‘ব্লু হোয়েল’ গেইম খেলে আত্মহত্যা করেনি: মুখ খুলেছেন কিশোরীর পিসি
অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া একটি মিথ্যে রটনার জের ধরে গত পাঁচদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তোলপাড় চলছে, সেই সাথে রয়েছে আতঙ্ক। আর তা হলো, ব্লু হোয়েল গেইম খেলে এক কিশোরীর আত্মহত্যা। তবে বিষয়টি সম্পুর্ণ মিথ্যা বলে প্রমাণ করেন কিশোরীর পিসি।
গতকাল রবিবার (৮ অক্টোবর) দুপুরের দিকে নিহত কিশোরীর পিসি তার নিজ ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত করেন যে, স্বর্ণার মৃত্যুর পিছনে ব্লু হোয়েল দায়ী নয়।
স্বর্ণার পিসী কেয়া চৌধুরী জুঁই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লোক প্রশাসন বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি তার ফেসবুক প্রোফাইলে স্বর্ণার আত্মহত্যার পেছনে ব্লু হোয়েলের খবরটি ভুয়া প্রমাণ করে এই পোস্ট করেছেন।
তার পোস্ট থেকে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, স্বর্ণার আত্মহত্যা কোনো গেইমের কারণে হয়নি। তিনি বলেছেন, স্বর্ণার শরীরে কোনো প্রকার কাটা-ছেঁড়া বা কোনো প্রকার দাগ ছিলো না, এমনকি তার মোবাইলেও এ ধরণের কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান।
তবে ঠিক কি কারণে এই আত্মহত্যা এই মৃত্যু সে ব্যাপারে তিনি কিংবা কিশোরীর পরিবার কেউ সঠিক বলতে পারছেন না। সব শেষে তিনি সবার কাছে এই অনুরোধ করেছেন যেনো এ ঘটনা নিয়ে আর কোনো গুজব রটানো না হয়।
উল্লেখ্য, গত বুধবার রাতে রাজধানী ঢাকার সেন্ট্রাল রোডের এক কিশোরী অপূর্ব বর্ধন স্বর্ণা আত্যহত্যা করে ফ্যানের সাথে ফাঁসি নিয়ে। গত বৃহস্পতিবার সকালে ওই কিশোরীর লাশ উদ্ধার করা হয় তার পড়ার কক্ষ থেকে। তুখোড় মেধাবী এই কিশোরী স্কুলের ফার্স্ট গার্ল হিসেবেই পরিচিত ছিল সে।
ওয়াইডব্লিউসিএ হাইয়ার সেকেন্ডারি গালর্স স্কুলে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সম্মিলিত মেধা তালিকায় ছিল প্রথম। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় ফার্মগেটের হলিক্রস স্কুলে। বর্তমানে পড়ছিল অষ্টম শ্রেণিতে। নিহতের পরিবার তাদের মেয়ের মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘ব্লু হোয়েল’ গেইমস বলে ধারণা করেন।
তেরো বছরের এই কিশোরীর আত্নহত্যার পেছনের কারণ জানা না গেলেও এতটুকু নিশ্চিত যে সে কোনো ব্লু হোয়েল গেইমের স্বীকার না। তবে আসলে কি লুকিয়ে আছে এই আত্নহত্যার পেছনে তা হয়তো খুব শীঘ্রই আমাদের সামনে চলে আসবে।
কিশোরীর পিসি কেয়া চৌধুরীর ফেসবুকের ২টি পোস্ট:
১.
ফেসবুকে একটা নিউজ খুব ভাইরাল হয়েছে গত তিনদিন ধরে।
চমকদার শিরোনাম আর তার সাথে লাল টিপ পরা একটা ফুটফুটে মেয়ের ছবি, যার নাম অপূর্বা বর্দ্ধন স্বর্ণা। বলা হচ্ছে মেয়েটি ব্লু হোয়েল গেইমের ভিক্টিম; তারই জের ধরে সে নাকি গত বৃহস্পতিবার কোজাগরী লক্ষ্মীপূর্ণিমার রাতে (৫ অক্টোবর) ঝুলে পড়েছে তার পড়ার ঘরের সিলিং ফ্যান থেকে। একটি নিখুঁত সুইসাইড।
লোকজন তাই এখন তার ফেইসবুক প্রোফাইল খুঁজে বের করে সেখানে যা ইচ্ছে তাই লিখছে। বাদ যাচ্ছে না ঠাট্টা-তামাশা, ইয়ার্কি।
ওই ফুটফুটে ১৪ বছর বয়েসী বাচ্চাটা আমার ভাতিজি। সবে কথা বলতে শিখল যখন, এই টুকু টুকু করে হেঁটে বেড়াত আমার পিছু পিছু। বলতো- “বাবুপিসী, আমাকে এমন করে ঝুঁটি করে দাও, ঠিক যেন মোরগঝুঁটি”। মেয়ের আমার খুব গোছানো কথা সেই ছোটবেলা থেকেই।
“বাবুপিসী, আমায় ছবি এঁকে দাও”
“বাবুপিসী, তুমি ‘দস্যি ক’জন’ পড়সো?”
“বাবুপিসী, গুজারিশ দেখসো তুমি?”
“আচ্ছা বাবুপিসী, পিরামিড কি?”
“বাবুপিসী, আমারে কিআর অনুষ্ঠানে নিয়ে যাইতে পারবা?”
