বাংলা ভাই গ্রেফতার: পুলিশ কর্মকর্তা পদচ্যুত ও অতপর
বাংলা ভাই গ্রেফতার: পুলিশ কর্মকর্তা পদচ্যুত ও অতপর
সভাপতিমন্তলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ
“ধরণী দ্বিধা হও” কথা কয়টি সেই বাল্যকাল থেকে মুনে আসছি। যে কারণেই হোক আজ বহুদিন যাবতই এ শব্দগুলি তেমন আর উচ্চারিত হতে দেখা যায় না। যদিও যে কারণে বা যেমন পরিস্থিতে সেকালে এই কথাগুলি উচ্চারিত হতে শুনেছি ইতোমধ্যে তা বেড়েছে সম্ভবত: সহশ্রগুণ।
এমনই একটি সংশয় সৃষ্টিকারী খবরের প্রতি অকষ্মাৎ আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হলো। দেশে নির্বাচনের বাজারে রমরমা। তাই নির্বাচন ছাড়া অন্য কোন খবর আপাতত: পাঠক-পাঠিকাদেরকে আর তেমনভাবে খুব একটা আকৃষ্ট করতে সক্ষম হচ্ছে না। তাইতো দেখা যায় ১২ পাতা, ১৬ পাতা, ২০ পাতায় প্রকাশিত সংবাদপত্র গুলির শতকরা প্রায় ৮০ ভাগেই নির্বাচন সংক্রান্ত নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ খবরে ঠাসা। খেলাধূলা, অর্থনীতি-ব্যবসা বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক, নারী, শিক্ষা সংক্রান্ত খবরগুলি বাদে যদিও সেগুলিরও কলেবর অনেকটাই ছাঁটাই হয়েছে।
যাহোক, এবারে আসা যাক আলোচ্য খবরে। গত ৩ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি বহুল প্রচারিত দৈনিকের (বাংলাদেশ প্রতিদিন) শেষ পৃষ্ঠায় “বাংলা ভাইদের গ্রেফতারে পুরস্কুত নয় চাকুরীচ্যুত” শিরোনামে মীর্জা মেহেদী তমাল পরিবেশিত খবরে মনটা বিপদে ছেয়ে গেল। বিষাদগ্রস্থও না-মনটা রীতিমত ক্ষুব্ধই হয়ে উঠলো কিন্তু করবোটা কি ? মোল্লার দৌড় তো মসজিদ পর্য্যন্তই। আর আমার দৌড় তো ঘরে বসে লেখালেখিতেই সীমাবদ্ধ। তার বেশী মুরদ না থাকায় গভীর বিরক্তিসহকারে হলেও বিষয়টি নিয়ে না লিখে পারলাম না।
না ! আমাদের দেশে এমন বিষ্ময়কর এবং দৃশ্যত: ঘটনা এটাই প্রথম ঘটেছে তা নয়। অতীতেও ঘটেছে, বর্তমানেও ঘটে চলেছে এবং হয়তো বা ভবিষ্যতের ঘটতে থাকবে। মনে এমন হতাশাও দানা বাঁধতে শুরু করেছে। প্রকাশিত ঐ খবরটির সংশ্লিষ্ট অংশ ছিল পাঠক পাঠিকাদের স্মরণে আনবার জন্য উল্লেখ করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি।
বলা হয়েছে, “মানুষের নিরাপত্তা ও জানমাল রক্ষার শপথ নিয়ে পুলিশের চাকুরীতে ঢুকেছিলেন শফিকুল ইসলাম সাজু। তিনি তাঁর শপথ রেখেছিলেন। কিন্তু তাঁর এই শপথ রক্ষার মূল্য দিতে পারেনি রাষ্ট্র (যদিও সেটা ছিল রাষ্ট্রের সাংবিধানিক কর্তব্য)। বাংলাদেশে জে.এম.বি জঙ্গীবাহিনীর উত্থানের তথ্য সর্ব প্রথম তিনিই প্রকাশ্যে এনেছিলেন। জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন ভয়ংকর জঙ্গীদের সাথে। গ্রেফতার করেছিলেন বাংলা ভাই এর কুখ্যাত শীর্ষ জঙ্গী নেতাদের।
মামলার বাদীও ছিলেন তিনি। সাহসী এই পুলিশ কর্মকর্তা পুরস্কৃত হওয়ার পরিবর্তে চাকুরীই হারালেন। চাকুরী ফিরে পেতে পুলিশ সদর দফতর-মন্ত্রণালয়ের নাম দামী কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। পুলিশের কর্মকর্তারা চাকুরী ফেরতের আশ্বাসও দিয়েছেন ফলে নতুন করে বুক বেঁধেছেন শফিকুল ইসলাম। পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা চাকুরী ফেরতের আশ্বাস দিয়ে তার কাছ থেকে জঙ্গী বিষয়ক তথ্যাদি নিয়ে নিজেরা শুধু বাহবাই কুড়িয়েছেন কিন্তু শফিকুলের কথা কেউই মনে রাখেন নি।
দিন যায়, মাস যায়, বছরও গড়িয়ে যায় কিন্তু চাকুরী আর তিনি ফেরত পান না এই পুলিশ কর্মকর্তা। এক সময়ের সাহসী পুলিশ কর্মকর্তা এখন শতবর্ষী মা, দুই সন্তান, স্ত্রী নিয়ে ঢাকায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। চাকুর হারানো এই পুলিশ কর্মকর্তা প্রশ্ন, ঢাকায় জীবনবাজি রেখে জঙ্গীদের গ্রেফতার করাই ছিল কি আমার অপরাধ ?
