প্রধানমন্ত্রী বরাবর শিক্ষক নিবন্ধিতদের খোলা চিঠি/ নিবেদন
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন এবং নিঃস্বার্থভাবে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের ভাগ্য উন্নয়নে আপনার প্রচেষ্টার তিল পরিমাণ কমতি নেই। একমাত্র আপনিই নতুন প্রজন্ম ও বাংলাদেশকে নিয়ে নিজের ভাবনার কথা তরুনদের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে “লেট’স টক” অনুষ্টানের মাধ্যমে আপনার ভবিষ্যৎ ভাবনার কথা জানিয়েছেন, শুনেছেন তরুণদের স্বপ্ন, স্বপ্ন পূরন ও স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার কথা। তরুণরা স্বপ্ন দেখে সুখি-সমৃদ্ধ মেধাবী বাংলাদেশ গড়ার।উন্নয়নের অগ্রদূত হিসেবে আপনি নতুন প্রজন্মের কাছে রোল মডেল হয়ে বেঁচে থাকবেন অনন্তকালধরে।
শিক্ষাক্ষেত্রে অভাবনীয় পরিবর্তণএসেছে। বছরের প্রথমদিনেই পাঠ্যবই বিতরণ, প্রত্যেক উপজেলায় স্কুল-কলেজ সরকারিকরণ, ২৬ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দ্বিগুন, বেসরকারি শিক্ষকদের বৈশাখি ভাতা ও ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট, শতভাগ বিদ্যুতায়নসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করার পদক্ষেপ প্রশংসার দাবী রাখে। শহরের ন্যায় গ্রামাঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলোতে বহুতল ভবন নির্মাণ করে প্রকৃত শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৬ সালে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিষয়ভিত্তিক মেধাবী শিক্ষক স্বচ্ছভাবে নিয়োগের ক্ষমতা এনটিআরসিএ’র উপর ন্যস্ত করে মেধাবী শিক্ষক নিবন্ধিতরা স্বপ্ন দ্যাখে শিক্ষিত জাতি গঠনের।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটির দৌরাত্বে শিক্ষক নিয়োগ ব্যবস্থায় ব্যাপক অনিয়ম, দূর্নীতি, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবগত। যার ফলশ্রুতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়। ম্যানেজিং কমিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে দূর্বল শিক্ষকদের নিয়োগ প্রদান করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জগাখিচুড়ি অবস্থার সৃষ্টি করে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মেধাহীন আত্মীয়-পরিজন সম্বলিত শিক্ষকে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এনটিআরসিএ গঠিত হওয়ার পরও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটির দৌরাত্ব শেষ হয়নি। তারা লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়। ফলে এনটিআরসিএ’র জাল সনদের রমরমা বাণিজ্য শুরু হয় এবং বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার রিপোর্টে জানা যায় প্রায় ৬০ হাজার শিক্ষক ভূয়া নিবন্ধন সনদ দিয়ে সরকারি বেতন-ভাতা তুলছেন। একইসাথে নীতি-নৈতিকতাহীন ব্যক্তিরা এ পেশায় এসে শিক্ষকতা নামক মহান পেশাটিকে কলুষিত করছে। তারা শ্রেনি পাঠদানে শিক্ষার্থীদের চাহিদাগুলো পূরণ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছেন যার ফলে মেধাহীন শিক্ষিতের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এনটিআসিএ ২০১৬ সালে নামমাত্র কয়েক হাজার শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে বছরের পর বছর পরীক্ষা নিয়েই যাচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে অন্যদিকে সামাজিক অপরাধের মাত্রা বাড়ছে।
দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ডোনেশন দিয়ে শিক্ষক নেয়ার কারণে বাংলা- ইংরেজির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সাধারণ বিষয়ের শিক্ষকরা পাঠদান করায় শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং ঐসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ফলাফলে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ দুরাবস্থা থেকে উত্তোরণের একমাত্র পথ বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিবন্ধিতদের নিয়োগ প্রদান করা।
মহামান্য হাইকোর্ট গত বছরের ১৪ ডিসেম্বরে দেয়া তার রায়ে(১) সনদধারীদের নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত সনদের মেয়াদ আজীবন করার কথা বলেছে। একইভাবে রায়ের ৫ নং পয়েন্টে এনটিআরসিএ’কে রিট পিটিশনার এবং প্রত্যাশিত আবেদনকারিদের নাম জাতীয় মেধা তালিকার ভিত্তিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান শূন্যপদে সুপারিশ করার নির্দেশ প্রদান করে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিহুটহাট সিদ্ধান্তে মামলায় জড়াতে পারে এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়োগব্যবস্থা আরো বিলম্ব করার পায়তারা করছে।অন্যদিকে গণবিজ্ঞপ্তি এবং নিবন্ধন সার্কুলার দিয়ে কোটি কোটি টাকা আয়ের পথ উন্মুক্ত করেছে।
