সেলিনা জাহান প্রিয়ার রহস্য গল্প — মাঝ রাতের ল্যান্ড ফোন
রহস্য গল্প — মাঝ রাতের ল্যান্ড ফোন
——————————— সেলিনা জাহান প্রিয়া
একদিন রাত দুই টায় ল্যান্ড ফোনটা বেজে উঠলো, এত রাতে কে ফোন করল । আজ কাল তো তেমন কেউ ল্যান্ড ফোনে ফোন করে না । আমার মোবাইল কি তাহালে বন্ধ । না মোবাইল ফোন তো চালু । আবার ও ফোন বেজে উঠল । ফোনের কাছে গিয়ে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলাম । নিশ্চয় কোন দুরসংব্দ হবে । আমাদের সাবাই তো বাসায় । বাচ্চারা অন্য রুমে । তাহালে কে ফোন করল । না এখন ফোন রিসিভ করব না। ফোন আবার বেজে উঠল । ঘড়িতে রাত দুই টা পাঁচ মিনিট । যাই হোক ফোন টা ধরি । খুব আস্তে ফোন টা ধরলাম ।।
হ্যালো কে বলছেন ?
ওপার থেকে অসম্ভব মিষ্টি একটা কণ্ঠ ভেসে এলো যেন স্বর্গের কথা বলছে । খুব সুন্দর করে বলল-
রাতের গভীরে কেউ কেউ জেগে থাকে তারা মানুষ না তারা ঐ দূর আকাশের নক্ষত্র ।
খুব হতচকিয়ে গেলাম আবার পুলকিত ও হলাম ভয়ানক ভাবে । কি মিষ্টি করে কথা বলে । বলল সুপ্রিয়া তোমার হাতের কাঁচা মেহিদির গন্ধ টা অনেক মিষ্টি । আজই বুঝি পড়েছ । আমি অবাক বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো এমন অচেনা কল কিন্তু সত্যি ই তো আজ সন্ধ্যা হাতে বাঁটা মেহেদী পড়েছি। কার না ভাল লাগে এমন সুন্দর করে কথা বললে । আমি আবার বললাম কে কাকে চান । খুব স্পষ্ট করে আমাকে এ চাইলো যেন কত কালের চেনা জানা ।তার পরিচয় জিজ্ঞেস করলাম,বিস্তারিত কিছু বললো না । বলল তুমি অনেক শান্ত বুদ্ধিমতি মেয়ে আমি জানি ।
— আচ্ছা তাই ! একটু হেসে বললাম ।
— যাই হোক এত বছর পড়ে হাসতে শিখেছো । এটাই কম কিসের ।
— আশ্চর্য হলাম আমি ।আশ্চর্য হবার শুরু সেদিন থেকেই ।
প্রত্যেক রাতে ঠিক দুইটায় কলটা আসতো । মন্ত্রমুগ্ধের মতো নেশাগ্রস্তের মতো কথা বলতাম ভোর রাত পর্যন্ত ।হয়তো একেই বলে মায়া , মরুময় জীবনের কিছু কথা তাঁর সাথে মিশতে থাকে ।
দিন দিন অবস্থা আরো ভয়াবহ হলো, প্রতিদিন ওর কলের জন্য অপেক্ষা করতাম ।
ওর কল না আসা পর্যন্ত হাসপাশ করতে থাকতাম, এভাবে চলল এক সপ্তাহ ।
কখনো ওর ফোন নাম্বার জানতে চাইনি, ঠিকানা তো অনেক পরের ব্যাপার ।
দিন যেন যাচ্ছে ঝড়ের গতিতে, একি চরম এক মনমুগ্ধতা ! কিন্তু আশ্চর্য আমি জানতে চাইনা ও কে
ঘোরের মধ্যে কাটছে সময় । রাত দুটা ফোন বেজে উঠল । আমি ফোনটা হাতে নিতেই বলল সুপ্রিয়া এত রাতে তুমি কপালে টিপ পড়েছ কেন । আজ তো চাঁদ মেঘের কুলে ঘুমিয়ে । আমি জানালা দিয়ে দেখি সারা আকাশ মেঘে ভড়ে গেছে । আমি বলল লাম তুমি কি নক্ষত্রের মাঝে বসে বসে তাই দেখছ ।
— না আমি তোমাকে দেখছি ।
— এত দেখলে তো প্রেমে পড়ে যাবে ।
— না তোমার প্রেমে পড়া যাবে না।
— কেন আমার প্রেমে পড়া যাবে না।
— এই যে তুমি এত সুন্দর । তোমার চোখ । নাক। চুল । আর তোমার কথা । এই গুলোর মাঝে
