ফুচকা ঝালমুড়িতে টাইফয়েডের জীবাণু
অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
দেশের বাজারে রয়েছে বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও খোলা সয়াবিন তেল। সব ব্র্যান্ডের বোতলের গায়েই লাগানো চমকপ্রদ নানা বিজ্ঞাপন। তাতে লেখা এই ভিটামিন, সেই ভিটামিন। কোনো কোনো ব্র্যান্ড আবার দাবি করে যে, তাদের তেল শিশুর মানসিক বিকাশের পাশাপাশি হাড়কে করে আরও শক্তিশালী।
অথচ ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির (এনএফএসএল) পরীক্ষায় এমন তথ্য উঠে এসেছে, যা শুনে আঁতকে উঠবেন রীতিমতো। পরীক্ষাগারটির দাবি, বাজারে থাকা সয়াবিন তেলের মধ্যে ব্র্যান্ডের একটি এবং খোলা দুটি ছাড়া বাকি সবই মানহীন। গতকাল দুপুরে মহাখালী জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সভাকক্ষে এক সেমিনারে নুডলস, সয়াবিন তেল, সেমাই, ফুচকা, ঝালমুড়ি ও সবজিসহ মোট ৪৬৫টি নমুনা পরীক্ষার ফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। তাতে ফুচকা-ঝালমুড়িতে ডায়রিয়া ও টাইফয়ডের জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে ল্যাবরেটরির প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এনএফএসএলের প্রধান অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী।
২০১২ সালের অক্টোবর থেকে জসস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরিতে খাদ্যদ্রব্য ও পানীয়র বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ও মাইক্রোবায়োলজিক্যাল দূষণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। এরই অংশ হিসেবে ২০১৬-১৭ সালে নুডলস, ঘি, সরিষা তেল, সয়াবিন তেল, সেমাই, লাচ্ছা সেমাই, ফুলকপি, বেগুন, শিম, কাঁচামরিচ, টমেটো, ভেলপুরি, ফুচকা, ঝালমুড়ি ও আচারসহ মোট ৪৬৫টি নমুনার গুণগত মান, টেস্টিংসল্ট, পেস্টিসাইড, রং এবং আফলা টক্সিনের উপস্থিতি ও মাইক্রোবায়োলজিক্যাল পরীক্ষা করা হয়। সবজির নমুনা ঢাকাসহ পাঁচটি জেলা শহর (কুমিল্লা, রাজশাহী, ফরিদপুর, পাবনা ও যশোর) থেকে সংগ্রহ করা হয়। আর সংগৃহীত নমুনাগুলো আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী পরীক্ষা করা হয়। এতে সয়াবিন তেলের ব্র্যান্ডের নয়টি ও খোলা ১৮টি; সরিষার তেলের ব্র্যান্ডের ১৩টি এবং খোলা ১৮টি; ঘিয়ের ব্র্যান্ডের ১৮টি এবং খোলা ১৮টি নমুনা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার পর দেখা গেছে, একটি ব্র্যান্ড এবং খোলা দুটি সয়াবিন তেলের নমুনা স্ট্যান্ডার্ডের মাত্রানুযায়ী। বাকি সব তেল ও ঘিয়ের নমুনা স্ট্যান্ডার্ডের বাইরে। তবে কোন সয়াবিন তেল স্ট্যান্ডার্ড, তা জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী।
তিনি আরও জানান, ঢাকা শহরের ৪৬টি স্কুলের সামনে থেকে ঝালমুড়ির ৪৬টি, ফুচকার ৩০টি, ভেলপুরির ১৬টি এবং আচারের ৪২টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর পর সেগুলো পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ ভেলপুরি, ফুচকা ও ঝালমুড়ির নমুনায় ই-কোলাই (ডায়রিয়ার) জীবাণু রয়েছে। আর ভেলপুরির পাঁচটি ও ঝালমুড়ির তিনটি নমুনায় মিলেছে সালমোনিলা (টাইফয়েড) জীবাণু। এ ছাড়া ফুচকায় শতভাগ (৩০টি), ভেলপুরিতে ৭৫ ভাগ (১২টি), ঝালমুড়ির ১৩টি নমুনায় এবং আচারের চারটিতে ইস্ট মোল্ড (ছত্রাক) পাওয়া যায়- যা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি।
ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী বলেন, ঢাকার বিভিন্ন বাজার ও সুপারশপ থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নুডলসের ৫৫টি নমুনার গুণগত মান পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা গেছে, ১৪টিতে নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে প্রোটিন ও লেডের মাত্রা কম। অনেকগুলোয় আবার মাত্রাটা একেবারেই শূন্য। এ ছাড়া নুডলসে বিভিন্ন মাত্রায় টেস্টিংসল্টের উপস্থিতি পাওয়া যায়। তবে কোনোটায় সিসার ক্ষতিকর মাত্রা পাওয়া যায়নি।
সবজির বিষয়ে তিনি জানান, ১৫০টি নমুনা পরীক্ষার পর ৪৫টিতে বিভিন্ন রকমের পেস্টিসাইডের (কীটনাশক) উপস্থিতি পাওয়া যায়। পানিতে পাঁচ মিনিট ধরে প্রথমবার ও দ্বিতীয়বার ধৌত করার পর কীটনাশকের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা গেছে, প্রথমবার ধৌত করার পর ২৯টিতে এবং দ্বিতীয়বারের পর এর ১০টিতে কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
সেমিনারে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বেসিক সায়েন্স অ্যান্ড প্যারা ক্লিনিক্যাল সায়েন্স অনুষদের ডিন ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন ও বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এসকে রায় বক্তব্য দেন।