে পারে নি। এই গ্রুপটি শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীয়র নেতৃত্বে পরিচালিত হতো- যেমন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ সভাপতি আবদুল আউয়াল এরা এতই মারমুখী ছিল যে বিমানবন্দর থেকে ট্র্যাক্সিযোগে ঢাকার ‘রূপমহল সিনেমা’ হলে আসার পথে আহত করে পাঞ্জাবের প্রখ্যাত জননেতা মিয়া ইফতে খারুদ্দিনকে। ঐ আহত অবস্থায় তিনি এসে পৌঁছান সম্মেলনের মঞ্চে । এদের সশস্ত্র প্রস্ততির কারণেই সম্মেলন দু’দিন ধরে চললেও মূহুতের জন্যেও কাউকে হলের বাইরে যেতে দেওয়া হয় নি ।
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি নামকরণ নিয়ে কিছু সময় বিতর্ক উঠেছিল । প্রস্তাব ছিল ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নাম রাখার- ব্যাপক সমর্থনও ছিল ঐ নামের পক্ষে । কিন্তু মওলানা ভাষাণী স্বয়ং বলে ওঠেন, ন্যাশনাল শব্দটিতো থাকছেই- তার সাথে “আওয়ামী” শব্দটি রাখতে হবে কারণ ঐ শব্দের অর্থ “জনগণের”। অত;পর ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নাম রাখার প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করে নিয়ে বিপুল করতালির মধ্যে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নামকরণ সর্বসম্মতিক্রমে অনুমদিত হয় । অনুরূপভাবে পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটিও সর্বসম্মতভাবে বিপুল করতালির মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হয় । তার সভাপতি পদে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাষাণী এবং সাধারণ সম্পাদক পদে করাচির মাহমুদুল হক ওসমানি নির্বাচিত হন ।
পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিটিও একই ভাবে নির্বাচিত হয় । সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাষাণী এবং সাধারণ সম্পাদক সিলেটের মাহমুদ আলী । মাহমুদ আলী পরে পাকিস্তানে চলে যান সেখানে মন্ত্রীত্বও করেন । তার আগেই ন্যাপ থেকে বহিস্কৃত হন ।
কমিটি নির্বাচন ও নানাবিধ প্রস্তাব গ্রহনের আগে নবগঠিত দলের ঘোষনাপত্র ও গঠনতন্ত্র গৃহীত হয় । সকল কিছু শেষ হতে দুপুর প্রায় দুইটা বাজলে সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হল থেকে বিশাল মিছিল নিয়ে আমরা রওনা হলাম সে কালের ঢাকার বৃহত্তম ময়দান পল্টন ময়দানে । অগ্রভাগে থাকলেন মওলানা ভাষাণী, খান আবদুল গফফার খান, মাহমুদ আলী (তিনি তখনও প্রাদেশিক মন্ত্রী গঠনতন্ত্রী দলের পক্ষ থেকে) এবং পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। গোটা মিছিলটা আকস্মৎ পুলিশ ঘিরে ফেললো কিন্তু তার কারণ জানালো না । পল্টন ময়দানে পৌঁছাতেই আওয়ামী ছাত্রদের তরফ থেকে চারিদিকের অসংখ্য বহুতল দোকান থেকে সমানে ইঁট ছুঁড়ে মারতে থাকল । পুলিশের ঢাকা বেঞ্জের ডি.আই.জি আবদুল্লাহ্ ছুটে এসে মওলানা ভাষাণীকে রক্ষা করার জন্য ছাতা ধরার অনুরোধ জানলেন- জনসভার কর্মসূচী বাতিল করতে। মওলানা জনসভা করতে অবিচল । উঠে পড়লেন মঞ্চে অন্যান্য নেতাসহ । প্রথমেই মাহমুদ আলী দাড়িয়ে এই প্রতিবাদে মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন । সাথে সাথে ১৪৪ ধারা জারি করলে সভার কর্মসূচী বাতিল ঘোষণা করা হয় । এই হলো ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির জন্মের অতি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস যা স্মরণে আনতে পারলাম। পরে এ বিষয়ে আরও লিখব।
