সাগর গতকাল নিকলী হাওড় ভ্রমণে গিয়ে সন্ধ্যার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছে
ঢাকা থেকে বেড়াতে যাওয়া এ দলটিতে সৈয়দ জাহেরুর রহমান সাগর নামে এই ব্যবসায়ীর বন্ধুরা, কয়েকজন বন্ধুর পরিবারের সদস্য শিশু ও নারীসহ মোট ৫০ জন ছিল।
সারাদিন নৌকায় চড়ে হাওরে ঘুরে এবং বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখার পর রাতে যখন ঘাটে পৌঁছে ঢাকা ফেরার জন্য অপেক্ষমান ট্যুরিস্ট বাসে উঠতে যাবেন সবাই তখনই জানা যায় তাদের সাথে নেই জাহেরুর। বন্ধুরা তাকে খুঁজতে ট্রলারে ফিরে গিয়ে তার ব্যাগ এবং মোবাইল ফোন পান, কিন্তু তাকে আর পাননি।
জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ভ্রমণ গন্তব্য হাওরাঞ্চলে ছুটির দিনগুলোতে হাজার হাজার মানুষের ভিড় হলেও এমন ঘটনাকে নজিরবিহীন বলছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আসসাদিকজামান বলেন, হাওর সংশ্লিষ্ট তিন উপজেলা- ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে এখন সমন্বিত অনুসন্ধান চলছে। তিনি বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। নৌপুলিশ পুরো এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে। উনাদের ট্রলারটি অষ্টগ্রাম থেকে নিকলী আসার পথে উনি মিসিং হয়েছেন। এ পথে মেঘনা নদীও পড়ে। সবাই মিলে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
দুপুরে জাহেরুরের সাথে বেড়াতে যাওয়া তার বন্ধুদের একজন শেখ রাজু আহমেদ বলেন, আমরা নৌপুলিশ ও সাগরের কয়েকজন আত্মীয়কে সাথে নিয়ে হাওরে আছি। পুলিশ ব্যাপক তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে।
কখন হারালেন?
হাওরে বেড়াতে যাওয়ার দলটিতে ছিলেন এমন কয়েকজন জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সহপাঠী, তাদের পরিবার ও ছেলে-মেয়েদের নিয়ে জনপঞ্চাশেক মানুষ শুক্রবার সকালে দুটি বাসে চড়ে ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেন। নিখোঁজ জাহেরুর যে বাসটিতে ছিলেন, সেই বাসটিতে সহযাত্রীদের দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
দুপুর একটা নাগাদ তারা নিকলীতে পৌঁছান এবং সেখানে তাদের এক বন্ধুর বাড়িতে কিছুক্ষণ অবস্থান করে বেলা ২টার দিকে নিকলী থেকে ট্রলারে ওঠেন।
দলটির একজন বায়েজিদ সিকদার বলেন, ‘ট্রলারে একনাগাড়ে আড়াই ঘণ্টার মতো চলার পর আমরা প্রেসিডেন্ট রিসোর্টে পৌঁছাই। সেখানে অল্প সময় অবস্থান করে আমরা আবার ট্রলারে করে অলওয়েদার সড়কের দিকে যাত্রা করি। ৬টার দিকে ১০ মিনিটের মতো সময় সেখানে কাটিয়ে আবার নিকলীর দিকে যাত্রা করি। পুরো পথে আমরা কেউ কোথাও পানিতে নামিনি।
দলটির সদস্যদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বহুল আলোচিত অলেওয়েদার সড়কে তিন উপজেলার সংযোগকারী জায়গায় ছবি তোলা এবং পরে আবার ট্রলারে এসে আধঘণ্টা পর ট্রলার চলমান অবস্থায় মাগরিবের নামাজেও অংশ নিয়েছিলেন পরে নিখোঁজ হওয়া সৈয়দ জাহেরুর রহমান।