আমি প্রেমে পড়তে চাই না। কারন তোমার প্রেমে পড়লে তোমার চুলে হাত ভুলাতে মনে চাইবে । আর
তোমার চুলে হাত দিলে তুমি সব চেয়ে বেশী অপছন্দ কর ।।
— আজ আবার বললাম কে তুমি ।
— আমি তো আমিই । যে তোমার কবিতায় নাই । গল্পে নাই । আমি সেই ।
— আজ পরিচয় না দিলে কিন্তু ফোন রাখব ।
— আমি জানি সুপ্রিয়া ফোন তুমি রাখবে । কিন্তু তোমার কলেজের ব্যাগটা কি এখনো আছে । কলেজে তোমার ব্যাগটা ছিল অন্য রকম । রাঙ্গাটির উপজাতিদের ব্যাগ ।
— আরে পাগল সে অনেক দিনে আগের কথা । তোমার কি মানে আছে তা । আমাকে সবাই চাকমা
বলত । আর আমি দুষ্টমি করে বলতাম আমার নাম সুপ্রিয়া দেওয়ান চাকমা ।
— হ্যা মনে আছে । আর সুপ্রিয়া চাকমা নামের একটা মেয়ে ছিল । সে খুব রাগ করত ।
— হ্যা তাহালে তুমি আমার কলেজের কোন বন্ধু
— সুপ্রিয়া তুমি অনেক বুদ্ধিমতী মেয়ে ।
— না আমি যদি বুদ্ধিমতী হই । তাহালে তো তোমাকে খুঁজে বের করতাম । একদিন এসো কথা বলি চা খাই ।
কতদিন যে ওর সাথে দেখা করতে চেয়েছি, ও এড়িয়ে গেছে, বলেছে পরে, সময় হলে ।
আমি ও অপেক্ষা করছি,শুধু এক সুন্দর রহস্য মানুষটা কে দেখার জন্য ।আর মনে মনে বুনে চলেছি স্বপ্নের এক কারুকাজের প্রেমের গল্প । এভাবে সপ্নের ঘোরে আরো তিন দিন কেটে গেল । পেরিয়ে গেলো চোখের পলকে ।কল্পনা করতাম কত শত কিছু, হয়তো ও ওর কণ্ঠ আমার খুব চেনা । কিন্তু কেন জানি সেই চেনা অচেনা হয়ে গেল । অনেক সময় অনেক কিছু সময়ের রহস্যে হারিয়ে যায় ।
এখন রাত দুটা আমি জানি ফোন আসবেই । ঠিক ফোন আসলো । আমি আজ ওর রহস্য বের করব । আমি জানতে চাই ও কে । কেন আমাকে রোজ একেই সময় ফোন করে । আমাদের বাসার ল্যান্ড ফোনটা অনেক পুরানো নাম্বার । আজ কাল সবাই মোবাইল এ কল করে । কিন্তু ও আমার মোবাইল
নাম্বার টা চায় না । আমি ওর নাম নেয়া মাত্র ফোন বাজতে লাগলো । আমি হাসি দিয়ে ফোনটা তুললাম ।
— হ্যালো
— এত হাসছো কেন । তোমার হাসি থেকে এলাচির সু- গন্ধ আসচ্ছে ।
— এই তুমি ভুত নাকি ।
— ভুত । তুমি যা খুব ভয় পাও । আমি কি তোমাকে আজ আবার ভুত সেজে ভয় দেখাব ।
— তাহালে এলাচির গন্ধ কি ভাবে পেলে । আমি কিন্তু সত্যি এখন এলাচি খাচ্ছি ।
— এটা তোমার অনেক দিনের অভ্যাস । কলেজের রাস্তার মোরে পানের দোকানে এলাচি তোমার
খুব প্রিয় ।
— হ্যা আমার না । সব মেয়েদের ঐ দোকানের পান খুব প্রিয় ছিল ।
— তোমার খেতে ইচ্ছা হয় ।
— হলে কি হবে , তুমি তো আর আনবে না।
— হ্যা পান এনে আবার তোমার হাতের চুল টান খাই ।
— কে তুমি । আমি ভুত ।
— যাও দুষ্টমি কর না। আমি কলেজে কাকে চুল টান দিয়েছি , দাড়াও মনে করি ।। এখন তোমাকে
চিনতে আর ভুল হবে না।
— ঠিক আছে খুঁজে বের কর । কাল ফোন দেব ।।
দিনটা স্পষ্ট ভাবে মনে আছে ১ লা জুন । আমি ভাবতে লাগলাম পান আনার জন্য কাকে চুল টান দিয়েছিলাম । এত দিন আগের কথা । ঠিক মনে পড়ছে না। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম ।।
