ভালবাসার দিন কি একটা হয়?
ভালবাসার দিন কি একটা হয়, ভাল কাজ করার দিন কি একটা হয়, এটা কি আমাদের কথা?
এটা কি আমার বাংলার মানুষ এর কথা?
নাকি দুর দেশের কেনা বুলি আমরা বলি?
ভিনদেশী নগরে থেকে আমার ভাবনার পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে যায়, যখন দেখি কেয়ার হোমে পিতা মাতা চিক্ষুর দিয়ে কাদেঁ I want to go home. I want to go home.
আর দামি পোশাক ধারি ছেলে মেয়েরা আসে নির্ধারিত দিনে হ্যাপি মাদার্স ডে আর ফাদার্স ডে তে। কারুকার্যময় কার্ড টেবিলে রেখে ফেরত চলে যায় আবার মায়ের থেকে পাওয়া সেই সাজানো ঘরে, কার্ডের গায়ে জল জল করা লেখাটা তাকিয়ে থাকে অসহায় হয়ে- I love you mum, I love you Dad.
আমাকে দেখে অসহায় ভঙ্গীতে সেই মানুষ গুলি আহাজারি করতে থাকে- please take me home. take me home.
আহা কি অদৃষ্ট!
কিন্তু আমার দেশের, আমার গায়ের, আমার মায়ের, আমার বাবার উঠোনকে, তাদের দৈনতাকে, তাদের উচ্ছাসকে, তাদের সফলতাকে তো আমরা প্রতিদিন ভালবাসবো। একদিন কেনো?
ভেবে দেখো, বৈশাখ মাসে চুলার আগুনের উত্তাপ মুখে মেখে যে মা আমার রান্দে কদুর তরকারি শৈল মাছ দিয়ে, রান্দে মুরগির ঝোল, রান্দে শরিষা ইলিস যত্নবতী হয়ে। মাঘ মাসের কনকনে ঠান্ডায় বসে বানায় চিতই পিঠা আর দুধ কুলি, তোমার আমার জন্যে।
তার কপালে ভালবাসার চুমু দেবো কি আমরা এক সাল পর মাদার্স ডে তে। নাকি ঝট করে জড়িয়ে ধরে তখনই বলবো, মা তুমি আমার লক্ষি মা, আমার সোনার টুকরা মা, তুমি আমার চান, তুমি আমার সুরুজ।
ভেবে দেখো যে বাবা তোমার জীবনের কালবৈশাখী ঝড়ে অসীম বৃক্ষ হয়ে দাঁড়ানো ছিলো, তোমার পরিক্ষায় তাহাজ্জুদে ক্রন্দনরত ছিলেন, বাজারে আসা নতুন মৌসুমের দামী শবরী কলা, জলপাই, আর আমলকি তোমার হাতে পৌছে দিতো।
আজো তোমার অসুখ হলে কবুতরের কচি মাংসের ঝুল খাওয়াবে বলে দৌরে ছুটে যায় এ পাড়ায় ওপাড়ায়, এখনো বাজারের ঝুলিতে আনা কদমার পোটলা তোমার হাতের মুঠিতে গুজে দেয় মিষ্টি হাসিতে, সেই বাবার ভালবাসাকে জানাতে কি এক সাল সময় নেবো? নাকি তখনি বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলবো, আব্বা আমি কি আজো আপনার সেই ছোট্টটি রয়েছি, বড় কি আজো হইনি? আব্বা আপনাকে ভালবাসি, আপনার দেহের প্রতিটি ঘামকে ভালবাসি, আপনি আমার সপ্ন, আপনি আমার ফসলের মাঠ, আমার মেঘনা নদী। আপনি আমার নতুন ধানের খুসবো।
বন্ধুরা যে বাবা মা জীবন দিয়ে দিলো আমাদের জন্যে প্রতিদিন এই ভালবাসার কথাটুকু কি বলতে পারিনা?
এক্টু রসনা বিলাসের আয়োজন কি করতে পারিনা কালে ভাদ্রে?
লার্ন এন্ড লিভ ফাউন্ডেশন দরিদ্র বাবা মায়েদের জন্য এক্টু ভোজের আয়োজন করি, নতুন কাপড় দেবার আয়োজন করি মাঝে মধ্যে। তাদের হাসির জন্যে, তাদেরকে ভালবাসার জন্যে।
-ফরিদা ইয়াসমিন জেসি।