পাবনা মানসিক হাসপাতালের ১৫ শতক জমি শ্রীশ্রী ঠাকুর অনূকুল চন্দ্রের জন্মস্থান দাবি মামলায় রায় পেল সৎসঙ্গ বাংলাদেশ
সৈয়দ আকতারুজ্জামান রুমী, পাবনা, বিশেষ প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
দীর্ঘ আইনী লড়াইয়ের পর শ্রীশ্রী ঠাকুর অনূকুল চন্দ্র চক্রবর্তীর জন্ম স্থান হিসেবে চিহ্নিত ১৫ শতক জমি সৎসঙ্গ বাংলাদেশ ফিরে পেয়েছে। ১১ বছর ধরে শ্রীশ্রী ঠাকুর অনূকুল চন্দ্র সৎসঙ্গ হেমায়েতপুর বনাম শ্রীশ্রী ঠাকুর অনূকুল চন্দ্র জেরুরিয়া খুলনা বিবাদি শ্রেণী ভক্ত হয়ে এ মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছিলো। যদিও ইতোপূর্বে শ্রীশ্রী ঠাকুর অনূকুল চন্দ্র সৎসঙ্গ ঠাকুর ভক্তদের নিয়ে হেমায়েতপুর রাতের আধারে মানসিক হাসপাতালের সিমানা প্রাচীর ভেঙ্গে এ জায়গা দখলের চেষ্টা চালায়।
গত বৃহস্পতিবার পাবনার সদর থানার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মো: আতিকুর রহমান এ আদেশ দিয়েছেন। আদালত রায় প্রদানকালে বলেছেন, পাবনার হেমায়েতপুরে ঠাকুরের জন্ম স্থান রুপে চিহ্নিত ১৫ শতক জমির দাবীদার হিসাবে বাংলাদেশে একমাত্র বৈধ কর্তৃত্ব সম্পন্ন সংগঠন ‘সৎসঙ্গ বাংলাদেশ’।
আদালত সুত্রে জানা গেছে, শ্রীশ্রী ঠাকুর অনূকুল চন্দ্র চক্রবর্তী পাবনার হেমায়েতপুরে ‘সৎসঙ্গ’ প্রতিষ্ঠা করে আধ্যাত্বিক কর্মকান্ড সহ নানারুপ জনকল্যাণ মুলক কাজ শুরু করেন। এ অবস্থায় ১৯৪৬ সালে শারিরীক কারেনে বায়ু পরিবর্তনের জন্য ভারতের দেওঘরে যান। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর তিনি আর ফিরে আসেন নাই। তিনি দেওয়ঘরেই পুনরায় সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তদানিন্তন পুর্ব পাকিস্তান সরকার পাবনার হেমায়েতপুরে ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত সৎসঙ্গের সকল জমি-জমা ও স্থাপনাদি অধিগ্রহণ করে পাবনা মানসিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময় শ্রীশ্রী ঠাকুরের নির্দেশে পাবনার ‘সৎসঙ্গ’ টাঙ্গাইল জেলার পাকুটিয়াতে স্থানান্তরিত হয়। সেখান থেকে পুর্ব পাকিস্তান সৎসঙ্গের সকল কর্মকান্ড পরিচালিত হতে থাকে। তখন ঠাকুরের নির্দেশে সৎসঙ্গের সাধারন সম্পাদক নিযুক্ত হন রাসবিহারী আদিত্ব্য। তিনি তখন থেকেই শ্রীশ্রী ঠাকুর অনূকুল চন্দ্র চক্রবর্তীর জন্ম স্থান রুপে চিহ্নিত ১৫ শতক জমি ফিরে পাওয়ার জন্য সরকারের নিকট আবেদন করেতে থাকেন। পরবর্তিতে রাসবিহারী আদিত্ব্য মারা গেলে তার বড় ছেলে ধৃদিব্রত আদিত্ব্য ‘সৎসঙ্গ বাংলাদেশ’এর সাধারন সম্পাদক নিযুক্ত হন। ধৃদিব্রত আদিত্ব্য ও ঐ জমি ফিরে পাওয়ার জন্য সরকারের নিকট বিভিন্ন সময় আবেদন করেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর সরেজমিনে তদন্ত করে সরকারের অধিগ্রহণ করা জমির মধ্যে মানসিক হাসপাতালের মধ্যে অব্যবহৃত ১৫ শতক জমি প্রত্যার্পণের আদেশ হয়। উক্ত আদেশে সৎসঙ্গ বাংলাদেশের পরিবর্তে সৎসঙ্গ পাবনা বরাবর প্রত্যার্পণের আদেশ হলে সৎসঙ্গ বাংলাদেশের সাধারন সম্পাদক ধৃদিব্রত আদিত্ব্য বাংলাদেশে সৎসঙ্গ বাংলাদেশ এক মাত্র বৈধ কর্তৃত্ব সম্পন্ন সৎসঙ্গ সংগঠন হিসাবে শ্রীশ্রী ঠাকুর অনূকুল চন্দ্র চক্রবর্তীর জন্ম স্থান রুপে চিহ্নিত ১৫ শতক জমি ফিরে পেতে অধিকারী এবং সৎসঙ্গ বাংলাদেশ’ বাংলাদেশে এক মাত্র বৈধ কর্তৃত্ব সম্পন্ন সৎসঙ্গ হিসাবে ঘোষণার প্রার্থনায় পাবনার জেলা প্রশাসককে বিবাদি করে পাবনা সদর থানার সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং অ:প্র:৫১/২০০৭ ইং। উক্ত মামলায় শ্রীশ্রী ঠাকুর অনূকুল চন্দ্র সৎসঙ্গ হেমায়েতপুর এবং শ্রীশ্রী ঠাকুর অনূকুল চন্দ্র জেরুরিয়া খুলনা বিবাদি শ্রেণী ভক্ত হয়ে মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
দীর্ঘ ১১ বছর মামলাটি চলার পর অবশেষে বৃহস্পতিবার উভয় পক্ষের শুনানি শেষে পাবনার সদর থানার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মো: আতিকুর রহমান সৎসঙ্গ বাংলাদেশের পক্ষে রায় ডিগ্রী প্রদানের আদেশ দিয়েছেন।
বাদী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন, প্রবীণ আইনজীবী গোরা চাঁদ ঘোষ, পাবনা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহম্মদ মহিউদ্দিন, আহাদ বাবু, রণধীশ ভট্রাচার্য্য, আব্দুল হামিদ (৩), মোহম্মদ আলী। বিবাদি পক্ষের আইনজীবী হোসেন শহিদ সরওয়াদ্দী জানান, তারা এই রায়ের বিরুদ্বে আপিল করবেন।
মামলার বাদি সৎসঙ্গ বাংলাদেশের সাধারন সম্পাদক ধৃদিব্রত আদিত্ব্য আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, সত্যের জয় হয়েছে, সৎসঙ্গীরা ন্যায় বিচার পেয়েছে। অন্যদিকে শ্রীশ্রী ঠাকুর অনূকুল চন্দ্র সৎসঙ্গ হেমায়েতপুর এর সাধারণ সম্পাদক যুগল কিশোর বলেন, আদালতের কাছে তাঁরা সুবিচার পান নি। তাই তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ পর্যায়ে আপিল করবেন। অন্যদিকে দেশের একমাত্র বিশেষায়িত পাবনা মানসিক হাসপাতালের অভ্যান্তরে ১৫ শতক জায়গা বেদখল হয়ে গেলে হাসপাতালটির নিরাপত্তাহীনতা আক্রান্ত হবে বলে মনে করেন পাবনা মানসিক হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।