তবে পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের আরও কয়েকজন প্রখ্যাত নেতার নাম উল্লেখ না করলেই নয় । তাঁরা হলেন বালুচিন্তানের খান আবদুল সামাদ খান আচাকজাই ও করাচীর যুব কমিউনিষ্ট নেতা হামান নাসির । সমগ্র পাকিস্তান ব্যাপী কমিউনিষ্ট পার্টি ঐ আমলে নিষিদ্ধ থাকায় উভয় পাকিস্তানেরই অলু ও অ-পরিচিত কমিউনিষ্ট নেতা কর্মীরা ন্যাপ যোগ দিয়ে দলটিকে একটি সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যাভিসারী, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী নিখিল পাকিস্তান সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের পরিণত করতে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করেন ।
পূর্ব পকিস্তান থেকে আরও যে নেতারা তখন ঐ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন তার মধ্যে মাহিউদ্দিন আহমেদ, আবদুল সামাদ আজাদী, মোহাম্মদ তোগাহা, আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ । বহু নেতৃ স্থানীয় আরও অনেকের নাম আজ আর স্মরণে আনতে পারলাম না ।
অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ নামটি সকল রাজনৈতিক মহলে যতটাই সুপরিচিত-ততটাই আবার তিনি গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে অপরিচিত কারণ তিনি জনসভায় বা সমাবেশে উদ্দীপক ভাষণ তিনি করতেন না। কিন্তু বহুলাংশে নিভৃতচারী হলেও সদা-সর্বদা দেশের ও আর্ন্তজাতিক রাজনীতির গতিধারা নিয়ে আপন মনেই গবেষণা চালাতে পছন্দ করতেন সারাক্ষণ। আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক মহলে তাঁর ব্যাপক পরিচিতির কারণটিও সম্ভবত: ছিল তাঁর ঐ গবেষণামূলক চিন্তা প্রবর্ণতা। নিজ দলের কর্মীদের একাংশের কাছে যেমন তিনি ছিলেন দেবতুল্য অপর অংশের কাছে নানা কারণেই তিনি ছিলেন সমালোচিত। তবে সকল কিছু সত্ত্বেও সমাজতন্ত্রের প্রতি তাঁর যে অবিচল আস্থা তা আজও বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত।
সমাজতান্ত্রিক বিশ্বে রুশ-চীন আদর্শগত দ্বন্বের ফলে যখন বিশ্বব্যাপী সমাজতন্ত্রী মহলে তর্ক-বিতর্কের ঝড় উঠেছিল- বাংলাদেশের সমাজন্ত্রীরাও তাঁর উদ্যাগে কম দগ্ধ হননি। বির্তক ছিল অনেকটা এ ধরণের রুশ কমিউনিস্ট পার্টি অর্থাৎ সি.পি.এস.ইউ – এর নেতৃত্বাধীন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির অভিমত সঠিক। সারা পৃথিবীতেই কমিউনিস্ট পার্টি এই আদর্শবান- দ্বন্দ্বের অভিঘাতে যখন খন্ড-বিখন্ড হতে থাকে তখন হঠাৎ করেই জানা গেল যে বিভক্তি পাকিস্তানেও হতে চলেছে। বাংলাদেশে তার সূচনা করেন- তোয়াহা সাহেবরা দুইজন একটি লিখিত দলিল বে আইনী ঘোষিত কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে। ঐ দলিল যথাযথ আলোচনার পর কেন্দ্রীয় কমিটির আর কোন সদস্যের সমর্থন না পাওয়ায় কমিটি তা প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু তোয়াহা সাহেব শরবিন্দু দস্তিদার প্রমুখ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে দেশব্যাপী গোপন যোগাযোগ প্রতিকী করতে শুরু করলে স্বভাবতই পার্টি দ্বি-খন্ডিত হয়। ঐ সময়, আমার জানামতে, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক মন্ডলীর ও একশ সদস্য ছিলেন। তিনিও চীনা মতবাদকে প্রত্যাখ্যান করেন।
