বাংলাদেশীদের অংশগ্রহণে রাশিয়ায় সমাপ্ত হলো আন্তর্জাতিক মৎস্য শিকার প্রতিযোগিতা
স্বপন কুমার কুন্ডু, বিশেষ প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
রুশ রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি কর্পোরেশন- রসাটম কর্তৃক প্রথমবারের মতো আয়োজিত আন্তর্জাতিক মৎস্য শিকার প্রতিযোগিতা গত ৫ আগস্ট সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে। অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পার্শবর্তী ইকোসিস্টেমের নিরাপত্তা প্রদর্শন ছিল এই টুর্নামেন্টর মূল লক্ষ্য।
রসাটমের বাংলাদেশী গণমাধ্যম জানায়, দু’দিনব্যাপী টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ, ভারত, হাঙ্গেরী, মিশর, তুরস্ক এবং রাশিয়ার ২০ জন সৌখিন মৎস্য শিকারী অংশগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য এই সকল দেশসমূহে রসাটম বিভিন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতায় প্রতিনিধিত্ব করেন দেশের স্বনামধন্য সৌখিন মৎস্য শিকার সংগঠন ‘অ্যাংলিং ইন বাংলাদেশ’ এর ওমর বিন জুলফিকার হায়দার এবং মো. নাদিম হাসান শোভন।
রাশিয়ার বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ স্থাপনা- লেনিনগ্রাদ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিকটবর্তী ফিনল্যান্ড উপসাগরে ‘প্রো অ্যাংলার্স লিগ’ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন মিশরের মৎস্য শিকারী দল। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করে যথাক্রমে রাশিয়া এবং হাঙ্গেরী। ‘সবচেয়ে বড় মৎস্য শিকার’ ক্যাটাগরিতেও বিশেষ পুরস্কার লাভ করে হাঙ্গেরী। অন্যদিকে ‘বিজয়ের জন্য প্রতিজ্ঞ’ শীর্ষক বিশেষ পুরস্কারটি প্রদান করা হয় তুরস্ককে।
রসাটম ও রুশ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলাদেশী প্রতিযোগী ওমর হায়দার বলেন, “এই টুর্নামেন্ট থেকে আমি শিখতে পেরেছি কিভাবে স্থানীয় অপারেটর, মৎস্য শিকারী ক্লাবগুলো তাদের দেশে বিদেশী মৎস্য শিকারীদের আকৃষ্ট করতে যৌথভাবে কাজ করছে। আমি এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে অনুরূপ প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে চাই।”
“পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পার্শ্ববর্তী জলাধারে মৎস্য শিকার আমার জন্য একটি অনন্য অভিজ্ঞতা। এখানে মাছগুলো স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে উঠছে এবং এগুলো খাবার জন্য নিরাপদও বটে।”
অপর প্রতিযোগী নাদিম হাসান তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, “পারমাণবিক বিদ্যুকেন্দ্রের নিকটবর্তী জলাধারে মাছ শিকার একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা। আমরা যে মাছগুলো ধরেছি সেগুলো ছিল পুরো সুস্থ্য এবং তেজক্রিয়তা মুক্ত। এ থেকে নিশ্চিত হয়েছি যে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পার্শ্ববর্তী ইকোসিস্টেম কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় না।”
টুর্নামেন্টে আগত পরিবেশবিদরা মাছ ওজন করার সময় এগুলোর রেডিয়েশন মাত্রা রেকর্ড করেন। লেনিনগ্রাদ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবেশ বিভাগের প্রধান আলেক্সান্দ্রা ত্কাচেভা জানান, “ বহু বছর ধরে লেনিনগ্রাদ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির চারদিকে ৩০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধজুড়ে এলাকায় পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে যে এটি পার্শ্ববর্তী পরিবেশে কোন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে না।”
প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে প্রতিযোগীরা লেনিনগ্রাদ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন করেন এবং এর কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হন। এখানে উল্লেখ্য যে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৩+ প্রজন্মের ভিভিইআর ১২০০ রিয়্যাক্টর ভিত্তিক একটি ইউনিট রয়েছে, যেটি বাংলাদেশে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি রেফারেন্স হিসেবে বিবেচিত।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারিগরি পরামর্শক ও মূল যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে রসাটম। প্রকল্পে ভিভিইআর ১২০০ রিয়্যাক্টর ভিত্তিক দুটি ইউনিট স্থাপিত হবে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান রসাটম বর্তমানে ১২টি দেশে ৩৬টি এবং খোদ রাশিয়ায় ৬টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।