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরস্কৃত করার রেওয়াজ রয়েছে। কিন্তু সেই পুরস্কারের পরিবর্তে খোদ চাকুরীটাই যদি কেড়ে নেওয়া হয়, তবে যে কোন ভাল কাজ করার আগে পুলিশ বারাবার চিন্তা করবে। ফলে পুলিশের কাছ থেকে ভাল কাজ পাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়বে। উল্লেখ্য, দশ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার ঘটনায় দুই নায়ক পুলিশের দুই সার্জেন্টকে পরবর্তীতে চরম হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল। তাদের চাকুরী হারানো সহ মামলার আসামী পর্য্যন্ত করা হয়েছিল যদিও পরবর্তীতে চাকুরী ফেরত পান সেই দুই পুলিশ সাজেন্ট ২০০৩ সালের ৩ আগষ্ট।
গভীর রাতে পুলিশের কাছে খবর আসে জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল থানা এলাকার মহেশপুর গ্রামের মন্তেজার রহমানের বাড়ীর প্রাচীর টপকিয়ে প্রবেশ করে বাড়ীর অভিযানে অংশ নেয়। গভীর রাতে বাড়ীর প্রাচীর টপকিয়ে বাড়ীর দরজা খুলে দেন এস. আই শফিকুল। পুলিশের দল বাড়ীর ভিতরেই তাঁকে দেখে হতবাক। বাড়ীর মধ্যে ২৫০/৩০০ মানুষ।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় পার্বত্য জেলা চজাড়া বাংলাদেশের সব জেলা থেকে তারা এসেছে। উদ্দেশ্য ধর্ম প্রচার। কিন্তু পুলিশ জানতে পারে ২/৩ দিন ধরে তারা সেখানে অবস্থান করছে। জঙ্গী প্রশিক্ষণ চলছিল কয়দিন ধরেই।
পুলিশের সংখ্যাস্বলতার কারণে তাদেরকে আটক করা কঠিন হয়ে পড়ায় ওসি ফোনে এসপির সঙ্গে কথা বলেন। এসপি তাদের কৌশলে আটকে রাখতে বলেন এবং অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হবে বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় পুলিশ আসে না। জঙ্গীরাও বুঝতে পারে পুলিশের কৌশল। তারা সেখান থেকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে বচসা হয়। এক পর্য্যায়ে তারা পুলিশের উপর হামলা চালায়। ওসির মাথা ফেটে যায়। ছিনিয়ে নেয় তাঁর ওয়াকিটকি।
এস. আই শফিকুল সঙ্গের ফোর্সদের নিয়ে জঙ্গিদের গ্রেফতারে তৎপর হয়ে ওঠেন। শুরু হয় বন্দুকযুদ্ধ। আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়ে সমগ্র এলাকার মানুষ। স্বল্পসংখ্যক পুলিশ জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করতে থাকে। দুই কনষ্টেবল আহত হলে জঙ্গীরা তাদের শটগান ছিনিয়ে নেয়।
ইতিমধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ চলে আসে। পাকড়াও হয় শীর্ষ জঙ্গীদের ৩৩ জন বাকীরা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে নিষিদ্ধরাই বাংলাদেশের সূর্য জঙ্গীর নামের তালিকা, চাঁদা আদায়ের রশিদ বই ২০০/২৫০ ট্রাভেল ব্যাগ জব্দ করা হয়। ক্ষেতলাল থানায় হাজির হয়ে এস.আই শফিকুল বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৬(৮) ২০০৩।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আতাউর রহমান সানি (জামালপুর), সিদ্দকুর রহমান বাংলা ভাই(বগুড়া), মামুনুর রশিদ (গাইবান্ধা) ও আব্দুল আওয়াল নাটোরসহ ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে পলাতক আসামী সালাউদ্দিন সালেহীন ও ছিলেন। প্রথম চারজন আসামীর ফাঁসির রায় হয়। ফলে ঘটনাটি দেশ-বিদেশে রীতিমত আলোড়ন সৃষ্টি করলেও কয়েকদিনের মধ্যেই প্রেক্ষাপট বদলে যায়। প্রথমে অস্ত্র হারানোর অপরাধে দুই কনষ্টেবলের চাকুরি যায়। পরে আবারও গ্রেফতার হন। প্রথম চারজনের ফাঁসির রায় কায্যকার হয়।
যাহোক এই চাঞ্চল্যকর সংবাদ এবং বাংলাদেশে জঙ্গী কার্য্যকলাপের খবর ব্যাপক ভাবে প্রকাশ্যে চলে আসে যার প্রাথমিক কৃতিত্ব এস.আই শফিকুল ইসলামের। কিন্তু আজ তার অসহায়তার খবর পূর্বেই লিখেছি।
মন্ত্রীরা রেডিও কাঁপানো কণ্ঠে আমাদের নেতা জঙ্গীদমনে সরকার “জিরো টলারেন্স” নীতি গ্রহণ করেছে বলে ফলাও করে প্রচার করেন কিন্তু তার সাথে এই করুণ ঘটনাটির মিল কোথায় ? যে পুলিশ কর্মকর্তারা যে এমন কাজে জীবন বাজী রেখে জঙ্গী উচ্ছেদ সহায়তা করে থাকে তাদের পরিণতি এমন হলে জঙ্গী উচ্ছেদ আর কেউ কি উৎসাহিত হবেন। বস্তুত:ই বিষয়টা কি ধীরে ধীরে ঝিমিয়ে পড়ে না।
