বিজয়ের মাসঃ বিজয়ের প্রতিটি ইঞ্চি ধরে রাখতে হবে

বিজয়ের মাসঃ বিজয়ের প্রতিটি ইঞ্চি ধরে রাখতে হবে
রণেশ মৈত্র (একুশে পদক প্রাপ্ত সাংবাদিক)
সভাপতি মন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ

রক্তের বন্যায় স্নাত হয়ে অর্জিত হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বহুল প্রচারিত উক্তি “আমাদের স্বাধীনতা কারও দান নয়”। রক্তমুল্যে কেনা। আজ থেকে ৫০ বছর আগে।

এ বিজয় সুগভীর তাৎপর্য্যে মন্ডিত। বহুমাত্রিক তাৎপর্য্যে দীপ্যমান। তখন দেশের জনসংখ্যা সাড়ে সাত কোটি। পূরা জনগোষ্ঠীকে ঐ রক্তস্রোত ঐক্যবদ্ধ করেছিলো। সে ঐক্য ঘুমন্ত ছিলো না ছিলো জাগরুক-সকল সচেতনা নিয়ে।
১৯৪৭ সাল। তখন জনসংখ্যা ছিল সাড়ে চার কোটি। তাঁরাও ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন। এনেছিলেন ভিন্নধর্মী রাষ্ট্র পাকিস্তান। পাকিস্তানেরও একটা স্বকীয়তা ছিল-সেটাকে ঘোষণা করা হয়েছিল ‘মুসলমানের দেশ’। মুসলমান ঈমানী জাত। তাই পাকিস্তান হলে কায়েম হবে ইনসাফ। থাকবে না কোন বৈষম্য, কোন অত্যাচার, নির্য্যাতন। এ জাতীয় নানা প্রলোভনে বিভ্রান্ত হয়ে পূর্ব বাংলার মুসলিম সমাজ একযোগে ১৯৪৬ এ ভোটদেন পাকিস্তানের অনুকূলে। ফলে জন্ম হয় পাকিস্তানের।
কিন্তু মোহভঙ্গ হতে বেশী সময় লাগে নি। মাস কয়েকের মধ্যেই জানান দেওয়া হলো, ঊর্দু এবং একমাত্র ঊর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম বাস করে পূর্ব বাংলায়। তাঁদেরই ভোটে পাকিস্তান এলেও তাঁদের মুখের ভাষা বাংলাকে তারা ইসলাম বিরোধী, মুসলিম বিরোধী, পাকিস্তান বিরোধী আখ্যায় আখ্যায়িত করতে থাকে।
পাকিস্তান গণপরিষদ সদস্য ধীরেন দত্ত সংসদে দাঁড়িয়ে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দানের দাবী জানালে তাঁকে এবং বাংলা ভাষাকে কুৎষিত ভাষা প্রয়োগে অপমাণিত ও তাঁর প্রতি সীমাহীন অমর্য্যাদা প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবাদে ধীরেন দত্ত চলে আসেন ঢাকায়। ছাত্র সমাজ ইস্যুটি আঁকড়ে ধরে তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলেন ১৯৪৮ সালের মার্চে। অনেকগুলি জেলায় সে আন্দোলন ব্যাপকতা লাভ করে। এই আন্দোলন যাঁরা গড়ে তুললেন, যাঁরা এই আন্দোলনে হাজারে হাজারে অংশগ্রহণ করলেন-তাঁদেরও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক থেকে মুসলিম। পাকিস্তানের ব্যাপারে মোহমুক্তির শুরু এখান থেকেই।

এ আন্দোলন গভীরভাবে বিচলিত করে তোলে মুসলিম লীগ ও শাসক গোষ্ঠীকে। ১৪৪ ধারা ও শত শত আন্দোলন কারীকে বিনাবিচারে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারারুদ্ধ করে।

আন্দোলন আরও একটি ইস্যু পেয়ে যায়। রাজবন্দীদের বিনাশর্তে মুক্তি, মত প্রকাশের, সংগঠন করার স্বাধীনতা এবং সেই সাথে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রভৃতি। ধীরে ধীরে তাই এই বহুমাত্রিক দাবী সম্বলিত আন্দোলন গতিবেগ অর্জন করতে থাকে।