সেদিন রাতে কোন ফোন কল এলো না ।সারা রাত ছটফট করলাম ঘুম এলো না ।
এভাবে ছটফট করতে করতে সকালে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম মনে ই নেই ।
আজ ৮ দিন হয়ে গেছে একবারো ও ফোন করেনি ।আমার মাথা ঠিক মতো কাজ করছে না ।
কিছুই মনে নাই, কাকে আমি চুল টান দিয়ে ছিলাম । কখন যে কি করি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম ।অনেক চেষ্টা করলাম,ওর কোন হদিস ই বের করতে পারলাম না ।আজ ১০ দিন হয়ে গেছে একবারো ও ফোন করেনি । আমি তো তাঁর নাম্বার ও জানি না। তাহালে কে ও ।
আমি আমার সেই সময়ের বন্ধুদের খুঁজে খুঁজে ফোন করলাম । সবাই আমার কথায় বলল কোন সাইকোলজিস্টা দেখাতে । কিন্তু আমার রহস্য বের করতে হবে। হা মনে পড়েছে । আমি কলেজে পড়ার সময় ডাইরি লিখতাম । কিন্ত্য ডায়রি তো সব আমাদের বাড়িতে । আচ্ছা মাকে ফোন দেই । রাত তিনটা নাজিরা বাজার ফোন করলাম । কিন্তু সবার ফোন বাজে কেউ ফোন ধরে না।
আসলে এত রাতে সবাই ঘুম । আমার স্বামী ঘুম থেকে উঠে কি হল সুপ্রিয়া ঘুমাবে না । রাত সাড়ে তিনটা বাজে । আজ কাল কি হল তোমার বল তো ।
— না কিছু না।
— কিছু না মানে ঠিক আছে কিন্তু তুমি জেগে আছ কেন । গত কয় দিন হল তুমি জেগে থাক ।
শরীর খারাপ করবে ।।
— আমাকে একটু সাহায্য করতে পারবে ।
— হা পারব । যদি কফি বানিয়ে দাও ।
— তোমার কোন কাজটা আমি করি না বলতে পারবে ।
— একটা কাজ সুপ্রিয়া তুমি কর না।
— শুনি কোন কাজ করি না।
— এই মশারী টানানোর কাজটা ।
— হ্যা । এটা কিন্তু আমার দোষ না। এটা তোমার মায়ের দোষ ।
— হ্যা তোমার শাশুড়ি আসলেও একজন পাজি মহিলা ।
— যাও মাকে এভাবে বলে না। আমি কয়দিন যাবত রোজ রাতে একজনের সাথে কথা বলি ফোনে ।
— কিন্তু দশ দিন হল সে আর ফোন করছে না।
— কেন ওর প্রেমে পরেছিলে নাকি ।
— যাও তো । তুমি না সব সময় । সব বিষয় নিয়ে ফান কর । এটা কিন্তু ঠিক না। কোন কিছু
সিরিয়াস ভাবে নাও না।
— দুই দিনের দুনিয়া আজ মরলে কাল সুন্দরি তুমি অন্য কারো ।
— আর আমি মরলে তো তুমি পাগল হবে। আর বলবে পাগলে কি না করে ?
— হ্যাঁ তা ঠিক । সব পাগলেরা বিয়ে করে । শুধু হুমায়ুন স্যারের পাগল হিমু বিয়ে করতে পারে নাই
কারন হিমুর পছন্দের পাত্রি কে স্যারেই বিয়ে করে ফেলেছে ।
— তাহালে তুমিও কি ঐ বয়সে একটা করবে নাকি ?
— দেখ এখন রাত চারটা বাজে । বর্ষার কালের রাত খুব মিষ্টি । কিন্তু আমি স্যারের মত হতে
পারব না । বউ রেখে আবার বিয়ে । তুমি মারা গেলে না হয় চিন্তা করব ।। এই যে তোমার
মোবাইল বাজছে । এত রাতে কিন্তু ভুতে ফোন করে ।
— ভুতে না । আমার মা । হ্যালো মা । শুনতে পাচ্ছ ।
— হ্যাঁ রে কেন ফোন করছিস । আবার কি জামাই সাথে ঝগড়া করছিস ।
— মা আমি কি তোমার জামাইয়ের সাথে খালি ঝগড়া করি ।।
— তাহালে এত রাতে ফোন দিলি কে ?