চট্রগ্রামে মিতু হত্যার কাহিনী দীর্ঘদিনের নয়। তার স্বামী অত্যন্ত খ্যাতনামা তরুণ পুলিশ সুপার। এমন দু’জনের সন্তানকে ভোরে স্কুলে যাবার সময় মায়ের সাথে রওনা হয়ে গাড়ীর অপেক্ষায় পথের পার্শ্বে অপেক্ষায় থাকাকালে অকষ্মাৎ অজ্ঞাতনামা হত্যাকারীদের আঘাতে শিশুটির মার জীবন গেলে দেশে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি হয়। কারণ পুলিশ সুপার ছিলেন জঙ্গীর গোপন আস্তানা খুঁজে বের করা ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে সাজাদানে অসাধারণ যোগ্যতা সম্পন্ন। কিছুকাল পর হৈচৈ একটু থিতু হয়ে এলে তাঁর শ্বশুরের মুখ দিয়ে এস.পির চরিত্র হনন করা হলো এবং কৌশলে তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ হলো যা বিধি সম্মত ছিল না। তদুপরি ঐ পদত্যাগপত্র একদিকে যেমন অবৈধ ছিল তেমনই আবার তা তিনি প্রত্যাহার ও করেছিলেন কিন্তু তবুও তা পরবর্তীতে গৃহীত হলো যদিও তিনি ইতিপূবে জঙ্গীবিরোধী অনেকগুলি অভিযানে অসীম সফলতা ও দু:সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে বিভাগীয় ভাবে অনেক প্রশংসাপত্র তিনি পেয়েছেন এই দফায় কোন অদৃশ্য হাতের ইন্ধনে তিনি চাকুরি থেকেও বঞ্চিত হন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এবং তার মাতৃহীন কন্যাসহ পৃথক বাসায় বসবাসরত বলে শুনেছি। মিতু হত্যার মামলা কোথায় নির্বাসনে গেছে কেউ জানে না।
যাহোক এই এস.পি এবং প্রথমোক্ত এ.এসপির চাকুরি প্রত্যার্পণ করে সমর্য্যাদায় তাঁদেরকে অধিষ্ঠিত করা এবং নেপথ্যে যে নায়কেরা তাবৎ ষড়যন্ত্র বদ্ধ করে পুলিশের এই কলঙ্ক সাধন যারা করেছেন তাদের চাকুরীচ্যুতি রোধ আইনানুগত শাস্তিবিধান কামনা করছি। দলীয় গোষ্ঠীগত বা গ্রুপগত কোন প্রকার আনুগত্য বা উর্ধতন কোন কর্মকর্তার সাথে জঙ্গী সাদৃশ্য থেকে থাকেল তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ আর যেন বিশামুক্ত না হয়।
বিষয়টির গুরুত্ব নতুন করে তুলে ধরার জন্য মার্কিন কংগ্রেসে সম্প্রতি উত্থাপিত এক প্রস্তাবে উল্লেখ করছি। ঐ একই পত্রিকায় ১ ডিসেম্বর তারিখে “জামায়াত শিবির হেফাজত স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি” শীর্ষক তিন কলাম ব্যাপী প্রথম পৃষ্টায় গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত খবরটির প্রতি আমার পাঠকদের প্রতি দৃষ্টি আগর্ষন করছি। প্রকাশিত ঐ খবরটিতে বলা হয়:
“বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও অসাম্প্রদায়িকতা গণতন্ত্রের জন্য কট্টরপন্থী জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্র শিবির ও হেফাজতে ইসলামের মতো সংগঠনকে হুমকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে মার্কিণ কংগ্রেসে করা এক প্রস্তাবে। খবরে বলা হয়, তাতে এই কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলিকে থামাতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি এই ব্যক্তিগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অর্থায়ন এবং অন্যান্যবাবে তাঁদের সঙ্গে অংশীদারীত্ব বন্ধ করতেও আহবান জানা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার প্রতি। মার্কিণ কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধিসভায় গত বুধবার রাতে প্রস্তাবটির এনেছেন যুক্তরাষ্টের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি জেমস ই ব্যাংকস।
প্রস্তাবটি উত্থাপনের পর তা পরীক্ষা নিরিক্ষার জন্য প্রনিধিসভার পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটিতে পাঠনো হয়েছে। বাংলাদেশের ধর্মের নামে পরিচালিত উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলির কারণে গণতন্ত্র ও গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি সৃষ্ট হুমকির কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ওই খসড়া প্রস্তাবে চারটি দফা রয়েছে।
