বিষ প্রয়োগে মাছ নিধনের অভিযোগে আটক আসামীর পক্ষে মিছিল করার মন্দ দৃষ্টান্ত

মো. সেলিম হোসেন, গোপালপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

বিষ প্রয়োগে পুকুরের মাছ নিধনের সুস্পষ্ট অভিযোগে থানায় দায়ের হওয়া মামলার আসামীকে বিনা শর্তে ছেড়ে দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে এক মন্দ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে চাতুটিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। শনিবার সকাল এগারোটায় ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষকের উসকানিতে এ কাজ হয় বলে এলাকাবাসির অভিযোগ।

জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে গোপালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক জয়নাল আবেদীনের চাতুটিয়া গ্রামের পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা মূল্যের মাছ নিধন করা হয়। খবর পেয়ে গোপালপুর থানার এসআই তাহের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি স্থানীয়ভাবে লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

এরপর গোপালপুর উপজেলা মৎস অফিসের কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা মৃত ও পঁচে যাওয়া মাছ এবং পুকুরের পানি পরীক্ষানিরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হন যে বিষ প্রয়োগে মাছ নিধন করা হয়েছে।

এমতাবস্থায় পুকুরের মালিক অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগে চাতুটিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের কারনিক শামসুল আলমসহ অজ্ঞাতনামা পাঁচজনকে আসামী করে গত শুক্রবার রাতেই গোপালপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

থানা পুলিশ গভীর রাতে প্রধান আসামী শামসুল আলমকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেন।  শনিবার তাকে আদালতে চালান দিলে বিজ্ঞ বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেলহাজতে পাঠান।

ওসি হাসান আল মামুন জানান, সুস্পষ্ট অভিযোগ এবং সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হওয়ায় মামলা গ্রহন এবং আসামী গ্রেফতার ও চালান দেয়া হয়। এদিকে শামসুল আলমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং তাকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানোর প্রতিবাদে চাতুটিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাদেমুল ইসলাম বাবুল এবং সহকারি প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামানের উসকানিতে  শনিবার ক্লাস বর্জন করে স্কুল মাঠে ছাত্রছাত্রীরা প্রথমে মানববন্ধন এবং পরে বিক্ষোভ মিছিল করে। তারা স্কুল থেকে চাতুটিয়া মোড় হয়ে চাতুটিয়া মাদ্রাসা পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে শামসুল আলমের মুক্তির দাবিতে নানা ধরনের উসকানিমূলক শ্লোগান দেয়।

খবর পেয়ে গোপালপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হলে ছাত্রছাত্রীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে স্কুলে অবস্থান নেন। পরে স্কুলের গভর্নিং বডির সভাপতি এবং জেলা পরিষদের সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের তালুকদার বিকাল চারটায় স্কুলে হাজির হন। তিনি ছাত্রছাত্রীদের উসকানি দিয়ে রাস্তায় নামানোর নিন্দা জানান।

এলাকাবাসিরা জানান, ওই স্কুলের সহকারি শিক্ষক মনিরুজ্জামানের পিতা মাওলানা আব্দুর রহিম ছিলেন একজন মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী মানুষ। নগদাশিমলা পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক থাকাবস্থায় ১৯৭০ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামের রাজনীতির সাথে তিনি যুক্ত হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর পক্ষালম্বন করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ২৮ জানুয়ারী মৌলভী আব্দুর রহিম দালাল আইনে আটক হন। ১৯৭১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পাকহানাদার বাহিনীর দ্বারা সাবেক এমপি হাতেম আলী তালুকদারের বাড়িতে অগ্ন্সিংযোগ ও লুটের অভিযোগে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়। গোপালপুর থানার মামলা নং ০৩, তারিখ ৩০.০১.১৯৭২।

পরবর্তীতে ১৯৭২ সালের নয় সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি পান। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুবাদে মৌলভী আব্দুর রহিম রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যে যুদ্ধাপরাধ মামলা থেকে খালাস পান। মৌলভী আব্দুর রহিমের পুত্ররা সবাই ছাত্রদল এবং বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। বড় পুত্র মনিরুজ্জামান ছিলেন কাহেতা গার্লস হাইস্কুলের সহকারি শিক্ষক।

বছর খানেক আগে দুর্নীতিপরায়ন প্রধান শিক্ষক খাদেমুল ইসলাম বাবুল এবং স্কুলের গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি ফিরোজ আকন্দকে বারো লক্ষ টাকা উৎকোচ দিয়ে চাতুটিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক হন। এভাবে ঘুষের বিনিময়ে যুদ্ধাপরাধীর পুত্রকে জায়েজ করেন প্রধান শিক্ষক খাদেমুল ইসলাম। আর সে টাকায় তিনি হাউলভাঙ্গা গ্রামে পাচতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে সুরম্য অট্রালিকা তৈরি করেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ওয়ার ক্রাইমস ইনকোয়ারী কমিটি একাত্তর যৌথভাবে তদন্ত করলে যুদ্ধাপরাধীর ঘটনা এবং ঘুষের ঘটনার সত্যতা মিলবে। কারণ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন এমন বহু মানুষ এখনো চাতুটিয়া ও হাউলভাঙ্গা গ্রামে বেঁচে আছেন। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব কিছুর প্রমাণ মিলবে। উল্লেখ্য, মনিরুজ্জামানের আপন ভাতিজা হলেন গ্রেফতার হওয়া শামসুল আলম। অতএব শঠে শঠ।

গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলরুবা শারমীন এ ঘটনার প্রেক্ষিতে চাতুটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাদেমুল ইসলামকে শোকজ করেছেন এবং তিন দিনের মধ্যে এর জবাব দিতে বলেছেন।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!