বোরো ধানের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমন ধান রোপনে ব্যস্ত চাষিরা
নাজমুস সাকিব মুন, পঞ্চগড় প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
বোরো ধানের ন্যায্য মূল্যে কৃষক না পাওয়ায়, সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পঞ্চগড়ে ভরা মৌসুমে আমন ধানের চারা রোপনে ব্যাস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। চলছে ধুমধাম করে আমন ধানের চারা রোপনের কাজ। নিঁচু জমিতে প্রাকৃতিক পানি থাকলেও ডাঙ্গা (উঁচু জমি) জমিতে পানি না থাকায় এলাকার কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। প্রয়োজন মতো বৃষ্টি না হওয়ায় স্যালো মেশিন ও বৈদ্যুতিক পানির সেচপাম্প দিয়ে সেচের মাধ্যমে চলছে আমন ধানের চারা রোপনের কাজ। আবার অনেকে উঁচু জমিগুলোতে এখনও ধানের চারা লাগাতে শুরু করেনি। ধানের দাম ও অধিক খরচ করে ধান উৎপানে কৃষকদের মাঝে দেখা দিয়েছে নানান জল্পনা-কল্পনা।
গ্রামে দিনমজুরেরও অভাব। সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের আমবাড়ি গ্রামের কার্তিক চন্দ্র জানান, এলাকায় এ বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় তারা নিচু জমিগুলোতে আমনের চারা লাগাচ্ছেন। উঁচু জমিতে পানি না থাকায় কিছু কিছু কৃষক সেচের মাধ্যমে চারা রোপন করছেন। তবে গ্রামে দিন মজুরের অভাব। অনেকেই অন্য এলাকা থেকে উচ্চদামে দিন মজুর নিয়ে কাজ করাচ্ছেন। অধিকাংশ কৃষক অধিক খরচ ও ধানের দাম বিবেচনা করে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছেন। তিনি আরও বলেন, যদি প্রাকৃতিক আবহাওয়া অনুকুলে থাকে তাহলে তারা এ এলাকার জমিতে ধান উৎপাদন করতে সক্ষম হবেন। বোরো ধানের দাম কম পাওয়ায় অনেকেই দুঃচিন্তায় রয়েছেন। এবারে ধানের দাম কম হওয়ার কারণে তাদের অনেক ক্ষতি পোহাতে হয়েছে। এভাবে ধানের দাম কমতে থাকলে ভবিষ্যতে তাদের আবাদি জমি বিক্রয় করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। এবার যদি আমন ধানের ভাল ফলন হয় এবং ধানের দাম আশানুরুপ থাকে তাহলে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে তিনি আশা করেন।
দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের কৃষক দবিরুল ইসলাম বলেন, এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় মেশিনের সেচ দিয়ে আমন ধানের চারা লাগাচ্ছেন অনেকে। সেচ ও দিনমজুর সংকটের কারণে আমন ধানের খরচ বেশি হবে বলে তিনি জানান। এবার বোরো ধানের দাম কম থাকায় যে ঘাটতি হয়েছে তার প্রভাব আমনেও পরছে, আমরা কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পরেছি। বৃষ্টিপাত হলে খরচ একটু কম হবে। ফলন ভাল হলে ও ন্যায্য দাম পেলে বোরোর দামের ঘাটতি অনেকাংশে পুষিয়ে যাবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হানিফ জানান, জেলায় এবার ১লক্ষ ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নিধার্রন করা হয়েছে। আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৬ লক্ষ ৩৭ হাজার ৩৩০ মে.টন। জেলায় তিন জাতের ধান চাষ হয়। হাইব্রিড, উফসী ও স্থানীয়। হাইব্রিডের মধ্যে ধানী গোল্ড, হিরা-২, এসিআই-২ ও সাথী। উফসী ধান ব্রি-৩৪, ৪৯, ৫১, ৫২, বিনা-৭, স্বর্ণা ও রনঞ্জিত এবং স্থানীয় ধানে জাত বাদশা ভোগ, কাঠারী, কালোজিরা, নেনিয়া প্রভৃতি জাতের ধান উৎপাদন হয়। তবে স্থানীয় ধানের আবাদ প্রায় বিলুপ্তির পথে। গতবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৫ লক্ষ ৭৪ হাজার মে.টন এবং অর্জন হয়েছিলো ৭ লক্ষ ২ হাজার ৪৯৫ মে.টন। আমন চাষের জন্য সার ও কীটনাশক চাহিদা মতো মজুত রয়েছে। নিচু জমিগুলিতে পানি রয়েছে। উঁচু জমিগুলির জন্য ১১২১টি সেচপাম্প দিয়ে সেচ দেওয়া হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে এ বছর আমনের ফলনও ভাল হবে।