শিক্ষামন্ত্রনালয় গত ১২ জুন এমপিও নীতিমালা/১৮ প্রকাশ করে যাতে বলা হয় ৩৫ বছরের অধিক বয়সীরা এমপিওভুক্ত হতে পারবেন না। এই এমপিও নীতিমালার বয়স নির্ধারণ নিবন্ধন প্রবেশিকা পরীক্ষা না সনদ অর্জনকারীদের জন্য তা নিয়ে পয়ত্রিশোর্ধ বয়সী শিক্ষক নিবন্ধিতদের মধ্যে যথেষ্ট দ্বিধা-দ্বন্দ আছে। এনটিআরসিএ’র গণবিজ্ঞপ্তিতে তাদের ভাগ্যে বিভীষিকা ঘটার মতো হয়ে গেল। এনটিআরসিএ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কোন বয়সের সীমাবদ্ধতা ছিল না। অনেকেই ৩৫ বছরের পরে নিয়োগ পেয়ে এমপিওভুক্তহয়েছেন। অন্যদিকে ১৪তম শিক্ষক নিবন্ধন প্রার্থীদের অনেকে ৩৫ বছর অতিক্রম করেছে। অতি সম্প্রতি মহামান্য হাইকোর্ট ১২ ও ১৩ তম শিক্ষক নিবন্ধিতদের একক নিয়োগের আদেশ জারি করেন। এদের মাঝে অনেক পয়ত্রিশোর্ধ শিক্ষক নিবন্ধিত রয়েছে। একক নিয়োগ আদেশে এনটিআরসিএ তাদের নিয়োগ দিতে বাধ্য। তাহলে শিক্ষামন্ত্রনালয়ের করা এমপিও নীতিমালা/১৮ আলোকে বয়স নির্ধারণ করার সিদ্ধান্তটি আদতে কার জন্য তা স্পষ্টীকরণ দরকার এবং একই সাথে পয়ত্রিশোর্ধ সনদধারীদের গনবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করার সুযোগ দেয়া আবশ্যক।
বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিবন্ধিতরা এনটিআরসিএ কতৃক নিবন্ধন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে শিক্ষকতা করার সনদ লাভ করে।পয়ত্রিশোর্ধ মেধাবী শিক্ষক নিবন্ধিতরা মেধা-যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ন ও মহামান্য হাইকোর্টের রায় মোতাবেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্টানে এনটিআরসিএ প্রদত্ত গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছে না। কোন আইন করলে তা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য হয় কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রনালয় সনদধারীদের জীবন ধ্বংস করার আইন করবে তা নিবন্ধিতদের বোধগম্য নয়।এদিকে এনটিআরসিএ ১-১৩তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের নিয়োগ সম্পূর্ণ না করেই ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি দেয়। বিজ্ঞপ্তিতে পয়ত্রিশোর্ধ প্রার্থীরা আবেদন, পরীক্ষা এবং সনদ পাবে কিন্তু গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারবে না। তাহলে এটা কেমন ধরণের প্রহসন?আপনিই শেষ ভরসার স্থল যেখানে বঞ্চিত হলে সারাজীবন তাদের বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে জীবন-যাপন করতে হবে।
বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে আপনার শক্ত হাতে। বিভিন্ন উন্নয়নে অনেক দেশের কাছে বাংলাদেশ আজ রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। কিন্তু অর্ধেক শিক্ষিত কর্মঠ জনসংখ্যাকে বেকার রেখে এ পথচলা মসৃন হবে না।এই তরুণরা বায়ান্ন, ঊনসত্তর, একাত্তর, নব্বইয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বুক পেতে দিয়েছিলো। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন ভূ-খন্ডের স্থান করে নিতে এদের ভূমিকা কতটুকু তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এদের বঞ্চিত করে কোন উন্নয়ন টেকসই হতে পারে না। বাংলার শিক্ষিত তরুণ সম্প্রদায় আজ আপনার পানে চেয়ে আছে। সামনেই একাদশ জাতীয় নির্বাচন। সাধারণ ভোটারের প্রায় অর্ধেক তরুণ ভোটার। স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তির প্রতিনিধি কিছু ব্যাক্তি হয়তো প্রশাসনের অন্তরালেথেকে আপনার জনপ্রিয়তা হ্রাস ও যুবশক্তি থেকে আলাদা করার জন্য শিক্ষিত তরুনদের বঞ্চিত করতে পারে।আপনি জানেন স্বাধীনতা বিরোধী ব্যক্তিরাআপনার উন্নয়ন এবং সুনাম ক্ষুন্ন করতে বিভিন্ন অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা আপনার নিরন্তর পথচলাকে বাঁধা দিতে সবসময় সোচ্চার। ষড়যন্ত্রের দানা বাধার আগেই সবকিছু জেনে-শুনে যুবদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্যআপনার সঠিক ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত এখন উপযুক্ত সময়ের উপযুক্ত দাবী।
আপনার সমূদ্রসম জনসমর্থন আছে এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। তবে কোন পক্ষের এজেন্ট তা হ্রাস করার গভীর ষড়যন্ত্র করতে পারে। আপনি গোটা জাতির কান্ডারি বিধায় সবকিছু নখদর্পণে রাখা হয়তো সম্ভবপর হয় না। আর এই সুযোগে আপনার বিরোধী কিছু ব্যক্তি আপনার অগোচরে এসব কাজ অবলীলায় করতে পারে যা অসম্ভব নয়। আপনি আপনার পিতার মতোই বিচক্ষণ, যথেষ্ট প্রজ্ঞাবান ও সুবিবেচক। তাই বিষয়টি সুবিবেচনাপূর্বক উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিষয়ভিত্তিক মেধাবী শিক্ষক নিবন্ধিতদের জাতি গড়ার সুযোগ দিলে বেকার সমস্যা নিরসনসহ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক স্বল্পতার সংকট দূর হবে।
প্রেরক,
ভূপেন্দ্র নাথ রায়
(অধ্যক্ষ, সাইডিরিয়্যাল মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজ)
গোয়ালডিহি, খানসামা, দিনাজপুর।