মাগরিবের নামাজের পর হাওড়ে গভীর অন্ধকারে ট্রলারের এক অংশ থেকে অন্য অংশ ঠিকমতো দেখা যাচ্ছিল না এবং মোবাইল ফোনের আলো জ্বাললে পোকামাকড় আসছিল দেখে অনেকে চুপচাপ হয়ে নিজের মতো সময় কাটাচ্ছিলেন। এশার নামাজের সময় অন্ধকারের কারণে কে কার পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়েছে সেটি আর কেউ তেমন একটা খেয়াল করেনি।
ট্রলারটি সবাইকে নিয়ে নিকলী ঘাটে আসে রাত ৮টায় এবং ট্রলার থেকে সবাই যখন নামছিলেন তখন একজন একটি ব্যাগ আর জুতা পড়ে থাকতে দেখে সেগুলো নিয়েই ঘাটে অপেক্ষমাণ বাসে আসে।
বাস ছাড়ার মুহূর্তে জাহেরুর ঢাকা থেকে আসার সময় যার পাশে বসেছিলেন- তিনি দেখেন তার আসনটি খালি এবং তিনি অন্যদের জানান, যে জাহেরুর রহমান এখনো বাসে ওঠেননি।
বায়েজিদ সিকদার বলেন, এরপর কয়েকজন বন্ধু ট্রলার, ঘাট, দোকানপাটে খুঁজে সাগরকে না পাওয়ায় অপেক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়। আর একটি বাস প্রায় ৩০ জনকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
স্থানীয়দের নিয়ে একটি ট্রলারে করে তারা হারানো বন্ধুকে খুঁজতে শুরু করেন বিস্তীর্ণ হাওরে। মধ্যরাতে ঝড় বৃষ্টি কারণে তল্লাশি কিছুটা ব্যাঘাত ঘটলেও সকাল নাগাদ আবার শুরু হয়।
নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আসসাদিকজামান বলছেন, সমন্বিত তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সাধারণত পানিতে কেউ পড়লে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে লাশ ভেসে ওঠে। এক্ষেত্রে আরো অনেক বেশি সময় পেরিয়ে গেছে কিন্তু তেমনি কিছুও আমরা পাইনি।
জনপ্রিয় হয়ে ভ্রমণ গন্তব্য হাওরে নিরাপত্তা কতটা
বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে জনপ্রিয় পর্যটন স্পট হিসেবে পরিচিত হয়েছে নিকলী হাওর যার মূল কারণ হলো হাওরের ওপর নবনির্মিত অলওয়েদার সড়ক। হাওরের তিনটি উপজেলাকে সংযোগকারী সড়কটি দেখতে সেখানে ভিড় করেন শতশত পর্যটক। তবে সম্প্রতি পর্যটক ব্যাপক বাড়লেও সেখানে বেড়ানোর ক্ষেত্রে তেমন কোনো নিরাপত্তা অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আসসাদিকজামান বলছেন- হাওড়ে অলওয়েদার সড়ক হওয়ায় এখন ছুটির দিনে প্রচুর পর্যটক বেড়াতে আসেন কিন্তু কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ট্রলারগুলো লাইফ জ্যাকেট দিয়ে থাকে। প্রয়োজনে নৌ-পুলিশ আছে তারা সহায়তা করে।
তবে সম্প্রতি সেই নিকলী হাওরে ঘুরে এসে ঢাকার সাদিয়া রহমান বলছিলেন, হাওরে পুরো এক দিন ঘুরেছিলেন তারা গত মাসে, কিন্তু নৌপুলিশ বা টহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাউকে তারা দেখেননি।
শুক্রবারের এই দলটির সাথে যারা গেছেন তারা বলছেন, তাদের ট্রলারে ৫ থেকে ৭টির মতো লাইফ জ্যাকেট ছিল যদিও যাত্রী ছিল অর্ধশত।
তাদের আরো একজন বলেন, কার্যত কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা বা পর্যটকদের সতর্ক করার মতো কোনো ব্যবস্থা আমরা দেখিনি।
সূত্র : বিবিসি