— মা আমার কলেজ জিবনের ডাইরি লাগবে । বইয়ের তাকে আছে না।
— আছেই তো । কোথায় যাবে । তা ডাইরি দিয়ে কি হবে ।
— কলেজে পড়ার সময় একটা ছেলে আমাকে পান দেয়েছিল । আমি নাকি ওকে চুল ধরে অনেক
জোরে টান দিয়ে ছিলাম ।
— সুপ্রিয়া মা গো বয়স হয়েছে । সংসারে মন দাও ।
— আরে আমি বলছি কাল ডাইরি পাঠিয়ে দিও । তুমি না বেশী কথা বল । আমি সংসার করছি না তো কি করছি ।। আমার স্বামী হেসে শেষ । কি হাসছ কেন ?
— আমার শাশুড়ি যে তোমাকে এত অপছন্দ করে তাই ।
— তোমার শাশুড়ি আআকে অপছন্দ করে ঠিক আছে কিন্তু আমার শাশুড়ি তো বলে পেটে নাকি
কাল সাপ রেখেছিল ।
— তোমার শাশুড়ি তো তাই এমন হয়েছে সুপ্রিয়া ।
— আর তোমার শাশুড়ি একটা বদের হাড্ডি ।। একটা বললে আর একটা শুনে । এই নাও কফি ।
— ইস আমার শাশুড়ি সিখিয়েছিল বানান তাই পেলাম সুপ্রিয়া এমন কফি ।
— শুন আমার শাশুড়ি কে দেখে সিখেছি কি করে স্বামী কে শিক্ষা দিতে হয় ।।
হাতের কফি শেষ করে । দু জনেই ঘুমিয়ে গেল । বর্ষার আকাশ জুন মাস বলে কথা বৃষ্টি আর বৃষ্টি
ঘুম থেকে ওঠে দেখে বেলা এগারটা । সুপ্রিয়ার বাসার কাজের ছেলে বাতেন একটা ব্যাগে করে অনেক কয়টা ডাইরি নিয়ে এসেছে । কলেজে পড়েছে দু বছর কিন্তু ডাইরি লিখেছে এই দু বছরে অনেক । ডাইরি বললে ভুল হবে । আসলে নোট বলা চলে । এমন কোন কথা নেই ।। যা তাতে লিখা নেই । প্রতিদিনের ঘটনা । কাজের ছেলে কে বিদায় করে । সে ডাইরি নিয়ে বসল । পুরান দিনের
কত কথা । সব বন্ধু বান্ধবি , মামা চাচা , ভাই বোন । কত তুচ্ছ জিনিস ও সে লিখেছে । এক এক করে পড়ে যাচ্ছে । সারা দিন আর কোন কাজ নেই । গোসল পর্যন্ত করে নাই। কিন্তু পাচ্ছে না । সুপ্রিয়ার স্বামী এসে বলল – দাও আমি সাহায্য করি ।
— না তুমি ধরবে না। মেয়েদের ডাইরি পড়তে হয় না। তুমি যেয়ে বাঁশি বাজাও ।
— আচ্ছা । তোমাকে কফি বানিয়ে দেই ।
— না লাগবে না । আমার শাশুড়ি কষ্ট পাবে । দু জনেই হেসে দিল । কারন দু জনেই দু জনের মাকে
খুব আদর যত্ন করে । যেন আপন সন্তানের মতো ।
সু প্রিয়া পেয়ে গেল । সে কার চুল ধরে টেনে ছিল । স্বামী কে ডেকে বলল ও গো শুনছ । পেয়ে গেছি । আমি পেয়ে গেছি । নারিন্দার সজল ।
— ভাল করে দেখ । মেয়ে মানুষ তো কত জনের চুল ধরেছ । তা একা সজল বিপদে পরবে কেন ।।
— তুমি না আর ভাল হবে না । সব কিছু নিয়ে ফান কর ।
— আরে ভাল করে দেখ । ভুল তো হতে পারে । সজল কে তো আমি চিনি ও লন্ডনে থাকে । তোমার । তোমার কলেজের বন্ধু । আমার সাথে তো তোমাকে দিয়েই পরিচয় । দাড়াও আমি ওর
নাম্বার দিচ্ছি । বলে মোবাইল থেকে লন্ডনের নাম্বার বের করে দিল । সুপ্রিয়া ফোন করল কথা বলে বুঝে গেল না । এটা সজল না। এটা অন্য সজল ।। অল্প কথা বলে আবার ফোন কেটে দিল ।
সুপ্রিয়া আবার ডাইরি পড়তে শুরু করল । পড়তে পড়তে কখন যে সকাল হয়ে গেছে মনে নাই ।
