বেড়ায় যমুনায় অবৈধ বালু উত্তোলনে ভাঙছে গ্রাম
আর কে আকাশ, পাবনা, বিশেষ প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
যমুনা নদীর অব্যাহত ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পাবনার বেড়া উপজেলার চর পেঁচাকোলা গ্রামের মানুষ। চর পেঁচাকোলা গ্রাম সংলগ্ন নদীর বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন প্রভাবশালীরা। এতে ভাঙনের ব্যাপকতা বেড়েছে।
চরপেঁচাকোলা গ্রামে কয়েকদিনের ভাঙনে দুই শতাধিক পরিবারের পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি, গাছপালা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়েছে নদী গর্ভে। স্থায়ী ব্যবস্থা না নেয়ায় দশ বছরে গ্রামের ৮০ ভাগই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
গ্রামটির একটি স্কুল, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি মাদ্রাসা ও একটি মসজিদ নিশ্চিহ্ন হয়েছে নদী গর্ভে। ভাঙনের মুখে রয়েছে একটি গোরস্থান, একটি স্কুল ও একটি মসজিদ।
ভাঙনে বিলীন হওয়া পরিবারগুলো সব হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছে নদীর বিভিন্ন চরে। শেষ সম্বল টুকু বাঁচতে কেউবা ঘরবাড়ি ভেঙে সরিয়ে নিচ্ছেন অন্য কোথাও। চলছে খোলা আকাশের নিচেই রান্না আর খাওয়ার কাজ।
চর পেঁচাকোলা গ্রামের বুলবুলি খাতুন বলেন, তিন দশক ধরে যমুনার পাড়ে বাস করছি। কখনো ভাবিনি এই যমুনাই সবকিছু কেড়ে নেবে।
গ্রামের বাসিন্দা মজিদ মোল্লা জানান, এক যুগে তিনি দুই দফা নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন। ২০ বিঘা জমি ও সাজানো ঘরবাড়ি ছিল তার। এখন কিছুই নেই, সবই যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। বেড়া উপজেলা সদরে শ্রমিকের কাজ করে কোনরকম চলছে তার পাঁচ সদস্যের সংসার।
তাদের মতো চর পেঁচাকোলা গ্রমের অনেক পরিবারই সর্বশান্ত হয়েছে যমুনার আগ্রাসী ভাঙনে।
হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউপির ৮নং ওয়ার্ড মেম্বর মিজানুর রহমান বলেন, ড্রেজার ও ভলগেটের সাহায্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে ভাঙন ঠেকানো যাবে না। ভাঙনরোধে বেড়া পাউবো বিভাগ যে পরিমাণ বালু ভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে ফেলছে তা কোন কাজে আসছে না।
হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণে ইউনিয়ন বোর্ডের রেজুলেশনসহ উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাবর লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। আর বালু উত্তোলন বন্ধেও প্রশাসনের হস্থক্ষেপ চাওয়া হয়েছে।
বেড়া পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী, ভাঙনরোধ প্রকল্পের সাইড ইঞ্জিনিয়র ওসমান গনি জানান, চরপেঁচাকোলায় ভাঙনরোধে দশ হাজার জিও ব্যাগ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। জিও ব্যাগে বালু ভরে নদীতে ডাম্পিং করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর আরো বরাদ্দ চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে ব্যাপক ভিত্তিতে ভাঙনরোধ কাজ করা হবে।
বেড়া উপজেলার ইউএনও আসিফ আনাম সিদ্দিকী জানান, অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের প্রতিরোধে কাজ করছে প্রশাসন। প্রশাসনের পাশাপাশি এলাকাবাসীকেও এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
চর পেঁচাকোলা গ্রামের পুরোটাই মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার আগেই ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট বিভাগ স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।