ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৬ শিক্ষকের পদত্যাগ : ছাত্রলীগ সভাপতি সহ ৫শিক্ষার্থী বহিস্কার
টাঙ্গাইল, বিশেষ প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাভাবিপ্রবি) ছাত্রলীগের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগে একযোগে ৪৮ শিক্ষক বিভিন্ন প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগের ধারাবাহিকতায় আরো ৮ শিক্ষক পদত্যাগপত্র রেজিস্ট্রারের কাছে জমা দিয়েছেন। এতে মোট পদত্যাগপত্র জমাদানকারী শিক্ষকের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৬জন। এরমধ্যে দুইজন রিজেন্ট বোর্ড সদস্য, চারজন ডিন, চারজন প্রভোস্ট, ১৪ জন বিভাগীয় চেয়ারম্যান, সব হলের হাউজ টিউটর, সব সহকারী প্রক্টর।
এদিকে, সোমবার(৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের কয়েকজন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও এমপিকে নিয়ে মাভাবিপ্রবি’র চলমান এ সঙ্কট নিরসনে বসা বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সজিব তালুকদার সহ ৫জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো আলাউদ্দিন। তবে সাময়িক বহিস্কৃত ৫ শিক্ষার্থীর নাম জানা যায়নি।
শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় মাভাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের চার নেতার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে তাৎক্ষণিক বিচার না পাওয়ায় সোমবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ৪৮ জনের পদত্যাগপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. তৌহিদুল ইসলামের কাছে জমা দেয়া হয়। পরে আরো ৮জন শিক্ষক পদত্যাগপত্র জমা দেন।
শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত শনিবার (৬ অক্টোবর) দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ। এ পরীক্ষায় ঈশিতা বিশ্বাস নামে এক ছাত্রী উন্নীত হতে পারেননি। তার ফলাফল ৪-এর মধ্যে ১.৯৮। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী সর্বনিম্ন ২.২৫ পেলে উন্নীত হিসেবে গণ্য করা হবে। এদিকে পরীক্ষার ফলাফল একদিন আগে ঘোষণা করাকে অধ্যাদেশ বিরোধী উল্লেখ করে মাভাবিপ্রবি’র ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার তার সহযোগীদের নিয়ে রোববার(৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কোয়ান্টাম মেকানিক্স-১ পরীক্ষায় ওই ছাত্রীকে সিটে বসিয়ে দেয়। এ পরীক্ষায় অংশ নেয়ায় বিভাগের কোনও অনুমোদন না থাকায় শিক্ষকরা এ বিষয়ে বাধা দেন। এ সময় ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার ওই বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আনোয়ার হোসেন এবং শিক্ষক মহিউদ্দিন তাসনিনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং লাঞ্ছিত করেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পাহাড়া দিয়ে ওই ছাত্রীর সম্পূর্ণ পরীক্ষা শেষ করায়। পরীক্ষা শেষ করানোর পর সব শিক্ষার্থীকে ডেকে অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের জন্য মিছিল শুরু করে। এ সময় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা বন্ধ করা হয়।
মাভাবিপ্রবি’র ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার বলেন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মহিউদ্দিন তাসনিন দেড় বছর ধরে ওই ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছেন। কিন্তু মেয়েটি রাজি না হওয়ায় এর আগেও তাকে পরীক্ষায় ফেল করানো হয়েছে। সম্প্রতি দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষায় তাকে ফেল করালে ছাত্রীটি তার পরীক্ষার খাতা রি-এক্সাম করানোর দাবি জানায়। এ বিষয়ে রাজি হননি ওই শিক্ষক ও ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান।
তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল (রোববার) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মীমাংসার বিষয়ে আলোচনার সময় ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান জামায়াতপন্থী ড. আনোয়ার হোসেন বৃদ্ধাঙ্গুলি উঁচিয়ে বলতে থাকেন ‘কীসের ছাত্রলীগ, কীসের ছাত্রলীগ নেতা’। একথা শুনে উপস্থিত ছাত্রলীগ কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে হইচই শুরু করে। গালিগালাজের কোনও ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মুহাম্মদ শাহীন উদ্দিন বলেন, ফেল করা ছাত্রীকে মাভাবিপ্রবি’র ছাত্রলীগ সভাপতি ও তার বন্ধুরা মিলে জোর করে পরীক্ষায় বসায়। এতে বাধা দেয়ায় শিক্ষকদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে ওই ছাত্রীর সমর্থকরা অশালীন আচরণ করে। বিষয়টি শিক্ষক সমিতির জরুরি সভায় ভিসিকে জানানো হয়। পরে কোনও পদক্ষেপ না নেয়ায় ৫৬ জন শিক্ষক তাদের বিভিন্ন পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মহিউদ্দিন তাসনিনের বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, যদি দেড়-দুই বছর আগে কুপ্রস্তাব দেয়ার কোনও ঘটনা ঘটে থাকতো তবে অবশ্যই ওই ছাত্রী ওই সময়ই বিষয়টি লিখিত আকারে জানাত। পরীক্ষায় ফেল করার পর এটা প্রকাশ করত না। কোনও শিক্ষক ছাত্রীকে এমন কথা বলতে পারে বলে আমি মনে করি না।
তিনি বলেন, আমরা শিক্ষকরা সঠিক বিচার না পাওয়ায় সোমবার দুপুরের দিকে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। আমরা এই ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।