কমিউনিস্ট পার্টির এই ভাঙ্গণের ধাক্কা এসে আছড়ে পড়ে, বিলম্বে হলেও, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে। দলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দাবী করে চীনাপন্থীরা মওলানা ভাষাণীর নেতৃত্বে- যখন ঐ মতবাদ প্রচারে ব্যস্ত, তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের মতকে সমর্থনকারী ন্যাপ নেতা কর্মীরা অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদের নেতৃত্ব ন্যাপের একটি রিকুইজিশন কাউন্সিল অধিবেশন দাবী করে দলের সভাপতি মওলানা ভাষাণীর নিকট ন্যাপের অর্ধকেরও বেশী কাউন্সিলার স্বাক্ষরিত আবেদন দাখিল করেন কিন্তু সে অনুযায়ী কোন কাউন্সিল সভা ডাকা না হওয়ার প্রেক্ষিতে রিকুইজিশন পন্থীরা পৃথক কাউন্সিল সভা নিজেরাই আহ্বান করেন।
১৯৬৭ সালে অনুষ্ঠিত ঐ রিকুইজিশন কাউন্সিলে অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতি এবং সৈয়দ আলতাফ হোসেন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির। পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিও এই বিভক্তি এড়াতে পারেনি। ফলে নিখিল পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি নির্বাচিত হন খান আবদুল ওয়ালি খান (সীমান্ত- গান্ধী- খান আবদুল গফফার খানে পুত্র)। সাধারণ সম্পাদক পদে কোন পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়নি কারণ মাহমুদুল হক ওসমানী রুশ পন্থী বলে অভিহিতদের সাথেই ছিলেন। এই বিভক্তি ন্যাপের ক্ষেত্রে কাম্য ছিল না কারণ ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টি এক নয়। কিন্তু ন্যাপের ক্ষেত্রে জাতীয় রাজনীতিই ভাঙ্গণের ব্যাপারে মুন্য ভূমিকা পালন করে। চীন পন্থীরা তৎকালীন সামরিক স্বৈর শাসক আইউব খানকে সমর্থন দেন চীন ও পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের পক্ষ অবলম্বন করে। অথচ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারই ছিল পাকিস্তানের সকল প্রদেশের গল আন্দোলনের মূল স্লোগান। ফলে বিভক্তি অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। চীন-পাকিস্তান-আমেরিকা তখন দাঁড়িয়ে যায় এক কাতারে।
অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ ন্যাপ সভাপতি হিসেবে বিশেষ সফলতা অর্জন করেন মুক্তিযুদ্ধকালে। তিনি সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের সমর্থন আদায়ে গৌরবজনক ভূমিকা পালন করেন। মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের উপদেষ্ঠা মন্ডলীর অন্যতম সদস্যও মনোনীত হন তিনি অপরাপয উপদেষ্ঠা ছিলেন মওলানা ভাষাণী, কমরেড মনিসিংহ, মনোরঞ্জন ধর। এরা এবং বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ কেউই আজ আর বেঁচে নেই।
একমাত্র জীবিত উপদেষ্ঠা অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদকে বর্তমানে সরকার “স্বাধীনতা পদক” দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি জানাতে চাইলে অধ্যাপক মোজাফফর তাতে অসম্মতি জানান। ন্যাপ আজ বিভক্ত। মোজাফফর ন্যাপ, ঐক্য ন্যাপ, গণতন্ত্রী পার্টি প্রভূতিতে। বেশ একটা অংশ আওয়ামী লীগ ও গণফেরামে।
আজ ঐতিহাসিক প্রয়োজন ন্যাপের ঐক্য। দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এক ন্যাপ গঠনই হবে অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদের প্রতি নেতা-কর্মীদের শ্রেষ্ঠতম উপহার।