প্রধান সড়কে বাস চলবে, অহেতুক ব্যক্তিগত গাড়ি নয়
অনলাইন ডেক্স । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচন উপলক্ষে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচনে কমিশন। তবে প্রধান প্রধান সড়কে বাস চলাচলের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। পরীক্ষার্থীরা প্রবেশপত্র দেখিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করতে পারলেও অহেতুক ঘোরাফেরার জন্য এই যান ব্যবহার করা যাবে না।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ভোটের আগের দিন বিকেলে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে অনেক ইমার্জেন্সি বিষয় আছে। এয়ারপোর্টে একজন যাত্রী যাবেন, এজন্য কি বন্ধ থাকবে? অ্যাম্বুলেন্স যাবে, এক্সপোর্ট-ইমপোর্টের জিনিসগুলো যাবে—এ রকম জিনিসগুলো বিবেচনা করে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া আছে, যাতে এভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। ব্যাপকভাবে সব বন্ধ করে দেওয়া হয়নি।’ বাস চলতে পারবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মেইন রোডে চলবে।’
প্রচুর ব্যক্তিগত গাড়ি আছে, এগুলো চলাচলের ওপর আপনার নির্দেশনা কী—এই প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘না, ব্যক্তিগত গাড়ি নির্ধারিত কোনো কাজ ছাড়া চলাচল করতে পারবে না। ঘোরাফেরা করার জন্য তো আর চলবে না। এটা নিয়ে বেশি আলোচনা করার দরকার নেই। এই ঢাকা শহরে তো অনেক ধরনের ইমার্জেন্সি বিষয় থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য যারা থাকবেন, তারা এগুলো বুঝবেন।’
এ সময় যান চলাচলের ক্ষেত্রে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে যানবাহন চলবে। আর জরুরি প্রয়োজনে যারা যান (প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল) ব্যবহার করবে, তারা আমাদের কাছ থেকে স্টিকার সংগ্রহ করবে। এ ছাড়াও পুলিশকে যদি কেউ তার প্রয়োজনের কথা বলে, তারাও কিন্তু তাদের অনুমতি দেবে। আর স্যার (সিইসি) যেটা বললেন, অহেতুক ঘোরাফেরার জন্য অকারণে তো যানবাহন চলতে দেওয়া যাবে না। অন্যথায় একটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে। পরীক্ষার্থীরা তাদের প্রবেশপত্র দেখিয়ে যান ব্যবহার করতে পারবে।’
সাধারণ ছুটির বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘ঢাকা শহর পুরোটাতেই ছুটি থাকবে। এটা আমরা বিজ্ঞপ্তি দিয়েও জানিয়েছি। স্কুল-কলেজ ও সরকারি অফিস-আদালত বন্ধ থাকবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।’
৩০ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনের পরে এই নির্বাচনেও অনেক দল অংশগ্রহণ করছে না। এটাকে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে তাঁরা অংশ নেয়নি। একটা কারণ হলো, মাত্র এক বছর মেয়াদে তাঁরা নির্বাচিত হবেন। এরপর আবার নির্বাচন হবে। সে কারণে ভোটার ও প্রার্থীদের আগ্রহ কম থাকতে পারে। আর সব দল অংশগ্রহণ করেনি, এতে আমাদের কিছু করার নেই। এটা তো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমরা তো সবাইকে আহ্বান করেছিলাম। যেহেতু তাঁরা আসেননি, আমাদের কিছু করার নেই।’
বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘আমাদের কোনো ব্যর্থতা নেই। আমাদের কোনো দুর্বলতা নেই। সঠিক নির্বাচন করতে যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছি। তারা রাজনৈতিক মাঠে না গেলে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে, এটা তো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এ নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করলে তো হবে না।’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতি অনাস্থা নয়। দলগুলো অংশগ্রহণ করলে আমরা খুশি হতাম। না করাটা আমাদের জন্য একটা অস্বস্তিকর অবস্থা।’
ভোটের প্রস্তুতি তুলে ধরে সিইসি আরও বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমসহ পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব পর্যবেক্ষক থাকবে। বিজিবি, পুলিশ ও র্যাবের টিম টহলে থাকবে। এ ছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। ইতিমধ্যে কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।’
সিইসি বলেন, ‘এজেন্টরা যাতে নির্বাচন শেষ হওয়ার পরে ভোট গণনা না হওয়া পর্যন্ত এবং প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছ থেকে ফলাফল ঘোষণার একটি শিট না নেওয়া পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রে অবস্থান করেন। আমরা চাই একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, আইনানুগ নির্বাচন। ভোটগ্রহণের সঙ্গে সম্পৃক্ত যেকোনো কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো ধরনের অনিয়মের অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে সেই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হবে। তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ডিএনসিসির মেয়র পদে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাধারণ ওয়ার্ডে ১১৬ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৪৫জন প্রার্থী রয়েছেন। আর ডিএসসিসির সাধারণ ওয়ার্ডে ১২৫ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৪৫ প্রার্থী আছেন।
ঢাকা উত্তরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর নয় নম্বর সাধারণ আসনে একজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।