“জানো বাবুপিসী, আমি বড় হইয়া তোমার মত শাড়ি পরব খালি।”
বাবুপিসী… বাবুপিসী… বাবুপিসী…
এইভাবে আমায় “বাবুপিসী” ডেকে আর কোন আবদার কেউ কখনো করবে না। বাচ্চাটাকে আমি নিজের হাতে শেষ স্নান করিয়ে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চিতায় উঠিয়ে দিয়ে এসেছি।
যাই হোক, এটা স্মৃতিচারণ নয়। আসল কথায় আসি-
আমি নিজের হাতে মেয়েটাকে শেষ স্নান করিয়েছি। ওর গায়ে সামান্য কোন কাঁটা-ছেঁড়ার দাগও ছিল না, ছিল না কোন ট্যাটু। ওর ফোন ঘেঁটেও পাই নি এমন কোন প্রমাণ যার জের ধরে বলা যায় ও ব্লু হোয়েল খেলতে শুরু করেছিল। যে কথাটা আজ ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে, সে কথাটা নিতান্তই অবান্তর। ভুলটা আসলে আমারই। আমিই সর্বপ্রথম এরকম অমূলক সন্দেহটা করি। কিন্তু সবকিছু দেখে-শুনে বুঝতে পারি যে, সন্দেহটা একদমই ভিত্তিহীন।
প্লিজ, আমার মেয়েটাকে এত নিচে নামাবেন না আপনারা। যা খুশি তাই বলার অধিকার আপনাদের কারো নেই। এই অবান্তর খবর এবং আতঙ্ক ছড়াবেন না প্লিজ। ওর আত্মহত্যার পেছনের কারণটা আর যাই হোক, ব্লু হোয়েল নয়।
আমার দুঃখিনী মেয়েটাকে অন্তত এবার একটু শান্তিতে থাকতে দিন।
২.
না, আমি সত্য লুকোচ্ছি না। সত্য লুকোতে চাইলে এই ধরণের কোন বিবৃতি না দিয়ে ব্লু হোয়েলের ওপরই সমস্ত দায়ভার চাপিয়ে দিয়ে বসে থাকতাম।
সত্য এই যে, ওর আত্মহত্যার কারণটা এখনো অজানা। ওর সুইসাইড নোটে ও লিখে গেছে- “No one is responsible for my death.” কাউকে কিচ্ছু বলে যায় নি, এমনকি আমায়ও নয়।
আর তার চেয়েও বড় সত্য এই যে, সেই ভীষণ মেধাবী, বইপোকা অভিমানী মেয়েটি আর নেই।
তাই ওর আত্মহত্যা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা, নোংরা কথা বলা প্লিজ বন্ধ করুন। আপনারা যারা আমার পোস্টে ‘Haha’ রি-অ্যাকশান দিয়ে যাচ্ছেন, আমার ইনবক্সে নোংরা ইঙ্গিতবহ বার্তা পাঠাচ্ছেন, ১৪ বছরের একটা মেয়ে বাচ্চা নয় বলে গলা ফাটাচ্ছেন; Please, do consult a psychiatrist. I insist.
আপনাদের ইস্যুর দরকার ছিল, Congo, ইস্যু আপনারা পেয়ে গেছেন। এবার দু’হাত তুলে আনন্দে গৌর-নিতাই হয়ে নাচুন।
আমার বড়দা নিউজে নিশ্চিত করে কিন্তু বলেন নি, স্বর্ণা ব্লু হোয়েলেরই ভিক্টিম। মেয়ের গত কয়েক মাসের আচরণ দেখে তার এইধরণের সন্দেহ হয়।
কিন্তু যেহেতু আমি তার শরীরে কোন কাটা-ছেঁড়ার দাগ পাই নি এবং কোথাও কোন ট্যাটুও ছিল না; তাই আমি এই ব্যাপারে নিশ্চিত যে, ওর মৃত্যুর পেছনে ব্লু হোয়েলের কোন হাত ছিল না। ওর ফোনেও কিচ্ছু পাওয়া যায় নি।
I just wanted to put a firm end to that hoax. Nothing else. Please, don’t humiliate her soul, please!
সাংবাদিকরা আমায় নক করবেন না প্লিজ। I don’t want any more news. I am already sick of it.
ঘুমোতে পারছি না। এভাবে চলতে থাকলে আমি সত্যি পাগল হয়ে যাব কিছুদিনের মধ্যে।
আমাদের ভেতরে কেমন ঝড় চলছে, সেটা বোঝা আপনাদের অসাধ্য, তা জানি। I don’t even expect!
মেয়েটাকে চিতায় তোলা হলো যখন, আমার বড়দার পরাজিত চোখ আমি দেখেছি, আপনারা দেখেন নি।
আপনারা জানেন না, আমি প্রতিদিন গায়ে চিমটি কেটে পরখ করি, whether I am stuck in a nightmare or not.
যে মেয়েটাকে হ্যারি পটার, সত্যজিৎ, সুকুমার, উইলবার স্মিথ, সাদাকো সাসাকি, কাউন্ট অব মন্টেক্রিস্টো, হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড, অঞ্জন, ডিলান জানিয়ে বড় করেছি; সেই মেয়েটার নিথর শরীর আগলে শ্মশানে বসে থাকতে আমার কেমন লাগছিল, আপনারা সে খবর রাখেন না।
This is the end. I won’t talk about it anymore. You guys don’t deserve to know my angel. ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আপনাদের ক্ষমা করেন, জ্ঞান দেন।