১৯৫২ তে এসে ঘটে তার প্রচন্ড বিষ্ফোরণ। লঠিগুলি, টিয়ার গ্যাস, ১৪৪ ধারা অগ্রাহ্য করে ঢাকায় প্রায় গোটা শহরটাই নেমে এসেছিল মিছিলে-বিশেষত: তরুণ-তরুণীরা। ঝরে পড়লো কয়েকটি প্রাণ-সবই মুসলিম সন্তানের। যে রক্ত ঢাকার কালো পিচঢালা পথে স্রোত বইয়ে দিলো-তা অবশ্য ছিল হিন্দু-মুসলাম-বৌদ্ধ-খৃষ্টানদের মিলিত রক্তের। আন্দোলন স্তিমিত হওয়ার বদলে গড়ে উঠলো সকল ধর্মবিশ্বাসীদের মধ্যে ঐক্যের রাখীবন্ধন। যে ঐক্যের ফিতাটি ছিড়ে গিয়েছিল ১৯৪৭ এর ১৪ আগষ্ট ‘মুসলমানের দেশ’ হিসেবে পাকিস্তান সৃষ্টির মাধ্যমে। পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিত্ত্ব প্রচন্ড মার খেলো।
এর পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় নি লড়াকু বাঙালী জাতিকে। গড়ে তোলা হলো শহীদ মিনার। শত্রুরা তা দফায় দফায় ভাঙলো বটে।

অপরপক্ষে বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশী মুসলিম হওয়াতে এবং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রতি বছর অজস্র মসজিদ মাদ্রাসা নির্মাণ হওয়াতে এবং অজস্র ওয়াজ মাহফিল দেশজুড়ে শীতকালে তিন চার মাস ধরে আয়োজনের সুযোগে বহুক্ষেত্রেই ইসলামের নামে জঙ্গীবাদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্রসারের অনুকূল পরিবেশ রচিত হয়।
আমরা যদি আমাদের দেশের ইতিহাসের কিছুটা পেছন ফিরে দেখি অবশ্যই আমাদের চোখে পড়বে অতীতে ধর্মীয় তিক্ততা সৃষ্টি করে অবিভক্ত ভারতের আমল থেকে সাম্প্রদায়িক উগ্রতার উত্থান এবং তার পরিণতিতে নানাস্থানে দফায় দফায় রক্তাক্ত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়ে লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ হিন্দু-মুসলমানকে প্রাণ দিতে হয়েছে। স্থানে স্থানে সে প্রক্রিয়া বিভাগোত্তর উপমহাদেশের নানা দেশে আজও চলমান।

ঐ উগ্র সাম্প্রদায়িকতার হাত ধরেই রক্তের সাগরে উপমহাদেশকে ভাসিয়ে দিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল “মুসলিম রাষ্ট্র” পাকিস্তানের। সেই পাকিস্তানের বৃহত্তর সংখ্যক মুসলিমের আবাসস্থল পূর্ব বাংলার মুসলিম সমাজের শতভাগের মাতৃভাষা বাংলা যখন রাষ্ট্রীয় মর্য্যাদা লাভে অস্বীকৃত হলো, যখন ঊর্দু পাকিস্তানের অপরাপর প্রদেশ পাঞ্জাব, সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ এর কোনটারই মানুষের মাতৃভাষা ঊর্দু না হওয়া সত্বেও সকলের অজানা ভাষা ঊর্দুকেই সারা পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হলো-তখন বুঝতে কারও অসুবিধে হয় নি-মুসলিম লীগ নেতৃত্বাধীন শাসকগোষ্ঠীর পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য উন্নত পাকিস্তান গড়ে তোলার বলা হলেও তারা প্রকৃত প্রস্তাবে পাকিস্তানকে অশিক্ষিত মানুষের দেশ হিসেবেই দেখতে চেয়েছিল।

পাকিস্তানের সর্বাধিক সচেতন জাতি বাঙালি। তাই সেখান থেকেই প্রতিবাদ ধ্বনিত হয় সর্বাগ্রে। অত:পর সে আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল প্রায় সবখানে। পাঞ্জাবে পাঞ্জাবী ভাষার দাবীতে, সিন্ধে সিন্ধু ভাষার দাবীতে, বেলুচিস্তানে বেলুচ এবং উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে পুশতু ভাষার দাবীতে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের ঐ প্রদেশগুলির মানুষ তাদের নানাবিধ দুর্বলতার কারণে সে দাবী বেশী দূর অগ্রসর করে নিতে পারেন নি। কিন্তু পূর্ববাংলার তরুণ-তরুণী অসাধারণ শক্তি নিয়ে মাতৃভাষার মর্য্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবীতে অটল থেকে লড়াই চালিয়ে যেতে যেতে সমগ্র জাতিকে ঐ প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হন। অত:পর ১৯৪৮ এ যে দাবীর প্রথম উচ্চারণ ধ্বনিত হয় শুধু ঢাকা শহরে, ক্রমে ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে প্রদেশের সকল শহর ও গ্রামে সমগ্র জাতিকে সম্পৃক্ত করে। সক্রিয় আন্দোলনের মাধ্যমে সে দাবী রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায় ১৯৫৬ সালে।