প্রথম দফায়ই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ এবং অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চেতনায় ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্রের প্রতি জামায়াতে ইসলামী ছাত্র শিবির ও হেফাজতে ইসলামের মত কট্টরবাদী গোষ্ঠীগুলির হুমকির কথা উল্লেখ করে সেগুলিকে থামাতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানান হয়েছে।
তিন. শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্বাচবন কমিশনকে গুরুত্ব দিতে সরকারের প্রতি আহবান জানান হয়েছে। চতুর্থ দফায় জামায়াত, শিবির ও হেফাজত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন এবং তাদের সঙ্গে অংশীদারী বন্ধ রাখার আহবান জানান হয়েছে।
১৯৭১ সালে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সৃষ্টি এবং ১৬ কোটি মানুষের এই দেশ মুসলামান, হিন্দু, বৌদ্ধা ও খৃষ্টান ছাড়াও ধর্মে বিশ্বাসী নয় এমন ব্যক্তিদের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে ১৯৭১ সালে প্রায় ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ। এক কোটিও বেশী লোকেরও বাস্তুচ্যুতি এবং দুই লাখ নারীর লাঙ্ছিত হওয়ার বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের কথা তুলে ধরে এতে বলা হয়েছে, প্রাণহানি, সম্ভ্রমহানি ও বাস্তুচ্যুতির অনেক ঘটনাই ঘটেছিল জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে ও ইসলামের নামধারী সহযোগিদের দ্বারা।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিয় জাতীয় নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে প্রস্তাবে বলা হয়ে্েযছ গত জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্য্যন্ত বিএনপি জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবির ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা চালিয়েছিল। তাদের হামলায় ৫৪৫টি দোকানে হামলা বা লুঠ হয়েছে, এ ছাড়া ভাঙচুর হয়ে্েযছ ১৬৯টি মন্দিরে। প্রস্তাবে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হামলার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী জড়িত। এ ছাড়া বৌদ্ধ খৃষ্টান ও আহমদিয়া মুসলিমদের ধর্মীয় উগ্রবাদীরা হামলা চালিয়েছে। হেফাজতে ইসলাম, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে পুরাপুরি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্দোলন চালাচ্ছে বলে উল্লেখ করে প্রস্তাবে বলা হয়, দাবী না মানা হলে সশস্ত্র জেহাদের পরিকল্পনা নিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশকে হেফাজতে ইসলাম, জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলি বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা, অসম্প্রদায়িক গণতন্ত্রের জন্য আসন্ন ও চলমান হুমকি বলে মার্কিন নিম্নকক্ষের প্রদত্ত প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়। ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা বারবার বাংলাদেশে এই ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলির হামলার ফলে ঝুকিতে আছে। বাংলাদেশের জঙ্গীগোষ্ঠী আশংকাজনক কর্মকান্ড নিয়ে ন্যাটোর কম্যান্ডার সাবেক অধিনায়ক জেনারেল জন ডব্লিউ নিকুলসসের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের বিষয়টিও প্রস্তাবে তুলে ধরা হয়। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর অব্যাহত হামলা, জামায়াত শিবির সহ কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলির কারণে ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হওয়াতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও ষ্ট্যাটেজিক স্বার্থ ও ক্ষুন্ন হচ্চে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
- প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। কাগজ২৪-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য কাগজ২৪ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।