ত্রিপিটক বৌদ্ধ ধর্মীয় পালি গ্রন্থ ।
ত্রিপিটক বৌদ্ধ ধর্মীয় পালি গ্রন্থের নাম।বুদ্বের দর্শন এবং উপদেশের সংকলন।পালি “তি-পিটক” হতে বাংলায় ত্রিপিটক শব্দের প্রচলন। তিন পিটকের সমন্বিত সমাহারকে ত্রিপিটক বোঝানো হয়েছে।এই তিনটি পিটক হলো বিনয় পিটক, সূত্র পিটক ও অভিধর্ম পিটক।পিটক শব্দটি পালি এর অর্থ – ঝুড়ি, পাত্র, বাক্স ইত্যাদি, অর্থাৎ, যেখানে কোনো কিছু সংরক্ষন করা হয়। এটি বৌদ্ধদের মূল ধর্মীয় গ্রন্থ।খ্রীষ্ট পূর্ব ৩য় শতকে সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে ত্রিপিটক পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ হিসাবে স্বীকৃত হয়।এই গ্রন্থের গ্রন্থনের কাজ শুরু হয়েছিল গৌতম বুদ্ধ এর পরিনির্বানের তিন মাস পর অর্থাৎ, খ্রিষ্ট পূর্ব ৫৪৩ অব্দে এবং সমাপ্তি ঘটে খ্রিষ্ট পূর্ব প্রায় ২৩৬ অব্দে।প্রায় তিনশ বছরে তিনটি সঙ্ঘায়নের মধ্যে এর গ্রন্থায়নের কাজ শেষ হয়।
ভাগ:
ত্রিপিটককে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।
যথা:
১) অভিধর্ম পিটক
২) বিনয় পিটক
৩) সূত্র পিটক
ত্রিপিটকে ধর্মস্কন্ধ বিন্যাস:
ধর্মস্কন্ধ অর্থ – ধর্ম পরিচ্ছেদ বা বিষয় বিভাগ। অর্থাৎ, ত্রিপিটকে বর্ণিত ক্ষুদ্র ও বৃহৎ প্রত্যেক বিষয়কে এক একটি স্কন্ধ বলা হয়।ত্রিপিটকে এরুপ চুরাশি হাজার (৮৪০০০) ধর্মস্কন্ধ রয়েছে। তার মধ্যে বিনয় পিটকে একুশ হাজার (২১০০০), সূত্র পিটকে একুশ হাজার (২১০০০) ও অভিধর্ম পিটকে বিয়াল্লিশ হাজার (৪২০০০)। এই চুরাশি হাজার বুদ্ধ বচন বা বুদ্ধ উল্লেখিত বিষয় বা শাস্ত্রবাক্য এই ত্রিপিটকে বিদ্যমান।
ত্রিপিটকের ভাষা:
খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ট শতক হতে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতক অবধি পালি ভাষা এবং এই ভাষায় রচিত সাহিত্য সমুহ ক্রমবিকাশের পথে অগ্রসর হয়েছে।গৌতম বুদ্ধের ব্যবহৃত ভাষা হিসাবে এই ভাষার ইতিহাস সর্বাধিক গুরুত্ব লাভ করে। বুদ্ধ তার ধর্ম আদর্শ প্রচারের জন্য সমগ্র উত্তর ভারত পরিভ্রমন করেন।ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত মানুষদের সর্বজন বোধ্যতার তাগিদে পালি ভাষার প্রচলনের প্রসার ঘটে। ক্রমে বৌদ্ধ ভিক্ষু মন্ডলি ধর্মালোচনার মাধ্যম হিসাবে এই ভাষাতেই দক্ষতা অর্জন করেন। বুদ্ধ নিজে ও এই ভাষাতেই ধর্মদেশনা দিতেন। তাই পরবর্তিতে এই ভাষাতেই( পালিতে) মুল ত্রিপিটক গ্রন্থ রচিত ও সংরক্ষিত হয়।
গ্রন্থন পূর্বক ত্রিপিটকের অবস্থা:
বুদ্ধের সময়কালে বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ ধ্যানে-জ্ঞ্যানে অত্যন্ত উচ্চ মার্গের চেতনা সম্পন্ন ছিলেন। তাদের মধ্যে যে যেই বিষয়ে সাধনা করতেন সে সেই বিষয়ে অত্যধিক উন্নতি সাধন করতেন। এই সময়ে ভিক্ষুদের মধ্যে সুত্রধর, বিনয়ধর এবং মাতিকাধর নামে তিন ধারার সাধনাকারী ভিক্ষু ছিলেন।এই তিন শ্রেণীর ভিক্ষুগণ সকলেই ছিলেন স্মৃতিধর।স্মৃতিধর এই ভিক্ষুগণ শ্রুতি থেকে স্মৃতিতে বুদ্ধ বাণীকে সংরক্ষন করতেন। নিরন্তর অধ্যবসায়ে ভিক্ষুগণ তাদের শিষ্য পরম্পরায় এই রীতি সচল রাখতেন।বুদ্ধের শিষ্যদের মধ্যে প্রায় প্রত্যেকেরই এই শ্রুতি ও স্মৃতি ক্ষমতা ছিল।তাই ত্রিপিটক গ্রন্থনের পূর্বে সুত্রধরেরা সূত্র, বিনয়ধরেরা বিনয় এবং মাতিকাধরেরা অভিধর্ম পিটক স্মৃতিতে রাখতেন।
ত্রিপিটকের অভ্যন্তরীণ গ্রন্থের পরিচয়:
১) বিনয় পিটক:
১) পারাজিকা
২) পচিত্তিয়া
৩) চুলবগ্গ
৪) মহাবগ্গ
৫) পরিবার পাঠো
২) সূত্র পিটক:
১) দীর্ঘ নিকায় (৩ খন্ডে সমাপ্ত)
২) মজ্ ঝিম নিকায় (৩ খন্ডে সমাপ্ত)
৩) সংযুক্ত নিকায় (৩ খন্ডে সমাপ্ত)
৪) অঙ্গুত্তর নিকায় (৩ খন্ডে সমাপ্ত)
৫) খুদ্দক নিকায় (১৬ টি সতন্ত্র গ্রন্থ আছে)
যথা:
১) খুদ্দক পাঠো
২) ধম্মপদ
৩) উদান
৪) ইতিবুত্তক
৫) সুত্তনিপাত
৬) বিমান বুত্থু
৭) পেত বুত্থু
৮) থের গাথা
৯) থেরী গাথা
১০) জাতক (৫ খন্ড)
১১) মহানিদ্দেশ
১২) চুল নিদ্দেশ
১৩) পটিসম্ভিদা নিদ্দেশ
১৪) অপদান
১৫) বুদ্ধ বংসো
১৬) চরিয পিটক
৩) অভিধর্ম পিটক:
১) ধম্মসঙ্গণি
২) বিভঙ্গ
৩) ধাতুকথা
৪) পুগ্গল পঞ্ঞত্তি
৫) কথবত্থু
৬) যমক
৭) পট্ঠান।