পাবনা জুড়ে ডাকাত আতঙ্ক
আর কে আকাশ, পাবনা, বিশেষ প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
পাবনায় একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন উপজেলার মানুষ। ডাকাত আতঙ্কে গত কয়েক দিন নির্ঘুম রাত কাটছে স্থানীয়দের। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, হঠাৎ করেই পাবনা সদর, ঈশ্বরদী ,আটঘরিয়া, চাটমোহর,সুজানগরসহ জেলার অধিকাংশ অঞ্চলে ডাকাত দলের উৎপাত বেড়ে গেছে।
রবিবার রাত আড়াইটার দিকে পাবনার মালঞ্চি ইউনিয়নের উত্তর রাঘবপুর গ্রামে দুই বাড়িতে ডাকাতি সংঘঠিত হয়েছে। ডাকাতদল এসময় স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা লুটপাট করে নিয়ে গেছে। ডাকাতদলের মারপিটে দুই যুবক আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে গিয়াস উদ্দিন (২৬) কে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, রাত আড়াইটার দিকে পাবনা সদর উপজেলার মাঞ্চলি ইউনিয়নের উত্তর রাঘবপুর গ্রামে ২০/২৫ জনের একদল মুখোশধারী ডাকাতদল কুতুব উদ্দিন সেখের বাড়িতে ঢুকে তার ছেলে গিয়াস উদ্দিন (২৬) কে কুপিয়ে আহত করে বাড়ির সদস্যদেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ ২ লাখ টাকা, ১৫ ভরি সর্ণালংকার ও নোহাব উদ্দিনের বাড়িতে ঢুকে তার ছেলে আলমঙ্গীর হোসেনকে পিটিয়ে আহত করে বাড়ির সদস্যদেরকে জিম্মি করে নগদ দেড় লক্ষাধীক টাকা, ১৪ ভরি সর্ণালংকার লুটপাট করে নিয়ে যায়।
শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে ঈশ্বরদী আলহাজ্ব মোড় এলাকার আইকে রোডের চঞ্চলের ব্যাটারীর দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ছয় সাতজনের ডাকাতদল ট্রাকযোগে এসে প্রায় দুই লক্ষ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। এ সময় নাইটগার্ড বাধা দিলে, তাকে পিটিয়ে আহত করে বেধে রাখে ডাকাতরা।
ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে আটঘরিয়া উপজেলাতেও। গত বুধবার রাত আনুমানিক ১টার দিকে আটঘরিয়া উপজেলার চাঁদভা ইউনিয়নের কদমডাঙ্গা গ্রামের ব্যবসায়ী নুরুজ্জামানের বাড়িতে ৭-৮ জনের একদল মুখোশধারী ডাকাত হানা দেয়। ডাকাত দলের সদস্যরা অস্ত্রের মুখে বাড়ির লোকদের জিম্মি করে ব্যবসায়ী নুরুজ্জামানকে ধারালো অস্ত্রদিয়ে কুপিয়ে ও দুই ছেলে সাগর (২১) ও শাওনকে (১৬) মারধর করে নগদ ৩ লাখ টাকা ও ৬ ভরি স্বর্ণালংকারসহ মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। আহতদের আটঘরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এদিকে, পাবনা ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গত এক সপ্তাহে এক দোকান ও তিন বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এভাবে প্রতিদিনই ডাকাতির ঘটনা ঘটায় উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
এর আগে, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঈশ্বরদীর সাহাপুর ইউনিয়নের দীঘা স্কুলপাড়ার মৃত কেরু সরদারের ছেলে তারিকুজ্জামান বাবু সরদারের বাড়ির জানালা ভেঙে ঘরের মধ্যে ঢুকে মুখ বাঁধা ৪/৫ সদস্যের একটি ডাকাতদল অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে হাত পা বেঁধে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান মালামাল নিয়ে যায়। যার আনুমানিক মূল্য তিন লাখ টাকার মতো বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ বাবু।
চলতি মাসের ১০ তারিখে উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের ভাড়ইমারি দক্ষিণপাড়ার মৃত আলহাজ¦ খলিল মুন্সির ছেলে রিপন মোল্লার বাড়িতে ডাকাতি করে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান মালামাল নিয়ে যায় সশস্ত্র ডাকাতদল।
এ ঘটনায় ওই এলাকায় চরমভাবে ডাকাত আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। একই ভাবে ছিচকে চোর ও ডাকাতের অত্যাচারে অতিষ্ঠ পাবনা সদরের কাচারীপাড়া, সাধু পাড়া, ম-ল পাড়া, বাঁশতলাসহ অধিকাংশ এলাকার মানুষ। গত শনিবার কাচারী পাড়া ও সাধু পাড়া এলাকায় একদল সশস্ত্র ডাকাতদল হামলা চালায়।
স্থানীয়রা জানান, ১০ থেকে ১২ জনের ডাকাত দল কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে ৪টি বাড়িতে হামলা চালায়। এলাকাবাসী ডাকাত দলের উপস্থিতি বুঝতে পেরে মোবাইলে প্রতিবেশীদের জানায়। সকলে একত্রিত হয়ে ডাকাতদলকে ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়।
তবে, ডাকাতি প্রতিরোধে পুলিশ সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। রাতে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। অপরাধী যেই হোক তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের এক সদস্যকে আটক করেছি। খুব শীঘ্রই পুরো দলটিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।