এভাবেই সাম্প্রদায়িকতা পূর্ববাংলায় বড় আঘাত পেল। এর পর বন্দীমুক্তি, সভা-সমিতি-সমাবেশ করার অধিকার, বিনাবিচারে আটকাদেশ বাতিলের আন্দোলনও তীব্র গতিতে এগিয়ে যেতে থাকে এবং ঐ ক্ষেত্রগুলিতেও বহুলাংশে বিজয় অর্জিত হয়।
কিন্তু তাতেও থেমে থাকে নি বাংলাদেশ। সাম্প্রদায়িকতার চিহ্ন মুছে দিতে ভাষা আন্দোলন যে বিশাল ব্যাপ্তি অর্জন করেছিল তা প্রতিফলিত হলো সমাজের অপরাপর সকল অঙ্গনে। বাংলা ভাষায় নতুন নতুন বই প্রকাশিত হতে থাকে, নতুন নতুন লেখক, সাহিত্যিক কবি তৈরী হতে থাকে, নাটক, গান-নাচ, অংকন শিল্প, আল্পনা, মঙ্গল শোভাযাত্রা সহকারে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের নবযাত্রা শুরু হয় ঐ আন্দোলনের অভিঘাতে নবতর উদ্যমে।

বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল গণতান্ত্রিক যুবলীগ, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন প্রভৃতি তেমনই ১৯৪৮ এ প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগ ঐ অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র লীগ-আওয়ামী মুসলিম লীগ ও দলের নাম থেকে “মুসলিম” শব্দটি তুলে দিয়ে পরিণত হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগে। ‘আজাদ’ ‘ইত্তেফাক’ পয়গাম মিল্লাতের পর আর কোন বাংলা সংবাদপত্র আরবী যা ঊর্দু নামে প্রকাশিত হয় নি-হয়েছে এবং হচ্ছে একান্ত বাংলা নামে। এছাড়া, সারা দেশজুড়ে দোকানপাট সহ নানা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডগুলিও আরবী-ইংরেজী বর্জন করে বাংলায় লিখিত হওয়া শুরু করে। বাংলা ভাষার অসাম্প্রদায়িকতার জোয়ার সুরু হয় পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশে। উল্লেখ্য, জামায়াতে ইসলামীও তাদের সংবাদপত্রগুলির নাম বাংলায় রাখতে বাধ্য হয়।

এভাবে রিন্তর লড়াই, সংগ্রাম, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বারবার সাম্প্রদায়িকতা, ক’পম-কতা, সংকীর্ণতা, পশ্চাৎপদতাকে পরাজিত করে বাঙালী অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্য বিরোধী গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও উন্নত সাংস্কৃতিক চেতনার জগতে প্রবেশ করে। ভাষা আন্দোলন অর্জন করে নানামুখী বিজয়।

কিন্তু পরাজিত প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি বাঙালির ঐ বিজয়কে মেনে নিতে পারে নি। তারা ঐ বিজয়কে স্তব্ধ করে দিতে সামরিক শক্তির প্রয়োগ করে ১৯৫৮ সালে। একটানা ১১টি বছর তারা বজায় রাখে সামরিক শাসন। নস্যাৎ করে দেয় বহু সংখ্যক বিজয়। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সংস্কৃতি চেতনাকে হরণ করতে শাসনতন্ত্র বাতিল, পাকিস্তানকে ইসলামিক রিপাবলিক ঘোষণা প্রভৃতির মাধ্যমে তারা বিজয়ী বাঙালি জাতিকে পুনরায় আন্দোলনে ঠেলে দেয়। তরুণ সমাজ ১৯৬২ তে সেই আন্দোলনের উন্মেষ ঘটায় গণতন্ত্র ও বন্দীমুক্তির দাবীতে, ১৯৬৩ তে হয় সর্বজনীন ভোটাধিকার আন্দোলন, ১৯৬৬ তে বঙ্গবনধুর ঐতিহাসিক ছয় দফা এবং অত:পর ঐক্যবদ্ধ ছাত্র সমাজের ১১ দফা দেশে এক বিশাল গণঅভ্যূত্থান ঘটায়। এই পটভূমিতে ১৯৭০ এর নির্বাচনে চূড়ান্তভাবে বাঙালি তার স্বাধীনতার সপক্ষে রায় ঘোষণা করে। ছয় দফা, এগার দফার সপক্ষে জনমতের প্রতিফলন ঘটে।

