পাবনায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাসব্যাপী বইমেলায় প্রায় কোটি টাকার বই কেনাবেচা ও বিপুল পাঠক সৃষ্টির মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে আজ
এসএম আলাউদ্দিন, পাবনা, বিশেষ প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাসব্যাপি পাবনার বইমেলায় এবারও প্রায় কোটি টাকার বই কেনাবেচার মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে আজ। ভাষার মাসে বইমেলা যেন পাবনাবাসির প্রাণের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল। সকাল দশটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জমজমাট ছিলো মেলা প্রাঙ্গণ। বিকেল হলেই বইপ্রেমিদের ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। জেলার ঐতিহ্যবাহী অন্নদাগোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরীর উদ্যোগে ও বইমেলা উদযাপন পরিষদের ব্যবস্থাপনায় এই মেলা অনুষ্ঠিত হলো।
পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে পাবনার বীরমুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল পৌর মুক্তমঞ্চ চত্বরে এই মেলার আয়োজন করা হয়।
মেলাতে ৩৪টি স্টল ছিলো বই বিক্রেতা ও প্রকাশনী সংস্থাগুলোর। একাধিক বই বিক্রেতা আর প্রকাশনীর স্বত্তাধিকারী জানান , প্রতিদিন গড়ে আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছেন তারা। শিশুতোষ বই, গল্পের বই, বিভিন্ন ব্যক্তির জীবনী, উপন্যাস ও মুক্তিযুদ্ধের বই বিক্রি হয়েছে বেশী। এবারের বইমেলাতে প্রায় কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে বলে তারা জানান।
পাবনার মাসব্যাপি এই বইমেলার ব্যতিক্রমধর্মী কিছু আকর্ষণের মধ্যে ছিলো স্কুল শিক্ষক, কলেজ শিক্ষক, শিশু শিক্ষার্থী,স্কুল ছাত্র, কলেজ ছাত্র, চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, কবি, লেখক, প্রকাশক, শিল্পী, বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, আইনজীবী, স্কুল ও কলেজের লাইব্রেরিয়ান, মা, বই ব্যবসায়ীদের জন্য প্রতিদিন আলাদা অলাদা বইপড়া নিয়ে ব্যতিক্রমী আলোচনা সভা। এছাড়াও মেলায় শহর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ১১০টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনা ছিল মনোঙ্গ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা। নৃত্যানুষ্ঠান, নাটক, সঙ্গীত,অভিনয়, আবৃত্তি এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের নিজস্ব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে বইমেলায়। এছাড়া হাতের লেখা, আবৃত্তি, সঙ্গীত, নৃত্য, অভিনয় পৃথক পৃথক বিভাগে প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ, গণ শিল্পী সংস্থার আয়োজনে শিশুদের হাতে খড়ি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। হাতে খড়ি অনুষ্ঠান শেষে শিশুদের হাতে জীবনের প্রথম শিক্ষারম্ভের আশির্বাদ সনদ তুলে দেয়া হয়।
পহেলা ফেব্রুয়ারি পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আল নকীব চৌধুরী এই বই মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
গতকাল প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে পুরস্কার ও সনদপত্র। পুরস্কার ও সনদ বিতরণ করেন বইমেলা উদযাপন পরিষদের সভাপতি, সম্পাদক, সদস্যবৃন্দ, অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরীর মহাসচিব ও কার্যনির্বাহী সদস্যবৃন্দ।
মেলা মঞ্চে প্রতি সপ্তাহের শেষ দিনে নবীন-প্রবীণ লেখকদের বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের ব্যবস্থা ছিল। এবারের মেলাতেও প্রায় একশ’ বিভিন্ন ধরণের নতুন নতুন বই প্রকাশ পেয়েছে। মাসব্যাপি এই বই মেলা প্রতিদিন দুপুরের পর থেকেই দর্শক, পাঠকসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষের আনাগোনায় পুরো ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যেত। এতো পরিমান দর্শকের উপস্থিতি যেন আইন শৃংখলা বাহিনীসহ নিরাপত্তাকর্মিদের পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায় রাখতে হিমশিম খেতে হয়।
বইমেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি প্রফেসর শিবজিত নাগ বলেন, মেলা মানেই মেলা নয়, এই মেলা মানে প্রাণের বইমেলা। অর্থাৎ বই ছাড়া কোন স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়নি। প্রত্যেকটি বইয়ের স্টলে ছিল দেশি বিদেশি খ্যাতিমানসহ নানা ধরণের লেখকদের বই। পাশাপাশি শিশুদের জন্য ছিল নতুন পুরাতন বইয়ের সমাহার। ঢাকার বাইরে একমাত্র আমাদের এই পাবনাতেই ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী একটি সুন্দর সুশৃংখল বইমেলার আয়োজন করা হচ্ছে। সকলের সহযোগিতা অব্যহত থাকবে এ বিশ্বাস আমার আছে। মাসব্যাপী এই বইমেলায় এবার সব মহলের যথেষ্ট আন্তরিক সহযোগিতা পেয়েছি। এজন্য বইমেলার পক্ষ থেকে পাবনায় কর্মরত সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিক, বিশেষ করে স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিকবৃন্দকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। যারা প্রতিদিন বইমেলার ধারাবাহিক সংবাদ পরিবেশন করেছেন। একই সাথে আন্তরিক সহযোগিতার জন্য আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই বইমেলার স্টল মালিক ও বই ক্রেতা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ,জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও চাকুরীজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার ব্যক্তিবর্গকে।