সেলিনা জাহান প্রিয়ার অনু গল্প :- বাস্তবতা

 

অনু গল্প :- বাস্তবতা

——————  সেলিনা জাহান প্রিয়া

 

আমার এক প্রিয় বান্ধবী। নাম লিপি। বিবাহিত। মা হতে যাচ্ছে। স্বামী জুয়েল চট্রগ্রামে চাকুরী করে বিধায় লিপি এই অবস্থায় ঢাকার উত্তরা বাবার বাসায় থাকেন। একদিন বিকালে হঠাৎ লিপির বাবা ষ্টোক করে। হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেদিন লিপিকে খুব পরিশ্রম করতে হয়েছে, কারণ লিপির কোন ভাই নেই। সে আবার সাড়ে আট মাসের গর্ভবতী। লিপি সন্ধায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। ভর্তি হতে হয় মাতৃসদনে। ডাক্তার জানায়, জরুরী ভিত্তিতে সীজার না করলে মা ও সন্তান দুজনের জন্যই বিপদ হতে পারে। জুয়েল কে সংবাদ দেয়া হয়। পরদিন ভোরে জুয়েল ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। পথিমধ্যে সংবাদ পায় লিপির বাবা মারা গেছেন। দুপুরের পরে লিপির সীজার হবে। জুয়েল বিপদে দিশেহারা হয়ে যায়, এখন সে কি করবে। কোথায় যাবে? ভাইহীন লিপির বাবার লাশ দেখতে হাসপাতালে? নাকি নিজের স্ত্রী, সন্তানের কাছে। জুয়েল গাড়ী থেকে নেমে চলে যায় লাশ সামলাতে। লিপির বাবার লাশ দেখে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে জুয়েল। কারণ মাত্র ১ মাস আগেই সে তার বাবাকে হারিয়েছে। নিজেকে সে অভিবাবকহীন, অসহায় ভাবছে। এক সময় তার বুকে ব্যথা উঠে এবং ঐ হাসপাতালেই ভর্তি করানো হয়। লিপির বাবার লাশ বের করতে সময় লাগে অনেক বেশী, কারণ ভর্তির ১ ঘন্টা পর নার্স ট্রলিতে করে সামনে নিয়ে আসে জুয়েলের লাশ। সীজার শেষে বিকাল নাগাদ লিপি কিছুটা সুস্থ বোধ করে। দেখে পাশে তার সন্তান নেই। জানতে পারে, অপরিপক্ক শিশু জন্ম হওয়ায় ইনকিবিউটরে রাখা হয়েছে। সন্ধায় পর নার্স এসে জানায় “ ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করেছিল,,,,,, কিন্তু ,,,,, দুঃখিত,,,,”। একই দিনে লিপি তার তিনটি আশ্রয় হারায়। বাবা, স্বামী, সন্তান। আমাদের সমাজে নারীর বেঁচে থাকার এই তিনটিই স্থান। লিপি বেঁচে আছে। থাকবে। বাহির থেকে কেউ কি বুঝবে এই বেঁচে থাকার ভিতরকার রূপটি কেমন। আমি জানিনা লিপি কেমন করে বেঁচে আছে। কেন, কিসের আশায় বেঁচে আছে। তবু তাকে বেঁচে থাকতে হবে কষ্টের স্মৃতি নিয়ে। প্রতি বছর একই দিনে লিপি তিনটি কবর জিয়ারত করে যে কবরে প্রতিটি বাসিন্দা তার এক একটা আত্মা। লিপি বেঁচে আছে ,,, এটাই হচ্ছে জীবন ও বাস্তবতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!