১৯৭০ এর বিজয়ের পর আবার নতুন নতুন ষড়যন্ত্রের বিস্তার ঘটানো হয়। বিজয়ী দলের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নানা প্রতারণার ফাঁদ পেতে চেষ্টা করা হয় বঙ্গবন্ধুকে ছয় দফা-এগার দফা পরিত্যাগ করাতে এবং তা করলেই কেবল পাকিস্তানের সরকার গঠনের সুযোগ পাবেন তিনি। বাঙালির আত্মচেতনার প্রতীক বঙ্গবন্ধু ঐ প্রলোভনের ফাঁদে পা না দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক জনসভায় লাখো মানুষের স্বত:ষ্ফুর্ত করতালির মধ্যে এবং ২৬ মার্চ গ্রেফতারের পূর্ব মুহুর্তে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।

সামরিক শাসকেরা গণহত্যা শুরু করে তাদের প্রতিক্রিয়াশীল আদর্শ চালু রাখার লক্ষ্যে। শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ এবং অত:পর নয় মাসব্যাপী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ-সূচিত হয় ঐতিহাসিক বিজয় ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ এ শহীদ তাজউদ্দিনের নেতৃত্বে।
১০ জানুয়ারি বিজয়ীর বেশে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পদার্পণ করেন-গ্রহণ করেন নবীন রাষ্ট্রটির পরিচালনার দায়িত্বভার।
পাকিস্তান তার ২৩ বছরের অস্তিত্বকালে দেশটির জন্য কোন সংবিধান প্রণয়ন করতে পারে নি কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ গণপরিষদ মাত্র নয় মাসের মধ্যেই এক ঐতিহাসিক সংবিদান অনুমোদন করে জাতিকে উপহার দেন। সংবিধানটি পরিচিত হয় ‘বাহাত্তরের সংবিধান’ হিসেবে। এর চারটি মৌলনীতি গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ নির্ধারিত হয়।

১৫ আগষ্টের মর্মান্তিক ঘটনাবলীর পর এক সামরিক শাসক সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী এনে ধর্মনিরপেক্ষতা তুলে দিলেন-সংযোজন করলেন “বিসমিল্লাহির রাহমানুর রাহিম”, বৈধতা দিলেন জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মাশ্রয়ী দলগুলিকে।
অত:পর এলেন অপর সামরিক শাসক। তিনি আবার সংযোজন করলেন “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম”। এই দুই সরকারই অনির্বাচিত অবৈধ। তাদের ঐ সংশোধনীগুলিও অবৈধ। উভয়েই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে রাষ্টদ্রোহিতা করেছেন, বলেছেন বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট।

পঞ্চম সংশোধনী বাঙালির ঐ অর্জনকে, বঙ্গবন্ধু প্রণীত চার রাষ্ট্রীয় মৌলনীতিকে আঘাত করেছে-দেশটিতে পাকিস্তানী আদর্শ পুনরুজ্জীবনের অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। তাই জামায়াত আজ বৈধ, হেফাজত বৈধ, রাষ্ট্রধর্মও বৈধ।

এভাবে অর্জিত বিজয় সমূহ ছিনতাই প্রক্রিয়া চলছে। তাই আজ ভাস্কর্য্য বিরোধী হুমকী, নারী ও শিক্ষানীতি বাতিলের দাবী।
তাই আজকের স্পষ্ট কথা ১৯৫২ ও ১৯৭১-৭২ এ অর্জিত বিজয়সমূহের সাথে লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্ত জড়িয়ে আছে। তাই বিজয়গুলির প্রতিটি ইঞ্চি ধরে রাখাই হোক বিজয়ের মাসের শপথ।


  • প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। কাগজ২৪-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য কাগজ২৪ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!