প্রধান বিচারপতি হচ্ছেন সৈয়দ মাহমুদ

 

 

অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

বিচার বিভাগের অভিভাবকের পদটি শূন্য রেখেই নতুন বছরের যাত্রা শুরু হয়েছে। তবে এ অবস্থার অবসান ঘটছে। শিগগিরই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে। নাটকীয় কোনো পরিবর্তন না হলে তাকেই দেশের পরবর্তী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন হবেন দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জানা গেছে, প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার ছুটিতে যাওয়ার পর থেকেই আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করছেন। শুরু থেকেই প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার পাশাপাশি বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে এ তিনজনের মধ্যে এখন পর্যন্ত বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, এ নিয়োগ প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু হবে। রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন। সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করিবেন।’

সংবিধানে এ ব্যাপারে আর বিস্তারিত কিছুই বলা হয়নি। তবে দীর্ঘদিনের রীতি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রথমে আপিল বিভাগের যে বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন, তার ব্যাপারে সম্মতি দিয়ে তা আইন মন্ত্রণালয়কে জানান। এর পর মন্ত্রণালয় থেকে ওই বিচারপতির ব্যাপারে ফাইল প্রস্তুত করে তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠান। প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরের পর বিষয়টি রাষ্ট্রপতির কাছে যায়। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর প্রধান বিচারপতি নিয়োগের গেজেট জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। তবে নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সোমবার বিকালে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে আনিসুল হক বলেন, ‘এটা তো মহামান্য রাষ্ট্রপতি জানেন। জানলে নিশ্চয়ই জানাব।’

গত বছর ১০ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা সিঙ্গাপুর থেকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। এর পর ১৪ নভেম্বর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে রাষ্ট্রপতির দপ্তর তা পাঠিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ে। পরে আইন মন্ত্রণালয় আর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এ ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির পদটি শূন্য ঘোষণা করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করার প্রয়োজনীয়তা ছিল বলে মনে করেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। তার মতে, ‘প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার পদত্যাগ ছিল একটি অস্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তার পদত্যাগপত্র গৃহীত হলে তার পর পদ শূন্য হয়েছে বলে একটি গেজেট জারির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু সেই গেজেটটা এখনো হয়নি।’

তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মতে, এ ক্ষেত্রে কোনো গেজেট জারির প্রয়োজন নেই। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেই আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। এর পর আর গেজেট জারির প্রয়োজনীয়তা নেই।’ তা হলে প্রধান বিচারপতির পদটি কি এখন শূন্যÑ এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘না। সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ দেখেন, তা হলে পরিষ্কার হয়ে যাবে। এই অনুচ্ছেদে পরিষ্কার লেখা আছে, অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি কখন নিয়োগ হয়। আর ঠিক সেভাবেই বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্্হাব মিঞা দায়িত্ব পালন করছেন।’

গত বছর ১ আগস্ট উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে নিয়ে করা ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় প্রকাশিত হয়। এই রায়ে প্রধান বিচারপতির দেওয়া বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও সরকারইন্থ আইনজীবীরা। তারা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিও তোলেন। সমালোচনার মধ্যেই ১ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা হঠাৎ করেই এক মাসের ছুটির কথা জানিয়ে চিঠি দেন। পরের দিন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্্হাব মিঞাকে সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়।

৯৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে প্রধান বিচারপতি তাহার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে ক্ষেত্রমতো অন্য কোনো ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত কিংবা প্রধান বিচারপতি স্বীয় কার্যভার পুনরায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম, তিনি অনুরূপ কার্যভার পালন করিবেন।’

ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগের পর আইনমন্ত্রী জানান, প্রধান বিচারপতি ক্যানসারে আক্রান্ত। এ কারণ উল্লেখ করে তিনি ছুটির আবেদন জানিয়েছেন। পরে ১৩ অক্টোবর রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধান বিচারপতি। দেশ ছাড়ার আগে প্রধান বিচারপতি তার বাসভবনের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি অসুস্থ নই। বিচার বিভাগের স্বার্থে আবার ফিরে আসব। ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে একটি মহল প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়েছেন।’ তিনি একটি লিখিত বিবৃতিও সাংবাদিকদের দিয়ে যান। পরের দিন ১৪ অক্টোবর সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ১১টি দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর তার কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এ কারণে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসতে চাননি আপিল বিভাগের বিচারপতিরা। এর পর ছুটি শেষ হওয়ার আগে বিচারপতি এসকে সিনহা অস্ট্রেলিয়া থেকে সিঙ্গাপুরে আসেন। সেখানে উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধানে দফায় দফায় সমঝোতা বৈঠক করেন। বৈঠকে বিচারপতি এসকে সিনহা ১১ অভিযোগের বিষয়টি নিষ্পত্তি করে সম্মানজনকভাবে দেশে ফিরে বিচারকার্য পরিচালনার জন্য এজলাসে বসতে চেয়েছিলেন। অন্যথায় পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত কোনো সমঝোতা না হওয়ায় ১০ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে বসেই পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে বিচারপতি সিনহা কানাডায় চলে যান। পরের দিন পদত্যাগপত্রটি রাষ্ট্রপতির দপ্তরে পৌঁছে। ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি ওই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্্হাব মিঞা দায়িত্ব পালন করছেন। তবে প্রধান বিচারপতির পদটি এখনো শূন্য রয়েছে। সূত্র: আমাদের সময়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!