বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আজ
অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু জন্মগ্রহণ করেন। দিবসটি জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হবে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে মহান এ নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন এবং জাতীয় শিশু দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদ্যাপিত হবে।
বঙ্গবন্ধুর বাবার নাম শেখ লুৎফর রহমান এবং মায়ের নাম সায়েরা খাতুন। তাঁদের চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয়। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ ও জনগণের প্রতি অসাধারণ মমত্ববোধের কারণেই পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু। কিশোর বয়সেই তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। গোপালগঞ্জের মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে শেখ মুজিব প্রথমবারের মতো গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেন। এরপর থেকে শুরু হয় তাঁর আজীবন সংগ্রামী জীবনের অভিযাত্রা।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশক শাসন অবসানের পর বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ধারাবাহিক নানা আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিব বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণটি ইউনেসকো বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। সে রাতেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় বঙ্গবন্ধুকে কারাবন্দি করে রাখা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসেন। এরপর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে মনোনিবেশ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে সেনাবাহিনীর একদল পথভ্রষ্ট, বিশ্বাসঘাতক সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। সেদিন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বিদেশে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধুর বড় কন্যা শেখ হাসিনা বর্তমানে দেশের প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি: সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের প্রতিনিধিরা টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করবেন। তাঁরা বাদ জোহর দোয়া ও মিলাদ মাহফিলেও অংশগ্রহণ করবেন। এ ছাড়া সেখানে শিশু সমাবেশ, গ্রন্থমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
আগামীকাল ১৮ মার্চ বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বিকেল ৩টা পর্যন্ত টুঙ্গিপাড়ায় অবস্থান করে বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সে শেখ রাসেল স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্তকরণ, ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’ শিশুগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, সেলাই মেশিন বিতরণ, ‘উঠব জেগে, ছুটব বেগে’ শীর্ষক ভিডিও প্রদর্শন, শিশু সমাবেশ, আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং ‘বইমেলা উদ্বোধন ও শিশুদের আঁকা আমার ভাবনায় ৭ই মার্চ’ শীর্ষক চিত্রপ্রদর্শনী ঘুরে দেখবেন। রাষ্ট্রীয় এই কর্মসূচিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত মহাসড়কে শতাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবিসংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে গোপালগঞ্জকে সাজানো হয়েছে। জেলাজুড়ে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ সাইদুর রহমান খান বলেন, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী ও সরকারের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তায় টুঙ্গিপাড়ায় তিন স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।