জুন মাসের একটা ডাইরি ঠিক শেষের পাতায় । পেয়ে গেল । একটা হিন্দু ছেলে নাম জয়ন্ত তাঁর জুনিয়ার ছিল । কিন্তু তাঁর সাথে খুব মিশতো । একদিন ভুল দোকান থেকে পান এনেছিল বলে ওকে চুল টেনেছিল। হ্যা জয়ন্ত । খুব মিষ্টি করে কথা বলত । আমার ব্যাগটা ওর খুব পছন্দ ছিল ।
ওর বাসা লক্ষ্মী বাজার । সুপ্রিয়া শাড়ি টা বদল করে । একটা রিক্সা নীল । ডাইরিতে ওর ঠিকানা আছে । ছেলেটা হতাৎ একদিন কলেজে আসা বন্ধ হয় । সুপ্রিয়া আর খবর নিতে পারে নাই । কারন সামনে তার পরীক্ষা । আসলেই আর খবর নেয়া হই নাই । মেয়েরা চাইলে এক সময় সবার খবর
নিতে পারে না । কে কি বলে । অবস্য এখন আর কোন সমস্যা না। সেই কবে ৯২ সালের ঘটনা । এখন ২০১৫ সাল প্রায় দু যোগ । লক্ষ্মী বাজার এসেই একজন কে বলল –
— ভাই নিপেন দের বাসা কোন টা ।
— কোন নিপেন । কত নাম্বার ।
— ২৭/২ জয় গিতা হাউজ ।
— নিপেন মারা গেছে ১৫ বছর । নিপেনের মেয়ে আর জামাই থাকে ।ঐ সামনের গলি শেষের
আগের পুরান ছোট বাড়িটা ।
খুব সুরু গলি । হিন্দু বাড়ী । সুপ্রিয়া প্রবেশ করে গেইটে নক করতেই একজন মহিলা বের হয়ে
এলো । কে কাকে চাই ।
—- জী এটা কি নিপেন সাহেবের বাড়ী ।
— হ্যা । বাবা তো অনেক দিন হল মারা গেছেন । কে আপনি ।
— আমাকে চিনবেন না। আমার নাম সুপ্রিয়া ।
— আমি জয়ন্তের কাছে এসেছি ।
ঘরের ভিতর থেকে একজন বৃদ্ধা মহিলা বলল মা ভিতরে এসো । বাসার ঘরে বসতে দিল । বৃদ্ধা মহিলা বলল মা আমি জয়ন্তের মা । কি নাম তোমার মা
— সুপ্রিয়া
— হ্যাঁ জয়ন্তের মুখে খুব শুনেছি । কলেজ থেকে এসেই বলত সুপ্রিয়া দিদি । খুব নাম নিতু তোমার ।
— ও কোথায় মাসি মা ।
— সে কি মা তুমি যান না । মাসি মায়ের চোখে পানি ।
— মাসি মা । কাদবেন না । গত কয় দিন আগে আমাকে ফোন করত । আর রহস্য করত ।
— কাদতে কাদতে জয়ন্তের মা বলল – কি বল মা ও কিভাবে ফোন করবে । ও তো মারা গেছে
আজ ২৩ বছর হল । জয়ন্তের মায়ের কথা শুনে সুপ্রিয়ার অবাক হয়ে বলছে কি বলেন মাসি মা !
— হ্যা মা সত্যি । তবে মনে হয় না । ও মারা গেছে । খুব বৃষ্টি তে ভিজে কলেজ থেকে এসে একটা
ছাতা নিয়ে গেছে ।
— হ্যাঁ মাসি মা । আমার জন্য । ফেরার পথে বৃষ্টি মধ্য একটা জিপ গাড়ি ওকে ধক্কা দেয় । ঐ খানেই মারা যায় জয়ন্ত ।।
সুপ্রিয়ার চোখ দিয়ে টলমল করে পানি পড়তে থাকে । ঐ দিন খুব বৃষ্টি ছিল । রিক্সা নাই । জয়ন্ত বলল সুপ্রিয়া দিদি একটু দাড়াও । আমার বাসা কাছে । আমি ছাতা এনে দেই । সে দিন ঐ ছাতা দিয়ে গিয়েছিল । ছাতাটাও আর নিতে আসে নাই । চোখের পানি মুছতে মুছতে সে সুরু গলি পেরিয়ে
মেইন রাস্তায় চলে এসেছে । খুব বেশী বৃষ্টি হচ্ছে । রিক্সার হুড ফেলে চোখের পানি আর বৃষ্টির পানি
এক সাথে মিশে যাচ্ছে বুড়ি গঙ্গার দিকে………………………………………